Friday, November 9, 2018

রোগ কাহিনী -৪৭ঃএটি কি রোগ না বিবেক?

কাহিনী সংক্ষেপঃমিঠু,বয়স ২৮। ৩ বছর ধরে সমস্যায় ভুগছেন।
তার ভাষ্যে--অনেক বছর পর কোরান শরীফ পড়তে গিয়ে দেখি পারতেছি না।তখন এক তরুণ হুজুরের কাছে পুনরায় কোরান শিখতে যাই।

তাকে পারিশ্রমিক হিসেবে কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল(তবে বাধ্যতামূলক ছিল না)।

৬ মাস পর হঠাৎ মনে হলো  ঐ হুজুরকে তো টাকা দেওয়া হয়নি। এ চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় আসতে থাকে ও দিনের পর দিন তা চলতে থাকে।

চিন্তায় তখন আমার মাথা নষ্ট। তখন অনেক রাতে তাকে ফোন দিয়ে বলি টাকা না দেওয়ার কারনে আমার দুঃশ্চিতায় রাতে ঘুম আছে না

।তিনি বলেন-এটি কোন ব্যাপার না।আমি এমনি আপনাকে সাহায্য করেছি। এরপর সে টেনশন চলে যায়।

কয়েক দিন পর মনে হলো অনেক বছর নানা বাড়ি যাই না।
মামাদের সঙ্গে অনেক দিন যোগাযোগ নাই।

আমার মনে হলো আমি তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলেছি।
ধর্মে আছে আত্মীয়তা ছিন্নকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।

এ চিন্তা সারাক্ষণ মাথায় আসতে থাকে। তখন হুজুরকে এ ঘটনা বলি। হুজুর বলেন  এতে আত্মীয়তা ছিন্ন হয় না।
এতে ও মন শান্ত হয় না।
সকাল সন্ধ্যায় একই চিন্তা। পরে সিদ্ধান্ত নেই মামার বাড়ি যাবো।
বাড়ি গিয়ে এক মামার সঙ্গে দেখা হয়।কিন্তু মন পুরো শান্ত হয় না
,কেননা বাকি দুই মামা অন্য বাড়িতে।

মনে হচ্ছে ওনাদের কাছে না গেলে হার্ট ফেইল করবো। দুরুত সেই মামাদের কাছে যাই। এরপর মন ভাল হয়ে যায়।

এর ২ দিন পর আরেক চিন্তা ঢুকে। ১বছর আগে  মেজ ভাইয়ের সঙ্গে  বেশ কথা কাটাকাটি হয় ও তখন থেকে কথা বলা বন্ধ।
এখন মনে হলো ওনার সঙ্গে ও আত্মীয়তা ছিন্ন করে ফেলেছি। মনকে বোঝাই কিন্তু মন মানে না

।এভাবে ২-৩ মাস চলে। ঐ চিন্তা যায় না।মনে হয় জান্নাতে যেতে হবে।
না পেরে গ্রামে যাই ও মেজ ভাইয়ের কাছে মাফ চাই।
তিনি বলেন আমি কিছু মনে করিনি তুই ছোট ভাই, আমাকে তোর মত আগে বললেই পারতি। এরপর মন ভাল হয়ে যায়।

কিছু দিন পর  ফুফাতো ভাই তার বিয়ের দাওয়াত দেয়।বড় ভাবীকে তা বলিও তাদেরকে ও যেতে অনুরোধ করি।
কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল ছিল না বিধায় আমাকে যেতে নিষেধ করে। মুরুব্বী বলে তাদের কথা ফেলতে পারিনি।
১দিন পরই মনে হয় আত্মীয়তা ছিন্ন করে ফেললাম। তখন ফুফাতো ভাইকে ফোন করে সরি বলি, যে অন্য কাজ থাকাতে যেতে পারিনি। এরপর মন শান্ত হয়।

ডিপিএস করতে ব্যাংকে গেলে মনে হয় এগুলো সুদি ব্যাংক, এখানে একাউন্ট করা ঠিক হবে না

।কিন্তু ইসলামী ব্যাংক এ গিয়ে ও দেখি সুদের হার বরং বেশি। যদিও তারা একে মুনাফা বলে কিন্তু আমার কাছে কেমন যেন ফাকি মনে হয়।

ম্যাচে থাকি। সেখানে সবাই একত্রে খাই।সকালে মেন্যু পছন্দ হয়নি বলে ১টি ডিম নিজে ভেজে খাই।
এতে মনে হলো অন্যদের না জানিয়ে এরকম করা অপরাধ। কমন বাথরুমে কমন সাবান ব্যবহার করলেও মনে হয় কেন অন্যদের সাবান ব্যবহার করলাম? ।

অফিসে সবাই নাস্তার পর কিছু থেকে যায়।সেখান থেকে কিছু খেলে মনে হয় এর জন্য হাশরের দিন জবাব দিতে হবে।

বাসে উঠে নামার সময় ৫ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়নি। পথে নেমে অনুশোচনায় মন ভরে উঠে।

কাছাকাছি মসজিদ খুজে সেখানে ৫ টাকা দান করে আছি। এরপর মন স্বস্তি পায়।

ভাইয়ের একটি সিগনেচার পেন আছে খুব সুন্দর। সেটি নিয়ে যাওয়ার পর মনে হয় দোজখে যেতে হবে, তাই আবার ফিরিয়ে দেই।
রুমমেট এর তোয়ালে পড়ে থাকলে মনে হয় সে এসে জবাব চাইবে। 
বেসিনে হাত ধোয়ার সময় অন্যরা দাড়িয়ে থাকলে    তাড়াহুড়ো করে চলে যাই যদি তারা কিছু মনে করে।
ফিল্টার থেকে পানি নিলে শঙ্কিত থাকি যদি কেউ বলে বেশি পানি নিয়ে ফেলেছি।

এভাবে অসংখ্য সমস্যার মধ্যে তার দিন কাটে।

তিনি বলেন স্যার আমি মোটেই তেমন ধার্মিক তা নয়।আমি ঠিকমতো নামাজ রোজাও করি না। এগুলোর সঙ্গে ধর্মীয় তাগিদ নাই। তথাপি এমন হয় কেন স্যার?

ফেইসবুকে আমার  পরিচয় পেয়ে তিনি চেম্বারে আসেন।
ঔষধ চিকিৎসা ও কাউন্সিলিং করার পর তিনি এখন প্রায় ৯০% সুস্থ হয়েছেন।

এ কেইস থেকে আমরা কি শিখলাম ঃ

১। এটা কি ধর্মীয় বোধ, বিবেক, না রোগ?

২। এটি অবশ্যই একটি মানসিক  রোগ।তবে কি রোগ?

৩।এক নজরে দেখলে একে ওসিডি বা অবসেসিভ কনভালসিভ ডিসঅর্ডার বলা যায়।তবে এটি পুরোপুরি  মিলে না।

৪। অবসেশনে এভাবে অনুশোচনার অবসান হয়ে যায় না

৫। অবসেশনে সাধারণত যেসব চিন্তা আসে সেগুলো মূলত ধর্ম বিরোধী।
যেমন গতকালই সোনারগায়ে এক মেয়ে রোগী আছে যার মধ্যে চিন্তা ছিল যে বাংলায় প্রথম কোরান শরীফ অনুবাদ করে একজন হিন্দু মানুষ। কিন্তু এটি হেদায়েত গ্রন্থ হলেও ঐ লোক মুসলমান হলো না কেন? চোখে ভাসে কোরান শরীফের উপর পা দিয়ে আছি - ইত্যাদি।

2 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. এভাবে ২-৩ মাস চলে। ঐ চিন্তা যায় না।মনে হয় জান্নাতে যেতে হবে।
    না পেরে গ্রামে যাই ও মেজ ভাইয়ের কাছে মাফ চাই।
    তিনি বলেন আমি কিছু মনে করিনি তুই ছোট ভাই, আমাকে তোর মত আগে বললেই পারতি। এরপর মন ভাল হয়ে যায়।

    স্যার, উপরের দ্বিতীয় লাইনে দয়া করে একটু সংশোধন করুন,ওখানে জান্নাতের স্থানে জাহান্নাম লিখতে হবে।

    ReplyDelete