"যারা "চিন্তা " করে তাদের জন্য
জীবন হচ্ছে কমেডি
আর যারা "অনুভব " করে তাদের জন্য জীবন হচ্ছে ট্রাজেডি "-হোরাস ওয়ালপোল
সকল তীব্র আবেগের কেন্দ্র ঃএমাগডেলা
ব্রেইন স্টিমের উপরে কাঠবাদামের আকারের অন্চলটির নাম "এমাগডেলা"। লিম্বিক সিষ্টেমের দুটি অংশ -হিপ্পোকেম্পাস ও এমাগডেলা
ব্রেইনের বেশির ভাগ শিক্ষন ও মনে রাখার কাজটি করে থাকে।
ব্রেইন থেকে এমাগডেলা বাদ দিলে ঘটনা সমূহের আবেগীয় তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ে।
একে বলা হয় " আবেগীয় অন্ধত্ব"।
এমাগডেলা হচ্ছে "আবেগীয় স্মৃতির " গুদামঘর
।এমাগডেলা না থাকলে ভয় বা ক্রোধ বলে কিছু থাকে না,
সহযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার তাগিদ থাকে না।
কান্নার উৎপত্তি হয় এমাগডেলা ও এর কাছাকাছি অন্চল "সিংগুলেট জাইরাস" থেকে।
এমাগডেলা না থাকলে কষ্টের কোন কান্না থাকবে না, কাউকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার জন্য।
লি-ডক্স একজন নিউরো সায়েন্টিস্ট, যিনি ব্রেইনের রহস্যময় অংশ গুলোর খোঁজে একটি মানচিত্র তৈরি করেছেন।
তার গবেষণা এটি ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করে, কিভাবে এমাগডেলা সেসব ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়, যেগুলো সমন্ধে "চিন্তা মস্তিষ্ক " তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
এমাগডেলা ও নিউকর্টেক্সের সঙ্গে এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হচ্ছে "আবেগীয় বুদ্ধিমত্ত্বার" হ্রদপিন্ড।
যে সকল ক্ষেত্রে আমরা ভালোমন্দ চিন্তা না করে আবেগতাড়িত ও দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে কাজ করি, সেসব ক্ষেত্রে "যুক্তি মনের " চেয়ে
"আবেগীয় মন" আধিপত্য বিস্তার করে থাকে।
এরকম ক্ষেত্রে এমাগডেলা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে থাকে।
এমাগডেলা আমাদের মনোজগতে " মনস্তাত্ত্বিক পাহারাদার " হিসেবে কাজ করে থাকে
,যা সকল পরিস্থিতি, সকল পারসেপশনকে চ্যালেঞ্জ করে থাকে
এবং যা কিছু আমরা ঘৃনা করি, আমাদের আহত করে বা ভীত করে এমন সকল অবস্থায় এমাগডেলা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে।
এমাগডেলার রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, যার ফলে যে কোন "ইমারজেন্সি " পরিস্থিতিতে এটি ব্রেইনের বেশির ভাগ অন্চলকে কুক্ষিগত করতে, কব্জায় নিতে সহায়তা করে।
চোখ, কান সহ অন্যান্য ইন্দ্রিয় থেকে সংবেদন সঙ্কেত থ্যালামাসে চলে যায়।
থ্যালামাস থেকে বেশির ভাগ তথ্য নিউকর্টেক্সে যায় (চিন্তা ব্রেইন) ।
সেখানে তথ্য যাচাই বাছাই করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে থ্যালামাস থেকে একটি ক্ষুদ্র ও শর্টকাট পথ যায় সরাসরি এমাগডেলায়।
এই যে চ্যানেলটি চিন্তা ব্রেইনকে বাইপাস করে এমাগডেলায় যায়, সেটি চিন্তা ব্রেইনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই আবেগ তাড়িত প্রতিক্রিয়া করে ফেলে।
এটি অনেকটা ইমারজেন্সি রুট হিসেবে কাজ করে।
লি-ডক্স আরো বলেন " কিছু আবেগীয় স্মৃতি ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, চিন্তা ব্রেইনের সচেতনতা ও অংশ গ্রহন ছাড়াই।
এমাগডেলা এমন স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে ও প্রতিক্রিয়া করার কাঠামো তৈরি করে, যার ফলে আমরা এমন কিছু করে ফেলি যা কেন করলাম তা বুঝে উঠতে পারি না।
এই "বাই-পাস " সিস্টেম থাকার কারনে, আমাদের এমন কিছু স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার "ছাপ" এমাগডেলায় লুকিয়ে থাকে, যে সমন্ধে আমরা সচেতন ভাবে কিছু জানি না।
আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোন কিছু ধারণা করার কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে, আমরা অবচেতন স্তরেই বিষয়টি সমন্ধে সম্যক ধারনা তৈরি করে ফেলি।
শুধু তাই নয়,এটি পছন্দ করি না অপছন্দ করি সে সিদ্ধান্ত ও নিয়ে ফেলি।
তার মানে আমাদের আবেগের রয়েছে নিজস্ব "মন"-যে মন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাবে নিজস্ব মতামত গ্রহণ করে থাকে।
(চলবে)