Thursday, January 26, 2017

যাহা বলিব সত্য বলিব-৪

কাহিনী-১:

বাবা আবার বিয়ে করায় মা এসিড মেরে বাবার এক চোখ অন্ধ করে দেয়

২। কাহিনী-২:

শুধু মেয়েরাই শৈশবে যৌন অনাচারের শিকার হন তা না, ছেলেরা ও তেমন শিকার হন

সময় এসেছে লজ্জা ভেঙ্গে তা প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ  গড়ে তোলা
( ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স)
...................................................

কাহিনী-১:

টিপু বর্তমানে ৪৩ বছর বয়স।সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান।
মা- বাবা দুজনেই ডাক্তার।
বাবা একাধিক বিয়ে করেছে।
তার মা দ্বিতীয়।

আবারো ৩য় বিয়ে করাতে মা ক্ষিপ্ত হয়ে বাবাকে এসিড মারে।
এতে বাবার এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে মা ক্যানসারে মারা যায়।
তখন সে ছোট ছিল।

তারা আপন দু'ভাই।টাকা পয়সা,হাসপাতাল,জায়গা জমি সব ছিল।

কিন্তু সৎ মায়ের অত্যাচারে ছিল জর্জরিত।

খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশে নেশার জগতে চলে যায়।হিরোইন সহ সব নেশাই করতো।

বড় ভাই ও কিছুটা নেশা করতো কিন্তু পরে ঠিক হয়ে যায়।

কিন্তু সে নেশা ছাড়তে পারে না।

তার ভাষ্যমতে নেশা ছাড়লেও পারিবারিক অশান্তির কারনে আবারো নেশা করতাম।

সে বিয়ে করে ও
এক সময় সে মালয়েশিয়া চলে যায়।

সেখানে সে নেশা মুক্ত ছিল।

এ সময় তার বাবাও মারা যায়।

কিন্তু তার আপন বড় ভাই শত্রুতা শুরু করে

।বড় ভাই তার স্ত্রীর নামে বদনাম করতে থাকে।সে পরকীয়া করে বেড়ায় বলে বিভিন্ন কথা রটায়।

ঠিক মতন বউয়ের সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে দিতো না।এক সময়ে তার বউকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়।

সে দেশে ফিরে আসে।

সব কিছু ওলোটপালট দেখে সে আবারো নেশার জগতে ফিরে যায়।

তার ভাষ্যমতে তাকে সম্পত্তি থেকে বন্চিত করতে সবাই তাকে নেশাখোর প্রমান করতে চাইতো।

তারা কেউ তাকে ভালো করার চেষ্টা করেনি বরং যন্ত্রনা দিয়ে, প্ররোচনা দিয়ে নেশার জগতে ঠেলে দিয়েছে।

তার এক সৎ বোনের ( যে আমেরিকায় থাকে) সে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি হয়।সেখানে সে সুস্হ হয়ে উঠে।

শুধু নিজে সুস্হ হওয়া নয় সে এখন কয়েকটি সেন্টারে অন্য মাদকাসক্তদের সুস্হ করার কাজে নিজকে নিয়োজিত রেখেছে।

যাহা বলিব সত্য বলিব অনুষ্ঠানে এসেছে সবাইকে জানাতে যে দৃড় ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকলে নেশা মুক্ত থাকা সম্ভব

ও কেউ যেন নেশার জগতে গিয়ে তার মতন জীবনে সব কিছু না হারান।

এ কাহিনী আমাদের যা শেখায়:

১। নেশা মানুষকে সর্বসান্ত করে দেয়।

নিজ জীবনের চাবিকাঠি ও চলে যায় অন্যদের হাতে।
এমনকি নিজ স্ত্রীর নিয়ন্ত্রন ও হারাতে হয়( আমার  জানা এক মাদকাসক্তকে তার বড় ভাই ও স্ত্রী মিলে ৫ বছর ক্লিনিকে ফেলে রাখে চিকিৎসার নামে)

২। শুধু স্বামীরা স্ত্রীদের উপর এসিড মারে তা নয়,

কখনো কখনো স্ত্রীরাও যে এসিড মেরে স্বামীর চোখ অন্ধ করে দিতে পারে তা জানলাম( স্বামীকুল সাবধান!)

৩। মাদকাসক্তি ভালো হয়।

সবার ধারনা এ রোগ ভালো হয় না, সেটি যে ভুল এ কাহিনী তা আমাদের শেখায়।

হতাশ হবেন  না,লেগে থাকুন আপনি ও মাদকমুক্ত হতে পারবেন, সঠিক জায়গায় চিকিৎসা নিলে।

কাহিনী-২:
সোহেল ইসলাম বাপ্পী,২১ বছর।

তার ২ বছর বয়সে মা- বাবার সেপারেশন হয়।সে মার সঙ্গে নানা বাড়িতে মানুষ হয়।

পরে জানতে পারে বাবা মারা গেছে।মা বহু কষ্ট করে  সংসার চালায়।

ক্লাশ এইটে পড়ার সময় অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মোবাইলে একত্র হয়ে পর্ন ছবি দেখতো।

একদিন এক বড় ভাই এগুলো দেখে তাদেরকে শাসায় ও সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে এক নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে তাকে শারিরীক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে।

সে চিৎকার করলে সবাই চলে আসে।

কিন্তু এতেই তার রক্ষা হয় না।
পরে ঐ বড় ভাই তাকে কয়েকবার বলৎকার করে।

সে নানীকে তা বলে দেয়।তখন সে ছেলেকে ধরে সবাই মারে।

তার মা গার্মেন্টস এ চাকরী করতো।মা অন্যত্র বিয়ে করে।

ঐ লোকের নিজের সংসার ছিল।

ঐ বাবার কাছ থেকে কখনো বাবার স্নেহ পায়নি।

এসএসসি পাশ করে।ক্রিকেট খেলতো।

একদিন এক ছোট ভাই কোকের বদলে মদ নিয়ে এসে তাকে খাওয়ায় ও তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে চায়।

সে বাধা দেয়,কিন্তু ঐ ছেলে বলে ভাই আমরা দু ভাইও এমনটি করি পুছ করি না,আদর করি ভালো লাগে।

ব্যাপারটি তার ও ভালো লেগে যায়।

এ ভাবে শুরু।

এরপর থেকে সে প্রায়ই বন্ধুদের রুমে ঢেকে এনে শারিরীক সম্পর্ক করতো ও তারা সবাই মিলে পর্ন ছবি দেখতো।

একদিন তেমন এক বন্ধুর সঙ্গে এমনটি করতে গেলে সে বলে, তুমি  এগুলো কি করছো, এ তো মহা পাপ,তুমি খারাপ কাজ করছো।

সে তাকে প্রত্যাখ্যান করে ধিক্কার দিয়ে চলে আছে।

এরপর থেকে তার মনে অনুশোচনা আসে।

সে মসজিদে গিয়ে তওবা করে ও শপথ করে আর কখনো এ সব পাপ কাজ করবে না।

কিন্তু ইতিমধ্যে ঐ বন্ধু সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তার খারাপ কাজের কথা।

সবাই জানার পর তাকে বয়কট করে,সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়।

সে একাকী হয়ে পরে।

সে এখন মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত ও হতাশ।

এ দিকে মায়ের অসুস্হতা ও বেড়েছে,কিন্তু কোন সাহায্য করতে পারছে না।

সে দুটি নাটক লিখেছে তা প্রকাশ করতে পারছে না।

অনুষ্ঠানে এসে সে জানতে চায় সে তার তওবা রক্ষা করতে পারবে কিনা এবং শৈশবে তার উপর যে যৌন অনাচার হয়েছে এর প্রভাবে সে নিজে তেমনটি হয়েছে কিনা

এ কাহিনী থেকে আমরা শিখতে পারি:

১। যৌন অনাচার শুধু মেয়েদের উপর হয় তা নয়,ছেলেদের উপর ও হয়।

মেয়ে সন্তানদের মতন ছেলে সন্তানদেরকেও এ অনাচার থেকে সুরক্ষা দিতে হবে

২। শৈশবে অত্যাচারিত হলে( শারিরীক,মানসিক, যৌন  যে ভাবেই হোক) এর রয়েছে তাৎক্ষনিক প্রভাব ও সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাব।

অনেক  ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং সহ মানসিক চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

৩। দেশের আনাচে কানাচে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খারাপ ছবি,পর্ন ছবি ছড়িয়ে পরছে।

গ্রামে গিয়েও দেখেছি অল্প বয়সের ছেলেরা একত্র হয় এক মোবাইলে উপুর হয়ে এ সব নোংরা ছবি দেখছে।

অভিভাবকরা কই? কি করছেন?

৪। এ সব অনাচারের বিরুদ্ধে ভালো মানুষরা এগিয়ে এসে প্রতিরোধ গড়বে  সমাজের সে শক্তি আজ অনুপস্হিত,

বরং উল্টো এর সুযোগ নিয়ে বদ লোক গুলো তাদের বদমতলব চিরতার্থ করে নিচ্ছে

( ঐ বড় ভাই শাসন করে তাদের ভালো হওয়ার কথা না বলে নিজেই তাকে ভোগ করতে শুরু করলো)

৫। তবে কিছু ভালো মানুষ এখনো আছে।

তার এক বন্ধু তাকে তিরস্কার করে ঐ পাপ কাজ থেকে ফেরাতে পেরেছে।

*** ভালো লোকদের সম্মান ও ক্ষমতা দিলে সমাজ থেকে মন্দ লোক গুলোকে বিতাড়ন করা সম্ভব

Wednesday, January 18, 2017

রোগ কাহিনী-১১


১। বড় বোনের বিয়েতে সে পালিয়ে যায়।
অনুষ্ঠান শেষ হলে এসে বলে আমি গাছে উঠে অনুষ্ঠানের সব কিছুই দেখেছি।

---- ২৮ বছরের তরুন স্বেচ্ছায় গৃহ বন্ধি ১২ বছর

২। ১৭ বছরের পূর্নিমা সারাক্ষণ কাদে,চিৎকার করে আমার নাক ঠিক করে দাও, না হয় মেরে ফেলো।

রোগের নাম      Body Dysmorphic Disorder(BDD)-- দৈহিক গঠনে কল্পিত খুত নিয়ে হাহাকার
( উভয় রোগী ও তাদের অভিভাবকদের সম্মতিতে ছবি দিয়েছি।ছেলেটি বলেছে যদি ছবি দেখে সবাই বলে চেহারা খারাপ নয় ভালো তাহলে তার ভালো লাগবে ও তার মত বদলাতেও পারে।মেয়েটি বলে ছবি দেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন আমার ব্যাপারে কি  ব্যবস্হা নেওয়া যায়।
আপনারাই বলুন তাদের চেহারা কি খারাপ,নাক কি বিকৃত?)

বিশেষ করে কৈশোর  কালে শারীরিক গঠনের ক্রটি নিয়ে আমরা অনেকেই হীনমন্যতায় ভুগি।

আমরা সবাই উত্তম কুমার বা সুচিত্রা সেন হতে চাই।
সামান্য ক্রটি থাকলে বা অন্য কেউ চেহারা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য  করলে, আমরা  নিজের দৈহিক সৌন্দর্য ও দৈহিক গঠন নিয়ে অতৃপ্তিতে ভুগি,হীনমনযতায় ভুগি।

এটি কমন সমস্যা।

কিন্তু কখন  কখন কারো কারো মধ্যে নিজের  চেহারার কোন কাল্পনিক খুত এমন ভাবে তার চিন্তা মননে বাসা বাধে যে,

সারাক্ষন ঐ কাল্পনিক খুতের কথা তার মনে আসতে থাকে,
সারাক্ষন ঐ যন্ত্রনায় পিষ্ট হতে থাকে।

তার হয়তো আদৌ ও তেমন খুত নেই( পুরোটাই কাল্পনিক- যেমন আজকে বর্নিত উভয় রোগীর)

বা থাকলে ও খুবই সামান্য যা ধর্তব্যের মধ্যে পরে  না।

এই কাল্পনিক খুত তারা ঢেকে রাখতে চায

সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চায়,

সবাইকে এড়িয়ে চলতে চায়,

বার বার আয়নায় সেটি চেক করে।

তাদের এই ধারনা যে ঠিক নয়, তা তাদের বেশীর ভাগই বুঝতে পারে না।

এমনকি সেটি বদ্ধমূল দৃড় ভ্রান্ত বিশ্বাসে রুপ লাভ করতে পার, যাকে আমরা ডেলুসনাল বিলিভ বলি

( আমাদের উভয় রোগী এ পর্যায়ের)।

নাক,চোখ,ঠোট,স্তন,লিঙ্গ প্রভৃতির ক্রটি নিয়ে এরা বেশী ভুগে।
তবে যে কোন অঙ্গ নিয়েই তা হতে পারে
.....................................................

কেইস-১
তানভীর , বর্তমানে বয়স ২৮।
সে ছিল ক্লাশে ফার্স্ট বয়।

২০০৪ সনে তার মা লক্ষ্য করলো সে স্কুলে অনিয়মিত যাচেছ।

একদিন যায় তো তিন দিন যায় না।

মা নিজে তাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়ে আসতো, কিন্তু সে ঘুরে বাড়ী ফিরে আসতো।

কারন জিজ্ঞেস করলে বলে, চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে,অদ্ভুত চেহারা, সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে,বিশেষ করে মেয়েরা।

মা মেয়েদেরকে জিজ্ঞাস করে,তারা বলে না খালা আমরা এমন কিছু বলি নাই।

স্কুলে সে মেইন গেট দিয়ে ঢুকতো না,দেওয়াল টপকে স্কুলে ঢুকতো ও চুপিসারে ক্লাশে ঢুকে যেতো।

বাড়ী থেকে বের হয়ে মূল রাস্তা দিয়ে যেতো না,চিপা গলি দিয়ে যেতো,কেউ দেখলে দূরত  চলে যেতো।

ঘরে এসে ঝুম মেরে শুয়ে থাকতো।

আস্তে আস্তে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়।

ক্লাশের ফার্স্ট বয় পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে না, তাই টিচার ও মা মিলে হোন্ডায় বেধে স্কুলে নেয়।

স্যারের রুমে বসে ঐ পরীক্ষা দেয়।

কিন্তু পরদিন আর যায় না।

এ ভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ  হয়ে যায়।

সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকে।

ভালো খেলতে পারতো, সে খেলাও বাদ দিয়ে দিয়েছে।

বাজারে যায় না,আত্মীয় বাড়ী যায় না।

এক কথায় গত ১২  বছর স্বেচ্ছায়  গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে।

বাসায় টিভি দেখে,গান শুনে ও নামাজ পরে।

দিনে ২০-২৫ বার আয়নায় চেহারা দেখে।

মনে হয় অদ্ভুত,পাগলের মতন চেহারা

রান্না ঘরের কোনায় গিয়ে ভাত খায়,যাতে কেউ না  দেখে।

ঐ সময় ঘরে  রঙ্গিন টিভি ছিল না।কিন্তু রঙ্গিন টিভি দেখার শখ।তাই পাশের দোকানে রাতের অন্ধকারে পিছন দিকে গিয়ে উকি দিয়ে টিভি দেখতে যেতো।

এর মাঝে বড় বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান।

অনেক লোক  আসবে,তাই লজ্জায় সে পালিয়ে যায়।

বোন তো ভাইকে ছাড়া বিয়ে করবে না।সবাই বুঝিয়ে কোন রকমে বিয়ে পড়িয়ে দেয়।

অনুষ্ঠান শেষে সে বাড়ী এসে বলে আমি গাছে উঠে সব অনুষ্ঠানই দেখেছি।

আত্মীয়রা এসে বলে তুমি ক্রিকেট খেলতে পারো?

তার মন চিৎকার করে উঠে, হায়রে তোমরা জানো না আমি কত ভালো খেলোয়ার।

তাকে ইন্টার্ভিউ  করার সময় জানায,  স্যার আমার এই কদাকার চেহারার কারন আমার পাপ।

আমি অল্প বয়স থেকেই মাস্টারবেসন করতাম।

ক্লাশ সিক্স- সেভেন থেকে তা বেড়ে যায়।

দিনে ৫-৬ বার ও করতাম।আত্মীয় স্বজনদের আন্ডার গার্মেন্ট এনে হস্ত মৈথুন করতাম।

নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি,অনেক পাপ করেছি।

কিছুদিন পর অনেকেই বলতে থাকে তুই শুকিয়ে গেছিস।বার বার এ রকম শুনাতে আয়নায় চেহারা দেখে মনে হলো তাইতো, চেহারা কেমন  অদ্ভুত হয়ে গেছে।

ঘর থেকে বের হলেই শুনি ও দেখি আমাকে দেখে সবাই হাসাহাসি করছে।এটি মিথ্যে নয় স্যার,বিশেষ করে মেয়েরা বেশী হাসে।আমার চেহারা নাকি  পাগলের মতন।

আমার এ রোগের জন্য খালু বলে হাসপাতালে ভর্তি হতে।

আমি চিৎকার করে বলি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে কি হবে,এটি আমার পাপের শাস্তি।আমি আপনার মেয়ের, স্ত্রীর কাপড় দিয়ে মাস্টারবেসন করেছি।

এক সময় সবাইকে প্লাস্টিক সার্জারীর কথা বলি।তারা বলে ডাক্তারের ঔষধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
যখনই মনে হয় হস্তমৈথুনের পাপের কারনে আজ আমার এ দশা তখনই  অস্হির হয়ে পড়ি,মেঝেতে শুয়ে পরে চিৎকার করি

একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করি কিন্তু ব্যর্থ হই।

এখন ও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে।
.................................................

কেইস-২:
পূর্নিমা ১৭ বছরের মেয়ে।

৩ সপ্তাংহ আগে মুখ ধুতে গিয়ে তার  ভাষায় আঙ্গুলের নখের আঘাতে, তার নাকের মাংস ছিলে যায়।

এর পর থেকেই সে সারাক্ষন চিৎকার করে কাদছে,

আমার নাক নষ্ট হয়ে গেছে,

বিকৃত হয়ে গেছে,

আমার নাক ঠিক করে দাও।

সে ঘুমায় না,কেবল কাদে।

বার বার আয়নায় নাক চেক করে,হাত থেকে আয়না সরায় না।

অস্হির থাকে,হাত পা খামচায়,বলে চামড়া এনে দাও,নাক ঠিক করে দাও।

ওড়না দিয়ে নাক ঢেকে রাখে যাতে কেউ না দেখতে পায়,

কম্বল নিয়ে শুয়ে থাকে।

খায় না,টিভি দেখে না কেবল হাহাকার, নাক খারাপ হয়ে গেছে,
আমাকে মেরে ফেলো।

কয়েকবার হুইল পাউডার খেয়ে মরতে গেছে।

সবাই বলে ঠিক আছে, সে আয়না দেখে বলে কিছুই ঠিক নাই,

কেউ ভালো করতে পারবে না,

আমাকে মেরে ফেলো
.............................................................
টেক হোম ম্যাসেজ-- সবার যা জানা উচিৎ:

১।আমাদের আত্ম মর্যাদাবোধ দুর্বল হয় , যদি ভাবি আমরা অন্যদের থেকে কোন দিক থেকে ছোট,হেয়।

দৈহিক গঠন ও সৌন্দর্য এর অন্যতম একটি দিক,বিশেষ করে কৈশোর- তারুন্যে।

আত্ম মর্যাদা বোধ উচু রাখতে হলে এ ধরনের হীনমন্যতা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।

প্রয়োজনে প্রফেসনাল কাউন্সিলিং নিতে হবে।

২। যদি খুত বিষয়টি রোগ পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে দ্রুত সাইকিয়াট্রস্ট এর স্মরনাপন্ন হন।

তা না হলে আত্ম হত্যা করে মৃত্যু বা গৃহবন্দি হয়ে অকর্মন্য,কষ্টদায়ক জীবন বেছে নিতে হতে পারে।

৩। ছেলেদের হস্তমৈথুন,মেয়েদের মাসিক নিয়ে আমাদের রয়েছে রাখঢাক গুরগুর অবস্হা।

এ সব বিষয়ে রয়েছে নানাবিধ কুসংস্কার, মিথ যা জন্ম দিচ্ছে বিভিন্ন রকমের মানসিক রোগের।

ধাত সিন্ড্রম তার অন্যতম

৪। থট,পারসেপশন  গুরুত্বপূর্ণ।

চাক্ষুষ প্রমান সত্বেও এই দুই রোগী নিজেদের ভ্রান্ত বিশ্বাসে অটল।

তেমন ডেলুসন না হলেও আমাদের চিন্তা,দৃষ্টি ভঙ্গি,পারসেপশনে থাকতে পারে এমন ক্রটি।

সুস্হ জীবন,সুস্হ সমাজের জন্য প্রয়োজন সঠিক, সুস্হ চিন্তা ও পারসেপশন।

নিজের আয়না  যা মনে হয়, তা সব সময় সঠিক না ও হতে পারে

Tuesday, January 10, 2017

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল : ৮

উন্নত জীবনের গাইড লাইন-- পর্ব:২

..................................
পূর্ববর্তী সংখ্যার পরের অংশ

(আমার " উদ্বেগ-টেনশন: মনোবৈজ্ঞানিক সমাধান" বই থেকে কিছু নির্বাচিত অংশ তুলে ধরছি)

৩। জীবন সংগ্রাম বা লড়াইকে মূল্য দিন,গুরুত্ব দিন (value the struggle):

জীবনের সমৃদ্ধি, সফলতা আসে সন্ধান,পশ্চাৎধাবন ও অনুসন্ধান থেকে।

জীবনে যুদ্ধ,সংগ্রাম করতে কতটুকু দৃড়তা,সাহস ও ধৈর্য্য দেখাবো;

টিকে থাকতে, অস্তিত্ব বজায় রাখতে কত ক্ষত,আঘাত,যন্ত্রনা সহ্য করে যাবো

অথবা স্বপ্নের রাজ্য জয় করতে কতবার নরক যন্ত্রনায় ভুগতে রাজী থাকবো  -

এ সব ব্যাপারে আমাদের মধ্যে রয়েছে যোজন যোজন পার্থক্য।

কিন্তু এ রকম অনুসরন,পশ্চাৎধাবনের মাধ্যমেই আমরা বিকশিত হতে পারি; আমরা যা বা যতটুকু তার চেয়ে বেশী কিছু, বড় কিছু,মহান কিছু হতে পারি।

ডুবস(dubos)একে বলেন " বেচে থাকার সংগ্রাম"( struggle to live)।

আমাদের মধ্যে এ দ্বন্ধ চলতে থাকে যে, কোন ঝুকি না নিয়ে যা আসে যা পেয়েছি যা হয়েছি সেটিই টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করবো,

নাকি  যা আয়ত্বের বাইরে সে সবের অনুসন্ধান করবো,পশ্চাৎধাবন করবো।

যদিও আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা বা ঘাটতি থাকে( শারিরীক প্রতিবন্ধিতা,দারিদ্রতা,বিদ্বেষপরায়ন শত্রু) 

তথাপি সে গুলোর প্রতি আমাদের  দৃষ্টি ভঙ্গি ও মনোভাব নির্ধারন করে, আমরা হাল ছেড়ে দিয়ে ব্যর্থতা মেনে নেবো,

না বিকল্প পন্থা বের করার চেষ্টা করবো।

লড়াই করা মানে কি করতে হবে সেটিও বেছে নেওয়া।

এমনকি নিদারুন হতাশাজনক অবস্হায় ও  সে সুযোগ্য থাকে।

মৃত্যু, অসুস্হতা,ডিভোর্স, বার্ধক্য - এ সব অনিবার্য।
একে আমরা পরিবর্তন করতে পারি না।

কিন্তু ঐ সব অপরিবর্তনীয় বিষয়েও আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি কেমন হবে, সেটি চয়েজ করার সুযোগ আমাদের রয়েছে।

সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেবো না তিক্ততার সাথে জীবন যাপন করবো ;

সাহসের সহিত মোকাবিলা করবো না ভীতির সহিত----

আমরা চয়েজ করে নিতে পারি কি ভাবে জীবনের অনিবার্য  চাপ- পীড়নকে মোকাবিলা করবো।

প্রতিটি পরিস্হিতিতে  আমাদের সবার  কিছু একটা "মূল্যবান" জিনিস খুজে নেওয়ার সুযোগ থাকে।

যত বৃদ্ধ হবো ততই দেখবো, এই " কিছু একটা মূল্যবান" বিষয় নিজেই সংগ্রামের অংশ হয়ে দাড়িয়েছে।

রাব্বি ও হিল্লেল দুই হাজার বছর আগেই বলে গেছেন

" যদি আমিই নিজের জন্য না দাড়াই, তবে কে দাড়াবে? এবং যদি  তেমনটি এখনই না করি তবে কখন?

এবং যদি শুধু নিজের জন্য দাড়াই তাহলে কতটুকু ভালো আমি?"

( অর্থাৎ নিজের জন্য নিজেকেই দাড়াতে হবে এবং তা এখনই এবং অন্যের জন্যও আমাদের দাড়াতে হবে)
..................................................

৪। ভালোবাসার বীজ পুন: পুন: বপন করুন(resow the seeds of love):

যতই আমরা বড় হতে থাকি, আমাদের ভালোবাসার স্হিতিশীলতা আমাদের তত বেশী আবেগগত ভাবে খাপ- খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

কিন্তু মৃত্যু,অন্যত্র চলে যাওয়া বা বিচ্ছিন্নতার কারনে, অনেক প্রিয় সম্পর্ক আমাদের হারাতে হয়।

তাই যতদিন বেচে থাকি, ততদিন ভালোবাসার বীজ পুন: পুন: বপন করে যেতে হবে।

৩ কারনে নতুন বন্ধু তৈরী  হয় না:

লাজুকতা,পর করে দেওয়া ও বৃদ্ধ হওয়ার কারনে।

লাজুকতা,হতাশা,হীনমন্যতার কারনে নতুন বন্ধুত্ব করা কঠিন হয়ে পড়ে।

হীনমন্যতা থাকলেই এ নিয়ে নিজকে খুব বেশী দোষারোপ করার প্রয়েজন নেই।

কেননা হীনমন্যতা একটি কমন বিষয়।

গবেষনায় দেখা গেছে ছাত্র ছাত্রীদের ৯৯% কোন না কোন সময়ে হীনমন্যতায় ভুগে থাকে।

বরং চিন্তাশীল,সৃজনশীল মানুষের মধ্যে এটি বেশী থাকে।শ্রম জীবিদের মধ্যে কম দেখা যায়।

তাই হীনমন্যতা বোধ থাকলে হতাশ হওয়ার কারন নেই।

যা করতে হবে এটি দুরুত বুঝতে হবে ও দুরুত তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা নিতে হবে।

বিচ্ছিন্নতা কাটাতে অনানষ্ঠানিক ভাবে( ইনফরমালি) অন্যদের সঙ্গে দেখা করতে হবে,মিশতে হবে,সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা নিতে হবে।

অন্যকে পর করে দেওয়া,বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার দিকে ও নজর দিতে হবে।

পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে  ভালোবাসার বীজ পুন: বপন করে  এই পর করে দেওয়ার ব্যাপারটি আমরা কমিয়ে আনতে পারি।

আবার মনের ক্ষোভ,যন্ত্রনা,হিংসা,ক্রোধ,অপমান ভুলে গিয়ে,

মাফ করে দিয়ে ও আমরা  অন্যদের পর করে দেওয়া,বিচ্ছেদ করে দেওয়ার হার কমিয়ে আনতে পারি।

হয়তো কখন কখন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়ার যৌক্তিক কারন থাকতে পারে।

তবে মূহুর্তের কোন ভুল বা অন্যায়;

কোন ভুল বোঝা বুঝির জন্য ;

আকস্মিক,তীব্র মোচড় বা টান দিয়ে দীর্ঘ দিনের বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন করা হবে দুংখজনক  কাজ।

এমনিতেই আমাদের কম সংখ্যক পুরনো বন্ধু থাকে।
তাদের সঙ্গে থাকে দীর্ঘ দিনের স্মৃতি।

তাই তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমরা মানসিক দারিদ্রতার মধ্যে পড়ি।

বৃদ্ধ বয়সে তরুন বন্ধু তৈরী করা কঠিন কাজ।

তবে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আবেগগত বন্ধন তৈরী করলে , বৃদ্ধ বয়সের একাকীত্ব থেকে সেটি সুরক্ষা দিতে পারে

এবং সেটি ভালো " ইনসুরেন্স" হিসেবে ও কাজ করতে পারে

সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই ভালোবাসাকে লালন-পালন  করতে হয়,

ভালোবাসার গাছকে  সার দিয়ে,পানি দিয়ে বাচিয়ে রাখতে হয়( নারচার)।

এমনটি ভাবা ভুল হবে যে ভালোবাসা  কোন রকম পরিচর্যা ছাড়া,নার্চার না করা  সত্বে ও চিরকাল তরতাজা থাকবে।

স্বামী- স্ত্রীর ভালোবাসাকে, 

সন্তানদের প্রতি ভালোবাসাকে,

আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসাকে,

বন্ধু,প্রতিবেশী সবার প্রতি ভালোবাসাকেই  পুন নবায়ন করতে হয়

,রিচার্জ করতে,প্রয়োজনে পুনর্জীবিত করতে হয়।

ভালোবাসা এমনি এমনিই চিরকাল অক্ষুন্ন থাকে না

একে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।

ভালোবাসার বীজ যেমন পুন: পুন: বপন করতে হবে

তেমনি ভালোবাসার বৃক্ষকে নব নব "ভালোবাসা" দিয়ে সতেজ,সজীব রাখতে হবে

Tuesday, January 3, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস-২৫


আমাদের হ্যাপি ফ্যামিলির( বি পজিটিভ বি হ্যাপি গ্রপ) পক্ষ থেকে

সবাইকে জানাই ইংরেজি নব বর্ষের শুভেচ্ছা

( সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -  ৭ এ উন্নত জীবন গঠনের ১০ গাইড লাইনের  ২টি দিয়েছিলাম।বাকী গুলো দেওয়ার সময় করে উঠতে পারিনি।তবে সব বিভাগই নিয়মিত চালু থাকবে ইনশাল্লাহ। নব বর্ষের প্রথম পোস্টটি সবার প্রিয় এবং আমার ও প্রিয় বিভাগ, সাইকোলজিক্যাল টিপস দিয়ে শুরু করছি)

                  
                       সারা বছর

    ভালো থাকবেন          ভালো রাখবেন

টিপস-২৫:
..................

সফল সুখী মানুষ প্রতি দিন যা করার চেষ্টা করে:
...............................................................


কাজের মা- বাবা হচ্ছে চিন্তা।

যে কোন অর্জন,সফলতা শুরু হয় কোন শুভ ভাবনা,পরিকল্পনা থেকে;

সমস্যার বিভিন্ন দিকের সঠিক সংযোগ  বা অন্তর্গত বিষয়ে সঠিক পারম্পর্য  (আইডিয়া, পারসপেকটিভ) থেকে ।

আজ আমরা তেমন কিছু ভাবনা,পরিকল্পনা ও কাজের কথা বলবো।

১। " যা অন্যরা করতে ইচ্ছুক নয়,আজ আমি তা করবো"(I will do what no one else is willing to do)

অন্যদের থেকে " ভিন্ন" হওয়ার  সহজ পথ হচ্ছে অন্যরা যা করতে অস্বীকার করে,  তেমন কাজ  করা।

তাই তেমন একটি কাজ হাতে নিন।
এটি যে কোন সহজ কাজ হতে পারে।তাতে কিছু যায় আসে না।এটি যা-ই হোক সেটি করুন।

আপনি তাৎক্ষনিক ভাবে  ঐ " ভীড়" থেকে আলাদা হয়ে উঠবেন।

এরপর আরো এগিয়ে যান।প্রতিদিন  অন্যরা করে না তেমনন  একটি কিছু করুন।

সপ্তাহ খানেক পর আপনি আনকমন হয়ে উঠবেন।

( মনে রাখবেন দশজনের ভীড় থেকে আলাদা হওয়া চাট্টি খানা কথা নয়।সবার সে সাহস বা দৃড়তা থাকে না।

এভাব নর্মাল মানে এবনর্মাল।কেউ  এবনর্মাল হতে সাহস পায় না।
কিন্তু সব সৃজনশীল, মহৎ মানুষ ই এভাব এভারেজ পারসন।)

মাস খানেক পর আপনি "স্পেশাল" হয়ে উঠবেন।

আর বছর খানেক পর আপনি হবেন " অবিশ্বাস্য " বা " বিস্ময়কর" ( incredible) ।

২। " আমি ভয়কে মোকাবিলা করবো"(I will face fear) :
............................................

অজানাকে ভয় পাওয়া কমন ব্যাপার।

তবে মনে রাখবেন পৃথিবীতে কোন কিছুই তেমন কঠিন বা ঘাবড়ানোর বিষয়  নয়।

বরং কোন ভয় কাটিয়ে উঠার মাঝে রয়েছে অবিশ্বাস্য রকমের উত্তেজনা।

" আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি এ রকমটি করতে পেরেছি" -

এ  রকম বোধ আপনার মনে আনন্দ- গৌরবের শিহরন তুলবে।যেমনটি হয়ত বহু দিন আপনি অনুভব করেননি।

প্রতিদিন তেমন ভয়  পাওয়া বা ঘাবড়ানো জাতীয় কিছু করুন - তা শারিরীক বা আবেগগত ভয়, যাই হোক না কেন।

বিশ্বাস করুন, এর ফলে যে কোন সমস্যা আসলে সেটি গভীর চিন্তা সহকারে  সমাধান নির্নয়ের পথ খুজে পাবেন।

৩। " আজ আমি সব করতে পারবো না, তবে আমি একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নিতে পারি"(I can't do everything  today, but I can take one small step):
..........................................................

আপনার রয়েছে  কত পরিকল্পনা,কত লক্ষ্য, কত আইডিয়া।

কিন্তু কে এ সবকে কেয়ার করে?

যে পর্যন্ত বাস্তবে কিছু করছেন,ততক্ষন এগুলো কিছুই না।

প্রতিদিনই ইতস্তত ভাব,অনিশ্চয়তার  ভয় আমাদের  আইডিয়া,পরিকল্পনাকে কাজে  রুপান্তর করতে বাধার সৃষ্টি করে।

তাই " শুরু" করুন।

অল্প করে যাত্রা শুরু করুন।

মনে রাখবেন যে কোন কাজের শুরুটা হচ্ছে সব চেয়ে কঠিন কাজ।

পরবর্তী ধাপগুলো সহজ।

তাই  " শুরু" করুন যে ভাবেই হোক।

৪। " সঠিক ভাবে মূল্যায়িত নয়,প্রশংসিত নয়,এমন কাউকে মূল্যায়ন করবো,প্রশংসা করবো"(I will appreciate someone unappreciated):
......................................................

কিছু কাজ রয়েছে যেখানে দক্ষতা নয়, প্রচেস্টা বেশী প্রয়োজন।

প্যাকেজ ডেলিভারী করা, মালামাল বাধা তেমন কাজ।

এখানে দক্ষতার চেয়ে চেস্টার বেশী দরকার।

তাই যারা থ্যাংকলেস জব করছেন, তাদের শুধু শুষ্ক ধন্যবাদ না দিয়ে আরো বেশী কিছু করুন।

হাসুন,তাদের চোখে চোখ রাখুন,প্রীতিময় ভাষায় কথা বলুন।

এ ছাড়াও এ সমাজে প্রকৃত যোগ্য, সৎ, মেধাবী অনেক  মানুষ রয়েছে যারা সঠিক ভাবে মূল্যায়িত হন না, প্রশংসা পান না।

বরং অবজ্ঞা,তিরস্কার পেয়ে থাকেন।

আসুন তাদের সঠিক মূল্যায়ন করি,স্বীকৃতি দেই।

আমাদের চারপাশে অনেকে রয়েছে যারা নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, কিন্তু যথাযথ স্বীকৃতি পাচ্ছেন না।

সবচেয়ে ভালো উদাহরন আমাদের নিজ ঘরেই।

নারীরা যে শ্রম,যত্ন,ভালোবাসা দিয়ে সংসারকে আগলে রাখে তাদের সে শ্রম, কাজের কতটুকু স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন তারা পায়?

মনে রাখবেন এ রকম  শ্রদ্ধা দেখাতে পারলে আপনিও হয়ে উঠবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।

৪। " যত বলবো তার চেয়ে ১০ গুন বেশী শুনবো"(I will listen 10 times more than I speak):
...............................................

অনেক বেশী কথা বলে ভাববেন না আপনি চালাক ও বুদ্ধিমান।

মনে রাখবেন প্রকৃত আত্ম বিশ্বাসী লোক কথা বলার তেমন প্রয়োজন বোধ করে না।

কখনোই নিজকে খুশী করার জন্য কথা বলবেন না।

এবং  তেমন ক্ষেত্রে আপনি অন্যকেও খুশী করতে পারবেন না।

৬। " অন্যরা কি ভাববে সেটি আমি কেয়ার করি না":
..............................................................

বেশীরভাগ সময় আমরা এ ভাবনায় পীড়িত থাকি, অন্যরা আমাকে নিয়ে কি ভাবে,কেমন ভাবে।

কিন্তু মর্যাদাপূর্ন,শান্তিপূর্ন জীবন যাপন করতে চাইলে এ রকম হীনমন্যতা, ক্ষতিকর চিন্তা পরিহার করতে হবে।

আমরা  অন্যদের প্রশংসা,স্বীকৃতি,অনুমতির যত মুখাপেক্ষী থাকবো, তত তাদের গোলাম হয়ে থাকতে হবে।

কে আপনাকে নিয়ে কি ভাবে বা ভাববে,  তাকে থোরাই কেয়ার করুন।

তারা কি আপনাকে নিয়ে ভাবে?

তাহলে কেন তাদের মতামত,মন্তব্য, পছন্দকে আপনি এত গুরুত্ব দিবেন?

অন্যরা মন্দ ভাববে, অথচ আপনি মনে করেন সঠিক, তেমন একটি কাজ প্রতিদিন করুন।

সাহসের সহিত,প্রত্যয়ের সহিত তা করুন।

তাদের থোতা মুখ ভোতা করতে তা করুন।

তাদের উপেক্ষা,অবজ্ঞা দেখাতে হলেও করুন।

নিজের আত্ম মর্যাদাবোধ উচু রাখতে, নিজকে সম্মানিত করতে তেমনটি করুন।

এটি আপনার জীবন -- আপনার মতন  জীবন যাপন করুন

৭। " পারফেক্ট   না হলে ও আমার চলবে"( I will be OK with  less perfect):
.....................................................

আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে পারফেক্ট হওয়া।

কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলে ও এটি সত্য যে, পৃথিবীতে  কোন কিছুই পারফেক্ট নয়।

বরং পারফেকশন চাওয়াটি হচ্ছে আমাদের সব চেয়ে বড়  শত্রু।

কঠোর পরিশ্রম করুন,বড় বড় কাজ করুন,আপনার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করুন।

এরপর যা হবে তা স্রষ্টার হাতে ছেড়ে দিন।

তবে অনেক কিছুতে আমাদের উন্নতি করতে হবে  বিশেষ করে সম্পর্ক বিষয়গুলোতে।

কিন্তু তাই বলে সব ব্যাপারে আপনি পারফেক্ট হতে পারবেন না।

এ সব বিষয় "ছেড়ে দিন"(let go)।

নিজের যে কেন ঘাটতি,অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে সর্বোচ্চ চেষ্টা নিবেন, তারপর "ছেড়ে দিবেন "

৮। " আরো ভালো করার চেষ্টা করবো "(I will try to do better):
........................................................

উপরে কিছু ক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছি।
তবে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের  ভালো করার অনেক সুযোগ থাকে।

কি কাজ করতে হবে ও কি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে-- এটি জানা জরুরী।

গতকালের কথা ভাবুন, কি কি ভালো হয়েছে।

তারপর ভাবুন কি কি ভালো হয়নি বা যা কিছু ভালো হতে পারতো।

এরপর সব দায়িত্ব নিজের উপর নিন এবং প্রতিজ্ঞা করুন আগামীতে আরো ভালো করবেন।

৯। " একটি জিনিস আমি সব সময় করতে পারি,তা হচ্ছে তাদের চেয়ে অধিক কাজ করা":
..................................................

আপনি হয়তো তেমন অভিজ্ঞ নন,তেমন অর্থ কড়ি নেই বা তেমন মেধা সম্পন্ন নন।

কিন্তু আপনি সব সময় অন্যদের চেয়ে ভালো চিন্তা করতে পারেন,ভালো কাজ করতে পারেন।

সবাই অতিরিক্ত পথ হাটতে চেষ্টা করে( extra miles)।

কিন্তু কম লোকই সেখানে যায় বা পৌছতে পারে।

এমনকি সব কিছু আপনার বিরুদ্ধে রয়েছে  মনে হলে ও, তখন ও "চেষ্টা "  এবং  "লেগে থাকা"  আপনার প্রতিযোগীতার জন্য সহায়ক শক্তি।

এই সহায়ক শক্তিকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করুন।

১০। " আমি থেমে যাবো ও আমার গোলাপের সুগন্ধ নেবো"(I will stop and smell my roses):
...................................................

আপনার রয়েছে বড় বড় পরিকল্পনা ও বড় বড় লক্ষ্য।

এবং আপনি কখনো পরিতৃপ্ত নন।

দূর্ভাগ্যজনক হলে ও সত্যি আমরা বেশীরভাগ সময় অসুখী থাকি।

কারন আমরা কি অর্জন হয়নি,কি কি করতে পারিনি ও কি কি আমাদেের নেই, সে সব ভেবে অসুখী হয়ে পড়ি।

বরং উচিত হচ্ছে তেমন কিছু বেশী করা, যা আমাদেরকে  সুখী করবে।

একটু ভেবে দেখুন পেশাগত জীবনে বা ব্যক্তিগত জীবনে আপনার কি কি রয়েছে।

এ মুহুর্তেই আপনার এমন অনেক কিছু রয়েছে যা আপনি
এক সময় স্বপ্নেও সম্ভব মনে করেননি।

বিশেষ করে আপনার সম্পর্কগুলোর দিকে তাকান।

আপনার পরিবার,আত্মীয়,বন্ধুগনের দিকে।

এটি ঠিক , আপনি আরো অধিক কিছুর জন্য প্রচেষ্টা নেবেন।

কিন্তু একটু সময় নিয়ে ভেবে দেখুন, যা কিছু আপনার রয়েছে সে গুলো ও  অনেক গুরুত্বপূর্ন।

আপনার যা রয়েছে তা কোন আশা নয়,স্বপ্ন নয়,ইচ্ছে ও নয়।

এগুলো নিরেট বাস্তবতা এবং এটি দারুন ও ভীষন ব্যাপার(awesome)।

এবং এটি একান্ত আপনার

একে উপভোগ করুন,একে মূল্যায়ন করুন