Wednesday, February 22, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস-২৭


আপনার জীবন কি জটিল- কঠিন- ভারবহ হয়ে
উঠছে?

জীবনকে সহজ- স্বাচ্ছন্দ্য রাখতে যা করবেন:
পর্ব-২:

চীনের মহান দার্শনিক ও আধ্বাতিক নেতা কনফুসিয়াস বলেছিলেন

" জীবন সত্যিই সহজ,সরল,কিন্তু আমরা একে জটিল  করতে গো ধরি।

( life is really simple,but we insists on making it complicated)"

আমরা অনেকেই জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে গেছি।

উল্টো একে ঢেকে দিচ্ছি নানা কাজ,টুকিটাকি মামুলি,ক্লান্তিকর কাজ এবং দায়িত্ব  প্রভৃতির রকমারি সমাবেশে দিয়ে ।

পরে অভিযোগ করছি জীবন এতো কঠিন কেন?

জীবন এত পীড়াদায়ক, জটিল কেন?

আপনি জীবনকে সহজ করতে পারেন,

আবার জটিল ও করতে পারেন।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।

যদি জীবনকে সহজ করতে চান , তাহলে জীবনের কিছু দিকের প্রতি মনোযোগ  দিন

যা আপনার জীবনকে জটিল করে তুলছে।

সে সব জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন  আনুন:
   ( পূর্ববর্তী পর্বের পরবর্তী অংশ)

৫।   আপনি কি প্রতিদিন দৌড়ের উপর থাকেন?

(you ruch from here to there everyday  and have very little time to relax?)

জীবনের সব চেয়ে বড় স্ট্রেস হচ্ছে বিরামহীন কাজের শিডিউল নিয়ে দৌড়ের উপর থাকা।

মনে রাখবেন আপনার আজকের জীবন কিন্তু আপনিই তৈরী করছেন।

আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, কতটুকু সময় আপনি কি ভাবে ব্যয় করবেন।

( যদি তা পারছেন না মনে হয়,তাহলে আপনি নিজ জীবনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না বুঝতে হবে)।

প্রকৃতির কোন কিছুই অবিরাম দৌড়ের উপর থাকে না।

তাহলে আমরা কেন?

একটু ধীরে চলুন

,গভীর ভাবে শ্বাস নিন

এবং রিলাক্সড হোন।

আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি শুধু কিছু রুটিন, কাট- খোট্টা কাজ করবো ও তারপর মরে যাবো--

এত ছোট ও সীমিত উদ্দেশে নয়।

আমরা এখানে এসেছি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য,

ভালো ভাবে বাচার জন্য,

নিজদেরকে আরো বিকশিত করার জন্য

,মহৎ ও সৃজনশীল কিছু করার জন্য,

পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে অধিকতর বাস যোগ্য করার জন্য

এবং অতি অবিশ্যি জীবনকে উপভোগ করার জন্য।

রোবটের মতন ঘানি টেনে  মানব  জীবনকে ভারবহ পশুর জীবন বানাবেন না।

নিছক টাকা উপার্জন, পদোন্নতি,ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটবেন না।

( আমার ব্যক্তিগত জীবন খুবই শ্লথগতির।

চেম্বার প্রাকটিস, পদোন্নতি থেকে শুরু করে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা ইদুর দৌড়ে নাই বলে, অনেকে উপহাস,ব্যঙ্গ করে এর মুরুদ নাই।

তবে আমি তাদের চেয়ে যে অনেক সুখী,ভাবনাহীন, মুক্ত ও শক্ত মেরুদন্ড নিয়ে জীবন- যাপন করছি, তারা লোভাতুর, ক্ষমতার কাঠামোতে থাকার কারনে ও দৌড়ের উপর আছে বলে, তা উপলব্ধি করার মন মানসিকতা যেমন নেই , তেমন ফুরসত  ও নেই)।

মনে রাখবেন " মানব জীবন ইদুর দৌড়ের" জন্য নয়

৬। বর্তমানে জীবন যাপন না করে কোন সুদূরে বসবাস করছেন?

(you live your life being on some future moments instead of being here and now?)

আমাদের কি মনে আছে টলস্টয়ের সেই "  থ্রী কোশ্চেন " গল্পের সারমর্ম?

জীবনের সব চেয়ে গুরত্বপূর্ন সময় কোনটি? 

উত্তর হচ্ছে " বর্তমান মুহূর্ত "

আগের মুহূর্ত অতীত,পরবর্তী মুহূর্ত ভবিষ্যৎ।

কোনটিই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।

তাই ভবিষ্যৎ এর  উপর নির্ভর করে বাচলে বর্তমান  জীবন হবে উদ্বেগ  উৎকন্ঠা পূর্ন।

তার বদলে সচেতন ভাবে প্রতিদিনই নিজের " ভবিষ্যৎ " তৈরী করুন।

এবং এ মুহূর্তে যে জীবন যাপন করছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন(দেখুন পয়েন্ট -৫)

বর্তমানকে উৎসবে রূপান্তর করুন

( ইদুর দৌড়ে পরিশ্রান্ত না হয়ে)

এ ভাবে আপনি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয়টি উপভোগ করতে পারবেন।

মনে রাখবেন বর্তমান হচ্ছে একমাত্র মুহূর্ত,

যেটি আমাদের জন্য বাস্তব সত্য।

৮। অন্যরা আপনাকে নিয়ে  কি  ভাবছে সে নিয়ে আপনি অধিক  চিন্তিত?

(you care a great deal about what others think):

একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য নোট করে রাখুন:

কিছু মানুষ আপনাকে সব সময় ভালোবাসবে, আপনি যে রকমই হোন না কেন।

তেমনি কিছু লোক কখনই আপনাকে পছন্দ করবে না, যত ভালো আপনি সাজুন না কেন"

সাইকিয়াট্রিতে " এট্রিবিউশন থিওরী" বলে একটি তত্ব আছে

আমরা নিজের মতন করে অন্যকে "ভালো বা মন্দ" এরকম লেবেল দিয়ে থাকি( সে ব্যক্তি প্রকৃত যে রকমই হোক না কেন)

তাই তিক্ত সত্য হচ্ছে, কোন কারন ছাড়াই কিছু লোক আপনাকে " অপছন্দ" করবে।

অন্যরা যাতে আপনাকে ভালো জানে,

পছন্দ করে,সম্মান, শ্রদ্ধা করে

এ জন্য তাদেরকে কনভিন্স করার সার্বক্ষণিক চেষ্টা

বা নিজের সব কিছু দিয়ে তাদেরকে ইম্প্রেশ করার হীনমন্য চেষ্টা

আপনাকে হতাশ করবে।

নিজের সততা, যোগ্যতা, সম্মান, ভালোত্বের সার্টিফিকেট  অন্যদের কাছ থেকে পেতে চাইবেন না।

এরকম সুযোগ তাদের দিলে,তাদের অনুমোদন, তাদের সমর্থনের উপর নির্ভর করলে, কপালে খারাপি আছে।

তারা ইচ্ছেমতন তা দেবে,আপনি কি, সে হিসেবে কখনো নয়

( ফেইসবুকে লাইক কমেন্ট এর ধরন লক্ষ্য করেছেন?

কতজন ভালো লেখাকে লাইক দেয়?

তারা লাইক দেয় "সিলিবির্টি বা ছেলেবিট্রি" দেখে,

তেলমর্দনের জন্য,

গ্রপে থাকার জন্য,

নিজের লোক মনে করে - ইত্যাদি।

আপনাকে লাইক দিলে যদি আপনি জনপ্রিয় হয়ে যান
,আলোচিত হয়ে যান

,অন্যরা দেখে ফেলে  সে ওমুককে লাইক দিয়েছে

বা আপনাকে পাত্তা না দেওয়ার জেদ থেকে ও অনেকে ভালো লেখায় ও লাইক দেবে না।

ফেইসবুকে লাইক কমেন্টের সাইকোলজি নিয়ে একদিন লেখার ইচ্ছে আছে।)

এ রকম দৃষ্টিভঙ্গী শুধু আমজনতার নয়,

বরং তথাকথিত শিক্ষিত, জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে এ হীনমন্যতা আরো বেশী।

তার মানে কারো কাছ থেকে মুফতে( বিনা পয়সায়)  কিছু পাওয়ার আশা করবেন না।

তাই নিজের সার্টিফিকেট এর সত্যায়ন( ভ্যালিডেশন) নিজে করবেন,

তাহলে অন্যের সার্টিফিকেট " অনুমোদন "( এপ্রোভাল) নিয়ে জীবন চালানোর " গ্লানি" থেকে মুক্তি পাবেন।

( কিছুদিন আগে পুরনো ৪ বন্ধু ও ২ বন্ধুর স্ত্রী এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াতে গেলাম।

কিছু লোক সব সময় "ভালো" বন্ধু, কিছু সব সময়" ক্রিটিক্যাল"

এই তথ্য মনো সমস্যা বিষয়ক বই লেখার পর ভালো করে উপলব্দি করেছি,তার আগে নয়।

তাই কোন গুলো " কমফোর্ট" জোন ও কোন গুলো " ইরিটেটিং" জোন, তা বুঝতে শিখেছি

এবং এসারটিভলি তা হ্যান্ডেল করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে।)

অন্যকে হেয়,তুচ্ছ, ব্যঙ্গ করা যাদের অভ্যাস  তাদেরকে কোন ভাবেই তা করার ন্যুনতম সুযোগ দেবেন না

প্রথমে তারা আপনার উচ্চ মাথা,দৃড়তা,প্রবল প্রতিরোধ দেখে  আরো বৈরী হবে।

কিন্তু আপনার দৃড়তা ও আত্ম সম্মান বোধের কাছে এক সময় পরাজিত হবে।

আর না হলে আপনার কিছু যায় আসে না।

হয় তাদের আপনি যে রকম সেটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নিতে হবে,

না হয় তাদেরকে প্রত্যাখ্যান ই হবে সমুচিত জবাব।

পাওয়ার অব পজিটিভিটির কথা মনে রাখুন

" যারা আপনাকে সম্মান করে না, তারা আপনার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে ( বা তাড়িয়ে দিলে) আপনার ক্ষতি নয়,বরং লাভ।"

এবং

" বিষাক্ত ব্যক্তিরা( টক্সিক পিপল) জীবন থেকে বাদ পরলে ভালোবাসার ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরী হবে"

তাই  অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাবছে,কেমন ভাবছে এই হীনমন্য চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।

বরং আপনি তাদের কি রকম জানছেন সেটিই মুখ্য।

কমফোর্ট মনে হলে এগিয়ে যান,

ইরিটেটিং হলে দূরে রাখুন

৯। কাল শুরু করবো বলে কখনো তা করেন না( you say " I will start tomorrow " but never do it?)

আপনি  পণ করেছেন,

যে ভাবেই হোক এই হিমালয় সম ওজন দ্রত কমিয়ে আনবেন,

কাল থেকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দেবেন,

নিয়মিত নামাজ ও ব্যায়াম করবেন -। 

কিন্তু তা করবেন আগামী কাল থেকে।

সে আগামীকাল  আর আসে না।

সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভ্রমনে যাবেন,

তবে অপেক্ষা করছেন কখন টাকা জমিয়ে উঠতে পারবেন বা চেম্বারের প্রাকটিস নষ্ট হবে না এমন সময়ের

( আমি ইদানিং তাই আমার সামর্থ্যের মধ্যে ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমনে যাচ্ছি।

জীবন শেষের পথে, যা করার এখনি  করতে হবে।

বউ ও সমর্থন দিয়ে বলে টাকা পয়সা কষ্ট করে কামিয়ে শুধু ছেলে মেয়েদের জন্য রেখে যাবে

,নিজের সাধ আহ্লাদ পূরন করবে না কেন?

এই পোস্ট দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যে আবার বিদেশ সফরে যাবো ইনশাল্লাহ।

দোয়া করবেন যেন আল্লাহ সহায় হন)।

ইচ্ছে হচ্ছে লিখবেন।

কিন্তু যখন ম্যুড ভালো হবে,সময় হবে তখন লিখবো।

এ রকম অনেক সিদ্ধান্ত আমরা নেই,

কিন্তু " শুরুটা" রেখে দেই ভবিষ্যৎ এর হাতে।

এ ভাবে করছি,করবো করে জীবন চলে যায়,

ঐ কাজ আর করা হয় না।

তাই  কাজের উপর কাজ জমা হতে থাকে।

মনে রাখবেন আজই সে " শুভ দিন" 

যা যে কোন কাজ শুরু করার জন্য  " সর্বোত্তম " দিন।

( তা না হলে জীবনে আফসোস, অনুতাপের শেষ থাকবে না)

১০। আপনি কি নেতিবাচক চিন্তায় বুদ থাকেন

( you dwell on negative experiences?

" অতীতে বসবাস" আমাদের জীবনকে দুঃখ ও যন্ত্রণায় ভরে তোলে,

জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে।

জীবনে যত কষ্ট,ব্যর্থতা, বিড়ম্বনা, হতাশা,অপমান,গ্লানি রয়েছে

সেগুলোর দিকে  মনোযোগ নিবদ্ধ করে আমরা জীবনকে আরো দুঃখভারাক্রান্ত করে তুলি।

যারা আপনাকে আহত করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন।

সকল তিক্ত ও কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলো পিছনে ফেলে রাখুন

এবং

বর্তমানের জীবনকে অর্থময় করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করুন।

আপনি অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবেন না,

কিন্তু আপনি আপনার চিন্তা ও কাজকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন

১১। আপনি কি নিজের সঙ্গে সৎ?

(are you honest with yourself?)

সুখি ও আদর্শ জীবন পেতে চাইলে নিজের ভিতরকার " দানব" গুলোর উপর নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে হবে

( কোরবানি  ঈদের তাৎপর্য হচছে, নিজের ভিতরের পশুত্বকে কোরবানী দেওয়া।

আমরা বাস্তবে কি করছি?)

আমরা কতজন  সততার সহিত নিজের ভিতরকার দানব সত্বার কথা স্বীকার করি

ও সেটিকে দমনে আন্তরিক প্রচেষ্টা নেই?

আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তেমন কিছুকে যদি দীর্ঘ দিন এড়িয়ে চলেন,

তাহলে এক সময় সেগুলো এমন শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে,

তখন  আপনি পুরো বিপর্যস্ত হয়ে পরবেন।

সেগুলো আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

আপনি ক্ষত- বিক্ষত হয়ে যাবেন।

পুরনো ক্ষতকে খুচিয়ে লাভ নেই।

তবে এগুলো এড়িয়ে গেলেও চলবে না।

সে ক্ষত মোচনে যা করনীয় তা করতে হবে।

প্রয়োজনে প্রফেশনাল কাউন্সিলিং/ সাইকোথরাপি নিতে হবে।

নিজের সঙ্গে  সৎ থাকতে হবে।

নিজকে ফাকি দেওয়া সবচেয়ে অন্যায্য, ক্ষতিকর কাজ।

সততার সঙ্গে নিজের সব ক্ষত,বেদনাকে স্বীকার করে নিন।

সেগুলো নিরাময়ে সচেষ্ট হোন।

তা না হলে পুরনো ক্ষত গ্যাংরিন হয়ে সর্বনাশ আনতে পারে

Monday, February 13, 2017

রোগ কাহিনী :১২ - ও ১৩ -- আমি মরা,আমি মরা

রোগ কাহিনী:১২

"আমি মরা,আমি মরা"

রোগীনি আলেয়া,বয়স ৫০। রোগের ইতিহাস ৩ মাসের।

তিনি বলেন  পা থেকে শির শির উঠে,

ঘুম আসে না,

আমরা দীল নাই,মন নাই,

আত্মা নিয়ে গেছে,

কলজা-ফেপসা রুহু সব নিয়ে গেছে।

চক্ষু নাই,নিঃশ্বাস নাই-

আমি মরা সব মরা।

অস্হির,খাওয়া - দাওয়া করে না

সারাক্ষণ চিৎকার করে আমি মরা,আমি মরা।

পানি ও খায় না বলে পেট,নাড়ী সব মরা খাবো কি ভাবে?

শুধু মুখ ও কথা ছাড়া সব নিয়ে গেছে,শেষ হয়ে গেছে,পচে গেছে

কে নিয়ে গেছে জিজ্ঞেস করলে বলে, আল্লাহ নিয়ে গেছে,খারাপ জিনিসে নিয়ে গেছে।

আনন্দ নেই,অশান্তি, হাহুতাশ

কান্না কাটি করে,

বলে আমারে মেরে ফেলো

বটি দিয়ে গলাতে পোচ দেয়,মরে যাবে

( দু' বার এ রকম আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে)

সারাক্ষণ হাহাকার

আমি মরা আমি মরা

কাপড় চোপর সব খুলে দেখাতে চায়

সব পচা,সব  মরা

দিন রাত  ২৪ ঘন্টা আহাজারি করে -

আমি মরা  আমি মরা
.............................

এ কেইস থেকে আমরা যা জানলাম:

১। এটি এক ধরনের গভীর বিষন্নতা রোগ( মেজর ডিপ্রেশন)

২। ডিপ্রেশন অনেক রকমের হয়-

এটি হচ্ছে সাইকোটিক ডিপ্রেশন, যেখানে হ্যালুসিলেশন,ডেলুসন থাকে

৩। এ রোগীর নিহিলেস্টিক ডেলুশন রয়েছে।

নিহেলিজম হচ্ছে " অস্তিত্বহীনতা"( নন একজিসটেন্স)।

এটিকে " কোটার্ড সিনড্রোম ও বলা হয়।

৪। গভীর ডিপ্রেশনে রোগী নিজকে ছোট,হেয়,ক্ষুদ্র মনে করে।

তার কিছুই নাই-

কোন যোগ্যতা নাই,গুন নাই,

সহায়- সম্পদ নাই,

তিনি নিঃস্ব,অসহায় ইত্যাদি।

এভাবে নিজের কিছু নাই হতে হতে, এক সময় মনে হয় নিজেই নাই-

তার মস্তিস্ক পচে গেছে,পেট নাড়ী ভুরি মরে গেছে

আরো গভীরতায় গিয়ে মনে হয়, তার পুরো অস্তিত্বই নাই  হয়ে গেছে

তিনি মারা গেছেন,তিনি এখন লাশ

( মিটফোর্ড হাসপাতালে কাজ করার সময় এক হিন্দু মধ্য বয়স্ক লোক ভর্তি হয়েছিল।সে ও নিজকে পুরো মৃত মনে করতো।তার লাশ চিতায় রয়েছে,আমরা তার প্রেতাত্মাকে এখানে এনে রেখেছি)

৫। সাইকোটিক ডিপ্রেশন এর রোগীকে যুগপৎ এন্টি সাইকোটিক ও এন্টি  ডিপ্রেশন্ট ঔষধ, ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়।

এ ধরনের রোগী ইসিটি ( ইলেকট্রো কনভালসিভ থেরাপি)  দিয়ে ও ভালো ফল পাওয়া যায়।

এ রোগীনিকে ও ইনজেকশন,ঔষধ দেওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ভালো ফল পাওয়া যায়।

তিনি আরোগ্য লাভের পথে আছেন

রোগ কাহিনী-১৩:

"হুজুর হয়ে ঢুকে পরে বিড়াল হয়ে যায়  "

মার্জিনা বয়স ৪০।

গত ১০ বছর যাবত এ রোগে ভুগছে।

তার ভাগনীর ও এ রোগ ছিল।

ভাগনী জিকির করতো  -আল্লাহ আল্লাহ।

তিনি বলেন এটি দেখে আমার ভিতর ও জিকির ঠেলে উঠতো।

ভাগনী এক সময় বলে  হুজুর বলেছে এ  রুমে কেউ থাকতে পারবে না,থাকলে সমস্যা হবে।

আমার নিজের ঘর থেকে আমাকে চলে যেতে বলে।

আমি রাগ করে তাকেই তাড়িয়ে দেই।

এর মধ্যে মেয়ের ভিতর ও জিকির উঠা শুরু করে।

মেয়ে বলে এক লোক হুজুর হয়ে ঘরে ঢুকে, পরে বিড়াল হয়ে যায়।

এটি শুনে আমার খুব ভয় লাগে,

সারা রাত ঘুম হয় না।

কেবল হাহুতাশ করতে লাগলাম।

এরপর থেকে আমিও দেখি হুজুর হয়ে  ঢুকে বিড়াল হয়ে যায়।

মেয়ে প্রায়ই ফিট হয়ে যায়।

মেয়ে বাড়ীর এ পাশ থেকে ও পাশে উড়ে উড়ে যায়।

মেয়ে বলে বাতাস তাকে টেনে নিয়ে যায়।

মেয়ে দেখে এক কঙ্কাল,

যার চোখ বড় বড়,মাথা নাই,

বড় বড় নখ,

হাড্ডি ছাড়া কোন গোস্ত নেই।

ঐ কঙ্কাল মেয়েকে খামচিয়ে রক্ত বের করে  ফেলে,যা আমরা সবাই দেখেছি।

১০ বছর ধরে তারা মা, মেয়ে এই যন্ত্রণার ভিতর আছে,

যদিও ঐ ভাগনী পরে ভালো হয়ে যায়।

পীর ফকির,কবিরাজী অনেক চিকিৎসা হয়েছে কিন্তু তারা ভালো হতে পারেনি।

৩-৪ টি সেশন দেওয়ার পর মা প্রায় রোগ মুক্তির পথে।

তিনি কথা দিয়েছেন মেয়েকে ও চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসবেন

এ রোগ কাহিনী থেকে আমরা যে সব শিখলাম:

১। এ ধরনের তথাকথিত জ্বীনে ভূতে ধরা রোগী মূলত এক রকমের " মানসিক রোগী" তথা ব্রেইনের রোগী।

যাকে " ডিসোসিয়েটিভ কনভার্সন  ডিসঅর্ডার " বলা হয়।( হিস্টিরিয়া)

২। হিপনোসিস,মেডিটেশন এ " সাজেশন " এর রয়েছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

নিছক সাজেশন দিয়ে যা করতে বলা হয় ব্যক্তি তাই করে।

হিস্টিরিয়া রোগীরাও খুব সাজেস্টবল।

৩। প্রায়ই আমরা যে শুনি কোন এক স্কুলে একজন মেয়ে ফিট হয়ে পড়েছে তো এটি দেখে একের পর এক অন্য  মেয়েরা ও ফিট হতে থাকে।

এরপর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশেই বিভিন্ন স্কুলের মেয়েরা নিছক শুনেই ঐ রোগে আক্রান্ত হয়।

যাকে আমরা " মাস হিস্টিরিয়া"  বলি।

৪। মানুষের মন ও ব্রেইনকে খুব সহজে ও দ্রুত " প্রভাবিত" করা যায়।

সাজেশন দিয়ে তেমনটি করা হয়।

নিছক শুধু " দেখে" বা " শুনে" ও অনেক ঝুকিপূর্ন ব্যক্তি( ভারনারেবল)  এ রকম " অনুকরণ " করে থাকে, যা রীতিমত অবিশ্বাস্য।

৫। মনে রাখবেন তথাকথিত জ্বীনে ভূতে ধরা সব রোগী মূলত মানসিক রোগী।

অহেতুক অপচিকিৎসা না করে সরাসরি মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছে নিয়ে যান

( আমি প্রথম সাইকিয়াট্রিস্ট যিনি বহু আগ থেকে প্রেসক্রিপশন প্যাডে " জ্বীন ভূতে ধরা" চিকিৎসা  করি কথাটি লিখেছি।

অনেকে এসে জানতে চায় আমি তেমন পারি কিনা।
আমি জোরের সঙ্গে বলি যে কোন জ্বীন হুজুরের চেয়ে ভালো পারবো,রোগী আনেন।

কেননা আপনারা যাকে জ্বীন ভূত ধরা মনে করছেন তা ব্রেইনের রোগ)

৬। বর্তমানে অনেক পীর ফকির,কবিরাজরা ও  জ্বীনে ধরা রোগী মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে দেন।

তবে প্রথমে নিজেরা চিকিৎসা দেয় ও বলে জ্বীন তাড়িয়ে দিয়েছি, সামান্য সমস্যা রয়েছে সেটি ব্রেইনের ডাক্তারের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করেন।

এটি তবুও মন্দের ভালো

( মানুষ এখন বুঝতে শিখেছে এ গুলো মনের বা ব্রেইনের রোগ)

Friday, February 3, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস:২৬

আপনার জীবন কি কঠিন,জটিল,ভারবহ হয়ে উঠেছে?

জীবনকে সহজ,সরল,উপভোগ্য ও মর্যাদা পূর্ন করতে চাইলে যা করবেন:

চীনের মহান দার্শনিক ও আধ্বাত্বিক  নেতা কনফুসিয়াস বলেছিলেন্

" জীবন সত্যিই সহজ,সরল,কিন্তু আমরা একে জটিল  করতে গো ধরি।( life is really simple,but we insists on making it complicated)
আমরা অনেকেই জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে গেছি।
উল্টো একে ঢেকে দিচ্ছি নানা কাজ,টুকিটাকি মামুলি,ক্লান্তিকর কাজ এবং দায়িত্ব  প্রভৃতির রকমারি সমাবেশে দিয়ে ।
পরে অভিযোগ করছি জীবন এতো কঠিন কেন?
জীবন এত পীড়াদায়ক, জটিল কেন?
আপনি জীবনকে সহজ করতে পারেন,
আবার জটিল ও করতে পারেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।
যদি জীবনকে সহজ করতে চান , তাহলে জীবনের কিছু দিকের প্রতি মনোযোগ  দিন
যা আপনার জীবনকে জটিল করে তুলছে।
সে সব জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসুন।
সেগুলো হলো:
১। আপনি কি অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করে থাকেন?(do you compare yourself to others?)
মনে রাখবেন এক মাত্র  যে ব্যক্তির চেয়ে আপনি আরো উন্নতি করার চেষ্টা করবেন,
তিনি হচ্ছেন গতকাল আপনি যে ব্যক্তি ছিলেন।
অন্যের সঙ্গে নিজকে পরিমাপ  করতে যাবেন না।
এতে শুধু নিজকে আরো উন্নত করা  থেকে মনোযোগ সরে যাবে তা না
বরং আপনার মনে তিক্ততা ও ঈর্ষার জন্ম হবে।
আপনি অসুখী,হীনমন্য জীবন - যাপন করবেন।
মানুষ অনেক পথ অবলম্বন করে।
কারো জীবন পথই আপনার জীবন পথের মতন নয়।
তাদের চেয়ে ভিন্ন বলে আপনি ছোট,হেয়,অপর্যাপ্ত, অযোগ্য  তা কিন্তু নয়।
এর চেয়ে নিজের বর্তমান অবস্হার সঙ্গে নিজকে তুলনা করুন।
বর্তমানেও আপনি যথেষ্ট ভালো আছেন।
এ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে নিজকে আরো উন্নত করার চেষ্টা নিন।
২। আপনি কি জীবনের সব ক্ষেত্রে ভয় ভীতিতে আক্রান্ত? 
আপনার সব সিদ্ধান্তে সে ভয়ের প্রতিফলন ঘটে?(you let fear make decision for you?):
মা- বাবা রাতে আলো নিভিয়ে দিলেই ছোট কালে আমরা ভাবতাম  বিছানার নীচে  ভুত- পেত্নী এসে বসে আছে।
ক্রমশ এ রকম শত ভয় আমাদের জীবনে  যুক্ত হতে থাকে।
পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন না করতে পারার ভয়,
ব্যর্থতার ভয়
, প্রত্যাখ্যান এর ভয়,
অন্যদের মত অভিমত,পছন্দ- অপছন্দের ভয়,
বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে ভয়--
এ রকম শত শত  ভয়ের বেড়াজালে আমরা আবদ্ধ।
মনে রাখবেন এ ভয়গুলো ঐ ভূতের ভয়ের মতনই অবাস্তব, অলীক,মন- গড়া ও আরোপিত।
তবে এগুলো  বিশ্বাসের গভীরে স্হান করে নিয়েছে।
এগুলোর অস্তিত্ব শুধু আমাদের মনে(only exists in our mind) ।
নিজকে এই সত্য বার বার স্মরন করিয়ে দিন, এ ভয়গুলো নিছক " ভূতুড়ে" ভয়,
মোটেই বাস্তব নয়।
এক সময় ভয়গুলো অপসৃত হয়ে যাবে।
আপনি আবার জীবনকে সহজ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
৩। প্রকৃত প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক কেনা- কাটা করছেন?
আমেরিকান এসোসিয়েশন অব সাইকোলজি  এক জরীপে দেখেছেন, প্রতি  ৪ জনের ৩ জনই জীবনের কোন না কোন সময় আর্থিক সঙ্কটে কাটান।
এতো আমেরিকা,
বাংলাদেশে কতজন আর্থিক সঙ্কটে জীবন কাটান?
অন্য সব কারনের চেয়ে  এ দেশে জীবন কঠিন আমাদের মনে হয় আর্থিক কারনে
অনেক বই বাজারে রয়েছ, যেখানে আপনাকে কোটিপতি বানিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার থাকে।
আমি আপনাকে সে রকম প্রতারনাপূর্ন,মিথ্যে  অঙ্গীকার দিতে পারবো না।
তবে একটি পথ বাতলে দেবো যেটি বিশ্ব ব্যাপী পরীক্ষিত।
তা হচ্ছে আপনার যা উপার্জন  ও ব্যয় সেখানে পজিটিভ ব্যালান্স আপনি দুই ভাবে করতে পারেন।
হয় উপার্জন বাড়াবেন।
সে চেষ্টা অবশ্যই আমরা সবাই করবো।
কিন্তু  সৎ উপায়ে সবাই উপার্জন বাড়াতে পারবেন এ নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিতে পারবো না।
দ্বিতীয় পথটি হলো ব্যয় কমানো।
জাতীয় বাজেটেও ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা হয়।
আর ব্যক্তি জীবনে সেটি আরো বেশী প্রযোজ্য।
ব্যয় হবে আয়ের উপর নির্ভর করে,কেবল প্রয়োজনের উপর নয়।
আয় যা-ই হোক তার অন্তত একটি  ক্ষুদ্র অংশ ভবিষ্যৎ ও বিপদের জন্য জমা রেখে, বাকীটুকু দিয়ে সংসার চালাতে হবে।
(যারা একমত নন তাদের জোর করে একমত হতে বলবো না।
আপনি যদি ব্যয় না কমিয়ে ও ভালো ভাবে চলতে পারেন,ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে,অসুখবিসুখ ও অন্যান্য প্রয়োজনে নগদ টাকার অভাব না হয়,
তাহলে এই সংযমী জীবন কেন করবেন?)
তবে কারো সৎ উপার্জনই তেমন অঢেল হওয়ার কথা নয়।
তদুপরি অনেক টাকা থাকলে  ও শুধু নিজের বিলাসী জীবনে তা ব্যয় করা কতটুকু নৈতিক কাজ হবে?
আর আমার মতন দিনে এনে দিনে খাওয়া লোকদের একান্ত প্রয়োজনের বাইরে কেনা কাটা না করে কিছু সাশ্রয় করে জীবনকে কিছুটা হলেও সহনীয়,সহজ করার চেষ্টা নিতে হবে।
ধর্মীয় বানীতেও মিতব্যয়ী হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং অপচয়কে তিরস্কার করা হয়েছে।
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো তাই একটি পুন্যের কাজ ও বটে
৪। আপনি প্রতিদিনই নিজের সঙ্গে নেতিবাচক কথা বলেন:( negative self- talk)?
আমরা সব সময়ই নিজের সঙ্গে কথা বলি( শুধু সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা তেমন করে তা নয়- তবে এর মধ্যে পার্থক্য আছে)।
এই আত্ম- কথনের দিকে একটু মনোযোগ দিন
( মেডিটেশন বলুন বা মাইন্ডফুলনেশ বলুন, সেখানে এ কাজটি ভালো ভাবে করতে হয়)।
মনে রাখবেন এই আত্ম কথন বা স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা গুলোর(automatic thoughts)  সঙ্গে আমাদের যে বাত- চিত ,
তা আমাদের আচরন,দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রন করে।
বেশীরভাগ আত্মকথন হয় নেতিবাচক।
আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ছোট করি (be little),
নিজের মানকে হেয় করে দেখি(be rate)।
অথচ ভাবি জগত কেন বধ্য ভুমির মতন কসাইখানা,বিশৃঙ্খল হট্রশালা।
মনে রাখবেন আমরা নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে কট্টর,নিষ্ঠুর সমালোচক
( আমার আত্ম উন্নয়ন মূলক বই " মন ও মানুষ" বই এর ১ ম খন্ডে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
সেখানে এটিকে আমি নাম দিয়েছি - এন্টি মি বা প্রতি - আমি নামে।
অর্থাৎ আমাদের নিজের ভিতর রয়েছে এক ভিবীষন, যে শত্র পক্ষের মতন নিজের খারাপ দিকগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের কাছে তুলে ধরে।)
তাই আত্মকথনকে ইতিবাচক করে নিন।
নিজকে শোভন,সুন্দর,মহান ভাবে ভাবুন,দেখুন।
নিজেই নিজকে ভালো না জানলে, শ্রদ্ধা না করলে অন্যরা করবে কোন দুঃখে?
( তারা পারলে আপনার বারোটা বাজিয়ে দেবে)
আমরা মনে করি আমরা নিজকে খুব ভালোবাসি।
ব্যাপারটি মোটেই তেমন নয়।
অন্যদের প্রতি যেমন আমরা  ভালো ধারনা তৈরী করতে পারি আবার মন্দ ধারনাও
তেমনি নিজের সম্বন্ধে ও আমরা ভালো/ মন্দ ধারনা ( সেল্প কনসেপ্ট)  তৈরী করি।
এ ধারনা ইতিবাচক হলে প্রশংসনীয়,উজ্জ্বল আত্ম ভাব মূর্তি( সেল্প ইমেজ) তৈরী হবে
নতুবা উল্টোটি
এ সব ধারনা ছোটকাল থেকে মা- বাবা,পরিবারের লোক, বন্ধুরা,আত্মীয়রা আমাদের যে ভাবে দেখে,সমালোচনা করে,আচরন করে তার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়।
আপন মা- বাবাও কি সারাক্ষন প্রশংসা করে থাকে না, নানা সমালোচনার মধ্য দিয়ে শৈশব কাটে?
বিভিন্ন ব্যর্থতা,বাধা,প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে জীবন কাটে।
তাই নিজের প্রতিও খুব যে একটি ভালো, ইতিবাচক আত্ম পরিচিতি বা ভাব মূর্তি আমাদের তৈরী হয় তা না।
অতএব ইতিবাচকব আত্ম ইমেজ আমাদের কম ক্ষেত্রেই তৈরী হয়।
আমরা তখন নিজকে ভালোবাসতে পারি না,
বরং আত্ম ঘৃনা(self- hatred)  তৈরী হতে পারে।কিন্তু বেশীরভাগ  ক্ষেত্রে ইতিবাচক - নেতিবাচক মিশ্র ধারনা তৈরী হয়।
গত সপ্তাহেই মৃনাল সাহার একটি পোস্টে আত্ম  প্রেম ( নারসিসিজম), স্বার্থপরতা ( সেলফিসনেশ) ও নিজকে ভালোবাসা ( সেল্প লাভ) নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটু মন্তব্য করেছিলাম।
অনেকের বোঝার সুবিধার জন্য সে অংশটি কপি- পেস্ট করে দিচ্ছি
"তাৎক্ষনিক ভাবে সংক্ষেপে বললে:
নিজকে ভালোবাসা:
নিজকে নিয়ে সন্তুষ্ট, তৃপ্ত থাকা;
নিজের ভুল ক্রটি গুলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা;
নিজের যোগ্যতা,সফলতাকে গুরুত্বপূর্ণ  ভাবা;
নিজকে নিয়ে শান্তিতে থাকা,স্বস্তিতে থাকা;
আত্ম সম্মান বোধ,আত্ম মর্যাদা  বোধ উচুতে থাকা;
অন্যকে সম্মানিত,বন্ধুবৎসল,সজ্জন ভাবা;
জীবন সহজ, ছন্দময়,গতিশীল হওয়া--- ইত্যাদি
স্বার্থপরতা :
জীবনের সব জায়গায়,সব সম্পর্কে নিজের বৈষয়িক ও তাৎক্ষনিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া;
সর্বত্র নিজের সুযোগ সুবিধা  মাথায় রেখে  হিসেব নিকেষ করা;
প্রতি সম্পর্কে, প্রতি পদে আমার স্বার্থ, আমার লাভ,আমার প্রাধান্য কতটুকু  সে বিবেচনা রেখে জীবন চালানো- ইত্যাদি
আত্ম প্রেম/ স্বকাম( নার্সিসিজম):
নিজকে সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দু মনে করা;
নিজের যোগ্যতাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখা;
সব সময় প্রশংসা,স্তুতি পাওয়ার দুর্নিবার কামনা থাকা;
উন্নাসিক ভাবে,উদ্ধত হয়ে নিজকে জাহির করার চেষ্টা-- ইত্যাদি।
মৃনাল মৃণাল সাহা,fatema Fatama Tus Sauda"
এখন ভেবে দেখুন নিজকে কতটুকু ভালোবাসে,কতটুকু স্বার্থপর আর কতটুক  আত্ম প্রেমে নিমগ্ন?
ভালোবাসা কোন শর্ত দিয়ে হয় না
নিজকে ও " নিঃশর্ত" ভাবে ভালোবাসুন
( পরবর্তী পর্ব পরের সংখ্যায়)