Friday, December 14, 2018

রোগ কাহিনী -৫০

(সরাসরি চেম্বার থেকে লিখছি)

একটু ভিন্ন ধাচের কথন

কাহিনী -১ঃ
রোগীনী ১৫-১৬ বছরের। বলে স্যার গায়েবী কথা তো কমছে না।জানতে চাই কি বলে? উত্তর দেয়-কেবল বলে এর সঙ্গে ওর সঙ্গে তোর বিয়ে হবে।

আমি তার মাকে বলি রোগ যেহেতু তত উন্নতি হচ্ছে না,তাহলে ইনজেকশন দেই?

মা আতকে উঠে বলেন -না স্যার, ভয় লাগে।

শুনেছি ইনজেকশন দিলে নাকি জ্বীন-ভুত রক্তের সঙ্গে পুরো মিশে যায়।

তখন আর সে রোগ জীবনে ও ভাল হয় না।

পাদটীকা ঃ আমার কাছে এসেছে ডাক্তারী চিকিৎসা করাবে বলে।পূর্বে জ্বীন ভুতের চিকিৎসায় সফল না হয়েই আমার কাছে এসেছে।

কিন্তু জ্বীন ভুতের বিশ্বাস মনের এতো গভীরে প্রোথিত যে এখনো সে বিশ্বাস মাথায় রেখেই আমার চিকিৎসা নিচ্ছে।

অনুসিদ্ধান্ত ঃ বিশ্বাস তা সঠিক হোক বা ভুল হোক সহজে কাটানো যায় না

কাহিনী -২ঃ রোগী দেখার পর ভিজিট দেওয়ার সময় রোগীর বোন বলে স্যার কত দিতে হব?

আমি ভিজিটের রেট বললাম। তিনি বললেন একটু কম রাখেন স্যার।
বললাম ঠিক আছে কিছু কম দেন।তিনি ভিজিটের অর্ধেক টাকা দিলেন।আমি বললাম তা বলে এতো কম?

তিনি বললেন স্যার একটি বিপদে আছি, এমন বিপদ আপনি শুনলেও কষ্ট পাবেন।

আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এতো বিপদে থেকেও ডাক্তারের ভিজিট (তা অর্ধেক হলেও)  দিতে এই গরীব রোগীরা কার্পণ্য করে না।

অনুসিদ্ধান্ত ঃ চেম্বারে ধনীরা ভিজিট দিতে যে চালাকি ও কার্পণ্য করে, দরিদ্র রোগীরা তেমন করে না

Monday, December 10, 2018

রোগ কাহিনী -৪৯ঃআমাকে নিয়ে কেন টানাটানি করছো,আমি তো মরে গেছি, আমাকে গোরস্তানে নিয়ে রাখো

কাহিনী সংক্ষেপঃআমেনা বেগম,বয়স ৪৬। কিছু  দিন পূর্বে জ্বরে ভুগেন।৪-৫ দিন জ্বর ছিল।

এরপর থেকে ওনার  ঘুম হয় না। সারা রাত জেগে থাকে, কান্নাকাটি করে,খায় না।মাথা টনটন করে,ভাইরে ডাকে, মারে ডাকে, বলে আমার সংসার শেষ তোদের সংসার ও শেষ।

সে বলে আমাকে নিয়ে কেন টানাটানি করছো আমি তো মারা গেছি, আমাকে গোরস্তানে নিয়ে রাখো।

তিনি আরো বলেন
সব ঘরে মরা লাশ শুয়ে আছে।

ওনাকে জিজ্ঞেস করি কেমন লাগে,

উনি বলেন অস্থির লাগে, অশান্তি লাগে, আনন্দ নেই, কিছুই ভালো লাগে না,সারা রাত কাদি,ঘুম নাই।

এই কেইস হিস্ট্রি থেকে যা শিখলাম ঃ

১।কিছু মানসিক রোগ শারীরিক অসুস্থতার পরে হতে পারে

২।অল্প সময়ে ও তীব্র বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারে

৩।বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনে এমন নৈরাশ্য তৈরি হতে পারে যে নিজের সমন্ধে মনে হতে পারে আমি নিঃস্ব,আমার সব শেষ।

এমনকি এটি এমন চূড়ান্ত পর্যায়ে ও যেতে পারে যে তার মনে হতে পারে  তিনি আর জীবিত নেই, মারা গেছেন, তার তো এখানে না,কবরস্থানে থাকার কথা।

৪।নিজের অস্তিত্বই নেই  এমন চরম  পর্যায়ের "ভ্রান্ত বিশ্বাসকে " বলা হয় "নিহিলিষ্টিক ডেলুশন"।

৫।কিছু দিন পূর্বে একজন ১৫-১৬ বছরের ছেলের ও এমন ডিপ্রেশন হয় যে সে মনে করে তার লিভার  কিডনি, পাকস্থলী সব পায়খানার সঙ্গে পড়ে গেছে, তার এখন এসব কিছু নেই।

তাই তার খাওয়া দাওয়া করার কোন দরকার নেই

৬। এরকম ডেলুশন সহ ডিপ্রেশনকে বলা    হয় " সাইকোটিক ডিপ্রেশন "।

Sunday, December 9, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস -৫৫

নিজের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হোন

১। যা বলবো তা যেন নিখুঁত, নিষ্কলঙ্ক হয়

২। কোন কিছু "ব্যক্তিগত ভাবে " নেবো না

৩।নিছক "ধারনা /আন্দাজ " এর উপর নির্ভর করবো না

৪। সব সময় সর্বোত্তমটি করার চেষ্টা করবো

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩০ঃ পৃথিবীতে প্রাণ কিভাবে এলো? ভিন্ন থিওরি

প্যান্সপারমিয়া তত্ত্ব (pansparmia):

পৃথিবীতে প্রান এসেছে ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে

পাবলিক লাইব্রেরি থেকে -
পড়ছি "নন্দন তত্ত্বের " উপর বই।
সেখানে পেলাম এই প্যান্সপারমিয়া তত্বের কিছু অংশ ঃ

গ্রীক দার্শনিক এ্যানাক্সগোরাস(খ্রী পূর্ব ৫০০-৪২৮)এর মতে পৃথিবী ছাড়া ও পৃথিবীর মতন আরো অনেক জগত আছে ( ব্যাটা এতো আগেই এতো কিছু জানলো কিভাবে?) ।

১৬৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মার্চিসনে পতিত উল্কাপিণ্ডে ৭৪ ধরনের এমাইনো এসিড (যা জীব গঠনের মৌলিক ব্লিডিং ব্লক) পাওয়া যায়।

এর ভিতর রয়েছে পার্থিব প্রোটিন তৈরির ৮টি উপাদান। এছাড়া এতে ছিল "পলিয়ল" নামে শর্করা যা পৃথিবীতে পাওয়া যায় না।

১৮৩৪ সালে সুইডিশ রসায়নবিদ জেকব বার্জেলিয়াস কিছু উল্কা পিন্ডে এমন কিছু কার্বনঘটিত যৌগ খুজে পান যার সঙ্গে জীবদেহের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

এরপর এই তত্ত্ব সমর্থন করেন এইচ ই রিখটার, লর্ড কেলভিন, উইলিয়াম থমসন।

তবে ১৯০৮ সনে এ তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেন নোবেল বিজয়ী  বিজ্ঞানী সোভান্তে এরেহোনিয়াস।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের সম্ভাব্যতা স্বীকার করেন।

ধারণা করা হয় ১কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে মঙ্গল গ্রহে কোন গ্রহানু বা ধূমকেতু আঘাত হানে।এতে বহু বস্তু পিন্ড মহাকাশে আছড়ে পড়ে। এরই কিছু এসে পড়ে পৃথিবীতে।

১৯৮৪ সনে আমেরিকার একদল গবেষক এন্টার্টিকায়  এরকম একটি উল্কাপিণ্ড খুজে পান

।যার নামকরণ করা হয়-এ্যালান হিল ৮৪০০। ১৯৯৬ সালে এর মধ্যে পলি সাইক্লিক এরোমেটিক হাইড্রোকার্বন এবং এমাইনো এসিড পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণের পর জীব উপাদান এসেছে বলে এর নাম - ব্যা লা স্টিক প্যান্সপারমিয়া।

মহাকাশ থেকে নিরাপদে কিভাবে এলো?

দেখা গেছে কিছু ব্যাকটেরিয়া ১১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ও বেচে থাকে ;কিছু -১৮ ডিগ্রি তেও বাচে;কিছু তরল নাইট্রোজেনে -১৯৬ ডিগ্রিতেও সংরক্ষণ করা যায় ;অনেকে আয়নিত কনা বা অতি বেগুনি রশ্মি সহ্য করতে পারে।
তাই তত্বটি সঠিক হতে ও পারে

(তবে এই তত্ত্বের বিপরীতে ও রয়েছে অনেক অকাট্য যুক্তি) ।

Monday, December 3, 2018

আবেগীয় বুদ্ধিমত্বা-৪ঃ

"যারা "চিন্তা " করে তাদের জন্য
জীবন হচ্ছে কমেডি
আর যারা "অনুভব " করে তাদের জন্য জীবন হচ্ছে ট্রাজেডি "-হোরাস ওয়ালপোল

   সকল তীব্র আবেগের কেন্দ্র ঃএমাগডেলা

ব্রেইন স্টিমের উপরে কাঠবাদামের আকারের অন্চলটির নাম "এমাগডেলা"। লিম্বিক সিষ্টেমের দুটি অংশ -হিপ্পোকেম্পাস ও এমাগডেলা

ব্রেইনের বেশির ভাগ শিক্ষন ও মনে রাখার কাজটি করে থাকে।

ব্রেইন থেকে এমাগডেলা বাদ দিলে ঘটনা সমূহের আবেগীয় তাৎপর্য বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

একে বলা হয় " আবেগীয় অন্ধত্ব"।

এমাগডেলা হচ্ছে  "আবেগীয় স্মৃতির " গুদামঘর

।এমাগডেলা না থাকলে ভয় বা ক্রোধ বলে কিছু থাকে না,
সহযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার তাগিদ থাকে না।

কান্নার উৎপত্তি হয় এমাগডেলা ও এর কাছাকাছি অন্চল "সিংগুলেট জাইরাস" থেকে।

এমাগডেলা না থাকলে কষ্টের কোন কান্না  থাকবে না, কাউকে মানসিক প্রশান্তি দেওয়ার জন্য।

লি-ডক্স একজন নিউরো সায়েন্টিস্ট, যিনি ব্রেইনের রহস্যময় অংশ গুলোর খোঁজে একটি মানচিত্র তৈরি করেছেন।

তার গবেষণা এটি ভাল ভাবে ব্যাখ্যা করে, কিভাবে এমাগডেলা সেসব ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়, যেগুলো সমন্ধে "চিন্তা মস্তিষ্ক " তখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

এমাগডেলা ও নিউকর্টেক্সের সঙ্গে এর ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হচ্ছে "আবেগীয় বুদ্ধিমত্ত্বার" হ্রদপিন্ড।

যে সকল ক্ষেত্রে আমরা ভালোমন্দ চিন্তা না করে আবেগতাড়িত ও দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে কাজ করি, সেসব ক্ষেত্রে "যুক্তি মনের " চেয়ে 

"আবেগীয় মন" আধিপত্য বিস্তার করে থাকে।

এরকম ক্ষেত্রে এমাগডেলা  কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে থাকে।

এমাগডেলা  আমাদের মনোজগতে " মনস্তাত্ত্বিক পাহারাদার " হিসেবে কাজ করে থাকে

,যা সকল পরিস্থিতি, সকল পারসেপশনকে চ্যালেঞ্জ করে থাকে

এবং যা কিছু আমরা ঘৃনা করি, আমাদের আহত করে বা ভীত করে এমন সকল অবস্থায় এমাগডেলা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে।

এমাগডেলার রয়েছে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, যার ফলে যে কোন "ইমারজেন্সি " পরিস্থিতিতে এটি ব্রেইনের বেশির ভাগ অন্চলকে কুক্ষিগত করতে, কব্জায় নিতে সহায়তা করে।

চোখ, কান সহ অন্যান্য ইন্দ্রিয় থেকে সংবেদন সঙ্কেত থ্যালামাসে চলে যায়।

থ্যালামাস থেকে বেশির ভাগ তথ্য নিউকর্টেক্সে যায় (চিন্তা ব্রেইন) ।
সেখানে তথ্য যাচাই বাছাই করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে থ্যালামাস থেকে একটি ক্ষুদ্র ও শর্টকাট  পথ যায় সরাসরি এমাগডেলায়।

এই যে চ্যানেলটি চিন্তা ব্রেইনকে বাইপাস করে এমাগডেলায় যায়, সেটি চিন্তা ব্রেইনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই আবেগ তাড়িত প্রতিক্রিয়া করে ফেলে।

এটি অনেকটা ইমারজেন্সি রুট হিসেবে কাজ করে।

লি-ডক্স আরো বলেন " কিছু আবেগীয় স্মৃতি ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে, চিন্তা ব্রেইনের সচেতনতা ও অংশ গ্রহন ছাড়াই।

এমাগডেলা এমন স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে ও প্রতিক্রিয়া করার কাঠামো তৈরি করে, যার ফলে আমরা এমন কিছু করে ফেলি যা কেন করলাম তা বুঝে উঠতে পারি না।

এই "বাই-পাস " সিস্টেম থাকার কারনে, আমাদের এমন কিছু স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার "ছাপ" এমাগডেলায় লুকিয়ে থাকে, যে সমন্ধে আমরা সচেতন ভাবে কিছু জানি না।

আরো কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কোন কিছু ধারণা করার কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যে, আমরা অবচেতন স্তরেই বিষয়টি সমন্ধে সম্যক ধারনা তৈরি করে ফেলি।

শুধু তাই নয়,এটি পছন্দ করি না অপছন্দ করি সে সিদ্ধান্ত ও নিয়ে ফেলি।

তার মানে আমাদের আবেগের রয়েছে নিজস্ব "মন"-যে মন স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ভাবে নিজস্ব মতামত গ্রহণ করে থাকে।
(চলবে)

Thursday, November 29, 2018

রোগ কাহিনী -৪৮ঃযে রোগী নিজেই নিজের কাউন্সিলিং করে সুস্থ হয়েছেন

( আজ একই দলের দুই ভাইয়ের ক্ষমতার দ্বন্ধে প্রান হারানো এক কর্মির সংসারে কিভাবে নরক নেমে এসেছে সে নিয়ে রোগ কাহিনী লিখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু দেশ এখন নির্বাচন জ্বরে আক্রান্ত। এমন সময়ে রাজনীতি বিষয়ক কোন পোস্ট না দেওয়াই শ্রেয় মনে করছি)।

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৮ এ আমি আমার বই " মন ও মানুষ " পড়ে কিভাবে এক রোগী নিজের "বোধ, বুদ্ধি, চিন্তা, উপলব্ধি " পরিবর্তন করে নিজের দীর্ঘদিনের অসুস্হতা ভাল করেছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছিলাম।

সেখানে তিনি কিভাবে ঐ বইয়ের সাহায্যে  " কগনেটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি " ব্যবহার করে নিজের মনোজগতে পরিবর্তন এনেছিলেন, তা উদাহরণসহ বর্ননা করেছি।

পরে ওনার রোগ কাহিনী লিখবো বলেছিলাম। আজ শুনুন সে কাহিনী।

কাহিনী সংক্ষেপঃ
মি. কামাল বয়স ৪৮ বছর। অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের বড় ছেলে। তাকে মাদ্রাসায় পড়তে দেওয়া হয়।কিন্তু তিনি সেটি পছন্দ করতেন না,কানাকাটি করতেন।

পরে সাধারন স্কুলে চলে আছেন। আর্থিক সঙ্কটের কারনে ছোট বয়সেই ৪-৫ বার স্কুল বাদ দিতে হয়েছে। কিন্তু পড়ার জন্য তার প্রচন্ড আগ্রহ। তার ভাষায়- আমাকে পড়তেই হবে।

৮ মাস স্কুলে যাইনি। পরের ২ মাস অন্যের বই পড়ে পরীক্ষা দেই এবং ভাল ভাবে পাশ করি (উনি যে সত্যি মেধাবী তার প্রমাণ আমার বই অনেকে পড়েছে ও খুব ভাল লেগেছে, উপকার পেয়েছে বলেছে। কিন্তু "কগনেটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি " এর মতন কঠিন বিষয়টি যা উচ্চ শিক্ষিত অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও তত বেশি আত্মস্থ করতে পারেন না,তিনি মনোজগতের সেই কঠিন, রহস্যময় অংশের অলিগলি নিজেই খুজে নিতে পেরেছেন , যা সত্যি বিস্ময়কর) ।

এরপর থেকে তিনি টিউশনি করে, পুরনো বই বিক্রি করে নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন।এভাবে তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি ক্লাশে ভর্তি হন।এরমধ্যে তার বাবার ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে।তাই অনার্স তার হলো না।পাশ কোর্সে ভর্তি হন।

পুরাতন প্যান্টের ব্যবসা করে নিজের ও বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতেন। পরীক্ষার সামনে ভালভাবে পড়ার জন্য ছোট ভাইকে ঐ পুরনো প্যান্ট বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে নিতে রাজি করান।
কিন্তু পরীক্ষার সময় ভাই বলে সে এই নিন্মমানের কাজ করতে পারবে না।

রোগীর ভাষায় -স্যার তখন আমার মাথায় হাত।আমি দিশেহারা হয়ে যাই।

বাবার চিকিৎসা খরচ,আমার পরীক্ষা - আমি কি করবো? আমি পুরো অসুস্থ পড়ি।

বুকে ব্যথা,মাথা ব্যথা,,অস্হির লাগে, সারা শরীর ঝিমঝিম করে,,শরীরে ধাক্কা মারে,ভয় লাগে,কাজ করতে পারি না,অশান্তি  - মনে হয় মারা যাবো।

চিকিৎসা করাই। অনেক টেস্ট করা হয়,সবই নরমাল। এভাবে ৬ মাস বাড়িতে বসে থাকি,অথর্ব হয়ে।

একদিন বাইরে গেলে একলোক আমাকে দেখে বলে - কিরে বাচবি নাতো,শরীর তো খুব খারাপ দেখাচ্ছে।

এতে আমি আরো ভড়কে যাই। বাড়ি থেকে আর বের হওয়ার মতন অবস্থা ছিল না।খুবই খারাপ সময় ছিল সেটি।

মাথায় চাপ দিয়ে রাখতো, মনে হতো চারপাশে ব্যান্ডেজ বেধে চাপ দিচ্ছে, কাজের প্রতি কোন আগ্রহ নেই, মনে হতো ঘুমের ঘোরে মরে গেলে ভাল।

এভাবে অনেক দিন চলে যায়। তখন মনে হলো কই মারা তো যাচ্ছি না।এরকম ভাবার পর মনে করলাম কাজ করে দেখি না।

ঢাকায় এসে আবার সেই পুরনো প্যান্ট বিক্রির কাজ শুরু করি। কাজ করি বটে কিন্তু শরীরের যন্ত্রণা যায় না।আবার ও সিটি স্ক্যান, ইইজি এসব করাই। কিন্তু সব পরীক্ষা নরমাল। রোগের তীব্রতা কখনো কমে কখনো বাড়ে।
তখন ১৯৯৪ সাল- স্যার তখন থেকে এই রোগ বয়ে বেড়াচ্ছি( তার মানে ২৪ বছর) ।

। কিছু দিন আগে ইউটিউবে আপনার কিছু ভিডিও দেখি ও জানতে পারি কিছু বইয়ের নাম,বিশেষ করে " মন ও মানুষ " বইটির কথা।

আমি আপনার বই পেতে অনেক জায়গায় খোঁজ করি, পাই না।সুদূর চিটাগাং থেকে এসে অনেক চেষ্টা করি।
পরে আজিজ সুপার মার্কেট এ খুজে পাই।১ মাস লাগে আপনার বই খুজে পেতে।

(বই পড়ার ২০দিন পর ওনি আমার চেম্বারে আছেন।এই ২০ দিনের মধ্যেই উনি বইটি পড়ে কি উপকার পেয়েছেন ও কিভাবে মনোজগতে পরিবর্তন আসলো তার বিবরণ জানতে
আমার " সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৮" দয়া করে পড়ে নিন।তানাহলে পুরো বিষয়টি হ্রদয়ঙ্গম হবে না)।

উনার মানসিক দিক থেকে অনেক উন্নতি হলেও শারীরিক সমস্যা রয়ে যায়,যেগুলো হলোঃ

ক্লান্তি, মাংসে ঝিমঝিম করা,মনে হয় মাংসে চাপ দিয়ে রাখছে, পুরো শরীর ভার ভার লাগছে, মাথায় চাপ,হাতে চাপ ইত্যাদি।

২য় সেশনে এসে উনি নিজের আরো কিছু উন্নতির কথা যা বললেনঃ

১।হীনমন্যতা কেটে গেছে ঃ স্যার এটি কেটেছে সান্ত্বনায় নয়,যুক্তি দিয়েই। আমার থেকে জ্ঞান, সৌন্দর্য্য, অর্থ যাদের বেশি এগুলো তাদের চেয়ে ও বেশি থাকতে পারে অন্যদের। এজন্য তারা যদি হীনমন্যতায় না ভুগেন,আমি কেন ভুগবো?তা ছাড়া ডিপ্রেশন এ নিজের যোগ্য দিকের চেয়ে অক্ষমতার দিক বেশি নজরে পড়ে। আমার ডিপ্রেশন কেটে গেলে হীনমন্য লাগবে না

২। বিরক্তিবোধ কেটে গেছে ঃ আগে বিরক্ত লাগতো কারো সহানুভূতি না পেলে, কেউ খুশি না হলে, কারো সহায়তা না পেলে। এখন বুঝি ঘন্টার পর ঘন্টা অন্যের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা বোকামি, কাউকে গিফট দিয়ে তুষ্ট করার চেষ্টা অপ্রয়োজনীয় এবং অন্যের সহযোগিতার ভরসায় বসে থাকা মানে পরনির্ভরশীল থাকা।

৩। আমার ও গুন আছে, যোগ্যতা আছে - আমি নিজের গুনাবলীর একটি লিস্ট করেছি।

এতো দিন আমার মন শর্তাধীন ছিল বলে নিজকে নিয়ে নেতিবাচক বিশ্বাস ছিল। আমি ভেবে দেখলাম

ক) আমি সাহসী -আমি এতো কষ্টকর সময় পার করতে পেরেছি, আমি অনেক মানুষের সামনে অনর্গল বক্তৃতা দিতে পারি

খ) আমি সৎ- ফাইলে আমার সততার গল্প গুলো লিখে রেখেছি

গ) আমি সুস্থ - আমি তো মরে যেতে বসেছিলাম। এখন অনেক ভাল আছি - আলহামদুলিল্লাহ

ঘ)আমি সহনশীল - এতো দীর্ঘ কষ্টকর সময় পার করেছি

ঙ) আমি স্বচ্ছল-
আমার চাহিদা তো পূরন হচ্ছে। ছেলে মেয়ের চাহিদা মেটাতে তো পারছি

( যারা এ লেখা  পড়ছেন দয়া করে তার দারিদ্র্যতা স্মরন করুন। তিনি যদি নিজকে স্বচ্ছল ভাবতে পারেন,আপনি কেন নন?)

এই কেইস হিস্ট্রি থেকে যা শিখলাম

১। পুরনো প্যান্ট বিক্রি করে, ফুটপাতের হকার -এদের মধ্যে ও কামালউদ্দীনের মতন ট্যালেন্ট থাকতে পারে, আমরা কি তেমনটি জানি, মানি?

২। চরম দারিদ্র্যতা না থাকলে, প্রতিকুলতা না থাকলে কামালউদ্দীনরা পিএইচডি করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, গবেষক হতে পারতেন -সে সুযোগ কি রাস্ট্র, সমাজ তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন?

৩। মানসিক চাপ,জীবন জটিলতা মন- ব্রেইনকে কেমন বিপর্যস্ত করে এ কেইস থেকে তা অনুমেয়

৪।  অনেক দামী টেস্ট করেও সব নরমাল মানে সে রোগী নয়,বানিয়ে বলছে বা ভান করছে তা নয়।

৫। মানসিক রোগের অন্যতম লক্ষণ হতে পারে শারীরিক লক্ষণ। সেগুলো হতে পারে তীব্র ও দীর্ঘস্হায়ী

৬। ভাল  ও বিজ্ঞানসম্মত  বই জীবন বদলে দিতে পারে, মনোজগতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে।ভাল বই পড়ুন,ভাল বই লিখুন(এতে  নিজের আত্মপ্রচার মনে হলেও কিছু করার নেই।বরং আমি গর্বিত যে আমার বই পড়ে কিছু লোক উপকার পাচ্ছেন ) ।

Tuesday, November 27, 2018

সাইকলজিক্যাল টিপস-৫৪

কেউ আপনার বড় নয়,ছোটও নয়
  এমনকি সমান ও নয়
প্রত্যেক মানুষ অনন্য, তুলনারহিত
আপনি -আপনি
আমি- আমি

Thursday, November 22, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস -৫৩

আমরা মনে করি জীবনে সবচেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা  হচ্ছে

জীবন থেকে কোন একজন হারিয়ে যাওয়া যাকে আমরা খুব "মুল্য" দেই।

কিন্তু  প্রকৃত সত্য হচ্ছে

জীবনের সবচেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা হলো

কাউকে অতিরিক্ত মুল্যে দিতে গিয়ে নিজের "মুল্য" হারিয়ে ফেলা

Saturday, November 17, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস-৫২ঃ

দুঃসংবাদ ঃ
আপনি কাউকে আপনাকে পছন্দ করতে, ভালবাসতে,বুঝতে,সম্মান করতে, গ্রহন করতে, সমর্থন দিতে বা আপনার সঙ্গে প্রীতি পূর্ণ থাকতে   বাধ্য করতে পারেন না।আপনি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে ও পারেন না

   তবে -সুসঃবাদ হচ্ছে ঃ

এতে (আপনার)  কিছু যায় আসে না
(ইট ডাজনট ম্যাটার)

Sunday, November 11, 2018

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৯ঃএইম ইন লাইফঃএমপি হওয়া

অষ্টম শ্রেনীতে ভিত্তি পরীক্ষার জন্য গ্রাম থেকে চাঁদপুর  মফস্বল শহরে যাই। বাংলা পরীক্ষায় রচনা এসেছে -তোমার জীবনের লক্ষ্য। আমি সাধারনত পরীক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে বানিয়ে নিজ থেকে উত্তর লিখতাম। মুখস্থ করার ও লেখার অভ্যাস ছিল না।
তাৎক্ষণিক ভাবে ঐ রচনায় লিখেছিলাম - আমি জাতিসংঘের মহা সচিব হতে চাই(তখন মহাসচিব ছিলেন -উথান্ট)
। কারন হিসেবে লিখেছিলাম জাতিসঙ্গ হচ্ছে পৃথিবীর সকল রাস্ট্রের যৌথ রাস্ট্র। এর মহাসচিব হওয়া মানে সারা পৃথিবীতে "শান্তি " আনার চেষ্টায় নিজকে নিয়োজিত রাখার অপূর্ব সুযোগ।
কোন একটি দেশের রাস্ট্র প্রধান হওয়ার চেয়ে পৃথিবীর সকল রাস্ট্রের সম্মিলিত সঙ্গের মহাসচিব হওয়া অনেক বেশি গৌরবের ও ক।ক্ষমতার।
(তখন কি জানতাম এটি একটি শিখন্ডি,মাকাল ফল?)।
এরপর রবীন্দ্রনাথ হবো,আইনস্টাইন হবো ইত্যাদি কতকিছু হওয়ার সাধ জাগতো।
কিন্তু কস্মিনকালেও এমপি হবো এ চিন্তা এই বোকার মাথায় আসেনি।

বুদ্ধি দুই ধরনের ১।সরল বুদ্ধি -এরা জ্ঞান আহরন করে, জ্ঞান বিতরণ করে ও জ্ঞান সৃজন করে। ২।কৌশলী বুদ্ধি বা কুট বুদ্ধি  - এরা পরিস্থিতি, পরিবেশকে নিজ প্রয়োজন, স্বার্থে ব্যবহার করে ও  বুদ্ধিকে "কৌশলের" হাতিয়ার হিসেবে বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রথম শ্রেনির বোকা বুদ্ধির লোক এখন সমাজে খুজে পাওয়া মুশকিল। সবাই বুঝে গেছে (বিশেষ করে যাদের চোঙ্গা বুদ্ধি বেশি) যে বুদ্ধি হচ্ছে সেরা পুজি, যার কৌশলী ব্যবহার আখের ঘুচাতে সাহায্য করে।

আমাদের দেশে বহু দিন যাবত ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলের পরীক্ষায় রচনার খাতায় "এইম ইন লাইফ" হিসেবে "ডাক্তার  ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইলট " ইত্যাদি হতে চাইতো।তবে বর্তমানে তরুন তরুনীদের প্রধান স্বপ্ন "বিসিএস" ক্যাডার হওয়া।

সাম্প্রতিক কালে নির্বাচনকে ঘিরে "তারকা " খ্যাত  খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা,গায়ক-গায়িকা,বুদ্ধিজীবি,অর্থনীতিবিদ,বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক,বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক  ভিসি,বড় বড় ব্যবসায়ী - কে নাই যারা এমপি ইলেশনের নমিনেশন পেপার সাবমিট করছেন না?
কিন্তু আমার সরল বুদ্ধিতে বুঝতে পারছি না- কি মধু ঐ এমপি গিরিতে?।
তারা জীবনে কি পাননি? টাকা পয়সা, মান সম্মান, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা -সবই পেয়েছেন। যেকোন এমপির চেয়ে এদের অনেকের পরিচিত, খ্যাতি অনেক বেশি। এমনকি টাকা উপার্জনের দিক থেকে তাদের কারো কারো অবস্থান ঈর্শ্বনীয়।

তারা চাইলে পছন্দের দলকে পরামর্শ দিয়ে, গাইড দিয়ে, প্রচার দিয়ে সাহায্য করতে পারতেন। কিন্তু নিজে এমপি হয়ে নিজের,দলের, এলাকার এমন কি বাড়তি উপকার করবেন? 
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর আগে যারা এসেছেন তাদের কে কি করতে পেরেছেন জাতি তা দেখেছে।
এমনকি এদের কয়েকজনের করুন পরিনতি আমাদের মনকে আহত করে।
(সর্বোপরি মনোনয়ন পাওয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে জিতে আসার সম্ভাবনাই বা কতটুকু? সবাই কি আর মাশরাফি?)

আমি শঙ্কিত অন্য কথা ভেবে। তরুণ তরুনীরা সাধারণত স্বনামধন্য লেখক, সাহিত্যিক, কবি, বুদ্ধিজীবি,শিক্ষক, খেলোয়াড়, নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকা -এদেরকে "মডেল " হিসেবে কল্পনা করে থাকে। এরা তাদের আইডল।তারা এদের মতন হতে চায়।
এখন থেকে আমাদের তরুণ তরুনীদের " মডেল " হবেন কারা? যদি সত্যিকার সুস্থ রাজনীতিতে তারা আগ্রহী হয়,তাহলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে দেশের রুগ্ন রাজনীতির আরোগ্য লাভ হতে পারে।আমি নিজও মনে করি নষ্ট, ভ্রষ্ট রাজনীতিকে পরিবর্তন করতে, রাস্ট্রের যথাযথ "মেরামতের " জন্য প্রতিভাবান, মেধাবী লোকদের রাজনীতিতে আসা উচিত। কেননা রাজনীতি সবার জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ যে একে এড়িয়ে চলা যায় না।তাই একে অপরাজনীতি থেকে মুক্ত করা দরকার।
কিন্তু নষ্ট রাজনীতির ক্রীড়নক হলে দেশ,জাতি তো ডুববেই নিজেরা ও না ডুবে যায়।

Friday, November 9, 2018

রোগ কাহিনী -৪৭ঃএটি কি রোগ না বিবেক?

কাহিনী সংক্ষেপঃমিঠু,বয়স ২৮। ৩ বছর ধরে সমস্যায় ভুগছেন।
তার ভাষ্যে--অনেক বছর পর কোরান শরীফ পড়তে গিয়ে দেখি পারতেছি না।তখন এক তরুণ হুজুরের কাছে পুনরায় কোরান শিখতে যাই।

তাকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল(তবে বাধ্যতামূলক ছিল না)।

৬ মাস পর হঠাৎ মনে হলো  ঐ হুজুরকে তো টাকা দেওয়া হয়নি। এ চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় আসতে থাকে ও দিনের পর দিন তা চলতে থাকে।

চিন্তায় তখন আমার মাথা নষ্ট। তখন অনেক রাতে তাকে ফোন দিয়ে বলি টাকা না দেওয়ার কারনে আমার দুঃশ্চিতায় রাতে ঘুম আছে না

।তিনি বলেন-এটি কোন ব্যাপার না।আমি এমনি আপনাকে সাহায্য করেছি। এরপর সে টেনশন চলে যায়।

কয়েক দিন পর মনে হলো অনেক বছর নানা বাড়ি যাই না।
মামাদের সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ নাই।

আমার মনে হলো আমি তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছি।
ধর্মে আছে আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।

এ চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় আসতে থাকে। তখন হুজুরকে এ ঘটনা বলি। হুজুর বলেন  এতে আত্মীয়তা ছিন্ন হয় না।
এতে ও মন শান্ত হয় না।
সকাল সন্ধ্যায় একই চিন্তা। পরে সিদ্ধান্ত নেই মামার বাড়ি যাবো।
বাড়ি গিয়ে এক মামার সঙ্গে দেখা হয়।কিন্তু মন পুরো শান্ত হয় না
,কেননা বাকি দুই মামা অন্য বাড়িতে।

মনে হচ্ছে ওনাদের কাছে না গেলে হার্ট ফেইল করবো। দুরুত সেই মামাদের কাছে যাই। এরপর মন ভাল হয়ে যায়।

এর ২ দিন পর আরেক চিন্তা ঢুকে। ১বছর আগে  মেজ ভাইয়ের সঙ্গে  বেশ কথা কাটাকাটি হয় ও তখন থেকে কথা বলা বন্ধ।
এখন মনে হলো ওনার সঙ্গে ও আত্মীয়তা ছিন্ন করে ফেলেছি। মনকে বোঝাই কিন্তু মন মানে না

।এভাবে ২-৩ মাস চলে। ঐ চিন্তা যায় না।মনে হয় জান্নাতে যেতে হবে।
না পেরে গ্রামে যাই ও মেজ ভাইয়ের কাছে মাফ চাই।
তিনি বলেন আমি কিছু মনে করিনি তুই ছোট ভাই, আমাকে তোর মত আগে বললেই পারতি। এরপর মন ভাল হয়ে যায়।

কিছু দিন পর  ফুফাতো ভাই তার বিয়ের দাওয়াত দেয়।বড় ভাবীকে তা বলিও তাদেরকে ও যেতে অনুরোধ করি।
কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না বিধায় আমাকে যেতে নিষেধ করে। মুরুব্বী বলে তাদের কথা ফেলতে পারিনি।
১দিন পরই মনে হয় আত্মীয়তা ছিন্ন করে ফেললাম। তখন ফুফাতো ভাইকে ফোন করে সরি বলি, যে অন্য কাজ থাকাতে যেতে পারিনি। এরপর মন শান্ত হয়।

ডিপিএস করতে ব্যাংকে গেলে মনে হয় এগুলো সুদি ব্যাংক, এখানে একাউন্ট করা ঠিক হবে না

।কিন্তু ইসলামী ব্যাংক এ গিয়ে ও দেখি সুদের হার বরং বেশি। যদিও তারা একে মুনাফা বলে কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন ফাকি মনে হয়।

ম্যাচে থাকি। সেখানে সবাই একত্রে খাই।সকালে মেন্যু পছন্দ হয়নি বলে ১টি ডিম নিজে ভেজে খাই।
এতে মনে হলো অন্যদের না জানিয়ে এরকম করা অপরাধ। কমন বাথরুমে কমন সাবান ব্যবহার করলেও মনে হয় কেন অন্যদের সাবান ব্যবহার করলাম? ।

অফিসে সবাই নাস্তার পর কিছু থেকে যায়।সেখান থেকে কিছু খেলে মনে হয় এর জন্য হাশরের দিন জবাব দিতে হবে।

বাসে উঠে নামার সময় ৫ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়নি। পথে নেমে অনুশোচনায় মন ভরে উঠে।

কাছাকাছি মসজিদ খুজে সেখানে ৫ টাকা দান করে আছি। এরপর মন স্বস্তি পায়।

ভাইয়ের একটি সিগনেচার পেন আছে খুব সুন্দর। সেটি নিয়ে যাওয়ার পর মনে হয় দোজখে যেতে হবে, তাই আবার ফিরিয়ে দেই।
রুমমেট এর তোয়ালে পড়ে থাকলে মনে হয় সে এসে জবাব চাইবে। 
বেসিনে হাত ধোয়ার সময় অন্যরা দাড়িয়ে থাকলে    তাড়াহুড়ো করে চলে যাই যদি তারা কিছু মনে করে।
ফিল্টার থেকে পানি নিলে শঙ্কিত থাকি যদি কেউ বলে বেশি পানি নিয়ে ফেলেছি।

এভাবে অসংখ্য সমস্যার মধ্যে তার দিন কাটে।

তিনি বলেন স্যার আমি মোটেই তেমন ধার্মিক তা নয়।আমি ঠিকমতো নামাজ রোজাও করি না। এগুলোর সঙ্গে ধর্মীয় তাগিদ নাই। তথাপি এমন হয় কেন স্যার?

ফেইসবুকে আমার  পরিচয় পেয়ে তিনি চেম্বারে আসেন।
ঔষধ চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং করার পর তিনি এখন প্রায় ৯০% সুস্থ হয়েছেন।

এ কেইস থেকে আমরা কি শিখলাম ঃ

১। এটা কি ধর্মীয় বোধ, বিবেক, না রোগ?

২। এটি অবশ্যই একটি মানসিক  রোগ।তবে কি রোগ?

৩।এক নজরে দেখলে একে ওসিডি বা অবসেসিভ কনভালসিভ ডিসঅর্ডার বলা যায়।তবে এটি পুরোপুরি  মিলে না।

৪। অবসেশনে এভাবে অনুশোচনার অবসান হয়ে যায় না

৫। অবসেশনে সাধারণত যেসব চিন্তা আসে সেগুলো মূলত ধর্ম বিরোধী।
যেমন গতকালই সোনারগায়ে এক মেয়ে রোগী আছে যার মধ্যে চিন্তা ছিল যে বাংলায় প্রথম কোরান শরীফ অনুবাদ করে একজন হিন্দু মানুষ। কিন্তু এটি হেদায়েত গ্রন্থ হলেও ঐ লোক মুসলমান হলো না কেন? চোখে ভাসে কোরান শরীফের উপর পা দিয়ে আছি - ইত্যাদি।