আপনার জীবন কি জটিল- কঠিন- ভারবহ হয়ে
উঠছে?
জীবনকে সহজ- স্বাচ্ছন্দ্য রাখতে যা করবেন:
পর্ব-২:
চীনের মহান দার্শনিক ও আধ্বাতিক নেতা কনফুসিয়াস বলেছিলেন
" জীবন সত্যিই সহজ,সরল,কিন্তু আমরা একে জটিল করতে গো ধরি।
( life is really simple,but we insists on making it complicated)"
আমরা অনেকেই জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে গেছি।
উল্টো একে ঢেকে দিচ্ছি নানা কাজ,টুকিটাকি মামুলি,ক্লান্তিকর কাজ এবং দায়িত্ব প্রভৃতির রকমারি সমাবেশে দিয়ে ।
পরে অভিযোগ করছি জীবন এতো কঠিন কেন?
জীবন এত পীড়াদায়ক, জটিল কেন?
আপনি জীবনকে সহজ করতে পারেন,
আবার জটিল ও করতে পারেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।
যদি জীবনকে সহজ করতে চান , তাহলে জীবনের কিছু দিকের প্রতি মনোযোগ দিন
যা আপনার জীবনকে জটিল করে তুলছে।
সে সব জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন:
( পূর্ববর্তী পর্বের পরবর্তী অংশ)
৫। আপনি কি প্রতিদিন দৌড়ের উপর থাকেন?
(you ruch from here to there everyday and have very little time to relax?)
জীবনের সব চেয়ে বড় স্ট্রেস হচ্ছে বিরামহীন কাজের শিডিউল নিয়ে দৌড়ের উপর থাকা।
মনে রাখবেন আপনার আজকের জীবন কিন্তু আপনিই তৈরী করছেন।
আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, কতটুকু সময় আপনি কি ভাবে ব্যয় করবেন।
( যদি তা পারছেন না মনে হয়,তাহলে আপনি নিজ জীবনের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না বুঝতে হবে)।
প্রকৃতির কোন কিছুই অবিরাম দৌড়ের উপর থাকে না।
তাহলে আমরা কেন?
একটু ধীরে চলুন
,গভীর ভাবে শ্বাস নিন
এবং রিলাক্সড হোন।
আমরা এ পৃথিবীতে এসেছি শুধু কিছু রুটিন, কাট- খোট্টা কাজ করবো ও তারপর মরে যাবো--
এত ছোট ও সীমিত উদ্দেশে নয়।
আমরা এখানে এসেছি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য,
ভালো ভাবে বাচার জন্য,
নিজদেরকে আরো বিকশিত করার জন্য
,মহৎ ও সৃজনশীল কিছু করার জন্য,
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে অধিকতর বাস যোগ্য করার জন্য
এবং অতি অবিশ্যি জীবনকে উপভোগ করার জন্য।
রোবটের মতন ঘানি টেনে মানব জীবনকে ভারবহ পশুর জীবন বানাবেন না।
নিছক টাকা উপার্জন, পদোন্নতি,ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পিছনে মরিয়া হয়ে ছুটবেন না।
( আমার ব্যক্তিগত জীবন খুবই শ্লথগতির।
চেম্বার প্রাকটিস, পদোন্নতি থেকে শুরু করে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা ইদুর দৌড়ে নাই বলে, অনেকে উপহাস,ব্যঙ্গ করে এর মুরুদ নাই।
তবে আমি তাদের চেয়ে যে অনেক সুখী,ভাবনাহীন, মুক্ত ও শক্ত মেরুদন্ড নিয়ে জীবন- যাপন করছি, তারা লোভাতুর, ক্ষমতার কাঠামোতে থাকার কারনে ও দৌড়ের উপর আছে বলে, তা উপলব্ধি করার মন মানসিকতা যেমন নেই , তেমন ফুরসত ও নেই)।
মনে রাখবেন " মানব জীবন ইদুর দৌড়ের" জন্য নয়
৬। বর্তমানে জীবন যাপন না করে কোন সুদূরে বসবাস করছেন?
(you live your life being on some future moments instead of being here and now?)
আমাদের কি মনে আছে টলস্টয়ের সেই " থ্রী কোশ্চেন " গল্পের সারমর্ম?
জীবনের সব চেয়ে গুরত্বপূর্ন সময় কোনটি?
উত্তর হচ্ছে " বর্তমান মুহূর্ত "
আগের মুহূর্ত অতীত,পরবর্তী মুহূর্ত ভবিষ্যৎ।
কোনটিই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।
তাই ভবিষ্যৎ এর উপর নির্ভর করে বাচলে বর্তমান জীবন হবে উদ্বেগ উৎকন্ঠা পূর্ন।
তার বদলে সচেতন ভাবে প্রতিদিনই নিজের " ভবিষ্যৎ " তৈরী করুন।
এবং এ মুহূর্তে যে জীবন যাপন করছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন(দেখুন পয়েন্ট -৫)
বর্তমানকে উৎসবে রূপান্তর করুন
( ইদুর দৌড়ে পরিশ্রান্ত না হয়ে)
এ ভাবে আপনি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয়টি উপভোগ করতে পারবেন।
মনে রাখবেন বর্তমান হচ্ছে একমাত্র মুহূর্ত,
যেটি আমাদের জন্য বাস্তব সত্য।
৮। অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাবছে সে নিয়ে আপনি অধিক চিন্তিত?
(you care a great deal about what others think):
একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য নোট করে রাখুন:
কিছু মানুষ আপনাকে সব সময় ভালোবাসবে, আপনি যে রকমই হোন না কেন।
তেমনি কিছু লোক কখনই আপনাকে পছন্দ করবে না, যত ভালো আপনি সাজুন না কেন"
সাইকিয়াট্রিতে " এট্রিবিউশন থিওরী" বলে একটি তত্ব আছে
আমরা নিজের মতন করে অন্যকে "ভালো বা মন্দ" এরকম লেবেল দিয়ে থাকি( সে ব্যক্তি প্রকৃত যে রকমই হোক না কেন)
তাই তিক্ত সত্য হচ্ছে, কোন কারন ছাড়াই কিছু লোক আপনাকে " অপছন্দ" করবে।
অন্যরা যাতে আপনাকে ভালো জানে,
পছন্দ করে,সম্মান, শ্রদ্ধা করে
এ জন্য তাদেরকে কনভিন্স করার সার্বক্ষণিক চেষ্টা
বা নিজের সব কিছু দিয়ে তাদেরকে ইম্প্রেশ করার হীনমন্য চেষ্টা
আপনাকে হতাশ করবে।
নিজের সততা, যোগ্যতা, সম্মান, ভালোত্বের সার্টিফিকেট অন্যদের কাছ থেকে পেতে চাইবেন না।
এরকম সুযোগ তাদের দিলে,তাদের অনুমোদন, তাদের সমর্থনের উপর নির্ভর করলে, কপালে খারাপি আছে।
তারা ইচ্ছেমতন তা দেবে,আপনি কি, সে হিসেবে কখনো নয়
( ফেইসবুকে লাইক কমেন্ট এর ধরন লক্ষ্য করেছেন?
কতজন ভালো লেখাকে লাইক দেয়?
তারা লাইক দেয় "সিলিবির্টি বা ছেলেবিট্রি" দেখে,
তেলমর্দনের জন্য,
গ্রপে থাকার জন্য,
নিজের লোক মনে করে - ইত্যাদি।
আপনাকে লাইক দিলে যদি আপনি জনপ্রিয় হয়ে যান
,আলোচিত হয়ে যান
,অন্যরা দেখে ফেলে সে ওমুককে লাইক দিয়েছে
বা আপনাকে পাত্তা না দেওয়ার জেদ থেকে ও অনেকে ভালো লেখায় ও লাইক দেবে না।
ফেইসবুকে লাইক কমেন্টের সাইকোলজি নিয়ে একদিন লেখার ইচ্ছে আছে।)
এ রকম দৃষ্টিভঙ্গী শুধু আমজনতার নয়,
বরং তথাকথিত শিক্ষিত, জ্ঞানী ব্যক্তিদের মধ্যে এ হীনমন্যতা আরো বেশী।
তার মানে কারো কাছ থেকে মুফতে( বিনা পয়সায়) কিছু পাওয়ার আশা করবেন না।
তাই নিজের সার্টিফিকেট এর সত্যায়ন( ভ্যালিডেশন) নিজে করবেন,
তাহলে অন্যের সার্টিফিকেট " অনুমোদন "( এপ্রোভাল) নিয়ে জীবন চালানোর " গ্লানি" থেকে মুক্তি পাবেন।
( কিছুদিন আগে পুরনো ৪ বন্ধু ও ২ বন্ধুর স্ত্রী এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াতে গেলাম।
কিছু লোক সব সময় "ভালো" বন্ধু, কিছু সব সময়" ক্রিটিক্যাল"
এই তথ্য মনো সমস্যা বিষয়ক বই লেখার পর ভালো করে উপলব্দি করেছি,তার আগে নয়।
তাই কোন গুলো " কমফোর্ট" জোন ও কোন গুলো " ইরিটেটিং" জোন, তা বুঝতে শিখেছি
এবং এসারটিভলি তা হ্যান্ডেল করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে।)
অন্যকে হেয়,তুচ্ছ, ব্যঙ্গ করা যাদের অভ্যাস তাদেরকে কোন ভাবেই তা করার ন্যুনতম সুযোগ দেবেন না
প্রথমে তারা আপনার উচ্চ মাথা,দৃড়তা,প্রবল প্রতিরোধ দেখে আরো বৈরী হবে।
কিন্তু আপনার দৃড়তা ও আত্ম সম্মান বোধের কাছে এক সময় পরাজিত হবে।
আর না হলে আপনার কিছু যায় আসে না।
হয় তাদের আপনি যে রকম সেটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মেনে নিতে হবে,
না হয় তাদেরকে প্রত্যাখ্যান ই হবে সমুচিত জবাব।
পাওয়ার অব পজিটিভিটির কথা মনে রাখুন
" যারা আপনাকে সম্মান করে না, তারা আপনার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে ( বা তাড়িয়ে দিলে) আপনার ক্ষতি নয়,বরং লাভ।"
এবং
" বিষাক্ত ব্যক্তিরা( টক্সিক পিপল) জীবন থেকে বাদ পরলে ভালোবাসার ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরী হবে"
তাই অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাবছে,কেমন ভাবছে এই হীনমন্য চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
বরং আপনি তাদের কি রকম জানছেন সেটিই মুখ্য।
কমফোর্ট মনে হলে এগিয়ে যান,
ইরিটেটিং হলে দূরে রাখুন
৯। কাল শুরু করবো বলে কখনো তা করেন না( you say " I will start tomorrow " but never do it?)
আপনি পণ করেছেন,
যে ভাবেই হোক এই হিমালয় সম ওজন দ্রত কমিয়ে আনবেন,
কাল থেকে সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দেবেন,
নিয়মিত নামাজ ও ব্যায়াম করবেন -।
কিন্তু তা করবেন আগামী কাল থেকে।
সে আগামীকাল আর আসে না।
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভ্রমনে যাবেন,
তবে অপেক্ষা করছেন কখন টাকা জমিয়ে উঠতে পারবেন বা চেম্বারের প্রাকটিস নষ্ট হবে না এমন সময়ের
( আমি ইদানিং তাই আমার সামর্থ্যের মধ্যে ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমনে যাচ্ছি।
জীবন শেষের পথে, যা করার এখনি করতে হবে।
বউ ও সমর্থন দিয়ে বলে টাকা পয়সা কষ্ট করে কামিয়ে শুধু ছেলে মেয়েদের জন্য রেখে যাবে
,নিজের সাধ আহ্লাদ পূরন করবে না কেন?
এই পোস্ট দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যে আবার বিদেশ সফরে যাবো ইনশাল্লাহ।
দোয়া করবেন যেন আল্লাহ সহায় হন)।
ইচ্ছে হচ্ছে লিখবেন।
কিন্তু যখন ম্যুড ভালো হবে,সময় হবে তখন লিখবো।
এ রকম অনেক সিদ্ধান্ত আমরা নেই,
কিন্তু " শুরুটা" রেখে দেই ভবিষ্যৎ এর হাতে।
এ ভাবে করছি,করবো করে জীবন চলে যায়,
ঐ কাজ আর করা হয় না।
তাই কাজের উপর কাজ জমা হতে থাকে।
মনে রাখবেন আজই সে " শুভ দিন"
যা যে কোন কাজ শুরু করার জন্য " সর্বোত্তম " দিন।
( তা না হলে জীবনে আফসোস, অনুতাপের শেষ থাকবে না)
১০। আপনি কি নেতিবাচক চিন্তায় বুদ থাকেন
( you dwell on negative experiences?
" অতীতে বসবাস" আমাদের জীবনকে দুঃখ ও যন্ত্রণায় ভরে তোলে,
জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে।
জীবনে যত কষ্ট,ব্যর্থতা, বিড়ম্বনা, হতাশা,অপমান,গ্লানি রয়েছে
সেগুলোর দিকে মনোযোগ নিবদ্ধ করে আমরা জীবনকে আরো দুঃখভারাক্রান্ত করে তুলি।
যারা আপনাকে আহত করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন।
সকল তিক্ত ও কষ্টদায়ক স্মৃতিগুলো পিছনে ফেলে রাখুন
এবং
বর্তমানের জীবনকে অর্থময় করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করুন।
আপনি অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবেন না,
কিন্তু আপনি আপনার চিন্তা ও কাজকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন
১১। আপনি কি নিজের সঙ্গে সৎ?
(are you honest with yourself?)
সুখি ও আদর্শ জীবন পেতে চাইলে নিজের ভিতরকার " দানব" গুলোর উপর নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে হবে
( কোরবানি ঈদের তাৎপর্য হচছে, নিজের ভিতরের পশুত্বকে কোরবানী দেওয়া।
আমরা বাস্তবে কি করছি?)
আমরা কতজন সততার সহিত নিজের ভিতরকার দানব সত্বার কথা স্বীকার করি
ও সেটিকে দমনে আন্তরিক প্রচেষ্টা নেই?
আপনাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তেমন কিছুকে যদি দীর্ঘ দিন এড়িয়ে চলেন,
তাহলে এক সময় সেগুলো এমন শক্তিশালী হয়ে উঠবে যে,
তখন আপনি পুরো বিপর্যস্ত হয়ে পরবেন।
সেগুলো আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
আপনি ক্ষত- বিক্ষত হয়ে যাবেন।
পুরনো ক্ষতকে খুচিয়ে লাভ নেই।
তবে এগুলো এড়িয়ে গেলেও চলবে না।
সে ক্ষত মোচনে যা করনীয় তা করতে হবে।
প্রয়োজনে প্রফেশনাল কাউন্সিলিং/ সাইকোথরাপি নিতে হবে।
নিজের সঙ্গে সৎ থাকতে হবে।
নিজকে ফাকি দেওয়া সবচেয়ে অন্যায্য, ক্ষতিকর কাজ।
সততার সঙ্গে নিজের সব ক্ষত,বেদনাকে স্বীকার করে নিন।
সেগুলো নিরাময়ে সচেষ্ট হোন।
তা না হলে পুরনো ক্ষত গ্যাংরিন হয়ে সর্বনাশ আনতে পারে