আসাদ,বয়স ২৬। ঢাকা ভার্সিটি থেকে বিবিএ ও এমবিএ করে ঢাকা ব্যাঙ্কে অফিসার পদে চাকরী পান।কিন্তু জয়েন করার দিনই সিনিয়ররা বলেন তোমাদের অনেক পাবলিক ইন্টারএকশন করতে হবে,টার্গেট পূরন করতে হবে,ব্যাঙ্কের স্বার্থ দেখতে হবে।
শুধু তাই নয়,তারা আরো জানায় ৫ বছর চাকরি পূর্ন না করে চাকরী ছাড়লে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বা ফোর্সড লোন নিতে হবে।
আসাদ বলে - স্যার আমার আগ থেকেই পাবলিক ইন্টারএকশনে সমস্যা ছিল ।নতুন পরিবেশ,নতুন মানুষ হলে অস্বস্তি লাগতো,ভয় পেতাম।
আমার মনে ভয় ঢুকে যায় যে আমি ইন্টারএকশন করতে পারবো না- ফলে আমাকে এক সময় চাকরি ছাড়তে হবে।সে ক্ষেত্রে আমাকে ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
তারচেয়ে এখনি চাকরি ছেড়ে দেওয়া ভালো।
সে পরিবারে তার এই অপারগতার কথা জানায়।তারা বলে যদি একান্তই না পারো তাহলে আর কি করা।
পরদিন অফিসে গিয়ে শুনে ট্রেনিং এর পর তাকে অন্যত্র পোস্টিং দেওয়া হবে।সে বলে স্যার এতে আমার ভয় আতঙ্কে রূপ নেয়।
আমি তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে চাকরি থেকে রেজিগনেশন দিয়ে বাসায় চলে আসি।
বাসায় এসে মন খারাপ হয়,এমন চাকরি কি আবার সহজে পাবো? গিল্টি ফিলিং হয় যে সবার কাছে মা- বাবার মাথা নীচু করে দিলাম।
এসব কারনে বাবা আপনার কাছে নিয়ে আসে।বাবাও আপনার পেশেন্ট ছিলেন ও ভালো হয়ে গিয়েছিলেন।
ইতিহাস নিয়ে জানা গেল ছোট কাল থেকে সে ভদ্র, নিরীহ,ভীতু ও লাজুক ছিল।নতুন পরিবেশ বা মানুষ হলে তার ভয় লাগতো।
তারা আজিমপুর থেকে বোনের পড়াশোনার কারনে কল্যানপুরে বাসা বদল করে।একারনে ৬ মাস সে ঘর থেকে বের হয়নি।বোনের উপর খেপা ছিল,কেননা তার স্কুলের সুবিধার জন্য বাসা বদল করতে হয়েছিল।
আসাদ আরো বলে স্যার যদি ঢাকা থেকে চিটাগাং গিয়ে থাকতে হয় আমি এক প্যাকেট বিস্কুট কিনতে প্রয়োজনে ট্রেনে ঢাকায় এসে তা কিনে নিয়ে যাবো,তবুও চিটাগাং এ সে বিস্কুট কিনতে কোন দোকানে যাব না।
সে আরো জানায় তার রিএকটিভ আর্থারাইটিস হলে হাটতে পারতো না,ভার্সিটি যেতে পারতো না।তখন তার কোন বন্ধু তাকে দেখতে আসেনি।
এমনকি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে পড়াশোনার ব্যাপার সাহায্য করতে বললেও সে সাহায্য করেনি।ছোটকালেও বন্ধুদের উপেক্ষা পেয়ে এসেছে।
এসব কারনে তার মধ্যে হীনমন্যতাবোধের সৃষ্টি হয়।মনে হতো কেউ আমার পক্ষে নেই,আমি পরিত্যক্ত মানুষ।
সে আরো জানায় যে, মানুষ তাকে নিয়ে কি বলে,কি ভাবে এরকম ভাবনা তার সব সময় থাকতো।বিশেষ করে নতুনদের সঙ্গে কি কথা বলবো,কেমন করে বলবো এ নিয়ে সংশয়,ভয় কাজ করতো।
তাই চাকরি পাওয়ার পর ভয় ঢুকে যায় অন্যদের সঙ্গে ইন্টারএকশন করতে পারবো না,ফলে টার্গেট ফিলআপ করতে পারবো না।
সে ক্ষেত্রে চাকরি ছাড়তে তো হবেই বরং ৬ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
এই ভয় ও আতঙ্কে চাকরি ছেড়ে দেই।
কিন্তু এখন গিল্ট ফিলিং হয় মা বাবার মুখ কালো করে দিলাম,সমাজে ছেলেকে নিয়ে তাদের গর্ব লুটিয়ে দিলাম।
তার বাবাকে বললাম,আপনার ছেলের আগ থেকেই মানসিক সমস্যা ছিল ( নতুন জায়গা,বাসা বদল হলে) তাকে তখন থেকে মানসিক চিকিৎসা করাননি কেন? আপনি নিজে আমার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে গেলেন, তবুও ছেলেকে আনেননি কেন?
বাবা বলেন এতটুকু গুরুতর সেটি বুঝতে পারিনি।
এ কেইস থেকে শিক্ষনীয়:
১। মানসিক সমস্যাকে অবহেলা করে চিকিৎসা না করালে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে
(যেখানে বর্তমানে চাকরি পাওয়া কঠিন,সেখানে অতি উচ্চ পদের লোভনীয় চাকরি পেয়েও তা হারাতে হলো)
২। ভদ্,নম্র, লাজুক,মেধাবী,দায়িত্ববান, বিবেকবান মানুষদের মানসিক সমস্যা বেশি হয়
,উগ্র,বিবেকহীন, কঠিন,নিষ্ঠুর মানুষদের তুলনায়।
আমরা সাইকিয়াট্রির ভাষায় বলি
ক) টেন্ডার মাইন্ডডেড বা নরম মনের মানুষ বনাম
খ)
টাফ মাইন্ডডেড বা কঠিন মনের মানুষ।
নরম,কোমল, মেধাবী ভালো মানুষ গুলোকে সমাজ ক্রমাগত হারাচ্ছে
,দানবীয়, দাপুটে,আগ্রাসী তথাকথিত সামাজিক দক্ষতাসম্পন্ন
(মানবিক সমাজের সামাজিক দক্ষতা আর অমানবিক, ক্ষমতা নির্ভর সমাজের সামাজিক দক্ষতার মানদণ্ড পুরো বিপরীত হবে)
কৌশলী, চতুর,ধান্ধাবাজ মানুষরা সমাজে প্রাধান্য পাচ্ছে বলে।
আসাদ ও তার বাবা দুজনেই সজ্জন,ভদ্র, নরম ও মেধাবী।
৩। ভয়,ভীতি,লজ্জা, হীনমন্যতাবোধ কাটিয়ে উঠতে না পারলে শুধু মেধা দিয়ে জীবনে সফল হওয়া যায় না- আসাদের ঘটনা তার ভালো উদাহরন
৪। পরিবার,বন্ধু,সমাজ যদি অবহেলা দেখায়,বিপদে পাশে না দাড়ায়-
তাহলে আত্ম সম্মান বোধ দুর্বল হয়,আত্মবিশ্বাস কমে যায়,সহজে কাবু হয়ে পড়ে।আসাদের ক্ষেত্রেও আমরা তেমনটি দেখতে পারছি।
No comments:
Post a Comment