Sunday, November 11, 2018

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৯ঃএইম ইন লাইফঃএমপি হওয়া

অষ্টম শ্রেনীতে ভিত্তি পরীক্ষার জন্য গ্রাম থেকে চাঁদপুর  মফস্বল শহরে যাই। বাংলা পরীক্ষায় রচনা এসেছে -তোমার জীবনের লক্ষ্য। আমি সাধারনত পরীক্ষায় তাৎক্ষণিকভাবে বানিয়ে নিজ থেকে উত্তর লিখতাম। মুখস্থ করার ও লেখার অভ্যাস ছিল না।
তাৎক্ষণিক ভাবে ঐ রচনায় লিখেছিলাম - আমি জাতিসংঘের মহা সচিব হতে চাই(তখন মহাসচিব ছিলেন -উথান্ট)
। কারন হিসেবে লিখেছিলাম জাতিসঙ্গ হচ্ছে পৃথিবীর সকল রাস্ট্রের যৌথ রাস্ট্র। এর মহাসচিব হওয়া মানে সারা পৃথিবীতে "শান্তি " আনার চেষ্টায় নিজকে নিয়োজিত রাখার অপূর্ব সুযোগ।
কোন একটি দেশের রাস্ট্র প্রধান হওয়ার চেয়ে পৃথিবীর সকল রাস্ট্রের সম্মিলিত সঙ্গের মহাসচিব হওয়া অনেক বেশি গৌরবের ও ক।ক্ষমতার।
(তখন কি জানতাম এটি একটি শিখন্ডি,মাকাল ফল?)।
এরপর রবীন্দ্রনাথ হবো,আইনস্টাইন হবো ইত্যাদি কতকিছু হওয়ার সাধ জাগতো।
কিন্তু কস্মিনকালেও এমপি হবো এ চিন্তা এই বোকার মাথায় আসেনি।

বুদ্ধি দুই ধরনের ১।সরল বুদ্ধি -এরা জ্ঞান আহরন করে, জ্ঞান বিতরণ করে ও জ্ঞান সৃজন করে। ২।কৌশলী বুদ্ধি বা কুট বুদ্ধি  - এরা পরিস্থিতি, পরিবেশকে নিজ প্রয়োজন, স্বার্থে ব্যবহার করে ও  বুদ্ধিকে "কৌশলের" হাতিয়ার হিসেবে বিনিয়োগ করে থাকেন। প্রথম শ্রেনির বোকা বুদ্ধির লোক এখন সমাজে খুজে পাওয়া মুশকিল। সবাই বুঝে গেছে (বিশেষ করে যাদের চোঙ্গা বুদ্ধি বেশি) যে বুদ্ধি হচ্ছে সেরা পুজি, যার কৌশলী ব্যবহার আখের ঘুচাতে সাহায্য করে।

আমাদের দেশে বহু দিন যাবত ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলের পরীক্ষায় রচনার খাতায় "এইম ইন লাইফ" হিসেবে "ডাক্তার  ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইলট " ইত্যাদি হতে চাইতো।তবে বর্তমানে তরুন তরুনীদের প্রধান স্বপ্ন "বিসিএস" ক্যাডার হওয়া।

সাম্প্রতিক কালে নির্বাচনকে ঘিরে "তারকা " খ্যাত  খেলোয়াড়, নায়ক-নায়িকা,গায়ক-গায়িকা,বুদ্ধিজীবি,অর্থনীতিবিদ,বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক,বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক  ভিসি,বড় বড় ব্যবসায়ী - কে নাই যারা এমপি ইলেশনের নমিনেশন পেপার সাবমিট করছেন না?
কিন্তু আমার সরল বুদ্ধিতে বুঝতে পারছি না- কি মধু ঐ এমপি গিরিতে?।
তারা জীবনে কি পাননি? টাকা পয়সা, মান সম্মান, খ্যাতি, প্রতিষ্ঠা -সবই পেয়েছেন। যেকোন এমপির চেয়ে এদের অনেকের পরিচিত, খ্যাতি অনেক বেশি। এমনকি টাকা উপার্জনের দিক থেকে তাদের কারো কারো অবস্থান ঈর্শ্বনীয়।

তারা চাইলে পছন্দের দলকে পরামর্শ দিয়ে, গাইড দিয়ে, প্রচার দিয়ে সাহায্য করতে পারতেন। কিন্তু নিজে এমপি হয়ে নিজের,দলের, এলাকার এমন কি বাড়তি উপকার করবেন? 
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর আগে যারা এসেছেন তাদের কে কি করতে পেরেছেন জাতি তা দেখেছে।
এমনকি এদের কয়েকজনের করুন পরিনতি আমাদের মনকে আহত করে।
(সর্বোপরি মনোনয়ন পাওয়া এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে জিতে আসার সম্ভাবনাই বা কতটুকু? সবাই কি আর মাশরাফি?)

আমি শঙ্কিত অন্য কথা ভেবে। তরুণ তরুনীরা সাধারণত স্বনামধন্য লেখক, সাহিত্যিক, কবি, বুদ্ধিজীবি,শিক্ষক, খেলোয়াড়, নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকা -এদেরকে "মডেল " হিসেবে কল্পনা করে থাকে। এরা তাদের আইডল।তারা এদের মতন হতে চায়।
এখন থেকে আমাদের তরুণ তরুনীদের " মডেল " হবেন কারা? যদি সত্যিকার সুস্থ রাজনীতিতে তারা আগ্রহী হয়,তাহলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে দেশের রুগ্ন রাজনীতির আরোগ্য লাভ হতে পারে।আমি নিজও মনে করি নষ্ট, ভ্রষ্ট রাজনীতিকে পরিবর্তন করতে, রাস্ট্রের যথাযথ "মেরামতের " জন্য প্রতিভাবান, মেধাবী লোকদের রাজনীতিতে আসা উচিত। কেননা রাজনীতি সবার জন্য এতো গুরুত্বপূর্ণ যে একে এড়িয়ে চলা যায় না।তাই একে অপরাজনীতি থেকে মুক্ত করা দরকার।
কিন্তু নষ্ট রাজনীতির ক্রীড়নক হলে দেশ,জাতি তো ডুববেই নিজেরা ও না ডুবে যায়।

No comments:

Post a Comment