Monday, February 25, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩৬ঃএকক প্রযোজিত,একক অভিনীত নাটকের হতাশাজনক যবনিকাপাত

বিমান হাইজ্যাক নাটক?
অপর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে,একটি অকালিন,অসম্পূর্ণ মূল্যায়ন

সতর্কতা ঃএটি কেমন ধরনের হাইজ্যাক বা আদৌ হাইজ্যাক কিনা, কিভাবে নিরাপত্তা বুহ্য ছেদ করলো, কেন এতো কাচা,অগোছালো প্রচেষ্টা, কেন খেলনা পিস্তল বা প্লাস্টিকের পাইপ বহনকারী একক ব্যক্তিকে জীবিত আটক করা গেলো না-ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এই পর্যালোচনা নয়।

আমি শুধু পলাশের প্রোফাইলটি একটু তদন্ত করে দেখতে চাইবো।

এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ঃ

১। পলাশ নামের ছেলেটি মাদ্রাসা পড়া ছেড়ে দিয়ে মা-বাবার অজান্তে ঢাকা চলে যায়। তার মানে স্বাভাবিক পথ থেকে তার বিচ্যুতি ঘটেছে

২। ঢাকায় গিয়ে সে প্রকৃত পক্ষে কি করতো তা তার পরিবার বা এলাকার লোকেরা জানতো না বা জানার চেষ্টা ছিল না।তার মানে বিচ্যুত জীবন আরো পাকাপোক্ত হচ্ছিল।

৩। তার অধপতনের লক্ষন ঠিকই পরিবার ধরতে পেরেছিল,যে জন্য বাবা নিজেই বলেন সে বখাটে হয়ে গিয়েছিল।

৪।সে মাঝে মাঝে বাড়ি যেতো টাকা আনতে। শুধু তাই নয়,বিভিন্ন জনের থেকে প্রতারণা করে টাকা আনতো।
এমনকি নিজে অপহরিত হয়েছে বলে মিথ্যে নাটক সাজিয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে -সেই অল্প বয়সেই। অসততা, অনৈতিকতা,অপরাধ প্রবনতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

৫। বাইরে ও অপহরণ সহ অন্যান্য সন্ত্রাসী উপায়ে টাকা উপার্জন করতো। এ জন্য সে পুলিশের হাতে ধরা ও পড়ে।
তার নাম অপরাধীর তালিকায় উঠে যায়।মানে হলো সে দাগী অপরাধী হয়ে গেছে।

৬। বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল।

৭। সে দুবার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশ যায়, কিন্তু সব টাকা খুইয়ে দেশে ফিরে।

আদৌ বিদেশ গেছে না বিদেশে যাওয়ার নাম করে টাকা এনে সিনেমা বানানো, বড়লোকী ভাব দেখিয়ে নায়িকা থেকে অন্য প্রভাবশালীদের ইমপ্রেস করার কাজে লাগিয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

৮। সে ঢাকায় কিছুই করতো না।অথচ সিনেমায় অভিনয়, সিনেমা প্রযোজনার টাকা দেওয়া, শানশওকতের সহিত চলা,হিরা সুলভ ভাব- বনিতা সবই করতো।

কোথায় পেতো এতো টাকা?  খোঁজ নিলে সে অন্ধকার জগতের কথা জানা যাবে।

৯। এরকম একটি আন্ডার ওয়ার্ল্ডে তার আরো অনেক সহযোগী থাকার কথা। অনেক পৃষ্ষ্ঠপোষক ও থাকার কথা। তারা কারা?

১০। এমনকি ঢাকায় যাদের সঙ্গে চলতো তারা ও ঠিক ভাবে জানতো না সে কি করে, কোথায় থাকে, আয়ের উৎস কি,শিক্ষা কতটুকু।

১১। সিমলার মতন পুরস্কার প্রাপ্ত নায়িকা ও তাকে বড় প্রযোজক মনে করে, শিক্ষিত,সম্ভাবনাময় উঠতি "নায়ক" মনে করে প্রেমে পড়ে যায়?
শুধু তাই নয় কি লোভে, কি আশায়, কি মোহে তাকে বিয়ে ও করে ফেলে? 

এদেশের অনেক শিক্ষিত,রূপসী, আধুনিকা মেয়েকেও দেখেছি চালচুলো নেই, আয় উপার্জন নেই, সঠিক ঠিকানা জানা নেই, তবুও তেমন " মাকাল ফলের" প্রেমে পড়ে, বিয়ে ও করে ফেলে।

এবং অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই টের পায় কি সর্বনাশা পথ বেছে নিয়েছে।

১২। উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় পলাশ ছোটকাল থেকেই "আচরণ সমস্যা " যাকে আমরা "কন্ডাক্ট ডিসঅর্ডার " বলি সে সমস্যাগ্রস্ত ছিল।

এরাই পরে এন্টি-সোশাল বা সাইকোপ্যাথ হয়ে উঠে।

এদের মধ্যে যাদের চতুরতা থাকে, সামাজিক দক্ষতা থাকে, চেহারা ভালো থাকে, তারা এক দিকে একটি "ফেইক সামাজিক " চরিত্র ধরে রাখে,অন্যদিকে তাদের প্রকৃত স্বরূপ "সমাজ বিরোধী, রাস্ট্র বিরোধী ও আইন বিরোধী " চরিত্র চলমান থাকে।

১৩। যেহেতু এরা  ক্রটিপূর্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও আচরণ সমস্যা যুক্ত মানুষ, তাই বিয়ের অল্প দিনের মধ্যেই তাদের অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য স্বভাব ধরা পড়ে।

সিমলা হয়তো সেরকমটি টের পেয়ে সে দুরুত তার "ভুল"? সংশোধন করে তাকে ডিভোর্স দেয়।

১৪। এই " বিচ্ছেদ " যন্ত্রণা সহ আরো জানা অজানা হতাশার কারণে পলাশের মধ্যে জিদ,ক্রোধ, ঘৃনা,জিগাংসা জাগতে পারে।

১৫। তার স্বভাবজাত উগ্রতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ও  জোকের মাথায় কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করে বসার যে প্রবনতা এর সঙ্গে ঐ হতাশা, ক্ষোভ, ঘৃনার  মিশেলে তার মধ্যে তাৎক্ষণিক অপরিনামদর্শী, অগোছালো, অর্বাচীন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

১৬। এরা যেহেতু সব ধরনের অপকর্মে জড়িত থাকে তাই মাদক গ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

১৭। সব মিলিয়ে তার নিজ প্রযোজনায়,একক অভিনীত, অপরিপক্ক, অগোছালো, আবেগতাড়িত অতি স্বল্প দৈর্ঘ্যের, অতি উত্তেজিত, শিহরিত নাটকের "নাটকীয় " যবনিকাপাত ঘটাতে জাতি হাফছেড়ে বেচেছে বটে।

তবে রেখে গেছে অনেক অজানা প্রশ্ন।

হয়তো অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা সেসব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবো

পুনশ্চঃ পরবর্তীতে অন্য রকম কাহিনি জানা গেলে, ভিন্ন ও নতুন তথ্য জানা গেলে এই আপাত মূল্যায়ন পুনমূল্যায়নের প্রয়োজন হবে

No comments:

Post a Comment