Thursday, February 28, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩৭ঃসত্যেন বোসের পর আবারও আরেক বাংলাদেশীর বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা

এক সময়ে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন -এই তিন মৌলিক কনা দিয়েই মহাবিশ্ব তৈরি। কিন্তু ১৯৬৭ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী মারে-গেলম্যান এর পরীক্ষায় দেখা গেল ইলেকট্রন অভিবাজ্য কনা হলেও প্রোটন ও নিউট্রন তা নয়।তিনি বলেন, কোয়ার্ক নামক আরো ক্ষুদ্র কিছু কনা দিয়ে  প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি।

কোয়ার্ক ৬ প্রকার।এই ৬ প্রকার বা ফ্লেভারের (আসলে কোন গন্ধ নয়) রয়েছে ৩টি করে কালার(এগুলো ও কোন  প্রকৃত রঙ নয়)।

সর্বশেষ কনা সংযোজিত হয়-ভাইল ফার্মিয়ন

।জার্মান বিজ্ঞানী হারম্যান ভাইল এরকম কনার ভবিষ্যত বানী করেন,যেটির কোন ভর থাকবে না,তবে চার্জ বহন করবে। সাধারণত ফার্মিয়ন কনাগুলো ভরযুক্ত হয়।তাই ভরবিহীন ভাইল হবে ব্যতিক্রম।

একসময় বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনো কনাকে ভরহীন মনে করতেন। কিন্তু ১৯৯৮ সনে প্রমানিত হয় নিউট্রিনো ভরহীন কনা নয়।

তাহলে ভাইল কনা কোনটি?

২০১৩ সালে সার্নের বিজ্ঞানীরা বহুল কাঙ্ক্ষিত হিগস বোসন কনা(যাকে ঈশ্বর কনা ও বলা হয়) খুজে পান। এই বিজ্ঞানীরা সাজেশন দিলেন বিশেষ এক প্রক্রিয়ায়, সেই অজ্ঞাত ভাইল কনা পাওয়া যেতে পারে।

সেই পরামর্শ মোতাবেক বাংলাদেশী আমেরিকান বিজ্ঞানী,প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাহিদ হাসান কাজ শুরু করেন।আনন্দের কথা ২০১৫ সালে জার্নাল -"সায়েন্সে " প্রবন্ধ লিখে তিনি  ভাইল কনা আবিস্কারের ঘোষণা দেন।

এর মাধ্যমে ৮৬ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো।

সত্যেন বোসের পর  পদার্থ বিজ্ঞানে কোন বাঙ্গালীর  এটি হচ্ছে  যুগান্তকারী ও বিস্ময়কর আবিস্কার। এই অসামান্য আবিস্কারের জন্য জাহিদ হাসান নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হবেন বলে সকল মহল প্রত্যাশা করছেন।
তবে সত্যেন বোস কিন্তু বাংলাদেশী ছিলেন না।
সে হিসেবে বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা জাহিদ হাসানের।

Monday, February 25, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩৬ঃএকক প্রযোজিত,একক অভিনীত নাটকের হতাশাজনক যবনিকাপাত

বিমান হাইজ্যাক নাটক?
অপর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে,একটি অকালিন,অসম্পূর্ণ মূল্যায়ন

সতর্কতা ঃএটি কেমন ধরনের হাইজ্যাক বা আদৌ হাইজ্যাক কিনা, কিভাবে নিরাপত্তা বুহ্য ছেদ করলো, কেন এতো কাচা,অগোছালো প্রচেষ্টা, কেন খেলনা পিস্তল বা প্লাস্টিকের পাইপ বহনকারী একক ব্যক্তিকে জীবিত আটক করা গেলো না-ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এই পর্যালোচনা নয়।

আমি শুধু পলাশের প্রোফাইলটি একটু তদন্ত করে দেখতে চাইবো।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঃ

১। পলাশ নামের ছেলেটি মাদ্রাসা পড়া ছেড়ে দিয়ে মা-বাবার অজান্তে ঢাকা চলে যায়। তার মানে স্বাভাবিক পথ থেকে তার বিচ্যুতি ঘটেছে

২। ঢাকায় গিয়ে সে প্রকৃত পক্ষে কি করতো তা তার পরিবার বা এলাকার লোকেরা জানতো না বা জানার চেষ্টা ছিল না।তার মানে বিচ্যুত জীবন আরো পাকাপোক্ত হচ্ছিল।

৩। তার অধপতনের লক্ষন ঠিকই পরিবার ধরতে পেরেছিল,যে জন্য বাবা নিজেই বলেন সে বখাটে হয়ে গিয়েছিল।

৪।সে মাঝে মাঝে বাড়ি যেতো টাকা আনতে। শুধু তাই নয়,বিভিন্ন জনের থেকে প্রতারণা করে টাকা আনতো।
এমনকি নিজে অপহরিত হয়েছে বলে মিথ্যে নাটক সাজিয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে -সেই অল্প বয়সেই। অসততা, অনৈতিকতা,অপরাধ প্রবনতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

৫। বাইরে ও অপহরণ সহ অন্যান্য সন্ত্রাসী উপায়ে টাকা উপার্জন করতো। এ জন্য সে পুলিশের হাতে ধরা ও পড়ে।
তার নাম অপরাধীর তালিকায় উঠে যায়।মানে হলো সে দাগী অপরাধী হয়ে গেছে।

৬। বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল।

৭। সে দুবার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশ যায়, কিন্তু সব টাকা খুইয়ে দেশে ফিরে।

আদৌ বিদেশ গেছে না বিদেশে যাওয়ার নাম করে টাকা এনে সিনেমা বানানো, বড়লোকী ভাব দেখিয়ে নায়িকা থেকে অন্য প্রভাবশালীদের ইমপ্রেস করার কাজে লাগিয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

৮। সে ঢাকায় কিছুই করতো না।অথচ সিনেমায় অভিনয়, সিনেমা প্রযোজনার টাকা দেওয়া, শানশওকতের সহিত চলা,হিরা সুলভ ভাব- বনিতা সবই করতো।

কোথায় পেতো এতো টাকা?  খোঁজ নিলে সে অন্ধকার জগতের কথা জানা যাবে।

৯। এরকম একটি আন্ডার ওয়ার্ল্ডে তার আরো অনেক সহযোগী থাকার কথা। অনেক পৃষ্ষ্ঠপোষক ও থাকার কথা। তারা কারা?

১০। এমনকি ঢাকায় যাদের সঙ্গে চলতো তারা ও ঠিক ভাবে জানতো না সে কি করে, কোথায় থাকে, আয়ের উৎস কি,শিক্ষা কতটুকু।

১১। সিমলার মতন পুরস্কার প্রাপ্ত নায়িকা ও তাকে বড় প্রযোজক মনে করে, শিক্ষিত,সম্ভাবনাময় উঠতি "নায়ক" মনে করে প্রেমে পড়ে যায়?
শুধু তাই নয় কি লোভে, কি আশায়, কি মোহে তাকে বিয়ে ও করে ফেলে? 

এদেশের অনেক শিক্ষিত,রূপসী, আধুনিকা মেয়েকেও দেখেছি চালচুলো নেই, আয় উপার্জন নেই, সঠিক ঠিকানা জানা নেই, তবুও তেমন " মাকাল ফলের" প্রেমে পড়ে, বিয়ে ও করে ফেলে।

এবং অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই টের পায় কি সর্বনাশা পথ বেছে নিয়েছে।

১২। উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় পলাশ ছোটকাল থেকেই "আচরণ সমস্যা " যাকে আমরা "কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার " বলি সে সমস্যাগ্রস্ত ছিল।

এরাই পরে এন্টি-সোশাল বা সাইকোপ্যাথ হয়ে উঠে।

এদের মধ্যে যাদের চতুরতা থাকে, সামাজিক দক্ষতা থাকে, চেহারা ভালো থাকে, তারা এক দিকে একটি "ফেইক সামাজিক " চরিত্র ধরে রাখে,অন্যদিকে তাদের প্রকৃত স্বরূপ "সমাজ বিরোধী, রাস্ট্র বিরোধী ও আইন বিরোধী " চরিত্র চলমান থাকে।

১৩। যেহেতু এরা  ক্রটিপূর্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও আচরণ সমস্যা যুক্ত মানুষ, তাই বিয়ের অল্প দিনের মধ্যেই তাদের অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য স্বভাব ধরা পড়ে।

সিমলা হয়তো সেরকমটি টের পেয়ে সে দুরুত তার "ভুল"? সংশোধন করে তাকে ডিভোর্স দেয়।

১৪। এই " বিচ্ছেদ " যন্ত্রণা সহ আরো জানা অজানা হতাশার কারণে পলাশের মধ্যে জিদ,ক্রোধ, ঘৃনা,জিগাংসা জাগতে পারে।

১৫। তার স্বভাবজাত উগ্রতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও  জোকের মাথায় কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করে বসার যে প্রবনতা এর সঙ্গে ঐ হতাশা, ক্ষোভ, ঘৃনার  মিশেলে তার মধ্যে তাৎক্ষণিক অপরিনামদর্শী, অগোছালো, অর্বাচীন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

১৬। এরা যেহেতু সব ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকে তাই মাদক গ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

১৭। সব মিলিয়ে তার নিজ প্রযোজনায়,একক অভিনীত, অপরিপক্ক, অগোছালো, আবেগতাড়িত অতি স্বল্প দৈর্ঘ্যের, অতি উত্তেজিত, শিহরিত নাটকের "নাটকীয় " যবনিকাপাত ঘটাতে জাতি হাফছেড়ে বেচেছে বটে।

তবে রেখে গেছে অনেক অজানা প্রশ্ন।

হয়তো অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা সেসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো

পুনশ্চঃ পরবর্তীতে অন্য রকম কাহিনি জানা গেলে, ভিন্ন ও নতুন তথ্য জানা গেলে এই আপাত মূল্যায়ন পুনমূল্যায়নের প্রয়োজন হবে

Saturday, February 23, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩৫ঃ কথায় চিড়া ভিজে

আমাদের দেশে একটি প্রবাদ বাক্য আছে ঃ কথায় চিড়া ভিজে না

কিন্তু আমরা যে সাইকোথেরাপি বা কাউন্সিলিং করি সেগুলো তো মূলত "কথা -চিকিৎসা " বা টক-থেরাপি।

তাহলে সেগুলোতে কি মন ভিজে না? যদি না ভিজে রোগী আরোগ্য লাভ করে কেন?

আমাদের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর একমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট স্নেহাস্পদ জহিরের সঙ্গে একদিন আলাপের সময় সে বলে-

স্যার,আপনি তো অনেক জায়গায় লিখেন,কথায় ও চিড়ে ভিজে, মানে সাইকোথেরাপি ও কাজ করে, একদিন সে নিয়ে ও একটু লিখবেন।

অনেক দিন হয়ে গেল ব্যাপারটি মনে ছিল না।

আজ "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা " নিয়ে কিছু লিখতে গিয়ে ঐ কথাটি মনে পড়লো।

কথায় ও চিড়ে ভিজে -এর প্রমাণ হিসেবে আমি খাটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল  তুলে ধরবোঃ

আমরা জানি "ওসিডি" (অবসেসিভ -কম্পালসিভ ডিসঅর্ডারে) বা "খুঁতখুঁতে" রোগের একটি প্রধান লক্ষন হচ্ছে

-অপরিষ্কার, নোংরা, অপবিত্র হয়ে গেছে মনে করে বার বার(কখনো শতবার)  ধোঁয়া মোছা করা।

PET scan  ( positron emission tomography)  করে দেখা গেছে ওসিডির রোগীদের ব্রেইনের "প্রি-ফ্রন্টাল" লোবের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়।তারমানে প্রিফ্রন্টাল লোবের কর্মতৎপরতা কমিয়ে ফেলতে পারলে এ রোগ ভালো হয়ে যাবে।

এই রোগ ঔষধ চিকিৎসায় ভালো হয়,আবার বিহেভিয়ার থেরাপি (এ ক্ষেত্রে "রেসপন্স প্রিভেনশন " থেরাপি) ও সমান উপকারী।

এক গবেষণায় এই রকম একদল রোগীর অর্ধেককে ঔষধ ফ্লুক্সিটিন দেওয়া হয় ও বাকি অর্ধেককে রেসপন্স প্রিভেনশন থেরাপি দেওয়া হয়।
উভয় গ্রপের রোগরাই উন্নতি লাভ করে।

গবেষণার আশ্চর্যজনক ফলাফল হচ্ছে ঃ। pet scan করে দেখা যায়, বিহেভিয়ার থেরাপি দিয়ে ভালো হওয়া রোগীদেরও প্রিফ্রন্টাল লোবের কর্মতৎপরতা কমে গেছে, যেমন হয়ছিল ঔষধ চিকিৎসায় ভালো হওয়া রোগীদের।

তার মানে নিছক চিন্তা, আচরণ বদল করেও ব্রেইনের ফাংশনকে বদলানো যায়।

অতএব প্রমানিত হলো - কথায় ও চিড়ে ভিজে

Tuesday, February 19, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল - ৩৪ঃ নিরীহ, শান্ত মানুষ ও কি কারনে সহিংস হয়ে উঠে?

জিলম্যান বলেন "যখন আমাদের শরীর মন উত্তেজনার খাদের কিনারে দাড়িয়ে থাকে, তখন পরবর্তী নেতিবাচক আবেগ হয় আরো তীব্র মাত্রায়।একের পর এক উক্তত্যকরন ঘটতে থাকলে রাগ-ক্রোধ ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। "

পরবর্তী প্রতিটি উক্তত্যকরন চিন্তা এমাগডেলা তাড়িত " ক্যাটেকোলামাইন" এর উত্তাল তরঙ্গের প্রবাহ তৈরিতে, উসকে দেওয়ার ঘটনা হিসেবে কাজ করে। এর প্রতিটি পূর্ববর্তীটির ভরবেগ বাড়িয়ে দেয়।

প্রথম উক্তত্যকরন  শেষ হওয়ার পূর্বেই (তা দাম্পত্য জীবন,পরিবার,কর্মক্ষেত্র,সমাজ যে জায়গায়ই ঘটুক না) দ্বিতীয়টি চলে আসে,তৃতীয়টি আসে এর উপরেই।এই প্রতিটি ঢেউ, এর পূর্বেকার ঢেউ এর লেজের উপর চড়াও হয়।ফলে শারীরবৃত্তীয় সজাগতা,সক্রিয়তা দুরুত ধাপে ধাপে বেড়ে যায়।

এভাবে রাগ তৈরি হয় রাগের উপরে।তাই আবেগীয় ব্রেইন ক্রমাগত উত্তপ্ত হতে থাকে ও এক সময় সে ক্রোধ আগ্নেয়গিরির মতন বিস্ফোরিত হয়।

এ পর্যায়ে মানুষ ক্ষমা করতে ও ভুলে যায় ও যেকোন যুক্তির উর্ধ্বে উঠে যায়। তাদের চিন্তা কেবল ক্রোধ ও প্রতিশোধ নেওয়া নিয়ে ঘুরতে থাকে। তারা এসবের কি পরিনতি হবে সে নিয়ে ও অচেতন থাকে।

উত্তেজনার এই চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা নিজের ক্ষমতা ও অনাক্রম্যতা নিয়ে এক মোহগ্রস্ত অবস্থায় থাকে। যা তাদেরকে ভয়ংকর সহিংস কাজে অনুপ্রাণিত করে। লিম্বিক ব্রেইনের  তাড়না  যত ধাপে ধাপে ক্রম বর্দ্ধিত হতে থাকে, বর্বরতা তত নির্মম রূপ ধারন করে। ফলে অনায়াসে তারা হত্যা খুন করে ফেলে এবং তা করতে পারে বিভ্যৎস, নিষ্ঠুর উপায়ে।