Thursday, August 30, 2018

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৬ঃ সংসার ভাঙ্গন রোধে করনীয়

সম্প্রতি প্রথম আলোতে একটি লিডিং নিউজ হয়েছে যে দেশে দিন দিন তালাকের হার বাড়ছে। এতে আরো উল্লেখ করা হয় যে নারীরা অধিক হারে তালাকের আবেদন করছে এবং ঢাকায় দিনে একটি তালাক।
প্রতিটি মানুষ জীবনে দুটি বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে - এক হচ্ছে তার সন্তান ও দ্বিতীয় হচ্ছে তার দাম্পত্য জীবন।আমরা সবাই চাই একটি নিরাপদ, সুখী,মর্যাদাপূর্ণ দাম্পত্য জীবন। প্রতিটি বিয়ের প্রাক্কালে সবার মনে এই প্রার্থনা থাকে " আজীবন  আমরা একত্রে থাকবো "। আমরা সবাই যদি " পারফেক্ট " হতাম তাহলে হয়তো এই প্রতিজ্ঞা আজীবন ধরে রাখতে পারতাম। কিন্তু মানুষ মাত্রই রয়েছে খুঁত, ক্রটি ও দোষ। আমরা বদলে যাই, জীবন বদলে যায় এবং এই " বদলে যাওয়া একে অপরকে বলতে ভুলে যাই "।

বছরের পর বছর একই বিছানায়, একই ছাদের নীচে বাস করেও অনেকেই নিজেদের মধ্যে কানেক্টেড ফিল করে না।মনে রাখা ভালো প্রেম বা বিয়ের প্রথমদিকের " ভালোবাসার উন্মাদনার " উচ্ছ্বাস বড়জোর ২ বছর থাকে। তারমানে এ নয় ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে বা ভুল মানুষকে চয়েজ করেছি। ভালোবাসা কোন নির্দিষ্ট অবস্থা নয়,এটি একটি কর্ম, জীবন দক্ষতা -যা প্রতিনিয়ত প্রদর্শন করতে হয় ও প্রাকটিস করতে হয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে তালাকের অনেকগুলো কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তালাকের আবেদনে কাজীরা স্বামী / স্ত্রী বা অভিভাবকদের কতগুলো গৎবাঁধা বুলি বা অভিযোগ নামা বলে দেয় সেখানে উল্লেখ করতে। গভীর মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণে তালাকের জন্য বহুবিধ কারনকে দায়ী করা হয়।

তবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হচ্ছে - দাম্পত্য জীবনে "কার্যকর  যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া" ( কমিউনিকেশন ব্রেকডাউন) এবং  স্ব-ইচ্ছায় দাম্পত্য জীবনে ইতিবাচক " বিনিয়োগের " অভাব (লেক অব ইনটেনশনাল ইনভেস্টমেন্ট ইন ম্যারেজ) ।

এছাড়া রয়েছে ঃপরকীয়া প্রেম/দাম্পত্যে অবিশ্বস্ততা ;শারীরিক /আবেগীয় নির্যাতন ;মাদকাসক্তি;যৌন সমস্যা ;মৌলিক বিশ্বাস, মুল্যবোধে বড় ধরনের অমিল;শ্বশুর পক্ষীয় লোকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ ;আর্থিক /সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণে অবহেলা ;যৌতুক বিষয়ক জটিলতা ;ঈর্ষান্বিত পার্টনারের যন্ত্রনা ;সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ও অনৈতিক ব্যবহার ;প্রতিশোধ প্রবনতা;বন্ধু /আত্মীয়দের কাছে নিরন্তর অপর পক্ষের বিরুদ্ধে বদনাম করে যাওয়া ;সন্তানদের কায়দা করে নিজ পক্ষে নিয়ে অপর পক্ষকে( বিশেষ করে স্বামীকে)  জব্দ করার চেষ্টা ;অযত্ন, অবহেলা, পরিত্যক্ত করে রাখা - ইত্যাদি শত কারণ।

তবে যে " যোগাযোগ ঘাটতি /বৈকল্য " এর কথা বলেছি সেটি গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্যে ৪ ধরনের যোগাযোগ সমস্যা দেখা দিতে পারে

ঃ১।আত্ম সমর্পণ বা বিরোধিতা থেকে বিরত থাকা ( ইল্ডিং)-- তিক্ততার এক পর্যায়ে এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে তারা আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে,সমঝোতায় আসতে চেষ্টাই করে না।তারা পারস্পরিক ঘৃনা, অবজ্ঞায় সব ধরনের যোগাযোগ এড়িয়ে চলে- ভাবখানা এমন, এসব নিয়ে আলোচনা বৃথা। ফলে তীব্র ক্ষোভ, বিরক্তি,অসন্তুষ্টি জমতে থাকে ও ধীরে ধীরে বিষন্নতায় ভুগতে থাকে। ২। নিশ্চল/নির্বাক হওয়া( ফ্রিজিং)- এ ক্ষেত্রে তারা কোন বিষয়ে আলোচনা করতে " বিলম্বিত " করার পন্থা নেয় বা স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলে।ফলে নিজেদের মধ্যে বরফাচ্ছাদিত একটি দেওয়াল তৈরি হয়।তাদের মধ্য দিন দিন উদ্বেগ -টেনশন বাড়তে থাকে। ৩। পালিয়ে বেড়ানো ( ফ্লাইট) - নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা অন্য দিকে অধিক মনোযোগ দিয়ে নিজকে ব্যস্ত রাখতে চায়।এভাবে তারা একে অপর থেকে আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।কেউ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে, কেউ মাদকাসক্ত হয়,কেউ পর্ন দেখে, কেউ সারাক্ষণ কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আবার কেউ বা " কাজ পাগল" হয়ে সারাক্ষণ অফিস / ব্যবসা স্হলে দিন গুজরান করে।
৪। যুদ্ধ / প্রতিযোগিতা /প্রতিদ্বন্দ্বীতায় লিপ্ত হওয়া (ফাইট)-- এটি হচ্ছে সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের যোগাযোগ বিপর্যয়। এরা সবসময় একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা,বদনাম করতে থাকে ;অনবরত অভিযোগ, নালিশ করতে থাকে ;খুটিনাটি বিষয়েও সারাক্ষণ ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকে ;তর্ক - বিবাদ তাদের রুটিন ওয়ার্ক;এমনকি মৌখিক ভাবে গালাগালি করে অপর পক্ষকে পরাস্ত করতে না পেরে হাতাহাতি, মারামারিতে লিপ্ত হয়

।এ মারামারিতে কেউ কাউকে বিন্দু মাত্র "ছাড়" দিতে রাজি নয়- তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা যে করেই হোক "জিততে" হবে( যদিও শারীরিক সামর্থ্যে পুরুষ এগিয়ে বলে বাহ্যিক ভাবে মনে হয় পুরুষ জিতেছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে নারী ও তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যায়)। এ যুদ্ধ এমন যুদ্ধ যে তাদের জিদ ও পণ থাকে " না জেতা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবো "। প্রায়  প্রতিদিন তাদের এরকম খন্ড যুদ্ধ চলতে থাকে ও তাদের উভয়ের মধ্যে " ভয়ংকর "সব প্রতিশোধ স্পৃহা জাগতে থাকে( সেটি তালাক দেওয়া থেকে, মামলা, হামলা এমনকি খুন খারাবি কিম্বা আত্মহত্যা) ।

তবে এরকম বেদনাদায়ক চিত্রের পাশাপাশি উজ্জ্বল, সুখী দাম্পত্য জীবনের উদাহরণ ও অসংখ্য। লক্ষ লক্ষ মানুষ তেমন কষ্টদায়ক দাম্পত্য সমস্যা ছাড়াই সুখী,গর্বিত ও আনন্দিত সংসার জীবন যাপন করছেন। তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা পূর্ণ, পরস্পর জিতবে(উইন -উইন)তেমন একটি কার্যকর, গঠনমূলক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হয়ে যায়।
যোগাযোগ একটি দক্ষতার ব্যাপার। তাই সবাই এটি অর্জন করতে পারে। সুখী দাম্পত্য জীবনে থাকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, অন্তরঙ্গতা ও দায়বদ্ধতা। তদুপরি থাকে " পার্টনারশিপ" এর দায়িত্ব -যেখানে দুই ব্যক্তি সারাজীবনের জন্য একে অপরের সঙ্গে মিশে থাকে আবার অন্য দিকে নিজের ব্যক্তিত্বের স্বাতন্ত্র্য ও বজায় রাখে।

ড. সুসান হেইটলার " পাওয়ার অব টু" প্রতিষ্ঠা করেন দাম্পত্য সম্পর্ক পুনর্গঠিত করার জন্য। তিনি দম্পতিদের ৩টি " এল" দক্ষতা অর্জন করতে বলেন( লিশ্চেন,লাভ,লার্ন)।

সেগুলো হলো ১।মনোযোগ দিয়ে শোনা ( লিশ্চেন)- খুঁত, ক্রটির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে যা "সঠিক " ও অপর পক্ষ কি বলতে চাচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। একটি কথা আছে " আমরা (অন্যকে) বোঝার জন্য শুনি না,কি জবাব দিতে হবে তার জন্য শুনি "। এ জন্য কথা কাটাকাটি, গালাগালি, হাতাহাতি হয়।প্রথমে অন্য পক্ষের ক্ষোভ, অভিযোগ, নালিশ সহমর্মিতার সঙ্গে শুনতে হবে।পরে ঠান্ডা মাথায় ও সুকৌশলে ভিন্ন মত থাকলে তা বুঝিয়ে বলতে হবে।২। ভালোবাসা ( ল্যাভ)- ভালোবাসাকে মাঝে মাঝে রিচার্জ করতে হয়,রিনিউ করে নিতে হয়।ভালোবাসা মানে পার্টনারের প্রতি উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি ছুড়ে দেওয়া। প্রতিদিন কিছু ইতিবাচক উষ্ণতা ছড়িয়ে দিন- সমর্থন, উৎসাহ প্রদান, ক্ষমা চেয়ে নেওয়া, সেবা যত্ন,কোমল কন্ঠে ভালোবাসার কথা বলা,জড়িয়ে ধরা। আমার চেম্বারে এক বিবাহিতা রুগিনী স্বামীর বিরুদ্ধে অনুযোগ করে বলেন " প্রতিদিন ভালোবাসলে কি হয়? প্রতিদিন আবেগ থাকলে ক্ষতি কি? এর জন্য তো কোন টাকা পয়সা লাগে না স্যার "।
৩। শিখতে হবে( লার্ন)--দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে হলে কিছু  দক্ষতা অর্জন করতে হয়।আমরা কেউ মায়ের পেট থেকে এগুলো শিখে আছি না।জীবন থেকে এগুলো শিখে নিতে হবেও প্রাকটিস করতে হবে।

এগুলো নিজে ব্যবহার করে দেখুন অন্য পক্ষের আচরনে   ও নাটকীয় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

পরিশেষে বলবো " হয় আমার পথে চলো না হয় রাস্তা মাপো" ( মাই ওয়ে বা হাইওয়ে) এরকম মনোভাব পরিহার করে
" পারস্পরিক বশ্যতা "(মিউচুয়াল সাবমিশন) মেনে নিলে, দাম্পত্য জীবন হবে অনেক সহজ

।প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতার ও জেতার হিংস্র পথ পরিহার করে বিনম্র পারস্পরিক বশ্যতা অবলম্বন করলে ভবিষ্যতের আরো বেদনাদায়ক, অপমানকর       " হারও লজ্জা " থেকে  নিজকে মুক্ত রাখতে পারবেন।

   প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
ইমেইল ঃ drtazul84@gmail.com
Phone :01715112900

Saturday, August 25, 2018

সাইকলজিক্যাল টিপস -৪৯

১। জীবনে হোছট খেয়ে পড়ে যাওয়া
নিতান্ত দুর্ঘটনা মাত্র

কিন্তু পড়ে গিয়ে উঠে দাড়াবেন
         না
পড়েই থাকবেন
সে সিদ্ধান্ত আপনার

২। আমাদের যোগাযোগের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে
আমরা বোঝার জন্য শুনি না
পাল্টা কি জবাব দেবো তার জন্য শুনি
          

Saturday, August 18, 2018

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৫

ফেইসবুকে স্টাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

মুশফিক মাহবুব নামে ঢাকা ভার্সিটির এক ছাত্র সম্প্রতি ফেইসবুকে একটি স্টাটাস দেওয়ার পর আত্মহত্যা করেন।আত্মহত্যার অনেক মনস্তাত্বিক, সামাজিক, শারীরবৃত্তীয় কারন রয়েছে। মুশফিকের স্টাটাস থেকে সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা এরকম চরম সিদ্ধান্তের পিছনে " সমাজতাত্ত্বিক " ব্যাখ্যাগুলো খুজে পেতে গবেষণা করতে পারেন।
মুশফিকের স্টাটাস এর কিছু অংশ এরকম ঃ "সিস্টেমটাই যেখানে করাপ্টেড সেখানে কথা বলার তোমার ন্যূনতম অধিকার নাই... সময় এসেছে বোঝার যে তোমার উচ্চ কন্ঠ কোন কাজেই আসবে না... আমি বাংলাদেশী হিসেবে স্বাধীনতা চাই.. যদি এর জন্য আমাকে মরতে ও হয়।"
কিন্ত সে উল্টো আত্মহত্যা করে বসলো।আত্মহত্যার সামাজিক কারন নিয়ে গুরুত্ব পূর্ণ গবেষণা করেছেন এমিলি ডার্কহেইম(  Emile Durkheim) .। তার গবেষনার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে আত্মহত্যা সে সমাজে বাড়ে যেখানে সামাজিক সংহতি ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকে। তার মতে সামাজিক সংহতি বিনষ্টির কারনে যে আত্মহত্যা তার নাম " ইগোইস্টিক সুইসাইড "; সমাজে " সম্মিলিত শৃংখলার " অভাব হলে যে আত্মহত্যা তার নাম " এনোমিক সুইসাইড "।
আমাদের সমাজে কি সামাজিক সংহতি বা সামাজিক শৃঙ্খলার অভাব দেখা দিচ্ছে না?
অন্য দিকে প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী স্যালিগম্যান বিষন্নতা, হতাশা ও সবশেষে আত্মহত্যার পিছনে উল্লেখযোগ্য যোগ্য কারণ হিসেবে " অর্জিত অসহায়ত্ব " বা আরো ভালো ভাবে বললে  সমাজ   "আরোপিত অসহায়ত্ব " এর কথা উল্লেখ করেন।
এটি এমন এক অবস্থা যেখানে ব্যক্তি এমন এক বেড়াজালে নিজকে  আটক মনে করেন যেখান থেকে বের হওয়ার কোন উপায় তার নেই।বার বার চেষ্টা করে,সংগ্রাম করে সে ব্যর্থ হয়।কোন রকম চেষ্টাই ফলপ্রসূ হয় না।এক সময় সে বিশ্বাস করে নেয় এই বন্ধন থেকে তার মুক্তির কোন উপায় নেই।তাই সে নিশ্চল,নিশ্চুপ হয়ে যায়।এই যন্ত্রণাময়,বিভীষিকাময় অবস্থাকে সে " নিয়তির " নির্মম লিখন বলে মেনে নেয়।কখনো কোন সুবর্ণ সুযোগ আসলেও তখন সে বা তারা মুক্ত হওয়ার কোন চেষ্টাই করে না।সিস্টেমের কাছে এক ধরনের  অসহায় আত্মসমর্পণ করে থাকে।
সেই ঘেরাটোপে আটকে থেকে তারা ক্রমাগত ক্ষোভ, ঘৃনা,হতাশায় জ্বলতে থাকে। মুক্তির একমাত্র পথ তখন মনে হয় আত্মবিনাশ।
এডউইন স্নিডম্যান আত্মহত্যার পূর্বেকার অসহনীয় মানসিক যন্ত্রনার নাম দেন " সাইকো- এ্যাক"( যেমন মাথার যন্ত্রনার নাম হেডএ্যাক)। ফ্রয়েড এর মতে যখন কেউ তার বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীন কোন বিষয় / বস্তু " হারিয়ে " ফেলে তখন তার মধ্যে যে ক্রোধের সৃষ্টি হয় সেটি তার ভেতরে অন্তর্মুখী হয়ে গিয়ে আত্মধ্বংসী রূপ নেয়।সে তখন নিজকে খুন করে ফেলে।
এদিকে কে জেমিসন নিজের আত্মহত্যার চেষ্টার বিবরণ দিতে গিয়ে লিখেন " এন আনকোয়েট মাইন্ড " বা " একটি অশান্ত মন"।
এই যে সাইকোএ্যাক বা মনো-যন্ত্রনা,অন্তর্মুখী ক্রোধ বা অশান্ত মন এর পিছনে সমাজ কতটুকু ভূমিকা রাখে?  মুশফিক লিখেছে আমাদের সমাজ পুরো করাপ্টেড, এখানে পরিবর্তনের কথা বলে কোন লাভ নাই।সে অসহায়ের মতন লিখেছে এখন বোঝার সময় হয়েছে উচ্চ কন্ঠে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হবে না।সে কি এক ধরনের অর্জিত অসহায়ত্বে ভুগছিল? নাকি তার কোন মানসিক রোগ ছিল?
আরো অনেক কিছু না জেনে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে কারণ যা-ই হোক এভাবে আত্মহত্যা কাপুরুষোচিত কাজ।একে মহিমান্বিত করে দেখার কোন উপায় নেই।জীবন কখনো কখনো এমন হতে পারে যে আমরা হতাশা, আশাভঙ্গের কালো গহ্বরে নিপতিত হতে পারি। কিন্তু এর জন্য জীবনের হালছেড়ে দিলে হবে না।আমাদের মনে রাখতে হবে  " ফাটল " না থাকলে ভিতরে " আলো" প্রবেশের কোন স্হান / সুযোগ থাকে না। জীবন যখন কঠোর বাধার মুখে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তখন সে ভাঙ্গা টুকরো গুলোকে একত্র করে আমরা আরো সবল,অভিজ্ঞ ও সমৃদ্ধ মানুষ হতে পারি। চ্যালেঞ্জের সময়ে আমরা আমাদের সুপ্ত সম্ভাবনা, সক্ষমতা ও সামর্থ্য প্রকাশ করার সুযোগ পাই।
তাই জীবনের তিক্ততা, ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাড়াবার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে,জীবন জগতের শুভ, মঙ্গলকর দিকটি বেছে নিতে হবে।আত্মহত্যা পরাজয়ের নাম,আত্ম-অপমানের নাম।মরেও " অপমানিত " হওয়ার লজ্জা যেন আমাদের বয়ে বেড়াতে না হয়।
প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা।
ইমেইল ঃ
drtazul84@gmai.com
Phone :01715112900

Friday, August 17, 2018

সাউকলজিক্যাল টিপস -৪৮ঃঅন্তর ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে? কি করবেন ঃ

পর্ব-১ঃ
জীবন এমনই যে কখনো কখনো তা আমাদের সহ্য সীমার বাইরে ঠেলে দেয়। কিছু সময় এরকম ধাক্কা এতো প্রবল হতে পারে যে আমরা হতাশ, আশাভঙ্গের কালো গহ্বরে নিপতিত হতে পারি।

ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে তার মানে এ নয় যে আপনি জীবনের পুরো হাল ছেড়ে দেবেন।

আপনাকে একটু পিছিয়ে আসতে হবে ও ঐ ভয়ংকর অনুভুতি গুলোকে বের হয়ে আসতে দিতে হবে।

বরং এরকম জীবন অভিজ্ঞতা আমাদেরকে আরো বলশালী করে যাতে জীবন চ্যালেঞ্জকে আরো সক্ষম ভাবে মোকাবেলা করতে পারি।

এরকম ভেঙে পড়া অবস্হায় যা করবেন ঃ

১। মনে রাখবেন "ফাটল " আলো ঢোকার স্হান /সুযোগ করে দেয়ঃ

যদি মাঝে মাঝে ভেঙে না পড়েন( জীবনে ফাটল না দেখা দেয়)  আপনার অন্তর আত্মায় "আলো" প্রবেশের স্হান থাকে না।হ্রদয় বিদারক,মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা অনেক ক্ষেত্রে  জীবন জগতের শুভ, মঙ্গলজনক দিকটি উন্মোচিত করে।

সব সময় ভাল আছি, থাকবো এমন নিস্তরঙ্গ জীবনে " বেড়ে উঠার" সুযোগ তেমন থাকে না,তেমনি জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাড়াবার শক্তি ও অর্জিত হয় না।

জীবন যাত্রা সহজ হবে এই নিশ্চয়তা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না।
যদি তেমনটি হয় আপনি " জীবন বদলে " দেওয়া অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হবেন।

এরকম অভিজ্ঞতা যা আপনাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেবে, তা আপনাকে আরো সবল,অভিজ্ঞ মানুষে রূপান্তর করবে।

যখনি হতোদ্যম হয়ে পড়বেন,বিধ্বস্ত মনে হবে, তখনই মনে রাখবেন, আপনার অনেক সুপ্ত সম্ভাবনা, সক্ষমতা ও সামর্থ্য প্রকাশ লাভ করার সুযোগ ঘটবে।

২। আপনার আবেগ, অনুভুতিকে " মেনে নিন",সম্মান করুন ; এসবের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবেন নাঃ

মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে বা মন বিষিয়ে উঠছে -- এ জন্য আশাহত হবেন না।

যদি আপনি এমন অনুভব না করতেন আপনি "সম্পূর্ণ মানব" হয়ে উঠতে পারতেন না।

কিছু কিছু ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক।

কখনও কখনও সেটি হতে পারে আর্ত চিৎকার,বুক ফেটে কান্না, হাটু ভেঙে ভূতলে গড়াগড়ি।

আপনাকে, আমাকে এসব তীব্র আবেগীয় " ঢেউকে" মেনে নিতে হবে।এসব তীব্র আবেগ ভেতর " চেপে " রাখলে এর প্রবল বিরুপ  প্রতিক্রিয়া হবে।

তাই অন্যদের ভয়ে বা লজ্জায় নিজের আবেগ অনুভূতি লুকিয়ে রাখবেন না।

নিজের অনুভুতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলে এক সময় মনে হবে  পুরো পৃথিবীর " বোঝা " কাধে নিয়ে হাটছেন।

মনের গভীরে যেখানে এসব আবেগ গুলো বাসা বেধেছে সেখান দিয়ে  " বীরের " মতন হেটে যেতে হবে( এড়িয়ে নয়)।
এর ফলে এগুলো নিয়ে কাজ করতে পারবেন, এসবকে ইতিবাচক, গঠনমূলক ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন
( পর্ব -২ঃ আগামী কাল)

Sunday, August 12, 2018

Mindfulness 9

http://www.apa.org/monitor/2012/07-08/ce-corner.aspx

Mindfulness 8

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3679190/

Mindfulness 7

https://thepsychologist.bps.org.uk/volume-28/january-2015/mindfulness-psychology-breath-fresh-air

Mindfulness 7

https://positivepsychologyprogram.com/mindfulness-positive-psychology-3-great-insights/

Mindfulness 5

https://www.psychologytoday.com/us/blog/inviting-monkey-tea/201808/how-thoughts-block-us-being-fully-present

Mindfulness 4

https://www.psychologytoday.com/us/blog/chronically-me/201808/self-compassion-in-chronic-illness

Mindfulness 4

https://en.wikipedia.org/wiki/Mindfulness

Mindfulness 2

https://www.mindful.org/meditation/mindfulness-getting-started/

Mindfulness 1

https://www.mindful.org/mindfulness-how-to-do-it/

Meditation 14

http://mindworks.org/blog/different-types-meditation-technique/

Meditation 13

https://www.medicalnewstoday.com/articles/320392.php

Meditation 12

http://liveanddare.com/types-of-meditation/

Meditation 11

https://visualmeditation.co/7-types-of-meditation/

Meditation 10

https://zenhabits.net/meditation-guide/

Meditation 9

https://www.wikihow.com/Meditate

Meditation 8

https://www.psychologytoday.com/us/blog/black-belt-brain/201808/awareness-action-mind-in-motion

Meditation 7

https://www.psychologytoday.com/us/blog/the-science-willpower/201109/how-meditation-changes-pain-relieves-depression

Meditation 6

https://www.psychologytoday.com/us/blog/the-mindful-self-express/201109/changing-your-brain-changing-your-mind

Meditation 5

https://www.yogajournal.com/meditation/let-s-meditate

Meditation 4

https://www.yogajournal.com/meditation/everybody-s-meditating

Meditation 3

https://www.yogajournal.com/practice/17-poses-to-prepare-for-mindful-meditation

Meditation -2

https://www.gaiam.com/blogs/discover/meditation-101-techniques-benefits-and-a-beginner-s-how-to

Meditation

https://en.wikipedia.org/wiki/Meditation

Saturday, August 11, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস -৪৭

১। সুখী থাকবেন

একারনে নয় যে সব কিছু ভাল যাচ্ছে

বরং একারনে যে

আপনি সব কিছুতে "ভালো" দিকটি দেখে থাকেন

২ অন্তরে শান্তি চান?

তাহলে কোন ব্যক্তি বা ঘটনাকে আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে দিবেন না

Wednesday, August 8, 2018

রোগ কাহিনী -প্রতিদিন ভালবাসলে কি হয়? সব সময় আবেগ থাকলে কি হয়?

কাহিনী সংক্ষেপঃ ৬ বছরের বিবাহিত দম্পতি চেম্বারে এসেছে। এটি তাদের দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে।বউ এর বিয়ে ১ সপ্তাহের মধ্যে তার মা- বাবা ভেঙে দেন।স্বামী যাকে বিয়ে করে সে মহিলা তার প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে চলে যাওয়াতে তিনি ডিভোর্স দেন।যদিও ঐ মহিলা পরে আবার ফেরত আসতে চেয়েছিলেন।

পূর্বের বউ কেন ফেরত আসতে চাইলো এ কারনে বর্তমানের বউয়ের আশঙ্কা ঐ মহিলা যদি সত্যি কখনো চলে আসে?

তারা পরস্পরকে জান দিয়ে ভালোবাসে।তার চাক্ষুষ প্রমান আমি চেম্বারেই দেখতে পেলাম।

তবু ও বউ বলে আমি বিয়ের পূর্বে কখনো প্রেম করিনি। সব সময় চেয়েছি বিয়ের পর হাজবেন্ড এর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করবো। সব প্রেম জমিয়ে রেখেছি স্বামীর জন্য।

কিন্তু তার অভিযোগ সে আকাঙ্খিত ভালোবাসা, আদর পাচ্ছে না।

তিনি কেমন ভালোবাসা চান জানতে চাইলে বলেনঃ

সব সময় বলবে ভালোবাসি ;বলবে সাজো না কেন;শাড়ি পড়ো না কেন;রূপের প্রশংসা করবে; আদর করে খাইয়ে দেবে;অফিস থেকে ফোন দেবে ; আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য অস্হির থাকবে; আমাকে ডাকবে তাকে সময় দেওয়ার জন্য; শুধু রাতে শারীরিক প্রয়োজনে আসবে কেন,তার আগে মিস্টি মিস্টি ভালোবাসার কথা বলবে;হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরবে (এরকম হলে উত্তেজনা পাই,রুটিন নিয়মে রাতে ধরলে তেমন ফিলিংস পাই না; রাস্তায় হাত ধরে হাটবে( যখন হাত ধরে হাটে না তখন রাগ লাগে,তাই দূরে দূরে থাকি); অফিসে যাওয়ার সময় কিস করে কিন্তু চাই আরো কিছু গল্প করুক ;প্রতি রাতে সেক্স হোক না হোক কিছু উত্তেজক,আবেগীয় কথা বলবে; মাঝে মাঝে ফুল এনে দেবে ----

ইত্যাদি বলার পর তিনি বলেন স্যার এগুলো দিতে তো টাকা পয়সা লাগে না।

স্বামী বলে তোমাকে কত গয়না দিয়েছি, সব সময় যা চাও তা দেই,টাকা পয়সা খরচ করি;

স্ত্রী বলে তা ঠিক কিন্তু আমার জন্য কেমন ফিলিং হয় তা বলে না; যদি জিজ্ঞেস করি আমি না থাকলে ( প্রায়ই এসব নিয়ে ঝগড়া করে কিছু দিন বাপের বাসায় গিয়ে থাকি)  তোমার কেমন লাগে বা লাগবে, তার যে অনেক কষ্ট হবে তা বলে না/ বলতে পারে না

এবার জিজ্ঞেস করি কি সমস্যা নিয়ে এসেছেন -

স্বামীর উত্তরঃ ঐ সব প্রত্যাশিত ব্যবহার না পেলে  তার মাথা খারাপ হয়ে যায়--

বাথরুমে গিয়ে শীতের মধ্যে ও ঝর্না ছেড়ে দিয়ে অনেক ক্ষন থাকে ; বারান্দায় গিয়ে শুয়ে থাকে ;ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চায়;ভাংচুর করে; চুল ছিড়তে থাকে, চুল আউলা ঝাউলা করে পাগলের মতন করতে থাকে ; কথা বন্ধ করে দেয়, খাওয়া বন্ধ - ইত্যাদি।

এভাবে ২-৩ দিন অভিমান করে থাকে। স্বামীর ভাষ্য এ ২ দিন তাকে মনে হয়  জ্বীনে ধরে।অনেক তোষামোদি করে আবার ঠিক করি।

কিন্তু কয়েকদিন পর আবার একই ঘটনা

।তিনি আরো বলেন, ও চায় আমি ঔষধ খেয়ে যৌন চাহিদা বাড়াই অথচ সপ্তাহে ৪/৫ দিন আমাদের ফিজিক্যাল রিলেশন হয়।

আমি স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করি ৬ বছর বিবাহিত জীবন-যাপনের পর কতজন স্বামী এতো বেশি রোমান্টিক থাকে? 

সে বলে কেন সব সময় আবেগ থাকলে কি হয়?

সব সময় ভালোবাসলে কি হয়?

এ কেইস হিস্ট্রি থেকে যা আমরা শিক্ষতে পারি

১। আমাদের কাছে ( মনোচিকিৎসক)  শুধু তথাকথিত "পাগল" রোগী আছে না, ব্যক্তিগত, পারিবারিক সমস্যা নিয়ে ও অনেকে এসে থাকেন। বরং এদের সংখ্যা বেশি

২। উত্তাল, উদ্দাম,মাতাল করা প্রেম শুধু বিয়ের পূর্বে থাকে তা নয়,কারো কারো জীবনে বিয়ের পরও সেই কৈশোর কালের প্রথম প্রেমের মতন মাদকতাময় ভালোবাসা জাগ্রত থাকতে পারে

৩। প্রেমে শারীরিক চাহিদা যেমন থাকে তার চেয়ে বেশি থাকে আবেগীয় চাহিদা

৪। বিবাহিত ও বাস্তব জীবন আর কাল্পনিক, রোমান্টিক জীবনের পার্থক্য অনেক "অবুঝ " বালিকার(?) নাও থাকতে পারে। তবে তা অন্য পক্ষের উপর বিশাল চাপ সৃষ্টি করে ও নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি করে

৫।সংসার টিকে থাকে নির্ভেজাল ভালোবাসার উপর। এ দম্পতির এতো ঘটনার পরও তাদের মূল বন্ধন অটুট রয়েছে পরস্পরের প্রতি তাদের সত্যিকার ভালোবাসা রয়েছে বলে

৬। কেন আরো ভালোবাসে না,কেন আরো কেয়ারিং না, স্বল্প মাত্রায় তেমন চাহিদা থাকলে রোমান্চ জমে,তবে এ যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়,অবাস্তব ও কল্পনা মিশ্রিত হয় তা জটিলতা ও তিক্ততা সৃষ্টি করতে পারে