কাহিনী সংক্ষেপ :
চেম্বারে ঢুকেই দেখি রোগীনীকে রোগী পরীক্ষার টেবিলে শুয়ে রাখা হয়েছে।ওড়না দিয়ে তিনি মুখ ঢেকে রেখেছেন।কেন মুখ ঢেকে রেখেছেন জানতে চাইলে বলেন,চারদিকে পাপিষ্ঠ পুরুষ ভরা এদের দেখতে চাই না।
তার স্বামীর কাছ থেকে ও তার কাছ থেকে
রোগের ইতিহাস যা জানলাম:
তাদের বিবাহিত জীবন ১৪ বছরের।১ মেয়ে ও ১ ছেলে।স্বামী ১ ছেলে ও ১ মেয়ে বলাতে স্ত্রী প্রতিবাদ করে বলেন, ১ মেয়ে,১ ছেলে( তিনি মেয়ে কথাটি আগে বলতে চান। তাছাড়া মেয়ে বড়)।
প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ার পর স্বামী আক্ষেপ করে বলেন,সবার হয় ছেলে সন্তান আর আমার হলো মেয়ে সন্তান।
রোগিনী বলেন- তার এই কথা এখনো আমার কানে বাজে।
এছাড়া শ্বশুর বাড়ীর অন্যরা ও এ নিয়ে তার বাপকে নিয়ে খোটা দিতো-.... ওর মেয়েতো, জানি মেয়ে হবে।পরে ১ ছেলে হয়।সবশেষে এবারও তিনি গর্ভবতী হলে তার মনে ভয়,চিন্তা ঢুকে এবারো মেয়ে হবে না তো?
৫ মাসে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান,ছেলে না মেয়ে।ডাক্তার বলে আপনি কি চান? তিনি বলেন- ছেলে
তখন ডাক্তার বলে বুঝতে পারছিনা, পরে জানা যাবে।তিনি বলেন, কিন্তু এতেই আমার সন্দেহ হয় মেয়ে হবে।অন্য জায়গায় গিয়ে কনফার্ম হই মেয়ে হবে।
এরপর থেকে আমার মাথা নষ্ট।
একবার চিন্তা করি মেয়ে হলেও রেখে দেবো,স্বামীর সংসার না করতে পারলে আলাদা থাকবো।
আবার স্বামি, সংসারের কথাও ভাবি- ভাবতেই থাকি।কাউকে বা স্বামীকে কিছু বলি না ভয়ে
।একসময় সিদ্ধান্ত নেই মেয়েকে নিজেই মেরে ফেলবো- এবরশন করাবো।
এ ব্যাপারটি শুধু বড় মেয়েকে বলি।এর মাঝে বড় মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করায় সবাই তাকে নিন্দা করে।মেয়ে কাদে ও বলে আমি মরে যাবো,বাচতে চাই না।
অবশেষে এবরশন করে নিজ হাতে ছোট মেয়েকে মেরে ফেললাম।
এরপর হাহাকার -কি করলাম,কি পাপ করলাম
,এ পাপের ক্ষমা হবে না।
ক্ষিধা নেই,
ঘুম নেই।
কথা বলতে ইচ্ছে করে না,
কথা বললেই কুকথা বের হবে,
চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না,
চারদিকে নষ্ট পুরষ।
টিভিতে কেবল দেখায় ছোট ছোট সুন্দর সুন্দর বাচ্চা মেয়েগুলোকে নরপিশাচরা ধর্ষন করে মেরে ফেলছে।
ইচ্ছে করে এদেরকে গলা টিপে মেরে ফেলি
।মাদ্রাসার হুজুর থেকে দারোয়ান সব বদমাশ
।তাই চোখ খুলি না,সব পাষন্ড পুরুষ দেখতে হবে।
টিভিতে অহরহ শিশু বাচ্চাদের ধর্ষনের খবর দেখে বিরক্ত হয়ে টিভি ভেঙ্গে ফেলি, যাতে এসব খবর শুনতে না হয়।
স্বামী বলে কয়েকদিন ধরে উৎপাত বেড়ে গেছে।দরজায় পিটায়,আমাকে বলে তোকে পিটায়ে লাল করে দেবো,
মেয়েকে হুকুম দিয়ে মাদ্রাসার বই পুড়িয়ে দেয়,
কারন মাদ্রাসার হুজুরাও ভালো না,তারাও ধর্ষন করে।
জ্বীনে ধরেছে মনে করে হুজুরের কাছে নেই।তিনি বলেন ৪ টি জ্বীনে ধরেছে ও সবগুলো হিন্দু
।তিনি দোয়া,তাবিজ দেয়।কিন্তু পরদিন উৎপাত আরো বেড়ে যায়।
তখন এক হুজুর বলে সাইকিয়াট্রস্ট দেখান,আত্মীয়রাও তেমন বলে।তাই আপনার কাছে নিয়ে এসেছি
কি বার্তা দেয় এ কাহিনী?
১। মানসিক রোগের অন্যতম কারন সমাজ
২। পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ শুধু ছেলে সন্তান চায়।তার খেসারত দিতে হয় নারীদের- পাগল হয়ে বা আত্মহত্যা করে
৩।বিভৎস্য রকমের ধর্ষনের "তুফান" চলছে দেশে।
বিশেষ করে শিশু ধর্ষন এবং নির্মম ভাবে তাদের হত্যা করা।
এসব দেখে শুনে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক মানুষ -
যেমনটি হয়েছে আমার এই রোগীনি।
সাধারন অসুস্থ নয়,তিনি এর জন্য টিভি ভেঙ্গে ফেলেছেন,মাদ্রাসা র বই পুড়িয়ে দিয়েছেন,চোখ বন্ধ রাখছেন পাপী, পাষন্ড পুরুষ যাতে দেখতে না হয়
৪। কোন এক কারনে মানসিক সমস্যা শুরু হলেও অন্যান্য সমসাময়িক সামাজিক, মানসিক সংঘাত, দন্ধগুলো সে রোগকে আরো জটিল ও কঠিন করে তোলে।এ কাহিনী তার প্রমাণ
৫। সবার হয় ছেলে সন্তান, আমার কেন মেয়ে-
এরকম অমানবিক, নিষ্ঠুর আফসোস কবে সমাজ থেকে বিতাড়িত হবে?
৬।ধর্ষন,হত্যা- এসব জগন্য,পাপিষ্ঠ কর্মের কঠোর শাস্তি কখন সমাজে দৃশ্যমান হবে?
No comments:
Post a Comment