Thursday, January 26, 2017

যাহা বলিব সত্য বলিব-৪

কাহিনী-১:

বাবা আবার বিয়ে করায় মা এসিড মেরে বাবার এক চোখ অন্ধ করে দেয়

২। কাহিনী-২:

শুধু মেয়েরাই শৈশবে যৌন অনাচারের শিকার হন তা না, ছেলেরা ও তেমন শিকার হন

সময় এসেছে লজ্জা ভেঙ্গে তা প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ  গড়ে তোলা
( ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স)
...................................................

কাহিনী-১:

টিপু বর্তমানে ৪৩ বছর বয়স।সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান।
মা- বাবা দুজনেই ডাক্তার।
বাবা একাধিক বিয়ে করেছে।
তার মা দ্বিতীয়।

আবারো ৩য় বিয়ে করাতে মা ক্ষিপ্ত হয়ে বাবাকে এসিড মারে।
এতে বাবার এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে মা ক্যানসারে মারা যায়।
তখন সে ছোট ছিল।

তারা আপন দু'ভাই।টাকা পয়সা,হাসপাতাল,জায়গা জমি সব ছিল।

কিন্তু সৎ মায়ের অত্যাচারে ছিল জর্জরিত।

খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশে নেশার জগতে চলে যায়।হিরোইন সহ সব নেশাই করতো।

বড় ভাই ও কিছুটা নেশা করতো কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যায়।

কিন্তু সে নেশা ছাড়তে পারে না।

তার ভাষ্যমতে নেশা ছাড়লেও পারিবারিক অশান্তির কারনে আবারো নেশা করতাম।

সে বিয়ে করে ও
এক সময় সে মালয়েশিয়া চলে যায়।

সেখানে সে নেশা মুক্ত ছিল।

এ সময় তার বাবাও মারা যায়।

কিন্তু তার আপন বড় ভাই শত্রুতা শুরু করে

।বড় ভাই তার স্ত্রীর নামে বদনাম করতে থাকে।সে পরকীয়া করে বেড়ায় বলে বিভিন্ন কথা রটায়।

ঠিক মতন বউয়ের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে দিতো না।এক সময়ে তার বউকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়।

সে দেশে ফিরে আসে।

সব কিছু ওলোটপালট দেখে সে আবারো নেশার জগতে ফিরে যায়।

তার ভাষ্যমতে তাকে সম্পত্তি থেকে বন্চিত করতে সবাই তাকে নেশাখোর প্রমান করতে চাইতো।

তারা কেউ তাকে ভালো করার চেষ্টা করেনি বরং যন্ত্রনা দিয়ে, প্ররোচনা দিয়ে নেশার জগতে ঠেলে দিয়েছে।

তার এক সৎ বোনের ( যে আমেরিকায় থাকে) সে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হয়।সেখানে সে সুস্হ হয়ে উঠে।

শুধু নিজে সুস্হ হওয়া নয় সে এখন কয়েকটি সেন্টারে অন্য মাদকাসক্তদের সুস্হ করার কাজে নিজকে নিয়োজিত রেখেছে।

যাহা বলিব সত্য বলিব অনুষ্ঠানে এসেছে সবাইকে জানাতে যে দৃড় ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকলে নেশা মুক্ত থাকা সম্ভব

ও কেউ যেন নেশার জগতে গিয়ে তার মতন জীবনে সব কিছু না হারান।

এ কাহিনী আমাদের যা শেখায়:

১। নেশা মানুষকে সর্বসান্ত করে দেয়।

নিজ জীবনের চাবিকাঠি ও চলে যায় অন্যদের হাতে।
এমনকি নিজ স্ত্রীর নিয়ন্ত্রন ও হারাতে হয়( আমার  জানা এক মাদকাসক্তকে তার বড় ভাই ও স্ত্রী মিলে ৫ বছর ক্লিনিকে ফেলে রাখে চিকিৎসার নামে)

২। শুধু স্বামীরা স্ত্রীদের উপর এসিড মারে তা নয়,

কখনো কখনো স্ত্রীরাও যে এসিড মেরে স্বামীর চোখ অন্ধ করে দিতে পারে তা জানলাম( স্বামীকুল সাবধান!)

৩। মাদকাসক্তি ভালো হয়।

সবার ধারনা এ রোগ ভালো হয় না, সেটি যে ভুল এ কাহিনী তা আমাদের শেখায়।

হতাশ হবেন  না,লেগে থাকুন আপনি ও মাদকমুক্ত হতে পারবেন, সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নিলে।

কাহিনী-২:
সোহেল ইসলাম বাপ্পী,২১ বছর।

তার ২ বছর বয়সে মা- বাবার সেপারেশন হয়।সে মার সঙ্গে নানা বাড়িতে মানুষ হয়।

পরে জানতে পারে বাবা মারা গেছে।মা বহু কষ্ট করে  সংসার চালায়।

ক্লাশ এইটে পড়ার সময় অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মোবাইলে একত্র হয়ে পর্ন ছবি দেখতো।

একদিন এক বড় ভাই এগুলো দেখে তাদেরকে শাসায় ও সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে এক নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে তাকে শারিরীক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে।

সে চিৎকার করলে সবাই চলে আসে।

কিন্তু এতেই তার রক্ষা হয় না।
পরে ঐ বড় ভাই তাকে কয়েকবার বলৎকার করে।

সে নানীকে তা বলে দেয়।তখন সে ছেলেকে ধরে সবাই মারে।

তার মা গার্মেন্টস এ চাকরী করতো।মা অন্যত্র বিয়ে করে।

ঐ লোকের নিজের সংসার ছিল।

ঐ বাবার কাছ থেকে কখনো বাবার স্নেহ পায়নি।

এসএসসি পাশ করে।ক্রিকেট খেলতো।

একদিন এক ছোট ভাই কোকের বদলে মদ নিয়ে এসে তাকে খাওয়ায় ও তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে চায়।

সে বাধা দেয়,কিন্তু ঐ ছেলে বলে ভাই আমরা দু ভাইও এমনটি করি পুছ করি না,আদর করি ভালো লাগে।

ব্যাপারটি তার ও ভালো লেগে যায়।

এ ভাবে শুরু।

এরপর থেকে সে প্রায়ই বন্ধুদের রুমে ঢেকে এনে শারিরীক সম্পর্ক করতো ও তারা সবাই মিলে পর্ন ছবি দেখতো।

একদিন তেমন এক বন্ধুর সঙ্গে এমনটি করতে গেলে সে বলে, তুমি  এগুলো কি করছো, এ তো মহা পাপ,তুমি খারাপ কাজ করছো।

সে তাকে প্রত্যাখ্যান করে ধিক্কার দিয়ে চলে আছে।

এরপর থেকে তার মনে অনুশোচনা আসে।

সে মসজিদে গিয়ে তওবা করে ও শপথ করে আর কখনো এ সব পাপ কাজ করবে না।

কিন্তু ইতিমধ্যে ঐ বন্ধু সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তার খারাপ কাজের কথা।

সবাই জানার পর তাকে বয়কট করে,সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়।

সে একাকী হয়ে পরে।

সে এখন মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত ও হতাশ।

এ দিকে মায়ের অসুস্হতা ও বেড়েছে,কিন্তু কোন সাহায্য করতে পারছে না।

সে দুটি নাটক লিখেছে তা প্রকাশ করতে পারছে না।

অনুষ্ঠানে এসে সে জানতে চায় সে তার তওবা রক্ষা করতে পারবে কিনা এবং শৈশবে তার উপর যে যৌন অনাচার হয়েছে এর প্রভাবে সে নিজে তেমনটি হয়েছে কিনা

এ কাহিনী থেকে আমরা শিখতে পারি:

১। যৌন অনাচার শুধু মেয়েদের উপর হয় তা নয়,ছেলেদের উপর ও হয়।

মেয়ে সন্তানদের মতন ছেলে সন্তানদেরকেও এ অনাচার থেকে সুরক্ষা দিতে হবে

২। শৈশবে অত্যাচারিত হলে( শারিরীক,মানসিক, যৌন  যে ভাবেই হোক) এর রয়েছে তাৎক্ষনিক প্রভাব ও সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাব।

অনেক  ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং সহ মানসিক চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

৩। দেশের আনাচে কানাচে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খারাপ ছবি,পর্ন ছবি ছড়িয়ে পরছে।

গ্রামে গিয়েও দেখেছি অল্প বয়সের ছেলেরা একত্র হয় এক মোবাইলে উপুর হয়ে এ সব নোংরা ছবি দেখছে।

অভিভাবকরা কই? কি করছেন?

৪। এ সব অনাচারের বিরুদ্ধে ভালো মানুষরা এগিয়ে এসে প্রতিরোধ গড়বে  সমাজের সে শক্তি আজ অনুপস্হিত,

বরং উল্টো এর সুযোগ নিয়ে বদ লোক গুলো তাদের বদমতলব চিরতার্থ করে নিচ্ছে

( ঐ বড় ভাই শাসন করে তাদের ভালো হওয়ার কথা না বলে নিজেই তাকে ভোগ করতে শুরু করলো)

৫। তবে কিছু ভালো মানুষ এখনো আছে।

তার এক বন্ধু তাকে তিরস্কার করে ঐ পাপ কাজ থেকে ফেরাতে পেরেছে।

*** ভালো লোকদের সম্মান ও ক্ষমতা দিলে সমাজ থেকে মন্দ লোক গুলোকে বিতাড়ন করা সম্ভব

No comments:

Post a Comment