আমার লেখা বই "উদ্বেগ - টেনশন: মনো- বৈজ্ঞানিক সমাধান" এর ৫ম অধ্যায় থেকে এ লেখাটি দিচ্ছি
আমাদের রয়েছে কয়েকটি আত্ম- ধারনা(self concept)ও আত্ম- ভাবমূর্তি(self image) এবং আত্ম ছবি(self- pictures) । এই প্রতিটি আত্ম ধারনা বা আত্ম ভাবমূর্তি হচ্ছে বিশেষ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি।
১। মনোগত সত্বা(subjective self):
এটি হচ্চে ব্যক্তিগত ভাবে আমরা নিজেকে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে থাকি; নিজের সমন্ধে নিজের অভিমত
এটি তৈরি হয় আমাদের বৈশিষ্ট্য গুলো সমন্ধে আমাদের নিজস্ব মুল্যায়ন ও চিন্তা ভাবনার ধরন থেকে।
এগুলো প্রভাবিত হয়- মা- বাবা সন্তানকে কিভাবে দেখে,ভাবে ও মনে করে,সঙ্গী-সাথী ও বৃহত্তর সমাজ আমাদের কিভাবে মুল্যায়ন করে তার দ্বারা
শৈশবের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি এই মনোগত সত্বা তাই অনেকেরই নেতিবাচক হয়।নিজের কাছেই নিজকে অপছন্দের,ঘৃনার মনে হতে পারে।যেহেতু এটি অন্যদের কথা,মন্তব্য থেকে তৈরি সত্বা এবং এটি আমরা নিজকে নিজে কেমন ভাবি তেমন সত্বা,তাই এটিকে পুনর্গঠন করে ইতিবাচক করে নিতে হবে।
২। বাস্তব / বস্তুনিষ্ঠ সত্বা(objective self):
এটি হচ্ছে অন্যরা আমাদের কিভাবে দেখে; অন্যরা আমাদের যেরকম ব্যক্তির বলে ভাবে
সবাই আমাদের একরকম ভাবে দেখে না।কেউ ভালো জানে,আবার কেউ ভালো জানে না।আমরাও বাসায় একরকম, স্কুল কলেজে একরকম আবার কর্মক্ষেত্রে অন্যরকম।
কিছু লোক আআমাদের পছন্দ করবে তারা, আবার কিছু লোক অপছন্দ করবে।তাই কেউ মন্দ ভাবলে এতো পেরেশান হওয়ার কারন নেই।প্রিয়জনদের ভাবনাকে গুরুত্ব দিন,সমালোচকদের মন্তব্যকে অগ্রাহ্য করুন।
৩। সামাজিক সত্বা(social self):
এটি হচ্ছে অন্যরা আমাদের কিভাবে দেখছে বলে আমরা মনে করি; নিজেদের মতামত যে আমাকে অন্যরা এরকম ভাবে।
নেতিবাচক ও কম আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন মানুষদের এই পারসেপশন অনেক ক্ষেত্রেই ভুল হয়ে থাকে।তারা মনে করে অন্যরা তাকে ভালো মানুষ মনে করে না,পছন্দ করে না বা সম্মান,গুরুত্ব দেয় না।আমরা অনেকেই অন্যরা আমাদের গ্রহনযোগ্য ভাবে কিনা,আমাদের চিন্তা-মত- স্বভাবকে ভালো সার্টিফিকেট দিচ্ছে কিনা,আমাদের কাজ- আচরনকে অনুমোদন করছে কিনা,মেনে নিচ্ছে কিনা- ইত্যাদি ব্যাপারে বেশ সেনসিটিভ থাকি।একে বলা হয় " সামাজিক গ্রহন যোগ্যতার" কাঙ্গালিপনা। এই কাঙ্গালিপনা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
৪। আদর্শ সত্বা(ideal self):
এটি হচ্ছে আমরা যেরকম হতে চাই তেমন সত্বা; যে রকমটি আমরা হয়ে উঠতে চাই।
কম লোকই নিজকে নিয়ে পূর্ন পরিতৃপ্ত।কিছু ক্ষেত্রে হলেও অন্যরকম হতে চাই।কেউ বা সম্পূর্ণ নতুন কেউ হয়ে উঠতে চান; আরেকটি জীবন পেলে ওরকম হতে চাইতাম বলে আফসোস করেন।
কিছু ক্ষেত্রে " আদর্শায়ন" এর প্রয়োজন থাকতে পারে।কিন্তু তাই বলে নিজের বর্তমান সত্বাকে নিয়ে অসন্তুষ্ট,অতৃপ্ত থাকলে সুখী হওয়া কঠিন।
অতি উচ্চ মাত্রার লক্ষ্য অর্জন করার সংগ্রামে আমরা জীর্ন,ক্ষীন ও নিঃশেষ হয়ে যেতে পারি।তাই আত্ম ধারনা বাস্তবভিত্তিক করে, ইতিবাচক করে,আত্ম মর্যাদা বাড়িয়ে এই আফসোস কমানো সম্ভব
উপরোক্ত বিভিন্ন সত্বার মধ্যে যত পার্থক্য থাকবে আমাদের অতৃপ্তি, অসন্তুষ্টি,হীনমন্যতা তত বেশি থাকবে।সবগুলো সত্বা একই রকমের হলে সেটা হতো আদর্শমান।তবে এরকমটি বাস্তব সম্মত ধারনা নয়।
নিজের মনোগত সত্বাকে ইতিবাচক, বলিষ্ঠ করে
,বাস্তব সত্বার যতটুকু নিজের অনুকুলে সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে,
সামাজিক সত্বাকে নেতিবাচক ভাবে কম মূল্যায়ন করে
ও আদর্শ সত্বাকে অতি উচুতে না রেখে বাস্তব সম্মত করে নিলে
এই পার্থক্য গুলো অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়।
এভাবে উজ্জ্বল, সবল ও মর্যাদা পূর্ন আত্ম ধারনা ও আত্ম ভাব মূর্তি তৈরী করে আমরা সুখী ও সম্মানিত জীবন যাপন করতে পারি