Monday, April 30, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস:৪১

১। নিজের জন্য কারো কাছে কৈফিয়ত বা সাফাই গাইতে যাবেন না
কেননা যারা আপনাকে পছন্দ করে তাদের এটি প্রয়োজন নেই
আর যারা আপনাকে পছন্দ করে না,তারা এটি বিশ্বাস করবে না
২। নিজের দুংখ- কষ্টের কথা জনে জনে বলে বেড়াবেন না
কেননা ৫০% লোকের আপনাকে নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই
আর বাকি ৫০% বরং এনিয়ে হাসি- তামাশা করবে

Thursday, April 26, 2018

রোগ কাহিনী -২৮: যৌন হেনস্হা শুধু মেয়েরা হয় না,ছেলেরাও হয়

কাহিনী সংক্ষেপ : ৭ বছরের অর্থকে নিয়ে আসে মা- বাবা দুজনেই।সে ক্লাশ টুতে পড়ে।দেড়- দুই বছর পূর্বে গ্রামে বেড়াতে গেলে তার চাচাতো ভাই(বয়স-১৫) তার সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক করে

।এতোদিন এ নিয়ে সে কিছু বলেনি।হঠাৎ সপ্তাহ খানেক আগে ঐ ছেলে বিয়ে খাওয়া উপলক্ষে তাদের বাসায় আসে।

রাতে অর্থ কান্নাকাটি করে।কেন কাঁদছে জানতে চাইলে বলে সে আমার সঙ্গে এসব নোংরা কাজ করেছে।

বাবা বলে, ঠিক আছে তাকে পরদিন বাসা থেকে বের করে দেবো।কিন্তু অর্থ মানে না এরাতেই ওকে বের করে দাও।কোনভাবে রাত পেরোলে ঐ ছেলেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু তার কান্না থামে না।বলে আমার বার বার ঐ কথা  মনে পড়ে।

সে এখন অন্য ছেলেদের নামেও বদনাম করে যে তারাও তার সঙ্গে নোংরা কাজ করেছে।গনহারে অভিযোগ করতে থাকে।
কোন বাচ্চা মেয়েকেও সে পাশে বসতে দেয় না।চিৎকার করে,বলে তাকে চলে যেতে বলো।রাতে বেশি কাদে,খায় না,স্কুলেও যায় না

এদিকে মা- বাবার মধ্যে বনিবনা হয় না,তাই মা বলতো আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও,ওকে ও ( ছেলেকে) নিয়ে যাও আর সহ্য হয় না।

তাই এখন অর্থ কাদে বোধ হয় আম্মু মরে যাবে,আমি আম্মু কোথায় পাবো? সবাই মরে কেন? আমি মরবো কবে? মরে গেলে কি আবার জন্ম হবে?

সে বলতে থাকে পৃথিবীর কেউ ভালো না।

বাবা ঐ বিয়ের ভিডিও দেখালে সেখানে ঐ ছেলের ছবি দেখে আবার চিৎকার,আরো কান্না

।সে বলে আমার বার বার ঐ নোংরা কথাগুলো মনে পড়ে( দিনে ৮-৯ বার)।

মাকে জড়িয়ে বলে আম্মু তুমি মরে যেও না,চলে যেওনা,আমি কার কাছে থাকবো?

কি বার্তা দেয় এই কেস হিস্ট্রি?

১। শুধু মেয়েরা নয়,ছেলেরাও এ ধরনের নোংরা কাজের শিকার হন

২।ছেলে শিশু,মেয়ে শিশু সবাইকে নিরাপদ রাখতে অভিভাবকদের আরো সচেতন ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে

৩। তথাকথিত আত্মীয়,ঘনিষ্ঠ জন মনে করে বেখেয়াল হলে চলবে না

( দুলাভাই -শালি একটু মজা করতে পারে- এ জাতীয় কুসংস্কৃতি বদলাতে হবে)

৪। শিশুরা ভয়ে বা লজ্জায় এগুলো প্রকাশ করে না( যদি না অর্থের মতন মানসিক ভারসাম্য হারায়)।

তাই অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে কিছু শারিরীক ও মানসিক লক্ষণের দিকে যাতে প্রাথমিক ভাবেই বুঝা যাবে সে এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিনা?

৫। এরকম ট্রমাটাইজড শিশুদের অবশ্যই মনোচিকিৎসক দ্বারা কাউন্সিলিং করিয়ে নেবেন

।তানাহলে পরবর্তীতে বড় ধরনের মানসিক সমস্যার সম্ভাবনা থাকে

৬। স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক খারাপ বলে শিশুর কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শিশুকে আবেগীয়ভাবে দুর্বল করবেন না



সে

Friday, April 20, 2018

সাইকোলজিক্যাল টিপস:৪০

আপনার মন ডাস্টবিন নয় যে

সেখানে হিংসা,বিদ্বেষ, ঘৃনা,প্রতিহিংসা, ক্রোধের আবর্জনা জমে থাকবে

আপনার মন বেহেস্তী বাগান

যেখানে থাকবে- হাসি,আনন্দ, ,দয়া,করুনা,মমত্ব,প্রেম,ভালোবাসা

Monday, April 16, 2018

মনোজিজ্ঞাসায় প্রফেসর তাজুল-১১:যখন পরিবারে ভালো সময় তখনই হুট করে মনে কষ্ট, ডিপ্রেশন জেগে উঠে"

উত্তর :
তোমার সমস্যাটি অনেকেরই মনের কথা।খারাপ বা কটু কথা শুনলে মনে কষ্ট পাওয়া,চোট পাওয়া অনেকেরই হয়ে থাকে

এসব হয় মনে গভীর হীনমন্যতাবোধ থাকলে,সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার ( সোশাল এপ্রোভাল) চাহিদা বেশী থাকলে এবং আবেগীয়ভাবে অতি সংবেদনশীল হওয়ার কারনে।

আর রাতে এসব কুভাবনা বেশী হয়,কেননা তখন আমার বাইরের যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকি,নিজের সঙ্গে একা সম্মুখীন হই।

তাই হীনমন্যতা কাটাতে হবে ও সামাজিক গ্রহনযোগ্যতার অতিরিক্ত চাহিদা কমিয়ে আনতে হবে।

আমাদের " মন ও মানুষ " ধারাবাহিক ভিডিও সিরিজের প্রথম পরীক্ষামূলক ভিডিওতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।তুমি ও অন্য যারা এ ধরনের সমস্যায় ভুগছো তারা ঐ ভিডিওটি দেখতে পারো।

একই সঙ্গে আমার " মন ও মানুষ " বইটি পড়তে পারো।

তোমার ২য় গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে যখন একটু ভালো সময় আসে তখন আনন্দ করার বদলে মনে " হুট করে"  কষ্ট, ডিপ্রেশন জেগে উঠে।

এগুলো হচ্ছে তোমার অতি কঠোর আত্ম- সমালোচনা ( সেল্ফ ক্রিটিক্যাল) প্রবন স্বভাবের জন্য।

আমরা মনে করি আমরা নিজকে অনেক ভালোবাসি।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা নিজদের খুব কমই ভালোবাসি।

বরং নিজকে কঠোর সমালোচনা করি,
নিজকে আসামির কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রাখি,
নিজকে ককরুনা করি,
এমনকি  ক্ষেত্র বিশেষে নিজকে ঘৃনা ও অপছন্দ করি।

যাকে আমরা ভালোবাসি (নিজ সন্তান) 

আমরা তার শত দোষ,ক্রটি থাকা সত্বেও

তার ভালো দিকগুলো বড় করে দেখি,
মন্দ কিছু থাকলেও তার সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে

তার ভালোত্বের প্রশংসা করি।

নিজকে ভালোবাসলেও তেমটি হওয়ার কথা।

নিজের অনেক দুর্বলতা,ক্রটি ও মন্দ দিক থাকলেও

সেগুলো বড় করে না দেখে
নিজের ভালো ও উজ্জ্বল দিকগুলোকে বড় করে দেখার কথা।

নিজের আনন্দ, সুখ,গৌরব,সাফল্য গাথা বেশি মনে পড়ার কথা।

কিন্তু যারা অতিরিক্ত আত্ম সমালোচনাপূর্ন ( সেল্ফ ক্রিটিক্যাল),তারা নিজকে কম ভালোবাসে,

কম শ্রদ্ধা করে( সেল্ফ রেসপেক্ট)।

একারনে তাদের মন- ব্রেইনে সব সময়,

এমনকি আনন্দ ও সফলতার সময়েও

" হুট করে" উকি দেয় ব্যর্থতার কথা,বেদনার কথা,কষ্টের কথা।

তুমি নিজকে ভালোবাসতে শেখো,

নিজে যা ও যেমন তেমনটিকে পূর্নভাবে " মেনে নিতে "( সেল্ফ একসেপ্ট)শেখো

, নিজের ব্যর্থতা, মন্দ দিকগুলোকে বড়  করে না দেখে

নিজের সফলতা,আনন্দ, সুখ ও গৌরবকে বড় করে দেখতে শেখো।

দেখবে তোমার মন- মনন

ইতিবাচক, সুখদায়ক ও আনন্দদায়ক ভাবনা,  চিন্তায় ভরপুর হয়ে উঠছে।

আমাদের শ্লোগানটি মনে রাখবে- be positive be happy

Thursday, April 5, 2018

মেডিকেলের পরীক্ষা পদ্ধতি: একটি ক্ষুদ্র মূল্যায়ন

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের এক ছাত্র ১১ বার ফেল করায়, হতাশার কারনে আত্মহত্যা  করার বিষয়ে, সামাজিক গন মাধ্যমে কয়েকটি পোস্ট ও তাতে অসংখ্য ডাক্তারের মন্তব্য অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।মেডিকেলের একজন সিনিয়র শিক্ষক ও সাইকিয়াট্রিস্ট হিসেবে  এ   বিষয়ে কিছু বলা কর্তব্য মনে করছি।

মেডিকেল শিক্ষা, তার মান, অধগতি ও অগ্রগতি নিয়ে বিশ্লেষণাত্বক অনেক কিছু বলার ছিল,
তবে এবার বৃহৎ ক্যাম্পাসে বক্তব্য না দিয়ে সংক্ষেপে কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করবো।

মোটা দাগে এগুলো কি অস্বীকার করা যাবে যে

১। মেডিকেল শিক্ষার গুনগত মান ক্রমশ কমছে?

২। ব্যক্তি স্বার্থে,গোষ্ঠী স্বার্থে নিছক বানিজ্যিক কারনে যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ খোলা হয়েছে,হচ্ছে?
এবং

৩। বিভিন্ন পোস্ট  গ্রাজুয়েট ডিগ্রী বিকেন্দ্রীকরণের নামে  এমন স্হানে ও কি নেওয়া হয়নি যেখানে এমবিবিএস পড়ানোর ও মতন লোকবল নেই?

৪। ভর্তি থেকে পাশ করা,পরে পদ ও বদলী,প্রমোশন,শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ,পরে কোন শিক্ষক পরীক্ষক হবে- ইত্যাদি প্রায় সব ব্যাপারে দলীয়,গোষ্ঠী গত বিবেচনা কি ক্রমশ বাড়েনি?

এসবের সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে মেডিকেল পরীক্ষা পদ্ধতিতে অরগানাইজড গোষ্ঠী  তন্ত্রের সৃষ্টি

আমার বিবেচনায় শিক্ষকরা হচ্ছেন মা- বাবার মতন।

তারা সন্তানের ন্যায় ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার সবরকমের চেষ্টা  ও যত্ম নেবেন

।কোনভাবেই পড়ালেখায় কোন গাফিলতি মেনে নেবেন না।আমরা কত জন সেভাবে তাদের তত্বাবধান ও প্রয়োজনীয় শাসনে রাখি?

তবে সেই শিক্ষকরাই যখন" পরীক্ষক" হন তারা হবেন"  বিচারকদের" মতন,যারা পরীক্ষা নেবেন  ন্যায় বিচারকের মতন।

কিছু  অনৈতিক,বিবেকহীন মা- বাবা যেমন প্রয়োজনে নিজেরা টাকা দিয়ে ফাস করা প্রশ্ন কিনে সন্তানদের হাতে তুলে দেন জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য, আমরা শিক্ষকরাও কি আমার ছাত্র, আমার ইনস্টিটিউটের ছাত্র বলে তাদেরকে " বিশেষ বিবেচনায়" পাশ করিয়ে দেওয়ার অনৈতিক পন্হা গ্রহন করতে পারি?
পরীক্ষকরা বিচার করবে( পরীক্ষা নিবে) অন্ধভাবে- কে আমার ছাত্র,আমার পক্ষের,আমার ফলোয়ার,আমার দলের/ গোষ্ঠীর,আমাকে তোয়াজ/ তেল দিয়ে চলে- ইত্যাদি বিবেচনা না করে।

কিন্তু  বর্তমানে অনেক ছাত্র ছাত্রী ( সবাই না)যারা পরীক্ষক হন শুধু তাদের ক্লাশ করেন,তাদের রাউন্ডে ঘুরেন। হাইলি একাডেমীক,গবেষক, প্রাজ্ঞ শিক্ষক যদি পরীক্ষক না হন, তাহলে তারা তাদের এড়িয়ে চলেন,তাদের ক্লাশে হাজির হওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না।

এরকম হওয়ার কারন,কোন কোন প্রতিষ্ঠানে( সব জায়গায় নয়) মেডিকেল পরীক্ষা পদ্ধতি  ২-৩ জনের কৌশলী ব্যবস্হাপনার অধীনে চলে গেছে।কারা পরীক্ষক হবে,খাতা দেখবে,প্রাকটিকেল নেবে,ভাইবা নেবে এবং এসবের পারমুটেশন,কম্বিনেশন কেমন হবে- ইত্যাদি পদ্ধতি ঐ ২-৩ জনের হাতে জিম্মি। ফলে অন্য পরীক্ষকরা পাশ করালেও তারা ফেল করিয়ে দিতে পারে, আবার কাউকে জেনিউন ফেল করালেও তাদের তৈরি সিস্টেমের কারনে নিশ্চিত পাশ করিয়ে দিতে পারে।
এই যে কারো কাছে নিশ্চিত " পাশ" বা ফেল এর চাবিকাঠি রয়েছে- এ জন্য সকল ছাত্র ছাত্রী  তাদের অনুগত,তাঁবেদারি করাকে কর্তব্য জ্ঞান করে।
বাংলাদেশে এফসিপিএস পরীক্ষা এখনো অনেক উন্নত মান ধরে রেখেছে।তবে এতে পাশের হার ৩%-৫% হয় বলে প্রশ্ন উঠেছে এই পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে কোন ইনবিল্ড ক্রটি রয়েছে কিনা বা শিক্ষকদের দৃষ্টি ভঙ্গিতে কাঠিন্য বা অবিবেচনা কাজ করছে কিনা।শুনেছি বিসিপিএস এ সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে ও আরো প্রাগমেটিক,বিজ্ঞান সম্মত,ক্রটিমুক্ত পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছে।কিন্তু পরীক্ষক নির্বাচনে এখনো পদ্ধতি গত এবং বুর্জোয়া আধিপত্যের অভিযোগ রয়েছে। এখনো বিশেষ কিছু ব্যক্তিদের চয়েজ ও পরামর্শে পরীক্ষক প্যানেল তৈরি করা হয়।উনারা অনেকেই গুনী ও সিনিয়র।কিন্তু এরকম ব্যবস্হাপনায় নিজস্ব পছন্দ, অনুগত ব্যক্তিদের বার বার নিয়োগ দেওয়ার  প্রবনতা তৈরি হতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে তা হচ্ছে ও। তাছাড়া সেখানে এমন কিছু নিয়ম,রীতি রয়েছে যেগুলোর কারনে অনেক যোগ্য অধ্যাপককে পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না।তাই যোগ্য শিক্ষকদের পরীক্ষক করার জন্য ঐসব আইনে পরিবর্তন  আনা দরকার এবং পরীক্ষক হওয়ার যোগ্য  সকল শ্রেনীর শিক্ষকদের উন্মুক্ত আলোচনা ও মতামতের মাধ্যমে পরীক্ষক প্যানেল তৈরি করলে এর একটি গ্রহনযোগ্য ও গনতান্ত্রিক সমাধান হতে পারে।
এম ডি,এম এস পদ্ধতি নতুন হলেও দুরুত ডাক্তার ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে  । একটি কারন এখানে মাসিক হারে কিছু টাকা দেওয়া হয় এবং কিছু বিভাগে( সব নয়) এ ধারনা তৈরি করা হয়েছে যে একবার ভর্তি হতে পারলে পাশ সুনিশ্চিত।   অনেকের অভিযোগ এখানকার ভর্তি সিস্টেমে  অনৈতিক প্রভাবে  অনেক ছাত্র ছাত্রীকে ভর্তি করিয়ে নেওয়া হয়( তবে সব নয়)।
এখানে আরেকটি সমস্যা হচ্ছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কোর্স পরিচালনার জন্য একটি পরিষদ তৈরি করা হয়।এই পরিচালনা পর্ষদে কারা থাকবেন ও তারা নিজ প্রতিষ্ঠানে কাদের পরীক্ষক নিয়োগ করবে- এই উভয় ক্ষেত্রে রয়েছে গোষ্ঠী গত বিবেচনার সুযোগ এবং কিছু ক্ষেত্রে তেমন অভিযোগ উঠছে।কিন্তু প্রতিকারের জন্য  উচ্চ পর্যায়ে এরকম অভিযোগ নিয়ে যাওয়া কঠিন।এমন কমিটিও গঠিত হয়েছে যেখানে সিনিয়র, একাডেমীক,যোগ্য প্রফেসরদের বাদ দিয়ে খুবই জুনিয়র মাত্র ছাত্রত্ব কেটেছে তেমন কাউকে কমিটির উচ্চতর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই তেমন কমিটি সিনিয়র, উপযুক্ত শিক্ষকদের নানান ওছিলায় পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রেখে পছন্দনীয় জুনিয়রদের দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন।এমনকি শ্রেষ্ঠা বিদ্যা পিঠ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাবজেক্টে ও বছরের পর বছর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে অনেক সিনিয়র, যোগ্য শিক্ষক বাদ রেখে,নিজেদের গুটিকয়েক " বাছাইকৃত" শিক্ষক দিয়ে। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দিয়ে যাচাই করলে এসবের সত্যতা নিশ্চিত করা যাবে।

যারা বার বার ফেল করে আমি নির্দ্বিধায় বলবো এরা হচ্ছে বর্তমান সমাজে সবচেয়ে দুর্বল শ্রেনীর লোক।এরা ঐ গরিষ্ঠ চতুর ছাত্র ছাত্রীদের মতন ঐ পরীক্ষায় "নিশ্চিত পাশ" করে দেওয়া শক্তিকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মতন চালাক- চতুর নয়,বা কোন দল,গোষ্ঠীর অনুগত নয়, এমনকি ব্যক্তিগত মাস্তানি করার মতন সাহসী (?) ও নয়।

এক কথায় তারা দুর্বলতম, তাই কোন পক্ষই তাদের কথা বিবেচনায় রাখে না।

এর মানে এই নয় যে ফেল করাদেরকে পাশ করিয়ে দিতে হবে। কিন্তু

১১ বার ফেল করলে সে বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান কি এ বিষয়টি এড়িয়ে থাকতে পারে? ১ বা২ বার ফেল করা আর প্রতিবার ফেল করাকে সমদৃষ্টিতে দেখার কি সুযোগ আছে?
বার বার ফেল করার কারন,তাদের দুর্বলতা গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে বসা কি জরুরি  নয়?

তাদের দুর্বল দিক কাটানোর জন্য  একাডেমীক ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া কি অত্যাবশ্যক নয়?
তাই আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব:

১। যারা বার বার ফেল করবে প্রতিটি বিভাগ/ প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য একটি "একাডেমীক সেল" তৈরি করবে,যারা তাদের দুর্বলতা গুলো চিন্নিত করবে ও সে সব কাটিয়ে উঠার  জন্য একাডেমীক কার্যক্রম গ্রহন করবে।

২। প্রতিটি সাইকিয়াট্রি বিভাগে নিজ প্রতিষ্ঠানের ফেল করা ছাত্র সহ,মানসিক সমস্যা, হতাশা,বিষন্নতায় ভোগা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য  আলাদা " বিশেষ সেবা" দানের জন্য একটি করে " টিম" গঠন করবে

আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি,"নিশ্চিত পাশের" বদৌলতে যে সব অযোগ্যরা অনায়াসে পাশ করে বের হয়ে যাচ্ছে, তাদের তুলনায় ফেল করা ছাত্ররা,বিশেষ কার্যক্রমে উপযুক্ত হয়ে পাশ করে বের হলে তারা অধিকতর মানবিক ও দক্ষ ডাক্তার হয়ে উঠবে

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম
মনোরেোগ বিশেষজ্ঞ
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি  এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
ই- মেইল:drtazul84@gmail.com
phone :01715112900

Wednesday, April 4, 2018

রোগ কাহিনী -২৭: টিভিতে ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশু ধর্ষনের নারকীয় সংবাদ দেখতে হয়,তাই টিভি ভেঙ্গে ফেলেছি ; বড় মেয়ে জন্মের পর স্বামী বলে সবার হয় ছেলে,আমার কেন মেয়ে হলো- তাই এবার পেটে মেয়ে সন্তান আসাতে এবরশন করে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই

কাহিনী সংক্ষেপ :
চেম্বারে ঢুকেই দেখি রোগীনীকে রোগী পরীক্ষার টেবিলে শুয়ে রাখা হয়েছে।ওড়না  দিয়ে তিনি মুখ ঢেকে রেখেছেন।কেন মুখ ঢেকে রেখেছেন জানতে চাইলে বলেন,চারদিকে পাপিষ্ঠ পুরুষ ভরা এদের দেখতে চাই না।

তার স্বামীর কাছ থেকে ও তার কাছ থেকে
রোগের ইতিহাস যা জানলাম:

তাদের বিবাহিত জীবন ১৪ বছরের।১ মেয়ে ও ১ ছেলে।স্বামী ১ ছেলে ও ১ মেয়ে বলাতে স্ত্রী প্রতিবাদ করে বলেন, ১ মেয়ে,১ ছেলে( তিনি মেয়ে কথাটি আগে বলতে চান। তাছাড়া মেয়ে বড়)।

প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ার পর স্বামী আক্ষেপ করে বলেন,সবার হয় ছেলে সন্তান আর আমার হলো মেয়ে সন্তান।

রোগিনী বলেন- তার এই কথা এখনো আমার কানে বাজে।

এছাড়া শ্বশুর বাড়ীর অন্যরা ও এ নিয়ে তার বাপকে নিয়ে খোটা দিতো-....  ওর মেয়েতো, জানি মেয়ে হবে।পরে ১ ছেলে হয়।সবশেষে এবারও তিনি গর্ভবতী হলে তার মনে ভয়,চিন্তা ঢুকে এবারো মেয়ে হবে না তো?

৫ মাসে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান,ছেলে না মেয়ে।ডাক্তার বলে আপনি কি চান? তিনি বলেন- ছেলে

তখন ডাক্তার বলে বুঝতে পারছিনা, পরে জানা যাবে।তিনি বলেন, কিন্তু এতেই আমার সন্দেহ হয় মেয়ে হবে।অন্য জায়গায় গিয়ে কনফার্ম হই মেয়ে হবে।

এরপর থেকে আমার মাথা নষ্ট।

একবার চিন্তা করি মেয়ে হলেও রেখে দেবো,স্বামীর সংসার না করতে পারলে আলাদা থাকবো।

আবার স্বামি, সংসারের কথাও ভাবি- ভাবতেই থাকি।কাউকে বা স্বামীকে কিছু বলি না ভয়ে

।একসময় সিদ্ধান্ত নেই মেয়েকে নিজেই মেরে ফেলবো- এবরশন করাবো।

এ ব্যাপারটি শুধু বড় মেয়েকে বলি।এর মাঝে বড় মেয়ে পরীক্ষায় খারাপ করায় সবাই তাকে নিন্দা করে।মেয়ে কাদে ও বলে আমি মরে যাবো,বাচতে চাই না।

অবশেষে এবরশন করে নিজ হাতে ছোট মেয়েকে মেরে ফেললাম।

এরপর হাহাকার -কি করলাম,কি পাপ করলাম

,এ পাপের ক্ষমা হবে না।

ক্ষিধা নেই,
ঘুম নেই।
কথা বলতে ইচ্ছে করে না,
কথা বললেই কুকথা বের হবে,
চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না,
চারদিকে নষ্ট পুরষ।
টিভিতে কেবল দেখায় ছোট ছোট সুন্দর সুন্দর বাচ্চা মেয়েগুলোকে নরপিশাচরা ধর্ষন করে মেরে ফেলছে।

ইচ্ছে করে এদেরকে গলা টিপে মেরে ফেলি

।মাদ্রাসার হুজুর থেকে দারোয়ান সব বদমাশ

।তাই চোখ খুলি না,সব পাষন্ড পুরুষ দেখতে হবে।

টিভিতে অহরহ শিশু বাচ্চাদের ধর্ষনের খবর দেখে বিরক্ত হয়ে টিভি ভেঙ্গে ফেলি, যাতে এসব খবর শুনতে না হয়।

স্বামী বলে কয়েকদিন ধরে উৎপাত বেড়ে গেছে।দরজায় পিটায়,আমাকে বলে তোকে পিটায়ে লাল করে দেবো,

মেয়েকে হুকুম দিয়ে মাদ্রাসার বই পুড়িয়ে দেয়,

কারন মাদ্রাসার হুজুরাও ভালো না,তারাও ধর্ষন করে।

জ্বীনে ধরেছে  মনে করে হুজুরের কাছে নেই।তিনি বলেন ৪ টি জ্বীনে ধরেছে ও সবগুলো হিন্দু

।তিনি দোয়া,তাবিজ দেয়।কিন্তু পরদিন উৎপাত আরো বেড়ে যায়।

তখন এক হুজুর বলে সাইকিয়াট্রস্ট দেখান,আত্মীয়রাও তেমন বলে।তাই আপনার কাছে নিয়ে এসেছি
কি বার্তা দেয় এ কাহিনী?

১। মানসিক রোগের অন্যতম কারন সমাজ

২। পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ শুধু ছেলে সন্তান চায়।তার খেসারত দিতে হয় নারীদের- পাগল হয়ে বা আত্মহত্যা করে

৩।বিভৎস্য রকমের ধর্ষনের "তুফান" চলছে দেশে।

বিশেষ করে শিশু ধর্ষন এবং নির্মম ভাবে তাদের হত্যা করা।
এসব দেখে শুনে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেক মানুষ -

যেমনটি হয়েছে আমার এই রোগীনি।

সাধারন অসুস্থ নয়,তিনি এর জন্য টিভি ভেঙ্গে ফেলেছেন,মাদ্রাসা র বই পুড়িয়ে দিয়েছেন,চোখ বন্ধ রাখছেন পাপী, পাষন্ড পুরুষ যাতে দেখতে না হয়

৪। কোন এক কারনে মানসিক সমস্যা শুরু হলেও অন্যান্য সমসাময়িক সামাজিক, মানসিক সংঘাত, দন্ধগুলো সে রোগকে আরো জটিল ও কঠিন করে তোলে।এ কাহিনী তার প্রমাণ

৫। সবার হয় ছেলে সন্তান, আমার কেন মেয়ে-

এরকম অমানবিক, নিষ্ঠুর আফসোস কবে সমাজ থেকে বিতাড়িত হবে?

৬।ধর্ষন,হত্যা- এসব জগন্য,পাপিষ্ঠ কর্মের কঠোর শাস্তি কখন সমাজে দৃশ্যমান হবে?