Friday, October 27, 2017

রোগ কাহিনী -২১: বাবা বলেন" স্যার আমার সংসারটি বাচান,ওকে এমন ইনজেকশন দেন যেন ১৫ দিনের মধ্যে মারা যায়( ছেলে ও মেয়ের সামনেই); ছেলেও বলে আমাকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলেন স্যার

সংক্ষিপ্ত কাহিনী :

মান্নান(ছদ্মনাম)  বর্তমান বয়স ২০ ।
ছোটকালে যে বয়সে হাটার কথা,কথা বলার কথা সেগুলো দেরীতে হয়েছে( ডিলেইড ডেভেলাপমেন্ট)। তখন হাটতে গেলে ব্যালান্স রাখতে পারতো না।

ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত পড়েছে,তবে অনেক ঠেলেঠুলে।ভয় পেতো,উল্টো জুতো পড়তো।জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলতো।কাপড়,লুঙ্গি ট্যাঙ্কে ভরে রাখতো।

মূল অস্বাভাবিকতা শুরু হয় ৫ বছর আগে( তার ১৫ বছর বয়সে)।

স্কুলে যেতে চাইতো না,না যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করতো।

বন্ধুদের চোখে কলম দিয়ে খোচা দিতো।

ইচ্ছে করে বেসিনের কল ভেঙ্গে ফেলে,

বাথরুমের বেসিন টেনে উঠিয়ে ফেলে,

খাটের উপর দাড়িয়ে চলন্ত ফ্যানে হাত ঢুকিয়ে দেয়( আঙ্গুল কেটে গেছে- কিন্তু কোন ব্যথার অনুভব নেই),

দুই হাত বাধা অবস্হায় ও পিছন থেকে টিভি উঠিয়ে ভেঙ্গে ফেলে,

ফ্রিজ ফেলে দেয়,

নিজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলতে চায়

,দু'আঙ্গুল নাকের ভিতর ঢুকিয়ে খোচাতে থাকে যে পর্যন্ত রক্ত বের হয়;

সর্বশেষ হাসপাতালে আসার আগে বাবার সঙ্গে রাগ করে চুলায় আগুন জ্বালিয়ে খুনতি গরম করে নিজের হাতে তিন বার ছ্যাকা দেয়

( ছবি সংযুক্ত) ।

কিন্তু যে জন্য পুরো পরিবার আতঙ্কিত, বিব্রত ও চরম অসন্তুষ্ট  তা হলো তার মধ্যে অস্বাভাবিক যৌন বিকৃতি দেখা দিয়েছে।

যেকোনো মেয়ে,নারী দেখলে তার বুকে,শরীরে হাত দিতে চায়।রাস্তায় মেয়ে দেখলেই তেমনটি করতে চায়,তবে ভয়ে বাসায় এসে হস্তমৈথুন করে।

সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক কাজ হচ্ছে নিজের মায়ের বুকে হাত দেয়, তার নিতম্ব চেপে ধরে,বলে আমার...  ঢুকিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।

একই  রকম উৎপাত বিবাহিত বোনের সঙ্গেও করে।এই জগন্য কাজ ও চেষ্টা প্রতিদিনই কয়েক বার তার করতে ইচ্ছে করে এবং সে এগুলো বাবাকে,মাকে,বোনকে,দুলাভাই সবাইকে বলতে থাকে।

আমার সামনে চেম্বারেও সে কয়েক বার তার বাবা ও বোনের সামনে ঐ সব অশ্লীল  নোংরা কথাগুলো বলে।

তবে এই খারাপ কথা বলার পর পরই তার তীব্র অনুশোচনা হয়-

সে খুব জোড়ে জোড়ে বুকে ঘুসি দিতে থাকে,

আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও বলে চিৎকার করে,

মা - বোনদের কাছে মাফ চায়,

পুতা দিয়ে মাথায় আঘাত করে,

ছাদ থেকে লাফ দিতে চায়,
বলে আমি মরতে চাই

,মুখে হাত দিয়ে বমি করতে চায়,

নিজের পু: লিঙ্গকে প্যাসার দিয়ে চেপে ধরে রাখে নিজকে শায়েস্তা করার জন্য,

আমাকে বলে স্যার ইচ্ছে হয় এটিকে ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলি

এবং যা সব সময় করে তা হলো দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকে,এমন জোরে মাথা বারি দেয় যে পাশের বাসার লোক এসে জানতে চায় দেওয়ালে কি দিয়ে এমন আঘাত করা হচ্ছে?

তার  এসব ধ্বংসাত্বক কাজ ( ডেসট্রাকিভ একটিভিটিজ) ও নিজকে আঘাত/ আহত করার কাজ গুলো( ডেলিভারেট সেল্ফ হার্ম) সে ইচ্ছে করলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে জানায়

দেশের প্রখ্যাত সব সাইকিয়াট্রিস্টকে দেখানো হয়েছে,হাসপাতালে ও ভর্তি করানো হয়েছে।তবে খুব একটি উন্নতি হয়নি।

নিজের মা ও বোনকে নিয়ে যে অশ্লীল কথা ও আচরন এটি এখন ঐ পরিবারের প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।

বাবা বলেন স্যার একজনের জন্য আমার পুরো পরিবার ধ্বংসের পথে,অনেক সাইকিয়াট্রস্ট বলে এ রোগ ভালো হওয়ার নয়,আমাদের বাচান,এমন কোন ইনজেকশন দিন যাতে সে মরে যায়।

ছেলেও বলে আমি এ জীবন রাখতে চাই না,আমাকে মেরে ফেলুন।

  পর্যবেক্ষণ :
১। ধ্বংসাত্বক কাজ( disruptive and destructive activities) --

  অনেক শিশু করে থাকে।কয়েকটি শিশু মনোরোগ এর জন্য  দায়ী।

তেমনি  নিজকে আঘাত করা,আহত করাও (deliberate self- harm) কিছু মানসিক রোগের লক্ষন।

২। প্রতিটি রোগ আলাদা এবং তাদের চিকিৎসা পদ্ধতিও অনেক।মাল্টি- ডিসিপ্লিনারী টিম মাল্টিপল থেরাপি দিয়ে থাকেন।

৩। তবে নিজকে আঘাত করা/ ধ্বঃসাত্বক কাজ যদি মারাত্মক পর্যায়ের হয় ও ঘন ঘন হয় সে ক্ষেত্রে বিদেশে স্বল্প মাত্রার ইলেকট্রিক শক দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়,যা আমাদের দেশে এভেইলএবল না।

৪। এ জাতীয় রোগী সহ ক্রনিক সিজোফ্রেনিয়ার অনেক রোগী বাসায় রাখা পরিবারের জন্য  নিদারুণ কষ্টের ব্যাপার।এদের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ স্হায়ী রিহেবিলিটেশন সেন্টার।

বিদেশে সরকারি ভাবে এরকম সেন্টার / হাসপাতাল রয়েছে,যা আমাদের দেশে নেই

( পাবনা মানসিক হাসপাতালে বিশাল এলাকা ও অবকাঠামো রয়েছে,অনায়াসে সেখানে বড় মাপের দুটি রিহ্যাব সেন্টার ও লংটার্ম হাসপাতাল করা যায়)

No comments:

Post a Comment