Sunday, October 21, 2018

রোগ কাহিনী -৩৫ঃ শালি-দুলাভাই মাখামাখি বনাম স্বামীর হ্রদয়ে রক্তক্ষরণ

কাহিনী সংক্ষেপঃ
আমিন সাহেব, বয়স ৪০। ১৩ বছর হলো বিবাহিত জীবন। ১ছেলেও ১ মেয়ের জনক।

বিয়ের পর থেকেই তিনি লক্ষ করেন তার স্ত্রী তার বড় দুলাভাইয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখি করে থাকে।
যেমন -
গলা জড়িয়ে বসে থাকে,
নিজ হাত দুলাভাইকে সযত্নে খাইয়ে দেয়
, এক সাথে বিছানায় শুয়ে থাকে
,দুলাভাইয়ের পায়ের উপর পা দিয়ে বসে খেতো,

দুলাভাইয়ের গালে ঠোকনা দেয়,শরীরে চিমটি কাটে ইত্যাদি।
এসব তার মোটেই পছন্দ নয়।
সে স্ত্রীকে এভাবে "পর পুরুষের" সঙ্গে ঘেষাঘেষি না করতে নিষেধ করেন।

কিন্তু স্ত্রী তার কথা মানে না।
তাকে গুরুত্ব দেয় না,তার তেমন যত্ন নেয় না বরং তার সামনেই দুলাভাইয়ের সঙ্গে নষ্টামি করে থাকে।

এ নিয়ে তিনি শ্বশুরকে বলেন কিন্তু তিনি উল্টো তাকে শাসায়।বলে  তুমি কয় টাকা উপার্জন করো যে আমার বড় জামাইয়ের বিরুদ্ধে বলছো( তখন তিনি বেকার ছিল না) এমন ভালো জামাইয়ের বদনাম করছো।

তারা উনাকে বেয়াদব বলেন।

উনি আরো জানতে পারেন যে তার ছোট শালির সঙ্গে ঐ দুলাভাইয়ের শারীরিক সম্পর্ক ও ছিল যা নাকি তার স্ত্রীর সামনেই একজন তাকে বলে

।এতে তিনি আরো জোর দিয়ে স্ত্রীকে ঐ লোকের সঙ্গে মিশতে মানা করেন। তবে তার স্ত্রী তাতে মোটেই কর্নপাত করেনি।

তার ফ্যামিলি ও এগুলো জেনে যায়।তারা ও ঐ লোকের সঙ্গে মিশতে মানা করেন। তাতে ও কোন কাজ হয়নি।

তিনি চাকরি পাওয়ার পর তার স্ত্রীকে আর শ্বশুর বাড়িতে যেতে দেননি। গত ৮ বছর যাবত তার স্ত্রীকে তার বাপের বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না।

শ্বশুড় বাড়ীর লোকদের বলে দিয়েছি আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসে থাকি মেয়েকে দেখতে চাইলে ঐ সময় আসবেন, আমার সাথে যাতে দেখা না হয়।

তার ভাষ্য শ্বশুর বাড়ির কাউকে দেখলে বিশেষ করে শ্বাশুড়িকে দেখলে মনে হয় এদেরকে টুকরো টুকরো করে ফেলি।

সে বলে সে সময় এমন কষ্ট লাগতো মনে হয় সন্তান মারা গেলে ও এমন কষ্ট হতো না।

অথচ এতো দিন পর ও তার মনে ঐ অতীত স্মৃতি বারবার মনে আসে।

বিশেষ করে যখন কোন পুরুষকে দেখে অন্য নারীদের সঙ্গে ফস্টিনস্টি করছে তখন ঐ ব্যাটার(দুলাভাইয়ের) লুচ্চামির কথা  মনে পরে যায়।

আবার যখন কোন নারীকে দেখি তার স্বামীকে আদর,ভালোবাসা দিয়ে সুখী সংসার করছে তখন ও মনে ক্ষেদ জমে, আমি এমন হতভাগা কেন ছিলাম, আমার জীবনে এমন বউ কেন পেলাম না।

এতো দিন পর কেন এসেছেন জিজ্ঞেস করলে বলেন, স্যার এখন আর সহ্য হচ্ছে না।

আগে কষ্ট হতো তবে এখন ঐ কষ্ট নিতে পারি না

।একেকবার মনে হয় সন্তানদের মেরে নিজে আত্মহত্যা করি।

এখন কি সমস্যা জিজ্ঞেস করলে বলে

- যখনই ঐ কথা গুলো মনে পরে
মাথায় চাপ লাগে,
ঝিম ধরে বসে থাকি,
শরীরে ব্যালান্স থাকে না,,
রাগ উঠে
,সামান্য কারনে স্ত্রীর উপর ক্ষেপে যাই,
মনে হয় আত্মহত্যা করি,
অনবরত সিগারেট খেতে থাকি,
অন্যমনস্ক হয়ে যাই যার জন্য মোটর সাইকেল চালানো বন্ধ করে দিয়েছি এক্সিডেন্ট এর ভয়ে।

অবসেশন কিনা বোঝার জন্য জিজ্ঞেস করলাম এ চিন্তা গুলোকে ভুল মনে করেন কিনা।

উত্তরে বলে না।এগুলো আমার নিজ চোখে দেখা জিনিস কিভাবে ভুল মনে করবো।

স্ত্রী কি বলে জানতে চাইলে বলেন,সে এটিকে গুরুত্ব দেয় না এমনকি নিজের অতীতের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও করে না।

তার আকুতি
স্যার স্বপ্নেও দেখি তাদের কুকর্ম,
কিছুতেই ভুলতে পারছি না,
মনে হয় সন্তানদের মেরে নিজে আত্মহত্যা করি।

এই কেইস হিস্ট্রি থেকে কি শিখলাম?

১।আমাদের দেশে অভিভাবকরা মেয়েকে কোন তরুণ যুবকের সঙ্গে মিশতে দেন না এই ভয়ে না জানি কি কুকর্ম করে বসে।

কিন্তু শালি দুলাভাই সম্পর্ককে লাগামহীনভাবে ছেড়ে দেওয়া হয় যেন সব দুলাভাইরা ফেরেশতা।

২। ক্ষমতা, অর্থের আধিপত্য সবখানেই। এমনকি মেয়ের জামাইদের মধ্যে ও এই বৈষম্য করা হয়।

৩। অভিভাবক যদি  কোন পুরুষের  সঙ্গে মাখামাখিকে "নিরাপদ " মনে করে লাইসেন্স দিয়ে দেয় তাহলে তার সুযোগ ঐ চরিত্রবান পুরুষ নিতে কার্পণ্য করবে না।

আমি এমন কেইসও জানি দুলাভাই দ্বারা প্রেগন্যান্ট ও হয়ে গেছে। অবাক হবার বিষয় মা বাবা সেগুলোকে "তেমন কিছু না" বলে হাল্কা করে দেখে।
অনেক সময় মেয়েকে উল্টো শাসায় কেন মুরুব্বি দুলাভাইয়ের নামে বদনাম করছে।

৪। মূল কথাঃ
কোন কষ্টদায়ক তিক্ত অভিজ্ঞতা বা ভয়াবহ স্মৃতি মানুষের মস্তিষ্কে বড় ধরনের "আঘাত" সৃষ্টি করে ( মেন্টাল ট্রমা)।

কারো কারো ক্ষেত্রে সে ট্রমা সারাজীবন তাকে ক্ষত বিক্ষত করে থাকে। সেই দুঃসহ স্মৃতি তার জীবনকে তচনচ করে দেয়।

৫। বিশেষ ঘটনা, যা ঐ স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পারে, ট্রিগার হিসেবে কাজ করে ও ঐ কষ্টদায়ক ঘটনা "জীবন্ত " হয়ে তার মানস জগতে টর্নেডোর মতন আঘাত করে।
সে স্মৃতি এমনকি স্বপ্নের ভিতর ও বারবার হানা দিতে  পারে।

৬। দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে এমন " কাটা" রেখে কখনো  কেউ সুখী হতে পারে না

।তাদের উভয়েরই উচিত ছিল এ "ক্ষত" নিরাময়ে প্রফেশনাল সাহায্য নেওয়া।
দেরীতে হলেও উনি আমার কাছে এসেছেন, তাই সাধুবাদ জানাই।

কিন্তু যারা প্রতিদিন কোন কষ্ট নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তাদের এই কষ্ট বহন করে চললে এক সময় আত্মহত্যা বা অন্যকে হত্যার ঝুঁকি থাকে।

আমরা কি সাবধান হবো না?

No comments:

Post a Comment