Friday, October 5, 2018

আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাঃপর্ব-২

বর্তমানে আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেটি খুবই গতিশীল, যেখানে স্বার্থপরতা,সহিংসতা, আত্মার দারিদ্র্যতা সমাজ জীবনের যেটুকু ভালো ছিল তাও অবলুপ্ত করে দিচ্ছে। এ কারনে আমাদের সেন্টিমেন্ট, চরিত্র ও সহজাত নৈতিক প্রবৃত্তি গুলো ক্ষয় প্রাপ্ত হচ্ছে।

মানব জীবনের  নৈতিক গুনাবলি গুলো আসে এর পিছনের আবেগীয় ক্ষমতা থেকে।

যারা আবেগ তাড়নার স্রোতে ভেসে যান,সহজে আবেগ তাড়িত হন,যারা আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম - তাদের রয়েছে "নৈতিকতার ঘাটতি "।

এই আবেগ তাড়নাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি এবং এটি চরিত্রের মূল ভিত্তি।

একই ভাবে " পরহিতব্রততা"(এলট্রুয়িজম) এর মূল উৎস হচ্ছে " সমব্যথী "(এমপ্যাথি) হওয়ার ক্ষমতা বা অন্যর আবেগ অনুভূতি সঠিক ভাবে পাঠ করতে পারা ও তাদের অবস্থান থেকে তাদের কষ্টকে অনুভব করা।

যদি আমরা অন্যের চাহিদা প্রয়োজন কি তা বুঝতে না পারি, তাদের হতাশা,নৈরাশ্যের কারন বুঝতে না পারি, তাহলে কিভাবে আমরা তাদের যত্ন নেবো,দায়িত্ব নেবো?

আমাদের বর্তমান এই অস্হির , জটিল ও স্বার্থ -কেন্দ্রীক সমাজে দুটি নৈতিক গুন থাকা সময়ের দাবি। সেগুলো হচ্ছে ঃ
১। আত্ম-দমন/আত্ম সংবরন এবং ২।  দয়া,মায়া,করুনা,সমবেদনা ( কমপ্যাশন)

গবেষণায় দেখা গেছে  বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় অধিকতর দুর্দশাগ্রস্ত;
তারা অধিক বিচ্ছিন্ন, একাকী;
অধিক হতাশ, বিষন্ন,;
অধিক ক্রোধান্বিত, উচ্ছৃঙ্খল, অবাধ্য ও দুর্দান্ত;
অধিক নার্ভাস /উদ্বিগ্ন 
এবং আবেগ তাড়িত ও আগ্রাসী হওয়ার জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ন।

তাহলে এর সমাধান কি?

সমাধান নির্ভর করে এদেরকে তরুণ বয়সে আমরা কিভাবে প্রস্তুত করি তার উপর।

বর্তমানে আমরা শিশুদের আবেগীয় শিক্ষা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এর সমাধান হবে স্কুলে সকল শিশুকে কিভাবে হ্রদয় ও আত্মাকে ( হার্ট এন্ড সৌল) একত্র করা যায় সে নিয়ে শিক্ষা দিলে।

এরিস্টটলের দার্শনিক জিজ্ঞাসা ছিল সদগুন(ভার্চু),চরিত্র ও ভালত্ব  নিয়ে।

তার চ্যালেঞ্জ ছিল বুদ্ধি দিয়ে আমাদের আবেগীয় জীবনকে ম্যানেজ করা।
আমাদের তীব্র অনুভূতি, প্রবল অনুরাগ(প্যাশন) যদি যথেষ্ট পরিশীলিত,অনুশীলন/চর্চা করা হয়, তখন সেটি প্রজ্ঞায় রূপান্তরিত হয়।

এই প্রজ্ঞা আমাদের চিন্তাকে,মূল্যবোধকে ও আমাদের অস্তিত্বকে গাইড করে।
তবে এগুলো সহজে ভেস্তে যেতে পারে এবং এই ভেস্তে যাওয়া যখন তখন হতে পারে।

এরিস্টটলের মতে  সমস্যা আবেগের মধ্যে নয়,বরং আবেগের "যথার্থতা/যথোচিত হওয়া " এবং আবেগ প্রকাশের ধরনের উপর নির্ভর করে

।প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আমরা "বুদ্ধিকে" আবেগের কাছে আনতে পারি, 
কিভাবে "ভদ্রতা" (সিভিলিটি) কে জন পথে
ও কেয়ারিং কে সমাজ জীবনে আনতে পারি।

যথোচিত আবেগ বলতে কি বোঝায়?

এরিস্টটলের সে বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করুন ঃ

" যে কেউ রেগে যেতে পারে -(এবং)  এটি সহজ।

কিন্ত সঠিক মানুষের সঙ্গে,
সঠিক মাত্রায়,
সঠিক সময়ে,
সঠিক উদ্দেশ্যে
এবং সঠিক পদ্ধতিতে রাগা-
(মোটেই)  সহজ কাজ নয় "।

(৩য় পর্ব-আসছে)

No comments:

Post a Comment