Wednesday, December 14, 2016

সাইকোলজিক্যাল টিপস-২৪

ব্রেইনের " ডিলিট" বাটন আপনার হাতে: একে সঠিক ভাবে ব্যবহার করুণ
..........................................
মন- বাগান মনের মতন সাজান
...............................................
নিউরো সায়েন্সে একটি কথা আছে:neurones that fire together wire together

যে সব নিউরন( স্নায়ু কোষ) এক সঙ্গে জ্বলে উঠে,সে গুলো এক  সঙ্গে ( তারের মতন) জড়িয়ে যায়।তার মানে সে স্নায়ু কোষ গুলো মিলে একটি সার্কিট তৈরী করে।
এ ভাবে যত বার সে সার্কিট উদ্দীপ্ত হবে,তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে সে কানেকশন/ সার্কিট।

কথায় আছে প্রাকটিস মেকস ম্যান পারফেক্ট
এ প্রবাদের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপরোক্ত সূত্র।

নিউরো সায়েন্সে আরো একটি কথা আছে " use it or loose it"। একে ( ব্রেইনের  যে কোন অংশ) ব্যবহার করো,না হলে এটি হারাবে।
( এ বিষয়ে আমার " মন ও মানুষ" বইয়ের ১ম খন্ডের ১ম অধ্যায়ে একটি আলাদা লেখা রয়েছে,আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন)।

আমার বইয়ের সেই অংশের কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি:

"...  অনেকটা এ রকম তোমাকে প্রচুর সম্ভাবনা ও সুপ্ত শক্তি দেওয়া হলো। এখন  তোমার কাজ হচ্ছে,এ গুলোর সঠিক ব্যবহার ও অনুশীলন করে নিজেকে ইচ্ছেমতন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা।... কে কোন ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে পারবে, পারঙ্গম হবে,তা নির্ভর করে সে কিশোর / কিশোরী কোন ক্ষেত্রটিতে বেশী আগ্রহ নিয়ে চর্চা ও অনুশীলন করে।
..... যে সব নিউরন ও তার সংযোগ গুলো বেশী বেশী ব্যবহৃত হবে সে গুলো টিকে যাবে এবং যে গুলোর কম ব্যবহার  হবে বা হবে না সে গুলো শুকিয়ে গিয়ে ঝরে পরে যাবে।

তাই যে কিশোর কিশোরী সঙ্গীতে মনোনিবেশ করবেন; খেলা ধুলার চর্চা বেশী করবেন; লেখা পড়া ও একাডেমিক চর্চা বেশী করবেন তাদের ক্ষেত্রে ঐ বিশেষ নিউরন ও তার সংযোগ গুলো শক্ত,মজবুত ও পোক্ত হবে(hard wired)।
অন্য দিকে যারা অলস বিছানায় শুয়ে থেকে ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটাবে তাদের ক্ষেত্রে শুধু ঐ সব সার্কিট গুলো টিকে থাকবে, বাকী গুলো দুর্বল হয়ে পড়বে।"



তবে এই শক্তিশালী কানেকশন পেতে হলে পুরনো,অকেজো স্নায়ু সংযোগ গুলোকে কেটে- ছেটে বাদ দিতে হবে,যাতে নতুন জায়গা পাওয়া  যায়।একে আমরা বলি " synaptic pruning"।

মনে রাখবেন আমাদের ব্রেইন একটি বাগান
বাগান:
তবে এ বাগানে ফল,ফুল গজে উঠে না,কিন্তু গজে উঠে স্নায়ু কোষ,স্নায়ু সংযোগ।

এই কানেকশন বা সংযোগের মাধ্যমে, নিউরো ট্রান্সমিটার গুলো,যেমন ডোপামিন,সেরোটনিন প্রভৃতি চলাচল করে।

মাইক্রো গ্লিয়াল কোষগুলো(glial cell)   ব্রেইনে মালি হিসেবে কাজ করে।এ গুলো নির্দিষ্ট স্নায়ু কোষে সিগনাল পাঠানোকে দ্রততর করে।

তবে অন্য গ্লিয়াল কোষগুলো পরিত্যক্ত আবর্জনা সরিয়ে ফেলার কাজ করে(waste remover)।
এগুলো আগাছা উপড়ে ফেলা, ক্ষতিকর বস্তু বিনষ্ট করা,মৃত ঝড়ে পরা পাতা জড়ো করার কাজ করে।

এক কথায় আপনার মন- বাগানের " মালি" হচ্ছে এই গ্লিয়াল কোষগুলো

তবে প্রশ্ন হচ্ছে এ গুলো কি ভাবে জানে কোন সংযোগ গুলো ছেটে বাদ দিতে হবে?

গবেষনায় দেখা  গেছে যে সব স্নায়ু সংযোগ গুলো  কম ব্যবহৃত হয়, সে গুলো protein c1q দ্বারা  চিন্হিত হয়( মার্ক)।

মাইক্রো গ্লুিয়াল কোষ গুলো যখন এই মার্ক গুলো চিন্হিত করতে পারে, এ গুলো তখন সে প্রোটিন এর সঙ্গে যুক্ত হয় ও সে গুলো ধ্বংস করে।

তারা অব্যবহৃত  সংযোগ  গুলো ছেটে বাদ দেয়।

এ ভাবে আমাদের ব্রেইন নিজের জন্য নতুন জায়গা করে নেয়,যাতে নতুন ও শক্তিশালী সংযোগ তৈরী করে নিতে পারে।ফলে আমরা নতুন বিষয়ে শিখতে পারি।

ঘুম দরকারী:

কখনো কি আপনার মনে হয়েছে ব্রেইন জ্যাম হয়ে রয়েছে?
নতুন চাকরির শুরুতে,কোন প্রজেক্ট এ গভীরতা মনোযোগ দেওয়ার সময় আপনার ঘুম ভালো নাও হতে পারে।এ ভাবে আপনার ব্রেইন পূর্ন থাকতে পারে,জ্যাম লেগে যেতে পারে।

আপনি যখন নতুন জিনিষ শিখেন,তখন আপনার ব্রেইন নতুন কানেকশন তৈরী করে।কিন্তু তখন সে গুলো তত পোক্ত থাকে না।সে গুলো হয় এডহক কানেকশন।

আপনার ব্রেইনকে  ঐ সংযোগের অনেক অংশ কেটে-ছেটে বাদ দিতে হয় ও  শক্তিশালী পথ তৈরী করতে
হয়।
এটি তেমনটি করে যখন আপনি ঘুমে থাকেন। 

ঘুমের সময় আপনার ব্রেইন মন বাগানের ঝরা পাতা,আবর্জনা সরিয়ে ফেলে।
তখন স্নায়ু কোষ ৬০% এর মতন কুচকে যায়( shrinks), যাতে জায়গা তৈরি হয়।
তখন গ্লিয়াল মালি এসে সে পরিত্যক্ত অংশ ছেটে বাদ দিয়ে বাগান পরিস্কার রাখে।

কখনো কি সারা রাত ভালো ঘুমের পর আপনার মনে হয়েছে যে আপনি স্পষ্ট ভাবে চিন্তা করতে পারছেন, দ্রত চিন্তা করতে পারছেন?

এমনটি হয় কেননা, সারা রাত মন- বাগানের আবর্জনা পরিস্কার হওয়াতে যথেস্ট জায়গা তৈরি হয়েছে।আপনি নতুন তথ্য নির্মাণ করতে পারছেন।

নিদ্রা বন্চিত ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করা মানে, ঘন জঙ্গলে দা,কুড়াল দিয়ে ঝোপ ঝাড় কুপানো,যেখানে পথ ভালো করে দেখা যায় না,আলো সব জায়গায় পৌছায় না।

তাই তখন চিন্তা পথ খুজে পায় না,দিকহারা মনে হয়।

এ কারনে দুপুরে ১০-২০ মিনিটের হাল্কা ঘুমের দরকার।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ব্রেইন হচ্ছে সেন্ট্রাল পার্কের মতন যেখানে পথ পরিস্কার,এক পথের সঙ্গে অন্য পথের সংযোগ স্পষ্ট,গাছ গুলো সঠিক জায়গায় স্হাপিত,যা দূর থেকেও দেখা যায়।

এমনটি হচ্ছে বল বর্ধক,তেজোবর্ধক,পুষ্টিদায়ক  আবহাওয়া, চিন্তা যেখানে অবাধে ছুটতে পারে,বৃদ্ধি পেতে পারে।


যা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সে দিকে গভীর মনোনিবেশ করুন :

যে সংযোগ গুলো আপনি কম ব্যবহার করছেন, সে গুলো ব্রেইন  " রি- সাইক্লিং " এর জন্য মার্ক করে রাখে।

আর যে গুলো আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন সে গুলোতে পানি ঢালা হয়,অক্সিজেন দেওয়া হয়।তাই সেগুলো শক্তিশালী হয়।

যদি আপনি সারা ক্ষন ভিডিও গেম খেলেন,পড়া শোনা কম করে,ভেবে দেখুন আপনার ব্রেইন রি সাইক্লি এর জন্য কোন  স্নায়ু সংযোগকে মার্ক করবে?

যদি আপনি কর্ম স্হলে/সংসারে  অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা,কলহে লিপ্ত থাকেন, নিজের মূল কাজ বাদ রেখে বা প্রজেক্ট এ কম মনোযোগ দিয়ে; 

তাহলে আপনার ব্রেইন "  প্রতিশোধ" নেওয়ার স্নায়ু সংযোগকে বেশী শক্তিশালী করবে। 
প্রজেক্ট এ কম উদ্ভাবনী চিন্তা আসবে, সম্পর্ক উন্নয়নে কম সহযোগীতার  মনোভাব থাকবে।

যা গুরুত্ব পূর্ন, সেগুলোর দিকে বেশী মনোযোগ দিন।

আপনার মন বাগানের মালি অপ্রয়োজনীয়, গুরুত্বহীন সংযোগ  গুলো ছেটে বাদ দিয়ে, আপনার কাঙ্খিত স্বপ্নগুলোর বীজে জল দেবে,অক্সিজেন দেবে; দ্রত বেড়ে উঠতে,শক্তিশালী হয়ে বেড়ে উঠতে অনুুকুল আবহাওয়া দেবে।
     এ ভাবে

   মন বাগানকে মন মতন সাজান

No comments:

Post a Comment