Friday, December 22, 2017

রোগ কাহিনী -২৪: চা- বিস্কুটের দোকানদার দোকানে বসে কিন্তু কিছু বিক্রি করে না,বলে দেয় তার কাছে কিছু নাই

কাহিনী সংক্ষেপ :
মো. মোজাম্মেল, বয়স ৪৪।চা সহ পানীয়,বিস্কুট বিক্রি করে সংসার চালাতো।কিন্তু ইদানীং সে দোকানে যেতে চায় না,বউ জোর করে পাঠায়।
কিন্তু সে দোকানে গিয়ে বসে থাকে, কিছু বিক্রি করে না।অবস্হা এমন দাড়িয়েছে তাদের এখন পথে নামতে হবে ভিক্ষা করতে।কেননা একমাত্র উপার্জনের উৎস ছিল ঐ দোকানের আয়।

অতীত ইতিহাস বলে তিনি বিগত ১৫ বছর  ধরে স্ত্রীকে সন্দেহ করে আসছেন,অন্য পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে কিনা এ নিয়ে।

বার বার দোকান থেকে ঘরে ফিরে আসতেন , কেননা তার মনে হতো কেউ বাড়ীতে ঢুকে কিছু নিয়ে গেলো কিনা? 
২০১৬ সালে তার হার্টের বাই- পাস অপারেশন হয়। এরপর বাসায় ফিরে তার সন্দেহ হয় ঐ অপারেশনের ডাক্তার তার কিডনি খুলে রেখে দিয়েছে।বউকে বলে আমাকে পরীক্ষা করে দেখাও সত্যি কিডনী নিয়ে গেছে কিনা।তারা ডাক্তার দেখায়,আল্ট্রাসোনোগ্রাম করায়।ডাক্তার দেখায় যে কিডনি আছে।

এরপর শুরু হলো চায়ের পাতিলের ঢাকনা খোলা কিনা তা নিয়ে সন্দেহ।তার ধারনা পাতিল খোলা মাত্রা পোকামাকড়, জীবানু এতে পড়ে যায় এবং সে চা খেলে মানুষের ক্ষতি হবে।এ জন্য কিছুক্ষণ পর পর ঢাকনি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতো।

এভাবে রোগ বাড়তে লাগলো।এখন মনে হয় দোকানের মালপত্র সব মেয়াদ উত্তীর্ণ, ডেট চলে গেছে এসব কেউ খেলে তার ক্ষতি হবে।তাই সে ঐ সব পন্য বিক্রি করতো না।

সে দোকানে যেতে চাইতো না,কান্নাকাটি করতো।বউ জোর  করে পাঠাতো, দোকানে না গেলে সংসার চলবে কেমনে?

বাধ্য হয়ে দোকানে গিয়ে বসে থাকতো। কেউ চা চাইলে না করতো যে চা নেই।তার ধারনা হয়তো বিষ বা ক্ষতিকর কিছু রয়েছে তা খেয়ে লোক মারা যাবে ও পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যাবে।

কাস্টমার এসে পানি,ফলের জুস,বিস্কুট চাইলে বলতো নাই। কারন তার সন্দেহ এগুলোর ডেইট শেষ হয়ে গেছে।মেয়াদ উত্তীর্ণ এগুলো খেয়ে মানুষ মারা যাবে।
বিশেষ করে বড় অফিসারদের কাছে কোন ভাবেই কিছু বিক্রি করতো না,কেননা এরা ক্ষমতাশালী । ডেট নেই জিনিষ বিক্রির  জন্য তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবে।

সে বলে স্যার বুঝি চিন্তাগুলো ঠিক না,কিন্তু মন মানে না,সব বুঝি তবে মনকে মানাতে পারছি না।

এই রোগের জন্য বহু চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন উপকার হয়নি।
যারা কিছু পড়াশোনা করেছেন ও যারা সাইকিয়াট্রিস্ট তারা চট করে ডায়গনসিস করে বলবেন ও এতো ওসিডি( অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার) ।

কিন্তু অনেক মনোচিকিৎসক  তাকে পূর্ন ডোজ ও দীর্ঘ মেয়াদে ওসিডির ঔষধ ও রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করলে ও কোন ফল পাওয়া যায়নি।আবার এন্টি সাইকোটিক দিয়ে ও ফল পাওয়া যায়নি।

গত রোগ কাহিনী কুইজ হিসেবে দিয়েছিলাম সাধারন পাঠকদের জন্য। আজকেরটি সাইকিয়াট্রিস্টদের জন্য ও কুইজ।
১। এটি ওসিডি
২। এটি ডেলুসনাল ডিসঅর্ডার - প্যারানয়েড টাইপ
৩। এটি সিজোফ্রেনিয়া

স্বপক্ষে যুক্তিসহ মন্তব্য চাচ্ছি

মানসিক রোগে মানুষ মারা না গেলেও তার কষ্ট কতো,তার জীবন ও সংসার কিভাবে পঙ্গু হয়ে যায় এ কাহিনী তার সাক্ষ্য  ।
মানসিক রোগকে অবহেলা করবেন না

Wednesday, December 13, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস-৩৫: ( মুক্তির) পথ আকাশে থাকে না,তা থাকে রিদয়ে "

পর্ব-১:

কাউকে একটি  টি- শার্ট দিলাম সে সেটি অনায়াসে গায়ে পরে ফেলতে পারবে।এটি সহজ কাজ।কিন্তু কোন  উদ্দীপনামূলক বানীর সঠিক অর্থ অনুধাবন করে আত্বস্হ করা তত সহজ কাজ নয়।আমি এই " সাইকোলজিক্যাল টিপস" বিভাগে অনেক তেমন  আত্ম নির্মান মূলক উক্তি দিয়েছি কতজন তার সুফল পেয়েছেন বা পাচ্ছেন?

সুফল না পাওয়ার দায় কিন্তু আমার উপর বা ঐ উক্তির উপর দিয়ে  দায় ছাড়লে চলবে না।আপনি  সে উক্তিগুলোর অর্থ কত গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং সে অনুযায়ী নিজের চিন্তা,দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনকে কতটুকু বদলে নিতে পেরেছেন, সুফল নির্ভর করে তার উপর।

আজ ও আমি মহামতি বুদ্ধের কিছু অমর বানী আপনাদের শুনাবো যা আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে:

১। " স্বাস্থ্য হচ্ছে সর্বোত্তম উপহার,মানসিক সন্তুষ্টি হচ্ছে সর্বোত্তম সম্পদ,বিশ্বাসপূর্নতা হচ্ছে সর্বোত্তম সম্পর্ক "

আমি প্রায়ই এই কথাগুলো বলি ও বিশ্বাস করি যে অর্থ- বিত্ত,খ্যাতি,জ্ঞান ও ক্ষমতা সব কিছু অর্থহীন মনে হবে যদি আমরা অসুস্থতায় ভুগি।সেটি শারিরীক বা মানসিক অসুস্হতা যেটিই হোক না কেন।

জীবন ও পৃথিবীকে সর্বোচ্চ পরিমানে উপভোগ  করতে হলে উত্তম স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।

অর্থ সম্পদ নিশ্চয় প্রয়োজন ও কাজে লাগে, কিন্তু মনের ভিতরকার প্রশান্তি ঐ সব বৈষয়িক সম্পত্তির চেয়ে সুখী হওয়ার জন্য অধিকতর শক্তিশালী অস্ত্র।

নিজের প্রতি এবং নিজের মত ও পথের প্রতি বিশ্বাস থাকা, নিজের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রধান শর্ত।

আর নিজের সঙ্গে নিজের উত্তম সম্পর্ক ব্যতিরেকে আমরা কেউ সুখী হতে পারবো না।

২ । " কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারে না একমাত্র আমরা নিজেরা ছাড়া। কেউ তা পারে না এবং কেউ তা করবে ও না।আমাদের পথ আমাদেরই অতিক্রম করতে হবে "

আপনি কাউকে সাহায্য করতে চেষ্টা করতে পারেন বা আপনি চিরদিন অপেক্ষায় থাকতে পারেন কোন একজন এসে আপনাকে উদ্ধার করবে।

কিন্তু এসব চেষ্টা বা অপেক্ষা কোন কাজে আসবে না, যে পর্যন্ত না কেউ নিজে পরিবর্তিত না হয় বা পরিবর্তনের জন্য  প্রতিজ্ঞা বদ্ধ না হয়।

অন্য কোন কিছুই তাকে পরিবর্তন করতে পারবে না ( মাদকাসক্তি চিকিৎসায় আমরা তাই রোগীর মটিভেশন বাড়ানোর উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে থাকি) ।

যদি পরিবর্তন চান, আগে নিজের ভিতর পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা, বাসনা জাগিয়ে তুলুন ( এটিকে আমরা মটিভেশন বলি) ।

আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলে নিজেই পথে নেমে পড়বেন ও যাত্রা শুরু করবেন।এভাবে পথ যত বন্ধুর হোক তা পেরিয়ে যেতে পারবেন

আর তা নাহলে, সে পথ কখনো পার হওয়া সম্ভব হবে না
( ২য় পর্ব- আগামী কাল)

Thursday, November 30, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস-৩৪: পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত যা ৬৫% উদ্বেগ কমাতে পারে

উদ্বেগ কমাতে মিউজিক থেরাপি - সঙ্গীত চিকিৎসা

Arthur somers roche বলেন" উদ্বেগ হচ্ছে ভয়ের হাল্কা ধারা,যা মনের ভিতর দিয়ে চুয়ে চুয়ে পড়ে।এভাবে এটি একটি চ্যানেল তৈরী করে ফেলে, যার মধ্য দিয়ে সব চিন্তা বের হয়ে যায়"।

গবেষনায় বলে ৪ কোটি আমেরিকান উদ্বেগে ভুগে।বাংলাদেশে কম হলেও ২ কোটি।উদ্বেগ- টেনশন হার্টের সমস্যা, পেটের সমস্যা, বিষন্নতা,হাপানি এমনকি মুটিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ও ঝুকি হিসেবে কাজ করে।

Harvard and Stanford business school  এর  ২০১৫ এর ওয়ার্কিং পেপার  এ বলা হয়, চাকরি বা কর্মক্ষেত্রের চাপ হার্টের রোগ,রক্তচাপ যেমন বাড়িয়ে দেয় তেমনি মানসিক স্বাস্হ্যের ও অবনতি ঘটায়- যার ফলে বিশ্বে প্রতি বছর ১ লক্ষ  ২০ হাজার মানুষ মারা যায়।

Dr david lewis hodgson এর নেতৃত্বে মাইন্ড ল্যাব ইন্টারন্যাশনাল এর গবেষকরা একটি কমিশন গঠন করেন, যাতে পৃথিবীর সেরা গান কোনটি যা উদ্বেগ কমিয়ে রিলাক্স করতে পারে,তা খুজে বের করতে পারেন।

তারা Enya,Mozart,coldplay সহ অনেক গান ৪০ জন মহিলাকে শোনান, দেখতে কোন গানটি সবচেয়ে বেশী উদ্বেগ কমাতে পারে।গবেষনায় তারা দেখতে পান "  weightless" গানটি সর্বোচ্চ ৬৫% পর্যন্ত উদ্বেগ কমাতে পেরেছে।

ব্রিটিশ একাডেমি অব সাউন্ড থেরাপির প্রতিষ্ঠাতা লিজ কুপার ব্যাখা দেন কিভাবে  সঙ্গীত শরীর মনকে প্রভাবিত করে-

" ( গানটিতে) স্হায়ী রিদম রয়েছে যা শুরু হয় প্রতি মিনিটে ৬০ বিট করে।ক্রমান্বয়ে যা ৫০ এ নেমে আসে।যখন গানটি শুনবেন আপনার হার্টবিট ও এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে।গানটি ৮ মিনিটের, কেননা এই প্রক্রিয়া শেষ হতে ৫ মিনিট লাগে"

Monday, November 20, 2017

রোগ কাহিনী -২৩: স্যার,গাজাখোরদের রুখতে গিয়ে নিজেই গাজা সেবী হয়ে গেলাম

আমি রোগ কাহিনী লিখি নিছক কোন বিশেষ রোগ কি,কেন,প তা বলার জন্য নয়।এগুলো বই পড়লেই জানা যায়।আমি লিখি সে সেসব কাহিনী যেগুলো থেকে সমাজ,পরিবার,জনগনকে কিছু ম্যাসেজ দিতে পারি। সচরাচর এর মতন কাহিনী শেষে এবার ও কিছু ম্যাসেজ দিচ্ছি।

কাহিনী সংক্ষেপ : আহমেদ ( ছদ্মনাম) , বয়স ২৪। বিবিএ এর শেষ বর্ষের ছাত্র। ইন্টার পড়ার সময় ম্যাচে থেকে পড়তো।ওখানে ১ ছেলে তার দলবল নিয়ে গাজা খেতো।দুর্গন্ধে রুমে থাকা কঠিন হতো।আহমেদ বুঝতে পারতো না এগুলো কিসের গন্ধ।তখন পর্যন্ত গাজা কি তা সে চোখে দেখেনি।সে এ নিয়ে তার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করে।বড় ভাই বল ওরা গাজা খায়,তাই এ দূর্গন্ধ,তুমি এদের এভয়েড করে চলেো।

আহমেদ বলে, কিন্তু তারা এতো বেশী পরিমানে খাওয়া শুরু করে যে আমার লিমিট ক্রস করে।তদুপরি ঐ দিন আমার  এক রিলেটিভ আসে,যাকে সে গালি দেয়।রিলেটিভ রুমের ভিতর ছিল।সে গাজা খেয়ে টাল হয়ে আসে।রিলেটিভ দরজা খুলতে দেরী হওয়াতে সে দরজায় লাথি মারে।এ নিয়ে বাদানুবাদ হয় ও সে রিলেটিভকে গালিগালাজ করে।রিলেটিভ তার নেশার কথা তার বাবাকে বলে দেবে বলাতে সে বলে,বলে লাভ নেই বাবা সবই জানে।

পরদিন সকালে সে তার নেশাখোর বন্ধুদের নিয়ে গাজা টানছে,আমি বলি এতো পোলাপান কেন? বের হও।তারা পাত্তা দেয় না।তখন অন্য  বড় ভাইদের ঢেকে এনে প্যাঁদানি দেই( চড়- থাপ্পড়, ধাক্কা ধাক্কী)। সবাইকে বললাম এর সঙ্গে কেউ মিশবে না,কারো রুমে সে যেতে পারবে না।

পরদিন রাতে এসে সে আমার পা ধরে কান্নাকাটি করে।আমার মন নরম হয়ে যায়।এরপর তার বাবা আসে এবং  তিনি ও বলেন বাবা আমার ছেলেকে দেখে রাখি ও, আমি ওকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।

তার বাবা জানায় সে ছোটকাল থেকেই নেশা করে।তার বাবা হচ্ছে শ্রমিক লীগের নেতা।ছেলেকে ভালো করার জন্য তাকে ৬ মাস জেলে ও রাখেন।সে লাখ লাখ টাকা বিনষ্ট করেছে।বাইক চালিয়ে কয়েকবার এক্সিডেন্ট করেছে।পরে সে বাইক ও বিক্রি করে দেয়।

এ সব শুনে আমার মন আরো নরম হয়।ঐ ছেলে আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক করে।৬ মাস তার সঙ্গে চলি।একদিন সে আমাকে ঢেকে বলে আজকে তোকে এমন একটি জিনিস দেবো, খেয়ে যদি ভালো না লাগে আর কখনো খেতে বলবো না।শুধু একটি টান দিবি মাত্র। এতোদিন তোদের সব কথা শুনছি আজ আমার একটি কথা রাখ,মাত্র একটি টান.. ।

আমি এক টান দিলাম- বমি হয়ে গেলো,চোখ লাল হলো,শরীরে একটি ঝাকি অনুভব হলো।তাকে বলি কি খাওয়ালি,মারবি নাকি আমায়?  এরপর শুয়ে পড়ি ও অনেকদিন পর একটি ভালো ঘুম হয়। ৪-৫ দিন পর অন্য এক বন্ধুর বার্থ ডে পার্টিতে কিছু নেশাখোর ও অপরাধী বন্ধু হাজির হয়।তারা দেদারসে মদ খাচ্ছে, বলে খাও।আমি বাসায় চলে যাই।তারা মনে করছে আমি রাগ করেছি,তাই তারা আমাকে নিতে আসে।সেখানে গেলে দেখি তারা গাজা খেয়ে রুম ধুয়ায় ভরে ফেলেছে

আমি মনে মনে ভাবি,এরা এতে কি মজা পায়? এসব তো করে লো ক্লাশের লোকেরা।এক বন্ধুকে বলি এরা এ সব থেকে কি পায়?  সে বলে খেয়ে দেখ।আমরা ৪ বন্ধু ছিলাম,ভার্সিটির ও মেডিকেলের বন্ধু ছিল।ওদের একজন বলে এতে যদি কিছু না থাকতো লালন এগুলো নিতো কেন? রাজনীতি করলে,সাহিত্য করলে এগুলো লাগে।নাহলে কবিতা,সাহিত্য হয় না।

১ সপ্তাহ পর  আমার গার্ল ফ্রেন্ড বলে ফ্যামিলি বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, পড়াশোনা করে কি হবে বিদেশ চলে যাও।অন্য এক বন্ধু বলে এই মেয়ের সঙ্গে আরো অনেকের সম্পর্ক আসে।এ সব কারনে  মন খুব  খারাপ হয়। ঐ বন্ধুকে ঢেকে ৫০ টাকা দেই গাজা আনতে( তখন আমার খুব কান্না পাচ্ছিল) । সে গাজা আনে।আমি খাই আর বমি করি।এভাবে রাত ২টা পর্যন্ত নেশা করি।সবাই তখন জেগে যায়।তখন তাদেরকে বান্ধবীর কথা বলি
।বান্ধবীকে না জানিয়ে তার কলেজে যাই।গিয়ে শুনি সে নাই।খোজ নিয়ে জানি তার বান্ধবী ও তার বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে গেছে।আরো গোয়েন্দা লাগিয়ে জানি সে রাতে কার সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলে।
মন খুবই খারাপ হয়ে যায়।রুমে ওরা মনির খান,আসিফের গান বাজাতো। এতে আমি ক্ষিপ্ত হতাম।ঐ বন্ধু বলে ঐ মেয়েকে ভুলতে চাইলে এটি খাও।খেয়ে দেখি কিছুটা ভুলে থাকা যায়।এভাবে নেশা পুরোদমে শুরু হলো।

একটানা ৪ বছর নেশা করি।পরে ফ্যামিলি জেনে যায়।আমি নিজেই জানতে চেষ্টা করি এটির গুনাবলি ও ক্ষতির কথা।নিজকে প্রশ্ন করি এটি খেয়ে কি লাভ হলো?
কারা খাচ্ছে?  জানলাম লালন খেতো না,নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ও খেতো না।আমার ভবিষ্যৎ কি হবে? এসব আত্ম জিজ্ঞাসা করে উপলব্ধি করি ভুল করেছি।ভবিষ্যৎ অন্ধকার।তাই নিজ চেষ্টায় ১ বছর আগে নেশা ছেড়ে দেই।

তবে যারা আমার সঙ্গে গাজাখোরদের রুখতে চেয়েছিল তাদের অনেকেই আমার মতন নেশায় জড়িত হয়ে পড়ে এবং এখন ও নেশায় ডুবে আসে,বের হতে পারছে না।ইনশাল্লাহ আমি পেরেছি।

তবে এরপর থেকে বিবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।একজন নিউরোলজিস্ট দেখাই।তিনি এমআরআই থেকে শুরু করে অনেক পরীক্ষা করান ও অবশেষে মানসিক রোগের ঔষধ দেয়,কিন্তু কারো কাছে রেফার করে না।

।পরে প্রফেসর কাজী দীন মোহাম্মদ স্যারের কাছে গেলে তিনি আপনার কাছে রেফার করেন।

এ কেইস থেকে যে ম্যাসেজ আমরা নিতে পারি:

১। মাদক নেশা যে কাউকে আক্রান্ত করতে পারে।এমনকি যারা এগুলো খারাপ জেনে প্রথমে প্রতিরোধ করতে যায়,তাদের অনেককেই পরে নেশাগ্রস্ত হতে দেখেছি।তাই সবাইকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে।

২। নেশা  করে সাধারনত ছোট কাল থেকে বখে যাওয়া,আচরন সমস্যা গ্রস্ত ছেলে মেয়েরা।যেমন আহমেদ এর ঐ বন্ধু।এরা অল্প বয়স থেকে নেশা শুরু করে,অপরাধে জড়িত থাকে,ভালো করা কঠিন।তবে ভদ্র, সুবোধ, মেধাবী,ভালো ছেলে মেয়েরা ও নেশার জগতে ঢুকে পড়তে পারে।যেমন আহমেদ। এরা সাধারনত পরিস্হিতির শিকার হয়,অপরাধ প্রবনতা তেমন থাকে না এবং তুলনামূলক ভাবে ভালো করা সহজ।

৩। নেশার ব্ল্যাক হোল গহ্বর থেকে বেরুতে হলে দুটি বড় গুন অর্জন করতে হয়: এক হচ্ছে নেশা করার খারাপ দিক ও ভালো দিক সম্বন্ধে ব্রেইনের অবচেতন মনের নেট  ক্যালকুলেশন( পারসিভড লাভ- ক্ষতির হিসাব)। আমরা সবাই  যেমন জানি মাদক নেশা খুব খারাপ জিনিস,মাদকাসক্তরা এরচেয়ে ভালোভাবে জানে এটি কত ক্ষতিকর। তথাপি তারা নেশা ছাড়তে ভিতর থেকে তেমন মোটিভেশন পায় না কেন?

তার কারন আসক্ত ব্রেইনের এই লাভ- লোকসানের ক্যালকুশেন সম্পূর্ণ ভিন্ন।ব্রেইন সার্বক্ষণিক ভাবে প্রনোদনা দেয়,মোটিভেট করে, উদ্বুদ্ধ করে মাদক নেওয়ার জন্য, কেননা তার অন্তর্গত হিসেব হচ্ছে মাদক খুবই আনন্দদায়ক, এটি ছাড়া সে অচল,জীবন আনন্দহীন ও কষ্টের।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে পারসিভড কমপিটেন্সী- যত দুরুহ হোক,কঠিন হোক আমি এর উপর বিজয় অর্জন করতে সক্ষম। আমি পারবো এই প্রবল বিশ্বাস ও আস্হা।অথচ বিভিন্ন কারনে মাদকাসক্তদের মধ্যে এই পারসিভড কম্পিটেন্সীর ঘাটতি থাকে।তাদের অবচেতন মন বিশ্বাস করে নেশা ত্যাগ
করা অসম্ভব, কোন চিকিৎসায় এটি ভালো হয় না।আমি আগে পারিনি ও কখনো পারবো না।

মাদকাসক্তির যত চিকিৎসার কথা বলা হোক, সব চিকিৎসার মূল বিষয় হচ্ছে রোগীদের ভিতর  পারসিভড বেনিফিট এর ক্যালকুশেন বদলিয়ে এটি যে সাময়িক আনন্দের চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির কারন তা রোগীর অবচেতন মনে বার বার সচেতনভাবে জাগরূক রাখা।

এর সঙ্গে তাদের পারসিভড কম্পিটেন্সীর ধারনা বদলে দিয়ে অবচেতন মনকে বিশ্বাস করানো ও আস্হায় আনা যে তারা মাদক মুক্ত থাকতে সক্ষম।এ দুইটি কাজ যে কাউন্সিলর যত ভালোভাবে করতে পারবে তিনি তার রোগীকে তত উত্তরনের পথে নিয়ে যেতে পারবেন।

আহমেদ  আচরন সমস্যা গ্রস্ত ছিল না,মেধাবী ছিল,পরিস্হতির শিকার ছিল,সর্বোপরি সে নিজেই উদ্যোগী হয়ে গাজার ক্ষতির ও ভালো দিক,নেশা কারা করে,এর আদৌ কোন উপযোগীতা আছে কিনা- ইত্যাদি জেনে নিজ ইচ্ছাশক্তির বলে এ ফাদ থেকে বেরুতে পেরেছে।

৪। তবে দীর্ঘ দিন মাদক নিলে ব্রেইনে কিছু পরিবর্তন ঘটে যায়।তাই মাদক ছাড়লেও অনেক শারিরীক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে
যা আহমেদ এর বেলায় ও ঘটছে।যদি এগুলোর ভালো চিকিৎসা না হয়,যেকোনো সময় তারা আবার মাদক নেওয়া শুরু করতে পারে।রোগী ও অভিভাবকদের তাই মনোচিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহন অব্যাহত রাখতে হবে।

৫। মানসিক ও মাদকাসক্তি চিকিৎসা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাজ।অন্য কারো কাছে এরা গেলেও যথাযথ জায়গায় রেফার করা বান্চনীয়

Friday, November 17, 2017

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল-১৮: পারিবারিক হত্যা,পারিবারিক বিরোধ ও পরকীয়া প্রেম সমাচার

অতি সম্প্রতি দুটি পারিবারিক হত্যার খবর জনগনের মনে তীব্র আলোড়ন তুলেছে।স্ত্রী কর্তৃক পরকীয়া প্রেমের কারনে নিজ মেয়ে ও স্বামীকে হত্যা,সম্পত্তির হাতিয়ে নেওয়ার লোভে স্ত্রী সহ নিজ ছেলে হত্যায় স্বামীর সংশ্লিষ্টতার খবরে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে পারিবারিক বন্ধন কি শিথিল হয়ে পড়েছে? দাম্পত্য প্রেম কি পরকীয়া প্রেমের কাছে হার মানছে?

যেকোনো হত্যাকান্ডই ঘৃনিত ও নৃশংস কাজ।আর তা যদি হয় নিজ স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারেরই অন্য কোন সদস্য দ্বারা তখন তা হয় আরো ভয়াবহ,মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আমাদের পারিবারিক প্রথা,বন্ধন ও দাম্পত্য সম্পর্কে কি মৌলিক কোন অবক্ষয়, জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে? মনোচিকিৎসক হিসেবে এবিসি রেডিওতে প্রতি রবিবার " যাহা বলিব সত্য বলিব" নামে একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকি।এ অনুষ্ঠানে একজন অপরাধী তার সারা জীবনের অপরাধের কনফেশন দিয়ে থাকে।বিচিত্র অপরাধের মধ্যে অনেক পারিবারিক নিষ্ঠুর, নির্মম অপরাধের কাহিনী ও সেখানে শুনতে হয়েছে।সে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে পারিবারিক এ ধরনের হত্যা,বিরোধ ও সঙ্কট এর মনো- সামাজিক কারন নিয়ে লিখার ইচ্ছে ছিল।তবে স্হানাভাবের কথা চিন্তা করে এতো বড় ক্যানভাসে আলোচনা না করে শুধু  পারিবািরিক হত্যা ও বিরোধের পিছনে দাম্পত্য প্রেমের ঘাটতি ও পরকীয়া প্রেমের জটিল রসায়নের ভূমিকা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।

পরকীয়া বা পরস্ত্রী গামিতা,পরস্বামীগামিতা হচ্ছে বৈবাহিক বন্ধন হেতু  নিজ স্ত্রী বা স্বামীর প্রতি মানসিক ও যৌনগত ভাবে যে " বিশ্বস্ততা,আনুগত্য " ( লয়েলটি) রক্ষা করে চলার কথা,সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা।দাম্পত্য জীবন শুরু করা মানে এই পবিত্র ও স্হায়ী সম্পর্কের "সীমারেখা "( বাউন্ডারি)  স্পস্টভাবে জানা ও আজীবন তা বজায় রাখা।এটি শুধু ধর্মীয়,সামাজিক দায় নয়,এটি নৈতিক দায় ও বটে।এই " সীমারেখা " বজায় রাখতে হবে শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত, অবান্চিত কোন তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশ রোধ করতেই নয়,পরিবারের সবার স্বার্থে ও।এর জন্য প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনে শত আবেগীয় ও যৌনকর্ম " প্রলোভন, প্ররোচনা" থেকে নিজকে " নিয়ন্ত্রণ " রাখা।

তবে কখনো কখনো স্বার্থপরতা,হিংসা,ঈর্ষা, ক্রোধ, লালসা,কামনা পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল ও দাম্পত্য সম্পর্কের " দেয়ালে" ফাটল ধরাতে পারে।বিবাহিত জীবনের " আনুগত্য, বিশ্বস্ততার"যে বাউন্ডারি  তাই সেটিকে কিভাবে মজবুত,পোক্ত করতে হবে প্রত্যেক বিবাহিত নর নারীর সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।

পেরেল(perel) তার " দ্যা স্টেট অব এ্যাফেয়ার" বইতে পরকীয়াকে ক্যানসারের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, জীবন যন্ত্রনার একটি অন্যতম কারন এই পর নারী/ পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক,অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া।স্রাউট ও উইগেল(২০১৭) এ নিয়ে একটি তত্ব দেন ও বলেন পরকীয়া সম্পর্ক ভুক্তভোগীর মনে  ক্রোধ, অশান্তি, শোক,অবিশ্বাস ও অশেষ মনো- যন্ত্রনার সৃষ্টি করে।নপ ও তার সহযোগীরা( knopp) তাদের আর্টিকেল " আর্কাইভ অব সেক্সুয়েল বিহেভিয়ার "- এ উল্লেখ করেন পরকীয়া, দম্পতিদের " আত্ম- পরিচিতির" মর্মস্হলে আঘাত হানে।এর ফলে দাম্পত্যের যে " ট্রাস্ট রাডার " সেটি বিনষ্ট হয়।

ফিনচান ও মে (Finchan and May-2017) তাদের গবেষনায় দেখিয়েছেন ২-৪% নর নারী প্রতি বছর বিবাহ- বহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং সারাজীবনে কারো এরকম সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ২০%। শুধু আমাদের দেশের মতন রক্ষনশীল দেশেই নয়,সব দেশেই বিবাহ- বহির্ভুত যৌন সম্পর্ককে নিন্দা করা হয়।এক জরীপে দেখা যায় আমেরিকার ৭৭% মানুষ পরকীয়াকে " সব সময়ই ভুল" মনে করেন।

তবে মনে রাখতে হবে প্রকৃতি " একগামিতা"( মনোগেমি) নয় বরং " বহুগামিতাকে"( পলিগেমি) ও অনুমতি দেয়।বিবর্তন মনোবিজ্ঞান তত্বে বলা হয় " একগামিতা" সন্তান উৎপাদনে পুরুষের যত খুশী নারীর সঙ্গে মিলনে বাধা হয়ে দাড়ায়।আবার জীনগত উত্তম ও কাঙ্খিত পুরুষ নির্বাচনে একগামিতা নারীর পথে ও বাধা।তাই শতভাগ বিশ্বস্ততা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এ ছাড়া কোমল,সংবেদনশীল,শৈল্পিক মনে সহজে রঙ ছড়ায়।অনেকে মনে করেন অল্প বয়সের কারনে দাম্পত্য জীবনের প্রথমদিকে এরকম পরকীয়া ব্যাপার বেশী ঘটে।তবে গবেষনায় বলে তরুন বয়সে স্বামী- স্ত্রী পরিবার,সন্তান ও নিজদের ভালো মন্দ বিষয়ে এতো বেশী " বিনিয়োগ " করে যে, তারা কমই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে।বরং সন্তানরা বড় হলে সে ঝুকি বেড়ে যায়।তবে সব কিছুরই ব্যতিক্রম আছে।

পরকীয়ার নানান রকমফের আছে।যেমন :  সাধারন ভাবে- যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ( সেক্সুয়াল এ্যাফেয়ার)বা আবেগ ও মানসিক ভাবে জড়িয়ে পড়া ( ইমোশনাল  এ্যাফেয়ার) অথবা উভয়ভাবে জড়িয়ে পড়া।

আরো হতে পারে ১) সুযোগ সন্ধানী পরকীয়া- স্বামী - স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও বন্ধন ঠিকই থাকে,কিন্তু কাম- লালসার কারনে তারা অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী করে।২) বাধ্যতাজনক পরকীয়া -"ভয় বা অনুমোদন " পাওয়ার জন্য কেউ কেউ সম্পর্ক তৈরী করে।অফিসের বসকে হাত করতে কেউ তেমনটি করতে পারে।৩) রোমান্টিক পরকীয়া - এদের মধ্যে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি তেমন আবেগীয় আকর্ষণ থাকে না।তারা অন্য নর নারী থেকে মানসিক চাহিদা খুজে বেড়ায়।৪) দ্বন্ধমূলক রোমান্টিক পরকীয়া - একই সময়ে তারা একাধিক নারী বা পুরুষের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও যৌন আগ্রহ অনুভব করে।এটা বেশ জটিল পরিস্হিতি।এরা হয়তো কাউকে আঘাত করতে চাচ্ছে না,কিন্ত শেষ পর্যন্ত সবাই আহত হয় ৫) স্মৃতি রক্ষাকারী পরকীয়া - এরা স্বামী বা  স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত ও অনুগত কিন্তু তার প্রতি কোন ফিলিংস নেই।এক মাত্র প্রতিজ্ঞা ও নৈতিকতার স্মৃতি তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে।
বর্তমানে সাইবার এ্যাফেয়ার এতে যুক্ত হয়েছে- চ্যাটিং,টেক্সটিং,সেক্সটিং- সব কিছুই এর মধ্যে পড়ে।

কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখবেন:

এটা মনে করার কারন নেই আমরা সুখী পরিবার,পরস্পরের প্রতি অগাধ ভালোবাসা তাই এসব নিয়ে আমাদের দুঃশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।সব দুর্ভেদ্য দুর্গেই " সিকিউরিটি এলার্ম" থাকে।আমাদের অনেক অজানা অংশ থাকে( ব্লাইন্ড স্পট)। এগুলো জানা ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন, তা না হলে হঠাৎ করে  কোন বিষাক্ত সাপ সুখের সংসারে ঢুকে পড়তে পারে।তাই সবশেষে হঠাৎ বিস্মিত হয়ে,উদভ্রান্ত,ক্ষিপ্ত হয়ে আচরন করার চেয়ে পূর্ব থেকে সম্পর্ক ঝালাই করে নেওয়া,নবায়ন করা ও পরিচর্যা করার দিকে নজর দিতে হবে।

১। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে  যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনগুলো  " অনুমোদন যোগ্য " ও কোনগুলো " গ্রহণ যোগ্য " যোগাযোগ সে ব্যাপারে একমত হয়ে নিন
২। সাইবার এ্যাফেয়ার সম্বন্ধে  সতর্ক থাকুন- মনে রাখবেন একাকী টেক্সট করা আর বদ্ধ রুমে অন্যের সঙ্গে একাকী আলাপ করা সমান কথা।৩। আবেগগত ভাবে বিশ্বস্ত থাকুন ও যৌন ব্যাপারে খোলা মেলা আলোচনা করুন ৪।  কিছু বিষয় আছে যা কেবল " বিবাহের ছাতার" নীচেই করা উচিৎ, অন্য কোথাও নয় ৫। নিজের চোখ- কানকে পবিত্র রাখুন- ইসলাম ধর্মে ও আছে চোখ,কান,জিহ্বার পর্দা করার কথা,শুধু সারা শরীর হিজাব দিয়ে ঢাকা পর্দা নয়।৬। সততার সহিত নিজেদের " অস্বস্তি বা নিরাপত্তাহীনতার" বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ করুন ৬। মাঝে মাঝেই নতুন,পুরনো সহকর্মী বা বন্ধুদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করুন ৭। যখন " গুরুতর" কিছু ব্যত্যয় ঘটে  একটি সীমারেখা টানুন ৮।আপনি হয়তো নিজের অজান্তে অ- বাচনিক এমন ভাবে আচরন করেন যা আপত্তিজনক ও ঝুকিপূূর্ন।সে ব্লাইন্ড স্পট গুলো জানুন ও শোধরে নিন ৯। মনে রাখবেন পূর্ব রাতের নিজেদের মধ্যকার মনোমালিন্য পূর্ব রাতেই মিটিয়ে ফেলার পরও তা পরদিন ও দগদগে ঘা হিসেবে থাকতে পারে।তখন অন্য কারো সঙ্গে আবগীয়ভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।সতর্ক থাকুন ও নিজেদের অস্বস্তি, অসন্তোষ অব্যাহতভাবে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন১০। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সময় সীমিত করুন  ও প্রয়োজনে কাউকে ব্লক ও করতে হতে পারে।১১। ফেইসবুকে অন্যদের তথ্য দিয়ে নিজেদের তুলনা করবেন না১২। বাইরের সম্পর্কের ক্ষেত্রে শুধু নিজে ঠিক আছি এ হলে হবে না,অন্য পক্ষ  দুর্বল হয়ে পড়ছে কিনা সেটি ও বিবেচনায় রাখতে হবে।পরিস্হিতি গুরুতর বা " অপমানজনক " অবস্হায় নামার উর্ধ্বে নিজকে থামিয়ে রাখুন১৩। নিজের রিদয় বা অন্তরকে চেক করে নিন- স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা  এবং আনুগত্য ও বিশ্বস্ততা রয়েছে নাকি উচ্ছৃঙ্খল, প্রতারনাপূর্ন,নৈতিক বন্ধন মুক্ত,বেপরোয়া জীবন- যাপন করছেন? সুখী ও সম্মানিত দাম্পত্য জীবন মানে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজে,কর্মে,কথায়,আচরনে পরস্পরকে শ্রদ্ধা করে যাওয়া।১৪। কাপলিং টেকটিকস ( দুই অংশের মধ্যে সংযোজন হওয়ার প্রক্রিয়া) সম্বন্ধে সতর্ক থাকুন- প্রথমে যতই প্লেটনিক লাভ মনে হোক,এক সময় তা ভিন্ন খাতে গড়াতে পারে।১৫। ডিজিটাল মাধ্যমকে ইলুসন ভাববেন না।এটি বাস্তব জীবনকে ও প্রভাবিত করে।১৬। " অপর পাড় অধিক সবুজ", ওরা খুব সুখে আছে,আপনি একাই কষ্টের সংসার করছেন- এ রকম ভুল ধারনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলুন১৭।  যখনই দাম্পত্যে সঙ্কট দেখা দেয়, মনে হতে পারে " ভুল মানুষের" সঙ্গে সংসার করছি। এ জন্য যদি প্রায়ই সংসার ভাঙ্গার হুমকি দেন,সে বিষাক্ত অভ্যাস ত্যাগ করুন।বাইরের সবাই " সঠিক" মানুষ, এ ভুল ধারনা পরিত্যাগ করুন।১৮। তর্কে বা যে কোন ভিন্ন মতে নিজে জিততে চাইবেন না- স্বামী - স্ত্রী একই টিমের লোক।আপনি জিততে চাওয়া মানে নিজকে ভিন্ন টিমের মনে করা।তাই একই টিমের মনে করলে হয় দুজনে একত্রে জিতবেন, না হয় একত্রে হারবেন।১৮। পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়বেন না,পরস্পরের জন্য লড়বেন ১৯। দাম্পত্যে কোন লুকোচুরি চলবে না- এক মাত্র সারপ্রাইজ পার্টি দেওয়া বা উপহার দেওয়ার পূর্বে লুকানো ছাড়া দাম্পত্য জীবনে কোন " গোপনীয়তা " রাখবেন না। দাম্পত্য জীবন থাকবে পূর্ন স্বচ্ছ ও বিশ্বস্ত ২০। স্বামী বা স্ত্রীর চেয়ে বন্ধু,বাইরের আড্ডা, অর্থ, ক্যারিয়ার এমনকি মা- বাবার প্রতি ও অধিক আনুগত্য বান্চনীয় নয়।স্বামী বা স্ত্রী হবে প্রথম ও সর্বোচ্চ আনুগত্য পাওয়ার অধিকারী/ অধিকারিনী।২১। ভুল হল তা স্বীকার করে নিন, সত্যিকার অর্থে ক্ষমা প্রার্থনা করুন-দাম্পত্য জীবনে  সবচেয়ে শক্তিশালী ও আরোগ্য প্রদানকারী  উক্তি হচ্ছে:" আমার ভুল হয়েছে।আমি সত্যিই দুঃখিত। দয়া করে আমাকে মাফ করে দাও ও আমি যে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছি,সেটি পুন: নির্মান করার সুযোগ দাও"

প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
e- mail: drtazul84@gmail.com
phone:01715112900