Friday, February 3, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস:২৬

আপনার জীবন কি কঠিন,জটিল,ভারবহ হয়ে উঠেছে?

জীবনকে সহজ,সরল,উপভোগ্য ও মর্যাদা পূর্ন করতে চাইলে যা করবেন:

চীনের মহান দার্শনিক ও আধ্বাত্বিক  নেতা কনফুসিয়াস বলেছিলেন্

" জীবন সত্যিই সহজ,সরল,কিন্তু আমরা একে জটিল  করতে গো ধরি।( life is really simple,but we insists on making it complicated)
আমরা অনেকেই জীবনের মূল উদ্দেশ্য ভুলে গেছি।
উল্টো একে ঢেকে দিচ্ছি নানা কাজ,টুকিটাকি মামুলি,ক্লান্তিকর কাজ এবং দায়িত্ব  প্রভৃতির রকমারি সমাবেশে দিয়ে ।
পরে অভিযোগ করছি জীবন এতো কঠিন কেন?
জীবন এত পীড়াদায়ক, জটিল কেন?
আপনি জীবনকে সহজ করতে পারেন,
আবার জটিল ও করতে পারেন।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনার।
যদি জীবনকে সহজ করতে চান , তাহলে জীবনের কিছু দিকের প্রতি মনোযোগ  দিন
যা আপনার জীবনকে জটিল করে তুলছে।
সে সব জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসুন।
সেগুলো হলো:
১। আপনি কি অন্যদের সঙ্গে নিজের তুলনা করে থাকেন?(do you compare yourself to others?)
মনে রাখবেন এক মাত্র  যে ব্যক্তির চেয়ে আপনি আরো উন্নতি করার চেষ্টা করবেন,
তিনি হচ্ছেন গতকাল আপনি যে ব্যক্তি ছিলেন।
অন্যের সঙ্গে নিজকে পরিমাপ  করতে যাবেন না।
এতে শুধু নিজকে আরো উন্নত করা  থেকে মনোযোগ সরে যাবে তা না
বরং আপনার মনে তিক্ততা ও ঈর্ষার জন্ম হবে।
আপনি অসুখী,হীনমন্য জীবন - যাপন করবেন।
মানুষ অনেক পথ অবলম্বন করে।
কারো জীবন পথই আপনার জীবন পথের মতন নয়।
তাদের চেয়ে ভিন্ন বলে আপনি ছোট,হেয়,অপর্যাপ্ত, অযোগ্য  তা কিন্তু নয়।
এর চেয়ে নিজের বর্তমান অবস্হার সঙ্গে নিজকে তুলনা করুন।
বর্তমানেও আপনি যথেষ্ট ভালো আছেন।
এ থেকে অনুপ্রানিত হয়ে নিজকে আরো উন্নত করার চেষ্টা নিন।
২। আপনি কি জীবনের সব ক্ষেত্রে ভয় ভীতিতে আক্রান্ত? 
আপনার সব সিদ্ধান্তে সে ভয়ের প্রতিফলন ঘটে?(you let fear make decision for you?):
মা- বাবা রাতে আলো নিভিয়ে দিলেই ছোট কালে আমরা ভাবতাম  বিছানার নীচে  ভুত- পেত্নী এসে বসে আছে।
ক্রমশ এ রকম শত ভয় আমাদের জীবনে  যুক্ত হতে থাকে।
পর্যাপ্ত অর্থ উপার্জন না করতে পারার ভয়,
ব্যর্থতার ভয়
, প্রত্যাখ্যান এর ভয়,
অন্যদের মত অভিমত,পছন্দ- অপছন্দের ভয়,
বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে ভয়--
এ রকম শত শত  ভয়ের বেড়াজালে আমরা আবদ্ধ।
মনে রাখবেন এ ভয়গুলো ঐ ভূতের ভয়ের মতনই অবাস্তব, অলীক,মন- গড়া ও আরোপিত।
তবে এগুলো  বিশ্বাসের গভীরে স্হান করে নিয়েছে।
এগুলোর অস্তিত্ব শুধু আমাদের মনে(only exists in our mind) ।
নিজকে এই সত্য বার বার স্মরন করিয়ে দিন, এ ভয়গুলো নিছক " ভূতুড়ে" ভয়,
মোটেই বাস্তব নয়।
এক সময় ভয়গুলো অপসৃত হয়ে যাবে।
আপনি আবার জীবনকে সহজ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
৩। প্রকৃত প্রয়োজন ছাড়া অহেতুক কেনা- কাটা করছেন?
আমেরিকান এসোসিয়েশন অব সাইকোলজি  এক জরীপে দেখেছেন, প্রতি  ৪ জনের ৩ জনই জীবনের কোন না কোন সময় আর্থিক সঙ্কটে কাটান।
এতো আমেরিকা,
বাংলাদেশে কতজন আর্থিক সঙ্কটে জীবন কাটান?
অন্য সব কারনের চেয়ে  এ দেশে জীবন কঠিন আমাদের মনে হয় আর্থিক কারনে
অনেক বই বাজারে রয়েছ, যেখানে আপনাকে কোটিপতি বানিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকার থাকে।
আমি আপনাকে সে রকম প্রতারনাপূর্ন,মিথ্যে  অঙ্গীকার দিতে পারবো না।
তবে একটি পথ বাতলে দেবো যেটি বিশ্ব ব্যাপী পরীক্ষিত।
তা হচ্ছে আপনার যা উপার্জন  ও ব্যয় সেখানে পজিটিভ ব্যালান্স আপনি দুই ভাবে করতে পারেন।
হয় উপার্জন বাড়াবেন।
সে চেষ্টা অবশ্যই আমরা সবাই করবো।
কিন্তু  সৎ উপায়ে সবাই উপার্জন বাড়াতে পারবেন এ নিশ্চয়তা আমি আপনাকে দিতে পারবো না।
দ্বিতীয় পথটি হলো ব্যয় কমানো।
জাতীয় বাজেটেও ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা হয়।
আর ব্যক্তি জীবনে সেটি আরো বেশী প্রযোজ্য।
ব্যয় হবে আয়ের উপর নির্ভর করে,কেবল প্রয়োজনের উপর নয়।
আয় যা-ই হোক তার অন্তত একটি  ক্ষুদ্র অংশ ভবিষ্যৎ ও বিপদের জন্য জমা রেখে, বাকীটুকু দিয়ে সংসার চালাতে হবে।
(যারা একমত নন তাদের জোর করে একমত হতে বলবো না।
আপনি যদি ব্যয় না কমিয়ে ও ভালো ভাবে চলতে পারেন,ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকে,অসুখবিসুখ ও অন্যান্য প্রয়োজনে নগদ টাকার অভাব না হয়,
তাহলে এই সংযমী জীবন কেন করবেন?)
তবে কারো সৎ উপার্জনই তেমন অঢেল হওয়ার কথা নয়।
তদুপরি অনেক টাকা থাকলে  ও শুধু নিজের বিলাসী জীবনে তা ব্যয় করা কতটুকু নৈতিক কাজ হবে?
আর আমার মতন দিনে এনে দিনে খাওয়া লোকদের একান্ত প্রয়োজনের বাইরে কেনা কাটা না করে কিছু সাশ্রয় করে জীবনকে কিছুটা হলেও সহনীয়,সহজ করার চেষ্টা নিতে হবে।
ধর্মীয় বানীতেও মিতব্যয়ী হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে এবং অপচয়কে তিরস্কার করা হয়েছে।
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো তাই একটি পুন্যের কাজ ও বটে
৪। আপনি প্রতিদিনই নিজের সঙ্গে নেতিবাচক কথা বলেন:( negative self- talk)?
আমরা সব সময়ই নিজের সঙ্গে কথা বলি( শুধু সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা তেমন করে তা নয়- তবে এর মধ্যে পার্থক্য আছে)।
এই আত্ম- কথনের দিকে একটু মনোযোগ দিন
( মেডিটেশন বলুন বা মাইন্ডফুলনেশ বলুন, সেখানে এ কাজটি ভালো ভাবে করতে হয়)।
মনে রাখবেন এই আত্ম কথন বা স্বতঃস্ফূর্ত চিন্তা গুলোর(automatic thoughts)  সঙ্গে আমাদের যে বাত- চিত ,
তা আমাদের আচরন,দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রন করে।
বেশীরভাগ আত্মকথন হয় নেতিবাচক।
আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ছোট করি (be little),
নিজের মানকে হেয় করে দেখি(be rate)।
অথচ ভাবি জগত কেন বধ্য ভুমির মতন কসাইখানা,বিশৃঙ্খল হট্রশালা।
মনে রাখবেন আমরা নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে কট্টর,নিষ্ঠুর সমালোচক
( আমার আত্ম উন্নয়ন মূলক বই " মন ও মানুষ" বই এর ১ ম খন্ডে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
সেখানে এটিকে আমি নাম দিয়েছি - এন্টি মি বা প্রতি - আমি নামে।
অর্থাৎ আমাদের নিজের ভিতর রয়েছে এক ভিবীষন, যে শত্র পক্ষের মতন নিজের খারাপ দিকগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে নিজের কাছে তুলে ধরে।)
তাই আত্মকথনকে ইতিবাচক করে নিন।
নিজকে শোভন,সুন্দর,মহান ভাবে ভাবুন,দেখুন।
নিজেই নিজকে ভালো না জানলে, শ্রদ্ধা না করলে অন্যরা করবে কোন দুঃখে?
( তারা পারলে আপনার বারোটা বাজিয়ে দেবে)
আমরা মনে করি আমরা নিজকে খুব ভালোবাসি।
ব্যাপারটি মোটেই তেমন নয়।
অন্যদের প্রতি যেমন আমরা  ভালো ধারনা তৈরী করতে পারি আবার মন্দ ধারনাও
তেমনি নিজের সম্বন্ধে ও আমরা ভালো/ মন্দ ধারনা ( সেল্প কনসেপ্ট)  তৈরী করি।
এ ধারনা ইতিবাচক হলে প্রশংসনীয়,উজ্জ্বল আত্ম ভাব মূর্তি( সেল্প ইমেজ) তৈরী হবে
নতুবা উল্টোটি
এ সব ধারনা ছোটকাল থেকে মা- বাবা,পরিবারের লোক, বন্ধুরা,আত্মীয়রা আমাদের যে ভাবে দেখে,সমালোচনা করে,আচরন করে তার উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়।
আপন মা- বাবাও কি সারাক্ষন প্রশংসা করে থাকে না, নানা সমালোচনার মধ্য দিয়ে শৈশব কাটে?
বিভিন্ন ব্যর্থতা,বাধা,প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে জীবন কাটে।
তাই নিজের প্রতিও খুব যে একটি ভালো, ইতিবাচক আত্ম পরিচিতি বা ভাব মূর্তি আমাদের তৈরী হয় তা না।
অতএব ইতিবাচকব আত্ম ইমেজ আমাদের কম ক্ষেত্রেই তৈরী হয়।
আমরা তখন নিজকে ভালোবাসতে পারি না,
বরং আত্ম ঘৃনা(self- hatred)  তৈরী হতে পারে।কিন্তু বেশীরভাগ  ক্ষেত্রে ইতিবাচক - নেতিবাচক মিশ্র ধারনা তৈরী হয়।
গত সপ্তাহেই মৃনাল সাহার একটি পোস্টে আত্ম  প্রেম ( নারসিসিজম), স্বার্থপরতা ( সেলফিসনেশ) ও নিজকে ভালোবাসা ( সেল্প লাভ) নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটু মন্তব্য করেছিলাম।
অনেকের বোঝার সুবিধার জন্য সে অংশটি কপি- পেস্ট করে দিচ্ছি
"তাৎক্ষনিক ভাবে সংক্ষেপে বললে:
নিজকে ভালোবাসা:
নিজকে নিয়ে সন্তুষ্ট, তৃপ্ত থাকা;
নিজের ভুল ক্রটি গুলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা;
নিজের যোগ্যতা,সফলতাকে গুরুত্বপূর্ণ  ভাবা;
নিজকে নিয়ে শান্তিতে থাকা,স্বস্তিতে থাকা;
আত্ম সম্মান বোধ,আত্ম মর্যাদা  বোধ উচুতে থাকা;
অন্যকে সম্মানিত,বন্ধুবৎসল,সজ্জন ভাবা;
জীবন সহজ, ছন্দময়,গতিশীল হওয়া--- ইত্যাদি
স্বার্থপরতা :
জীবনের সব জায়গায়,সব সম্পর্কে নিজের বৈষয়িক ও তাৎক্ষনিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া;
সর্বত্র নিজের সুযোগ সুবিধা  মাথায় রেখে  হিসেব নিকেষ করা;
প্রতি সম্পর্কে, প্রতি পদে আমার স্বার্থ, আমার লাভ,আমার প্রাধান্য কতটুকু  সে বিবেচনা রেখে জীবন চালানো- ইত্যাদি
আত্ম প্রেম/ স্বকাম( নার্সিসিজম):
নিজকে সব কিছুর কেন্দ্র বিন্দু মনে করা;
নিজের যোগ্যতাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখা;
সব সময় প্রশংসা,স্তুতি পাওয়ার দুর্নিবার কামনা থাকা;
উন্নাসিক ভাবে,উদ্ধত হয়ে নিজকে জাহির করার চেষ্টা-- ইত্যাদি।
মৃনাল মৃণাল সাহা,fatema Fatama Tus Sauda"
এখন ভেবে দেখুন নিজকে কতটুকু ভালোবাসে,কতটুকু স্বার্থপর আর কতটুক  আত্ম প্রেমে নিমগ্ন?
ভালোবাসা কোন শর্ত দিয়ে হয় না
নিজকে ও " নিঃশর্ত" ভাবে ভালোবাসুন
( পরবর্তী পর্ব পরের সংখ্যায়)

1 comment: