Wednesday, October 31, 2018

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -২৮ -ঃস্যার বইটি পড়ে মাত্র ২০ দিনে ১০ বছরের অমানষিক যন্ত্রনা লাঘব হয়েছে, আমি এখন নতুন মানুষ


আজ জানাতে চাই একটি  "ভাল বই" অনেক সময় কিভাবে "শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক " হিসেবে ও কাজ করতে পারে।

মানসিক সমস্যা বা রোগ চিকিৎসায় ঔষধ লাগে বা কাউন্সিলিং/সাইকোথেরাপি।

কিন্তু নিছক একটি বই পড়ে মাত্র ২০ দিনে অনেক অভিজ্ঞ মনোচিকিৎসকের সাইকোথেরাপির চেয়ে অনেক ভাল ফলাফল হলে সেটা অবশ্যই শ্লাগার বিষয়, গৌরবের বিষয়।

আর সে বই যদি হয় নিজের তাহলে সে আনন্দ, গৌরব আর তৃপ্তি হয় অসীম।

আমি গর্বিত, সম্মানিত, সফল ও তৃপ্ত  জীবনের প্রায় সকল দিক থেকে
(বিশ্বাস করি পরম করুনাময় আল্লাহ তালার অশেষ রহমত ছাড়া এমন সৌভাগ্য বান কম লোকই হতে পারে। কার দোয়ায় বা কোন পূন্য গুনে স্রষ্টার এরকম অনুগ্রহ  পেয়েছি জানি না।তবে অসংখ্য রোগী ও তাদের অভিভাবকদের প্রীতি, ভালোবাসা ও দোয়া যে ছিল, আছে, তা মর্মে মর্মে অনুভব করি)। 

চিকিৎসক হিসেবে রোগীদের কাছ থেকে যে কৃতজ্ঞতা, সম্মান, খ্যাতি পেয়েছি তার ছোট্ট একটি লিস্ট দিলেও অনেকে ভাববেন, এটি আত্মপ্রচার, আত্ম-অহমিকা।

(তবে আমার যে কোন রোগী /তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে গোপনে এর প্রমাণ খুজে নিতে পারেন)।

পরিমাণে বহু রোগী দেখি তা হয়তো নয়,তবে যে কয়জন রোগী দেখি তার গুনগত মান বিচারের ভার ঐ রোগী ও তাদের অভিভাবকদের।

লেখক হিসেবে, চিকিৎসক হিসেবে যে সম্মান,প্রশংসা পেয়েছি /পাচ্ছি , সেটি যত না আমার যোগ্যতা ও কৃতিত্বের জন্য
তার চেয়ে  বেশি  এদেশের রোগী, পাঠকদের  বড় মন
ও ঔদার্যের  কারনে।

এমনকি আপনদের দোয়ার আমার বই গুলো ও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিশেষ করে আত্ম উন্নয়ন  ও আত্ম নির্মাণ বিষয়ক বই " মন ও মানুষ "।
প্রচুর পাঠক /পাঠিকা বইটির অকুন্ঠ প্রশংসা করেছে। তাদের জীবন বদলে দেওয়া একটি বই বলেও উল্লেখ করেন।

কিন্তু এই বই টি পড়ে মাত্র ২০ দিনে মানসিক সমস্যা গ্রস্ত কোন ব্যক্তি তার দীর্ঘ ১০ বছরের অমানষিক কষ্ট থেকে মুক্ত হবেন এবং কঠিন তবে সফল সাইকোথেরাপি " সিবিটি"এর (কগনেটিভ -বিহেইভিয়ার থেরাপি)  মূল নীতি এই বই থেকে শিখে নিয়ে, নিজে এমন সফলতার সহিত প্রয়োগ করতে পারবে, সেটি ছিল অবিশ্বাস্য।

আসুন দেখি মাত্র ২০ দিনে এই বই পড়ে তিনি কতটুকু তার চিন্তা, বিশ্বাস, দৃষ্টি ভঙ্গি বদল করতে পেরেছেন।

১। আগে প্রায়ই রেগে গিয়ে বাচ্চাদের মারতাম-এখন মনে হয় ওদের ছোট্ট অপরাধকে এতোদিন বড় অপরাধ মনে করে এমনটি করতাম।

এবিসি মডেল ব্যবহার করে বুঝলাম আমার ধ্যান ধারনায় অনেক ভুল ছিল।

অনেক জীবন জটিলতার কারনে মন হতাশ,উদ্বিগ্ন থাকতো, তাই বাচ্চাদের ছোট খাট ক্রুটি দেখেই রেগে যেতাম।

এখন তাদের কাছে ডাকি,আদর করি- তারা অবাক হয়,বাবা এমন বদলে গেল কিভাবে? 

ওদের দাদীর সামনে দুই ছেলেকে দুদিক থেকে জড়িয়ে বলি  মা দেখো, আমার একদিক ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি, অন্য দিকেও ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তি - মোট ৪০০ কোটি টাকার সম্পত্তি আমার( মা এগুলো দেখে মৃদু হাসে)।

২। আগে কেউ গান করলে বিরক্ত হতাম,রেগে যেতাম।
এখন ভাবি গান তো ভাল জিনিস, আর আমার ভাল না লাগলেও যে গাইছে তার তো ভাল লাগছে। এতে আমার সমস্যা কি?

৩। ১ বছর আগে এক লোক ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে আর ফেরত দেয়নি। এর জন্য তার পিছনে ঘুরতে ঘুরতে টাকা তো পাইনি বেড়েছে যন্ত্রনা,কষ্ট, হতাশা।

এখন ভাবি আমি তো বুঝতেই পারছি টাকা পাবো  না, খামোখা এটার পিছনে না  ছুটে  নিজের কাজে মনোযোগ দিলে অনেক টাকা লাভ হতো, এতো মনোযন্ত্রনা ও পেতাম না।

এরকম ভাবার পর মনটা অনেক হাল্কা হয়ে যায়

৪।   আমার মন এত দিন শুধু  মন্দ দিকগুলো, ব্যর্থতার স্মৃতিগুলোর দিকে চলে যেতো।

কেউ যখন কোন অঙ্ক ১০ বার অনুশীলন করে ১১তম বার তার কাছে ঐ অঙ্ক অনেক সহজ মনে হবে। কেননা আগের ১০ বারের স্মৃতি তাকে সাহায্য করে।

তেমনি আমি বার বার নেতিবাচক চিন্তা করতাম বলে, অতি সহজে আমার মনে নেতিবাচক স্মৃতি গুলো বেশি বেশি চলে আসতো।

স্যার এখন আপনার কাছ থেকে থেরাপি নিলে নিশ্চয়ই ইতিবাচক চিন্তা,স্মৃতিগুলো একই কারনে সহজে ও বারবার আমার মনে আসতে থাকব?
এতে নিশ্চয়ই আমি আরো দুরুত ভাল হয়ে যাবো।

৫। স্যার আপনার বইটি পড়ে মাত্র ২০ দিনে আমার ১০ বছরের অমানষিক যন্ত্রনার অনেকটা লাঘব হয়েছে। এখনো শারিরিক কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।

আমি এখন জানি এগুলো ও মানসিক কারনে। আপনি এগুলো ও ভাল করে দিন।

আমার দৃড় বিশ্বাস এই ১০ বছরের ক্ষতি আমি ইনশাল্লাহ কাটিয়ে উঠতে পারবো।

# রোগীর এই আত্ম-উপলব্ধিগুলো কারো কাউন্সিলিং/সাইকোথেরাপিির ফল নয়।ফেইসবুকে আমার বইয়ের পরিচিত পেয়ে তিনি অনেক চেষ্টা তদ্বির করে "মনও মানুষ " বইটি সংগ্রহ করে পড়েন।২০ দিন পর অনেক কষ্টে আমার ঠিকানা জোগাড় করে চেম্বার ও আসেন

এসে প্রথম দিনেই তিনি এই বই পড়ে কি উপকার পেয়েছেন তা বলছিলেন( আমার কোন প্রকার চিকিৎসা দেওয়ার পূর্বেই)।

আমি কি ধরনের উপকার তার উদাহরণ দিতে বললে তিনি উপরোক্ত "আত্ম-উপলব্ধির" কথা গুলো আমাকে শোনান

-যা আমাকে আনন্দিত,গর্বিত শুধু করেনি, বিস্মিত ও করেছি। একারনেই সে অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম ( ওনার পুরো রোগ কাহিনী পরে দেবো)

No comments:

Post a Comment