Friday, December 14, 2018

রোগ কাহিনী -৫০

(সরাসরি চেম্বার থেকে লিখছি)

একটু ভিন্ন ধাচের কথন

কাহিনী -১ঃ
রোগীনী ১৫-১৬ বছরের। বলে স্যার গায়েবী কথা তো কমছে না।জানতে চাই কি বলে? উত্তর দেয়-কেবল বলে এর সঙ্গে ওর সঙ্গে তোর বিয়ে হবে।

আমি তার মাকে বলি রোগ যেহেতু তত উন্নতি হচ্ছে না,তাহলে ইনজেকশন দেই?

মা আতকে উঠে বলেন -না স্যার, ভয় লাগে।

শুনেছি ইনজেকশন দিলে নাকি জ্বীন-ভুত রক্তের সঙ্গে পুরো মিশে যায়।

তখন আর সে রোগ জীবনে ও ভাল হয় না।

পাদটীকা ঃ আমার কাছে এসেছে ডাক্তারী চিকিৎসা করাবে বলে।পূর্বে জ্বীন ভুতের চিকিৎসায় সফল না হয়েই আমার কাছে এসেছে।

কিন্তু জ্বীন ভুতের বিশ্বাস মনের এতো গভীরে প্রোথিত যে এখনো সে বিশ্বাস মাথায় রেখেই আমার চিকিৎসা নিচ্ছে।

অনুসিদ্ধান্ত ঃ বিশ্বাস তা সঠিক হোক বা ভুল হোক সহজে কাটানো যায় না

কাহিনী -২ঃ রোগী দেখার পর ভিজিট দেওয়ার সময় রোগীর বোন বলে স্যার কত দিতে হব?

আমি ভিজিটের রেট বললাম। তিনি বললেন একটু কম রাখেন স্যার।
বললাম ঠিক আছে কিছু কম দেন।তিনি ভিজিটের অর্ধেক টাকা দিলেন।আমি বললাম তা বলে এতো কম?

তিনি বললেন স্যার একটি বিপদে আছি, এমন বিপদ আপনি শুনলেও কষ্ট পাবেন।

আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এতো বিপদে থেকেও ডাক্তারের ভিজিট (তা অর্ধেক হলেও)  দিতে এই গরীব রোগীরা কার্পণ্য করে না।

অনুসিদ্ধান্ত ঃ চেম্বারে ধনীরা ভিজিট দিতে যে চালাকি ও কার্পণ্য করে, দরিদ্র রোগীরা তেমন করে না

Monday, December 10, 2018

রোগ কাহিনী -৪৯ঃআমাকে নিয়ে কেন টানাটানি করছো,আমি তো মরে গেছি, আমাকে গোরস্তানে নিয়ে রাখো

কাহিনী সংক্ষেপঃআমেনা বেগম,বয়স ৪৬। কিছু  দিন পূর্বে জ্বরে ভুগেন।৪-৫ দিন জ্বর ছিল।

এরপর থেকে ওনার  ঘুম হয় না। সারা রাত জেগে থাকে, কান্নাকাটি করে,খায় না।মাথা টনটন করে,ভাইরে ডাকে, মারে ডাকে, বলে আমার সংসার শেষ তোদের সংসার ও শেষ।

সে বলে আমাকে নিয়ে কেন টানাটানি করছো আমি তো মারা গেছি, আমাকে গোরস্তানে নিয়ে রাখো।

তিনি আরো বলেন
সব ঘরে মরা লাশ শুয়ে আছে।

ওনাকে জিজ্ঞেস করি কেমন লাগে,

উনি বলেন অস্থির লাগে, অশান্তি লাগে, আনন্দ নেই, কিছুই ভালো লাগে না,সারা রাত কাদি,ঘুম নাই।

এই কেইস হিস্ট্রি থেকে যা শিখলাম ঃ

১।কিছু মানসিক রোগ শারীরিক অসুস্থতার পরে হতে পারে

২।অল্প সময়ে ও তীব্র বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারে

৩।বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনে এমন নৈরাশ্য তৈরি হতে পারে যে নিজের সমন্ধে মনে হতে পারে আমি নিঃস্ব,আমার সব শেষ।

এমনকি এটি এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে ও যেতে পারে যে তার মনে হতে পারে  তিনি আর জীবিত নেই, মারা গেছেন, তার তো এখানে না,কবরস্থানে থাকার কথা।

৪।নিজের অস্তিত্বই নেই  এমন চরম  পর্যায়ের "ভ্রান্ত বিশ্বাসকে " বলা হয় "নিহিলিষ্টিক ডেলুশন"।

৫।কিছু দিন পূর্বে একজন ১৫-১৬ বছরের ছেলের ও এমন ডিপ্রেশন হয় যে সে মনে করে তার লিভার  কিডনি, পাকস্থলী সব পায়খানার সঙ্গে পড়ে গেছে, তার এখন এসব কিছু নেই।

তাই তার খাওয়া দাওয়া করার কোন দরকার নেই

৬। এরকম ডেলুশন সহ ডিপ্রেশনকে বলা    হয় " সাইকোটিক ডিপ্রেশন "।

Sunday, December 9, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস -৫৫

নিজের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হোন

১। যা বলবো তা যেন নিখুঁত, নিষ্কলঙ্ক হয়

২। কোন কিছু "ব্যক্তিগত ভাবে " নেবো না

৩।নিছক "ধারনা /আন্দাজ " এর উপর নির্ভর করবো না

৪। সব সময় সর্বোত্তমটি করার চেষ্টা করবো

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩০ঃ পৃথিবীতে প্রাণ কিভাবে এলো? ভিন্ন থিওরি

প্যান্সপারমিয়া তত্ত্ব (pansparmia):

পৃথিবীতে প্রান এসেছে ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে

পাবলিক লাইব্রেরি থেকে -
পড়ছি "নন্দন তত্ত্বের " উপর বই।
সেখানে পেলাম এই প্যান্সপারমিয়া তত্বের কিছু অংশ ঃ

গ্রীক দার্শনিক এ্যানাক্সগোরাস(খ্রী পূর্ব ৫০০-৪২৮)এর মতে পৃথিবী ছাড়া ও পৃথিবীর মতন আরো অনেক জগত আছে ( ব্যাটা এতো আগেই এতো কিছু জানলো কিভাবে?) ।

১৬৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মার্চিসনে পতিত উল্কাপিণ্ডে ৭৪ ধরনের এমাইনো এসিড (যা জীব গঠনের মৌলিক ব্লিডিং ব্লক) পাওয়া যায়।

এর ভিতর রয়েছে পার্থিব প্রোটিন তৈরির ৮টি উপাদান। এছাড়া এতে ছিল "পলিয়ল" নামে শর্করা যা পৃথিবীতে পাওয়া যায় না।

১৮৩৪ সালে সুইডিশ রসায়নবিদ জেকব বার্জেলিয়াস কিছু উল্কা পিন্ডে এমন কিছু কার্বনঘটিত যৌগ খুজে পান যার সঙ্গে জীবদেহের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

এরপর এই তত্ত্ব সমর্থন করেন এইচ ই রিখটার, লর্ড কেলভিন, উইলিয়াম থমসন।

তবে ১৯০৮ সনে এ তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেন নোবেল বিজয়ী  বিজ্ঞানী সোভান্তে এরেহোনিয়াস।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের সম্ভাব্যতা স্বীকার করেন।

ধারণা করা হয় ১কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে মঙ্গল গ্রহে কোন গ্রহানু বা ধূমকেতু আঘাত হানে।এতে বহু বস্তু পিন্ড মহাকাশে আছড়ে পড়ে। এরই কিছু এসে পড়ে পৃথিবীতে।

১৯৮৪ সনে আমেরিকার একদল গবেষক এন্টার্টিকায়  এরকম একটি উল্কাপিণ্ড খুজে পান

।যার নামকরণ করা হয়-এ্যালান হিল ৮৪০০। ১৯৯৬ সালে এর মধ্যে পলি সাইক্লিক এরোমেটিক হাইড্রোকার্বন এবং এমাইনো এসিড পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণের পর জীব উপাদান এসেছে বলে এর নাম - ব্যা লা স্টিক প্যান্সপারমিয়া।

মহাকাশ থেকে নিরাপদে কিভাবে এলো?

দেখা গেছে কিছু ব্যাকটেরিয়া ১১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ও বেচে থাকে ;কিছু -১৮ ডিগ্রি তেও বাচে;কিছু তরল নাইট্রোজেনে -১৯৬ ডিগ্রিতেও সংরক্ষণ করা যায় ;অনেকে আয়নিত কনা বা অতি বেগুনি রশ্মি সহ্য করতে পারে।
তাই তত্বটি সঠিক হতে ও পারে

(তবে এই তত্ত্বের বিপরীতে ও রয়েছে অনেক অকাট্য যুক্তি) ।

Monday, December 3, 2018

আবেগীয় বুদ্ধিমত্বা-৪ঃ

"যারা "চিন্তা " করে তাদের জন্য
জীবন হচ্ছে কমেডি
আর যারা "অনুভব " করে তাদের জন্য জীবন হচ্ছে ট্রাজেডি "-হোরাস ওয়ালপোল

   সকল তীব্র আবেগের কেন্দ্র ঃএমাগডেলা

ব্রেইন স্টিমের উপরে কাঠবাদামের আকারের অন্চলটির নাম "এমাগডেলা"। লিম্বিক সিষ্টেমের দুটি অংশ -হিপ্পোকেম্পাস ও এমাগডেলা

ব্রেইনের বেশির ভাগ শিক্ষন ও মনে রাখার কাজটি করে থাকে।

ব্রেইন থেকে এমাগডেলা বাদ দিলে ঘটনা সমূহের আবেগীয় তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

একে বলা হয় " আবেগীয় অন্ধত্ব"।

এমাগডেলা হচ্ছে  "আবেগীয় স্মৃতির " গুদামঘর

।এমাগডেলা না থাকলে ভয় বা ক্রোধ বলে কিছু থাকে না,
সহযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার তাগিদ থাকে না।

কান্নার উৎপত্তি হয় এমাগডেলা ও এর কাছাকাছি অন্চল "সিংগুলেট জাইরাস" থেকে।

এমাগডেলা না থাকলে কষ্টের কোন কান্না  থাকবে না, কাউকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার জন্য।

লি-ডক্স একজন নিউরো সায়েন্টিস্ট, যিনি ব্রেইনের রহস্যময় অংশ গুলোর খোঁজে একটি মানচিত্র তৈরি করেছেন।

তার গবেষণা এটি ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করে, কিভাবে এমাগডেলা সেসব ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়, যেগুলো সমন্ধে "চিন্তা মস্তিষ্ক " তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

এমাগডেলা ও নিউকর্টেক্সের সঙ্গে এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হচ্ছে "আবেগীয় বুদ্ধিমত্ত্বার" হ্রদপিন্ড।

যে সকল ক্ষেত্রে আমরা ভালোমন্দ চিন্তা না করে আবেগতাড়িত ও দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে কাজ করি, সেসব ক্ষেত্রে "যুক্তি মনের " চেয়ে 

"আবেগীয় মন" আধিপত্য বিস্তার করে থাকে।

এরকম ক্ষেত্রে এমাগডেলা  কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

এমাগডেলা  আমাদের মনোজগতে " মনস্তাত্ত্বিক পাহারাদার " হিসেবে কাজ করে থাকে

,যা সকল পরিস্থিতি, সকল পারসেপশনকে চ্যালেঞ্জ করে থাকে

এবং যা কিছু আমরা ঘৃনা করি, আমাদের আহত করে বা ভীত করে এমন সকল অবস্থায় এমাগডেলা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে।

এমাগডেলার রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, যার ফলে যে কোন "ইমারজেন্সি " পরিস্থিতিতে এটি ব্রেইনের বেশির ভাগ অন্চলকে কুক্ষিগত করতে, কব্জায় নিতে সহায়তা করে।

চোখ, কান সহ অন্যান্য ইন্দ্রিয় থেকে সংবেদন সঙ্কেত থ্যালামাসে চলে যায়।

থ্যালামাস থেকে বেশির ভাগ তথ্য নিউকর্টেক্সে যায় (চিন্তা ব্রেইন) ।
সেখানে তথ্য যাচাই বাছাই করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে থ্যালামাস থেকে একটি ক্ষুদ্র ও শর্টকাট  পথ যায় সরাসরি এমাগডেলায়।

এই যে চ্যানেলটি চিন্তা ব্রেইনকে বাইপাস করে এমাগডেলায় যায়, সেটি চিন্তা ব্রেইনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই আবেগ তাড়িত প্রতিক্রিয়া করে ফেলে।

এটি অনেকটা ইমারজেন্সি রুট হিসেবে কাজ করে।

লি-ডক্স আরো বলেন " কিছু আবেগীয় স্মৃতি ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, চিন্তা ব্রেইনের সচেতনতা ও অংশ গ্রহন ছাড়াই।

এমাগডেলা এমন স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে ও প্রতিক্রিয়া করার কাঠামো তৈরি করে, যার ফলে আমরা এমন কিছু করে ফেলি যা কেন করলাম তা বুঝে উঠতে পারি না।

এই "বাই-পাস " সিস্টেম থাকার কারনে, আমাদের এমন কিছু স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার "ছাপ" এমাগডেলায় লুকিয়ে থাকে, যে সমন্ধে আমরা সচেতন ভাবে কিছু জানি না।

আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোন কিছু ধারণা করার কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে, আমরা অবচেতন স্তরেই বিষয়টি সমন্ধে সম্যক ধারনা তৈরি করে ফেলি।

শুধু তাই নয়,এটি পছন্দ করি না অপছন্দ করি সে সিদ্ধান্ত ও নিয়ে ফেলি।

তার মানে আমাদের আবেগের রয়েছে নিজস্ব "মন"-যে মন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাবে নিজস্ব মতামত গ্রহণ করে থাকে।
(চলবে)