উন্নত জীবনের গাইড লাইন-- পর্ব:২
..................................
পূর্ববর্তী সংখ্যার পরের অংশ
(আমার " উদ্বেগ-টেনশন: মনোবৈজ্ঞানিক সমাধান" বই থেকে কিছু নির্বাচিত অংশ তুলে ধরছি)
৩। জীবন সংগ্রাম বা লড়াইকে মূল্য দিন,গুরুত্ব দিন (value the struggle):
জীবনের সমৃদ্ধি, সফলতা আসে সন্ধান,পশ্চাৎধাবন ও অনুসন্ধান থেকে।
জীবনে যুদ্ধ,সংগ্রাম করতে কতটুকু দৃড়তা,সাহস ও ধৈর্য্য দেখাবো;
টিকে থাকতে, অস্তিত্ব বজায় রাখতে কত ক্ষত,আঘাত,যন্ত্রনা সহ্য করে যাবো
অথবা স্বপ্নের রাজ্য জয় করতে কতবার নরক যন্ত্রনায় ভুগতে রাজী থাকবো -
এ সব ব্যাপারে আমাদের মধ্যে রয়েছে যোজন যোজন পার্থক্য।
কিন্তু এ রকম অনুসরন,পশ্চাৎধাবনের মাধ্যমেই আমরা বিকশিত হতে পারি; আমরা যা বা যতটুকু তার চেয়ে বেশী কিছু, বড় কিছু,মহান কিছু হতে পারি।
ডুবস(dubos)একে বলেন " বেচে থাকার সংগ্রাম"( struggle to live)।
আমাদের মধ্যে এ দ্বন্ধ চলতে থাকে যে, কোন ঝুকি না নিয়ে যা আসে যা পেয়েছি যা হয়েছি সেটিই টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করবো,
নাকি যা আয়ত্বের বাইরে সে সবের অনুসন্ধান করবো,পশ্চাৎধাবন করবো।
যদিও আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা বা ঘাটতি থাকে( শারিরীক প্রতিবন্ধিতা,দারিদ্রতা,বিদ্বেষপরায়ন শত্রু)
তথাপি সে গুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি ও মনোভাব নির্ধারন করে, আমরা হাল ছেড়ে দিয়ে ব্যর্থতা মেনে নেবো,
না বিকল্প পন্থা বের করার চেষ্টা করবো।
লড়াই করা মানে কি করতে হবে সেটিও বেছে নেওয়া।
এমনকি নিদারুন হতাশাজনক অবস্হায় ও সে সুযোগ্য থাকে।
মৃত্যু, অসুস্হতা,ডিভোর্স, বার্ধক্য - এ সব অনিবার্য।
একে আমরা পরিবর্তন করতে পারি না।
কিন্তু ঐ সব অপরিবর্তনীয় বিষয়েও আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি কেমন হবে, সেটি চয়েজ করার সুযোগ আমাদের রয়েছে।
সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেবো না তিক্ততার সাথে জীবন যাপন করবো ;
সাহসের সহিত মোকাবিলা করবো না ভীতির সহিত----
আমরা চয়েজ করে নিতে পারি কি ভাবে জীবনের অনিবার্য চাপ- পীড়নকে মোকাবিলা করবো।
প্রতিটি পরিস্হিতিতে আমাদের সবার কিছু একটা "মূল্যবান" জিনিস খুজে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
যত বৃদ্ধ হবো ততই দেখবো, এই " কিছু একটা মূল্যবান" বিষয় নিজেই সংগ্রামের অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।
রাব্বি ও হিল্লেল দুই হাজার বছর আগেই বলে গেছেন
" যদি আমিই নিজের জন্য না দাড়াই, তবে কে দাড়াবে? এবং যদি তেমনটি এখনই না করি তবে কখন?
এবং যদি শুধু নিজের জন্য দাড়াই তাহলে কতটুকু ভালো আমি?"
( অর্থাৎ নিজের জন্য নিজেকেই দাড়াতে হবে এবং তা এখনই এবং অন্যের জন্যও আমাদের দাড়াতে হবে)
..................................................
৪। ভালোবাসার বীজ পুন: পুন: বপন করুন(resow the seeds of love):
যতই আমরা বড় হতে থাকি, আমাদের ভালোবাসার স্হিতিশীলতা আমাদের তত বেশী আবেগগত ভাবে খাপ- খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।
কিন্তু মৃত্যু,অন্যত্র চলে যাওয়া বা বিচ্ছিন্নতার কারনে, অনেক প্রিয় সম্পর্ক আমাদের হারাতে হয়।
তাই যতদিন বেচে থাকি, ততদিন ভালোবাসার বীজ পুন: পুন: বপন করে যেতে হবে।
৩ কারনে নতুন বন্ধু তৈরী হয় না:
লাজুকতা,পর করে দেওয়া ও বৃদ্ধ হওয়ার কারনে।
লাজুকতা,হতাশা,হীনমন্যতার কারনে নতুন বন্ধুত্ব করা কঠিন হয়ে পড়ে।
হীনমন্যতা থাকলেই এ নিয়ে নিজকে খুব বেশী দোষারোপ করার প্রয়েজন নেই।
কেননা হীনমন্যতা একটি কমন বিষয়।
গবেষনায় দেখা গেছে ছাত্র ছাত্রীদের ৯৯% কোন না কোন সময়ে হীনমন্যতায় ভুগে থাকে।
বরং চিন্তাশীল,সৃজনশীল মানুষের মধ্যে এটি বেশী থাকে।শ্রম জীবিদের মধ্যে কম দেখা যায়।
তাই হীনমন্যতা বোধ থাকলে হতাশ হওয়ার কারন নেই।
যা করতে হবে এটি দুরুত বুঝতে হবে ও দুরুত তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা নিতে হবে।
বিচ্ছিন্নতা কাটাতে অনানষ্ঠানিক ভাবে( ইনফরমালি) অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে হবে,মিশতে হবে,সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা নিতে হবে।
অন্যকে পর করে দেওয়া,বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার দিকে ও নজর দিতে হবে।
পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে ভালোবাসার বীজ পুন: বপন করে এই পর করে দেওয়ার ব্যাপারটি আমরা কমিয়ে আনতে পারি।
আবার মনের ক্ষোভ,যন্ত্রনা,হিংসা,ক্রোধ,অপমান ভুলে গিয়ে,
মাফ করে দিয়ে ও আমরা অন্যদের পর করে দেওয়া,বিচ্ছেদ করে দেওয়ার হার কমিয়ে আনতে পারি।
হয়তো কখন কখন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়ার যৌক্তিক কারন থাকতে পারে।
তবে মূহুর্তের কোন ভুল বা অন্যায়;
কোন ভুল বোঝা বুঝির জন্য ;
আকস্মিক,তীব্র মোচড় বা টান দিয়ে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন করা হবে দুংখজনক কাজ।
এমনিতেই আমাদের কম সংখ্যক পুরনো বন্ধু থাকে।
তাদের সঙ্গে থাকে দীর্ঘ দিনের স্মৃতি।
তাই তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমরা মানসিক দারিদ্রতার মধ্যে পড়ি।
বৃদ্ধ বয়সে তরুন বন্ধু তৈরী করা কঠিন কাজ।
তবে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আবেগগত বন্ধন তৈরী করলে , বৃদ্ধ বয়সের একাকীত্ব থেকে সেটি সুরক্ষা দিতে পারে
এবং সেটি ভালো " ইনসুরেন্স" হিসেবে ও কাজ করতে পারে।
সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ভালোবাসাকে লালন-পালন করতে হয়,
ভালোবাসার গাছকে সার দিয়ে,পানি দিয়ে বাচিয়ে রাখতে হয়( নারচার)।
এমনটি ভাবা ভুল হবে যে ভালোবাসা কোন রকম পরিচর্যা ছাড়া,নার্চার না করা সত্বে ও চিরকাল তরতাজা থাকবে।
স্বামী- স্ত্রীর ভালোবাসাকে,
সন্তানদের প্রতি ভালোবাসাকে,
আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসাকে,
বন্ধু,প্রতিবেশী সবার প্রতি ভালোবাসাকেই পুন নবায়ন করতে হয়
,রিচার্জ করতে,প্রয়োজনে পুনর্জীবিত করতে হয়।
ভালোবাসা এমনি এমনিই চিরকাল অক্ষুন্ন থাকে না
একে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।
ভালোবাসার বীজ যেমন পুন: পুন: বপন করতে হবে
তেমনি ভালোবাসার বৃক্ষকে নব নব "ভালোবাসা" দিয়ে সতেজ,সজীব রাখতে হবে
No comments:
Post a Comment