Wednesday, December 28, 2016

রোগ কাহিনী: ১০

" ভয়ে আমার কইলজা-গুরদা গইল্লা যায়"

আপনাদের মনে থাকার কথা " সাইকিয়াট্রস্ট এর জার্নাল -৫ এ আমি সন্তান প্রতিপালনের ৪টি ধরন নিয়ে আলোচনা করেছিলাম।
এ ৪ ধরনের একটি হচ্ছে সন্তানকে" বশ্যতা স্বীকারে বাধ্যকরন" প্রতিপালন পদ্ধতি(Authoritarian type)।
আজ সে ধরনের এক বাবার কাহিনী আপনাদের জানাবো--

কাহিনী সংক্ষেপ :

মো. আলম বর্তমানে বয়স ৩০, বিয়ে করেননি( মূলত বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন - কেন সে রহস্য শীঘ্রই উদঘাটিত হবে)।

তারা ৫ ভাই , তিনি ৪র্থ।তার বাবা হলুদ- মরিচ ভাঙ্গার কাজ করেন।

যে সমস্যাদি নিয়ে আমার কাছে আসেন :

ভয়-ভীতি,টেনশন,দুশ্চিন্তা,ভুলে যাওয়া, অস্হিরতা,মাথা উথালপাতাল লাগা,মাথায় গরম জ্বালা পোড়া,চিন্তায় চুল পেকে গেছে,বুকে এসে ভয় ভীতি লাগে,পেট চিবায়,ঘুর ঘুর করে ইত্যাদি।

একটু সময় নিয়ে আলাপ করাতে যা জানা গেলো:

ছোটকাল থেকেই বাবা কড়া শাসনে রাখতো।পান থেকে চুন খসলেই অত্যাচারের স্ট্রিম রোলার চলতো।

যা করতে বলবে একটু দেরী হলেই হাতের কাছে যা থাকতো তা দিয়ে আঘাত করতো।
স্ক্রু,হ্যান্ডেল দিয়ে মাথায় আঘাত করতো।

ঘরে জায়গা দিতো না।
আমরা ভয়ে বাইরে বাইরে থাকতাম।উনি কাচি নিয়ে খুজতে বের হতেন।যেখানে পেতেন সেখানেই  এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করতেন।

একদিন মারের ভয়ে দৌড় দেই।এক ফাকে
এক পুকুরে ঝাপ দেই।
একটি গাছের গোড়া ধরে  পানিতে ডুব দিয়ে থাকি।

নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় তবু উঠি না,  যদি বাবা দেখে ফেলে।
এক সময় আর টিকতে না পেরে উঠে যাই।

উঠেই ভূত দেখার মতন আটকে উঠি।
দেখি বাবা কাচি হাতে  একেবারে আমার সামনেই দাড়িয়ে।

উনিশ- বিশ হলেই লাঠি নিয়ে মারতে আসতো।আমি দৌড়াতাম,দৌড়ে কুলাতে পারতাম না।হোচট খেয়ে পরে যেতাম,সেখানেই মারের উপর মার।

অনেক সময় ভয়ে সারাদিন বাইরে থাকতাম। 
রাতে চুপিচুপি ঘরে ঢুকতাম। 

রুমে ঢুকে সারারাত ঘুম আসতো না, কখন বাবা এসে ধরে ফেলে।
জানালা আটকানো যেতো না,তাই ভয় হতো কখন জানি জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ধরে ফেলে।

সব ভাইকেই মারতো,তবে আমাকে বেশী মারতো।
অন্য ভাইরা দূরে দূরে থাকতো।
একদিন  রন্ডি কড়ই গাছের ডাল কেটে ফেলায় বাবা বড় ভাইকে কোপাতে গেলে বড় ভাই রুখে দাড়ায় ও তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

মাকেও মারতো।

একদিন স্কুলে যাইনি বলে আমাকে ও ছোট ভাইকে শেকল দিয়ে পা বাধে।
মসজিদের ভিতর তালা দিয়ে আটকে রাখে।
তালা ও শেকল নিয়ে হাটতে হাটতে পা ফুলে যায়। 

এ অবস্হায়ই আমাদেরকে স্কুলে নেওয়া হয়।

স্কুলের ম্যাডামরা বাবাকে বলেন আপনি কাজটি ভালো করেননি।
তখন মনে হয়েছিল এত অত্যাচার, এ জীবন রাখবো না

ধান ক্ষেতে নিড়ি দিতে গিয়ে একটু দুষ্টামি করলে মারতো  ও বাড়ীতে খাবার বন্ধ করে দিতো।

মা পরের বাড়ী থেকে এনে খাওয়াতো।তার জন্য মাকেও মারতো।

দোকানে ছোট ভাই বসতো। হিসেবের গরমিল হওয়াতে বাবা তাকে মারে।
ছোট ভাই রাগ করে বলে দোকানে বসবে না।আমাকে বসতে বলে।

বাবা বলে "খানকির পোলা" দোকানে গেলে কল্লা ফেলে দিবো( গালি শুনে আমাকে কেউ গালি দিতে আসবেন না- লেখার অযোগ্য অনেক গালি আছে,স্যাম্পল হিসেবে দুএকটি বলবো মাত্র)। 

ভয়ে কলিজা- মলিজা গলে যেতো।

এ ভাবে ১৫-১৬ বছর অত্যাচার চলে।
আমি ও ছোট ভাই অতিষ্ঠ হয়ে ঠিক করি পালিয়ে ঢাকা চলে যাবো।

মাকে বলি দোকানে মাল কিনতে যাবো( কচুয়ায়)। 

ছোট ভাই বলে পান্জাবী ইস্ত্রি করতে যাবো। 

এ ভাবে দু'ভাই সবাইকে ফাকি দিয়ে ঢাকা রওয়ানা হই।

( ছোট ভাই আগে কয়েকবার ঢাকা গেছে)। 

এক সাইকেলেই দুজনে যাচ্ছি।গৌরী পুর ব্রীজে   আসার পর আমাদের আটকে দেয়,সাইকেল নেওয়া মানা।তখন সাইকেল বাসের ছাদে উঠিয়ে ঢাকা রওয়ানা হই।

বড় ভাই চকবাজারে পচা সাবান কারখানায় কাজ করতো।সেখানে যাই। 

দুজনে ভাবতে থাকি মাকে না বলে এসেছি, মাতো কান্না কাটি করবে।

সন্ধায় ভাই আসলে সব বলি।ভাই মাকে ফোন করে সব জানায়।মা কান্নাকাটি করে,বাবাকে গালাগালি করে,ভাত খায় না।

৭ দিন পর বাবা আমাদের খোজে ঢাকা আসে।
 ভয়ে আমি রুমে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকি।

 বাবা এসেই বলে" চুদির পুতেরা "আমার এতো ভালো বাড়ী রেখে কোন জায়গায় এসে ঘুমাচ্ছে।

বাবা আমাদের নিতে চায়।আমরা রাজী  হই না।

আবার সেখান থেকে পালাই।
বাবা চলে  যাওয়ার পর আবার ফিরে আসি।

বড় ভাই বলে তোদের এখানে জায়গা নেই।বাবা বলে গেছে আমরা যেন আর বাইত না যাই।

তখন ভাবি বাবা তো জায়গা দেবে না,নিজেই কিছু করি।
একটি টং দোকানে চায়ের কাজে লাগি।

দেড় মাস পর বাড়ী যাই।বাবা খুব রাগ করে।এখন ও মাঝে মাঝে বাড়ী যাই।তবে বাবার থেকে দূরে দূরে থাকি।
উনাকে দেখলেই মনে হয় বাঘ দেখছি।

রাতে ঘুমের ভিতর দেখি বাবা অনেককে নিয়ে আমাকে মারতে আসছে, আমি মাঝ খান থেকে উড়ে যাচ্ছি

এখনো ভাত খাওয়ার সময় বাবাকে দেখলে থালা নিয়ে দৌড় মারি।

বিয়ে করতে ভয় পাই কারন বাবাকে দেখলে ওদের ( বউ,তার আত্বীয়) সামনে থেকেই দৌড় দিতে হবে,সেটি কেমন দেখাবে?

( প্রতিটি কথা হুবহু রোগী যে ভাবে বলেছে সে ভাবে লিখেছি।
এটি হয়তো এক অতি কড়া বাবার কাহিনী।
কিন্তু কম মাত্রার হলে ও এমন নিষ্ঠুর ও কড়া শাসন অনেক পরিবারেই রয়েছে)। 

Thursday, December 22, 2016

যাহা বলিব সত্য বলিব-৩

এবিসি রেডিও তে প্রতি রবিবার রাত ১১-২০ মিনিটে প্রচারিত হয় জনপ্রিয় অনুষ্ঠান" যাহা বলিব  সত্য বলিব( জেবিএসবি)"। নিয়মিত পরামর্শক হিসেবে  সে অভিজ্ঞতা ও এই রবিবারে প্রচারিত কাহিনী আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি

কাহিনী সংক্ষেপ :
সোহেল রানা, বয়স ২৫। জন্ম ফরিদপুর । ব্যবসার কারনে বাবা দিনাজপুর থাকেন।
বাবা সেখানে ২য় বিয়ে করেন। জীবনে তাদের অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে।ফলের ব্যবসা করে মোটামোটি ভালো অবস্হায় আছেন।

ক্লাশ এইটে পড়ার সময় তার এক বন্ধু জোটে, যে সৎ মার সঙ্গে থাকতো ও সিগারেট খেতো।

সেও সিগারেট খাওয়া শুরু করে এবং যথারীতি ফেন্সিডিল সহ অন্যান্য নেশায় জড়িয়ে পরেন।

নেশার মাত্রা বাড়ে তাই বাড়ে টাকার ডিমান্ড।
কোথায় পাবে এত টাকা?

নেশার টাকা ভূতে জোগায়।এটি একটি মিথ।তাদের সে টাকা জোগাড় করতে হয় যে কোন  ভাবেই হোক।

তার খালাতো ভাই এমবুলেন্স চালাতো।তখন তৎকালিন বিরোধী জোটের অবরোধ চলছিল।

তারা ভাবলো মানুষ যাতায়তের যানবাহন পাচ্ছে না।ওআমরা এই সুযোগে কিছু মানুষ পারাপার করবো।সেখানে তারা ৪-৫ জন থাকবে ও দু'একজন সাধারন যাত্রী  নেবে।কোন এক পছন্দ মতন জায়গায় গিয়ে যাত্রীদের চোখে মলম ঢলে তাদের সর্বস্হ কেড়ে নেবে।
এ ভাবে তারা একটি সঙ্গবদ্ধ  " মলম পার্টি" গড়ে তোলে।

নিয়মিত ভাবে তারা অসহায় যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা- পয়সা ছিনিয়ে নিতে লাগলো।

একদিন তারা ৫ জন যাত্রীর ছদ্মবেশে অন্য দু'জন নিরীহ যাত্রী উঠান।খেলনা পিস্তল দেখিয়ে তারা তাদের সব কেড়ে নেয়।কিন্তু একজনের হাতে একটি  স্বর্নের আংটি  ছিল।তারা সেটি নিতে চাইলে ঐ ব্যক্তি বাধা দেয়।
দস্তাদস্তি চলে।
একে পর্যায়ে গলায় মাফলার পেচিয়ে তাকে খুন করা হয়।

ঐ লাশ তারা এক বাগানে ফেলে আসে ও সে লাশ  বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়।

(পাঠক এ পর্যায়ে আমার ব্যক্তিগত জীবনের একটি করুন কাহিনী না বলে পারছি না।আমার আপন চাচাতো ভাই নর্থ সাউথ ইউনিভারসিটি এর লেকচারার হিসেবে সবে মাত্র যোগ দিয়েছে।এ দিকে কানাডায় তার পিএইচডি করতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।সে সবে মাত্র বিয়ের পাঠও চুকিয়ে ফেলেছে।তাকে প্রায়ই ঐ ভার্সিটি থেকে সিএনজি করে সন্ধার দিকে বাসায় ফিরতে হতো।তেমনি এক কু সন্ধায় বনানী আর্মি এলাকার কাছাকাছি জায়গায় এ রকম এক সঙ্গবদ্ধ মলম পার্টির খপ্পরে পড়ে নির্মম ভাবে জীবন হারাতে হয় তাকে)।

এদিকে তার ঐ বন্ধুর সঙ্গে এক মেয়ের টেলিফোনে আলাপ হয়।
দীর্ঘ দিন সে ঐ মেয়ের সঙ্গে  প্রেমের অভিনয় করে যায়।
ঐ মেয়েকে পটিয়ে সে প্রায়ই বিকাশ করে টাকা পাঠাতে বলতো।মেয়েটি সরল বিশ্বাসে এ ভাবে তাকে অনেকবার টাকা পাঠায়।

সে ঐ টাকা তার নেশার পিছনে ব্যয় করতো।

এক সময় মেয়েটি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়।সে এটিকে আরো বেশী টাকা আদায়ের সুযোগ হিসেবে নেয়। সে ঐ মেয়েকে  তার কাছে চলে আসতে বলে।
মেয়েটি রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে, ভিন্ন জেলা থেকে  কাউকে কিছু না বলে বেশ টাকা- পয়সা ও স্বর্নালঙ্কার নিয়ে তার কাছে যায়।
ছেলেটি পূর্ব প্রস্তুতি  নিয়ে রাখে ও সোহেল রানাকে  সঙ্গে নেয়।

পূর্ব পরামর্শ মত তারা মেয়েটিকে বলে বাড়ীতে তাড়াতাড়ি যেতে হলে মেঠো রাস্তা দিয়ে পাট খেতের আড়াল দিয়ে যেতে হবে।তারা দু' বন্ধু মিলে মেয়েটিকে পাট  ক্ষেতের ভিতরে  নিয়ে তাকে  নির্মম ভাবে হত্যা করে ও তার সব কিছু হাতিয়ে নেয়।

ঐ মেয়েটির লাশও সেখানে বেওয়ারিশ হিসেবে থেকে যায়।

রানাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় এ ভাবে একটি নিরীহ মেয়েকে খুন করার সময় আপনার ফিলিংস কেমন ছিল।

সে বলে আমার কোন ফিলিংস ছিল না; নেশা করবো টাকা লাগবে এ চিন্তাই কাজ করতো।
এ পর্যন্ত করা তার কোন অপরাধের কথাই অন্যরা জানে না।

তবুও পুলিশের ভয়,নেশার জন্য আরো এ রকম ঝুকি পূর্ন পাপ কাজ করতে হবে, এ সব ভেবে সে ঢাকা চলে আসে।
তার ভাষ্যমতে সে এখন ভালো থাকতে চায়।সে নেশা ছাড়তে চায়।নেশার কারনেই তাকে এতো সব কুকর্ম ও খারাপ কাজ করতে হয়েছে।

সে সবাইকে জানাতে চায় যাতে তার মতন কেউ যেন  নেশাগ্রস্ত না হন, তাহলে তারও পরিনতি তার মতন হবে।এ কারনে সে জেবিএসবি অনুষ্ঠানে এসে নিজের পাপ কাজের স্বীকারোক্তি দিতে এসেছে।

আমার কিছু পর্যবেক্ষণ :

১।মাদকাসক্তি, অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রথম পাঠ নেওয়া  প্রভৃতি হয় বখে যাওয়া,বিপদগামী বন্ধুদের চাপ ও প্রলোভনের কারনে। মাসুদ রানার ক্ষেত্রেও তেমনটি ঘটেছে।

মা- বাবা যদি সন্তানের উপর খবরদারী না করেও সঠিক নজরদারী রাখে, তাহলে মন্দ বন্ধুদের সঙ্গ থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে পারেন।

২। প্রকাশ্য রাস্তায়,যানবাহনে মানুষের সর্বস্ব লুন্ঠিত হবে,মানুষ খুন হবে এর দায়ভার রাস্ট্র,পুলিশ প্রশাসন এড়াতে পারে কি? নিরাপদে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা ও কি নাগরিকদের থাকবে না?

৩। মানুষ খুন হয়ে লাওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন হবে,তার খুনের অপরাধীরা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকবে,আমরা কি এমন রাস্ট্র,সমাজ চেয়েছিলাম? 

এ ভাবে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে গেলে,বিচার ও শাস্তি না পেলে অপরাধীরা আরো ভয়ঙ্কর অপরাধ করবে,আমরা কি সেটিই আমাদের দেশে দেখছি না?

৪। মোবাইল,ফেইসবুক,ইন্টারনেটের অপব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
এ সুযোগে কিছু প্রতারক চক্র তৈরী হয়েছে,যারা প্রেমের ফাদ ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয় বা মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সর্বনাশ করে থাকে।

যাকে চাক্ষুষ দেখিনি,যার সমন্ধে বাস্তবে কোন কিছু জানা শোনা হয়নি, এমন কারো সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়ার মতন বোকামি অহরহ হচ্ছে।

শুধু তাই নয় সে অচেনা পুরুষের টানে নিজ পরিবার ছেড়ে দূরের এক অজানা,অন্ধকার পথে ছুটে যেতে ও দেখছি অনেককে।এমন হটকারী, অর্বাচীন সিদ্ধান্ত কেমনে তারা নেয়? এত অঘটন ঘটছে তা দেখেও কি এই কিশোরী তরুনীরা শিখবে না? গার্জিয়ানরাও আর কত দিন এ রকম বেখেয়াল থাকবেন?

৫। অনেকেই সিগারেটকে মাদক মনে করেন না( তাহলে যে অনেক শিক্ষিত,ভদ্রজনেরাও  ও মাদকাসক্ত বলে চিন্হিত হবেন)।

কিন্তু সিগারেট হচ্ছে সকল মাদকের মা।এ থেকেই জন্ম নেয় অপরাপর মাদকাসক্তির।ক্লিনিকে ভর্তি মাদকাসক্তরা অন্য সব মাদক ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।কিন্তু তারা কিছুতেই সিগারেট ছাড়তে রাজী হন না।
কাকুতিমিনতি করে বলেন স্যার সবই তো ছেড়ে দিয়েছি,আমাদের কি বাচতে দেবেন না,অন্তত সিগারেট খেতে দিন।

তাই সিগারেট নেশাকে হাল্কা করে দেখার সুযোগ নেই।

৬। এখানে বর্নিত দুটি খুনই হয়েছে নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য।
ঐশীর কথা সবার মনে আছে?
এ রকম অনেক চুরি,ছিনতাই, খুন হচ্ছে মাদকাসক্তির কারনে।

দেশের অপরাধের অর্ধেক কমানো যেতো  যদি আমরা মাদকাসক্তির সঠিক চিকিৎসা দিতে পারতাম ও একে প্রতিরোধ করতে পারতাম।

Wednesday, December 14, 2016

সাইকোলজিক্যাল টিপস-২৪

ব্রেইনের " ডিলিট" বাটন আপনার হাতে: একে সঠিক ভাবে ব্যবহার করুণ
..........................................
মন- বাগান মনের মতন সাজান
...............................................
নিউরো সায়েন্সে একটি কথা আছে:neurones that fire together wire together

যে সব নিউরন( স্নায়ু কোষ) এক সঙ্গে জ্বলে উঠে,সে গুলো এক  সঙ্গে ( তারের মতন) জড়িয়ে যায়।তার মানে সে স্নায়ু কোষ গুলো মিলে একটি সার্কিট তৈরী করে।
এ ভাবে যত বার সে সার্কিট উদ্দীপ্ত হবে,তত শক্তিশালী হয়ে উঠবে সে কানেকশন/ সার্কিট।

কথায় আছে প্রাকটিস মেকস ম্যান পারফেক্ট
এ প্রবাদের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপরোক্ত সূত্র।

নিউরো সায়েন্সে আরো একটি কথা আছে " use it or loose it"। একে ( ব্রেইনের  যে কোন অংশ) ব্যবহার করো,না হলে এটি হারাবে।
( এ বিষয়ে আমার " মন ও মানুষ" বইয়ের ১ম খন্ডের ১ম অধ্যায়ে একটি আলাদা লেখা রয়েছে,আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন)।

আমার বইয়ের সেই অংশের কিছু উদ্বৃতি দিচ্ছি:

"...  অনেকটা এ রকম তোমাকে প্রচুর সম্ভাবনা ও সুপ্ত শক্তি দেওয়া হলো। এখন  তোমার কাজ হচ্ছে,এ গুলোর সঠিক ব্যবহার ও অনুশীলন করে নিজেকে ইচ্ছেমতন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলা।... কে কোন ক্ষেত্রে তার দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে পারবে, পারঙ্গম হবে,তা নির্ভর করে সে কিশোর / কিশোরী কোন ক্ষেত্রটিতে বেশী আগ্রহ নিয়ে চর্চা ও অনুশীলন করে।
..... যে সব নিউরন ও তার সংযোগ গুলো বেশী বেশী ব্যবহৃত হবে সে গুলো টিকে যাবে এবং যে গুলোর কম ব্যবহার  হবে বা হবে না সে গুলো শুকিয়ে গিয়ে ঝরে পরে যাবে।

তাই যে কিশোর কিশোরী সঙ্গীতে মনোনিবেশ করবেন; খেলা ধুলার চর্চা বেশী করবেন; লেখা পড়া ও একাডেমিক চর্চা বেশী করবেন তাদের ক্ষেত্রে ঐ বিশেষ নিউরন ও তার সংযোগ গুলো শক্ত,মজবুত ও পোক্ত হবে(hard wired)।
অন্য দিকে যারা অলস বিছানায় শুয়ে থেকে ভিডিও গেমস খেলে সময় কাটাবে তাদের ক্ষেত্রে শুধু ঐ সব সার্কিট গুলো টিকে থাকবে, বাকী গুলো দুর্বল হয়ে পড়বে।"



তবে এই শক্তিশালী কানেকশন পেতে হলে পুরনো,অকেজো স্নায়ু সংযোগ গুলোকে কেটে- ছেটে বাদ দিতে হবে,যাতে নতুন জায়গা পাওয়া  যায়।একে আমরা বলি " synaptic pruning"।

মনে রাখবেন আমাদের ব্রেইন একটি বাগান
বাগান:
তবে এ বাগানে ফল,ফুল গজে উঠে না,কিন্তু গজে উঠে স্নায়ু কোষ,স্নায়ু সংযোগ।

এই কানেকশন বা সংযোগের মাধ্যমে, নিউরো ট্রান্সমিটার গুলো,যেমন ডোপামিন,সেরোটনিন প্রভৃতি চলাচল করে।

মাইক্রো গ্লিয়াল কোষগুলো(glial cell)   ব্রেইনে মালি হিসেবে কাজ করে।এ গুলো নির্দিষ্ট স্নায়ু কোষে সিগনাল পাঠানোকে দ্রততর করে।

তবে অন্য গ্লিয়াল কোষগুলো পরিত্যক্ত আবর্জনা সরিয়ে ফেলার কাজ করে(waste remover)।
এগুলো আগাছা উপড়ে ফেলা, ক্ষতিকর বস্তু বিনষ্ট করা,মৃত ঝড়ে পরা পাতা জড়ো করার কাজ করে।

এক কথায় আপনার মন- বাগানের " মালি" হচ্ছে এই গ্লিয়াল কোষগুলো

তবে প্রশ্ন হচ্ছে এ গুলো কি ভাবে জানে কোন সংযোগ গুলো ছেটে বাদ দিতে হবে?

গবেষনায় দেখা  গেছে যে সব স্নায়ু সংযোগ গুলো  কম ব্যবহৃত হয়, সে গুলো protein c1q দ্বারা  চিন্হিত হয়( মার্ক)।

মাইক্রো গ্লুিয়াল কোষ গুলো যখন এই মার্ক গুলো চিন্হিত করতে পারে, এ গুলো তখন সে প্রোটিন এর সঙ্গে যুক্ত হয় ও সে গুলো ধ্বংস করে।

তারা অব্যবহৃত  সংযোগ  গুলো ছেটে বাদ দেয়।

এ ভাবে আমাদের ব্রেইন নিজের জন্য নতুন জায়গা করে নেয়,যাতে নতুন ও শক্তিশালী সংযোগ তৈরী করে নিতে পারে।ফলে আমরা নতুন বিষয়ে শিখতে পারি।

ঘুম দরকারী:

কখনো কি আপনার মনে হয়েছে ব্রেইন জ্যাম হয়ে রয়েছে?
নতুন চাকরির শুরুতে,কোন প্রজেক্ট এ গভীরতা মনোযোগ দেওয়ার সময় আপনার ঘুম ভালো নাও হতে পারে।এ ভাবে আপনার ব্রেইন পূর্ন থাকতে পারে,জ্যাম লেগে যেতে পারে।

আপনি যখন নতুন জিনিষ শিখেন,তখন আপনার ব্রেইন নতুন কানেকশন তৈরী করে।কিন্তু তখন সে গুলো তত পোক্ত থাকে না।সে গুলো হয় এডহক কানেকশন।

আপনার ব্রেইনকে  ঐ সংযোগের অনেক অংশ কেটে-ছেটে বাদ দিতে হয় ও  শক্তিশালী পথ তৈরী করতে
হয়।
এটি তেমনটি করে যখন আপনি ঘুমে থাকেন। 

ঘুমের সময় আপনার ব্রেইন মন বাগানের ঝরা পাতা,আবর্জনা সরিয়ে ফেলে।
তখন স্নায়ু কোষ ৬০% এর মতন কুচকে যায়( shrinks), যাতে জায়গা তৈরি হয়।
তখন গ্লিয়াল মালি এসে সে পরিত্যক্ত অংশ ছেটে বাদ দিয়ে বাগান পরিস্কার রাখে।

কখনো কি সারা রাত ভালো ঘুমের পর আপনার মনে হয়েছে যে আপনি স্পষ্ট ভাবে চিন্তা করতে পারছেন, দ্রত চিন্তা করতে পারছেন?

এমনটি হয় কেননা, সারা রাত মন- বাগানের আবর্জনা পরিস্কার হওয়াতে যথেস্ট জায়গা তৈরি হয়েছে।আপনি নতুন তথ্য নির্মাণ করতে পারছেন।

নিদ্রা বন্চিত ব্রেইন দিয়ে চিন্তা করা মানে, ঘন জঙ্গলে দা,কুড়াল দিয়ে ঝোপ ঝাড় কুপানো,যেখানে পথ ভালো করে দেখা যায় না,আলো সব জায়গায় পৌছায় না।

তাই তখন চিন্তা পথ খুজে পায় না,দিকহারা মনে হয়।

এ কারনে দুপুরে ১০-২০ মিনিটের হাল্কা ঘুমের দরকার।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ব্রেইন হচ্ছে সেন্ট্রাল পার্কের মতন যেখানে পথ পরিস্কার,এক পথের সঙ্গে অন্য পথের সংযোগ স্পষ্ট,গাছ গুলো সঠিক জায়গায় স্হাপিত,যা দূর থেকেও দেখা যায়।

এমনটি হচ্ছে বল বর্ধক,তেজোবর্ধক,পুষ্টিদায়ক  আবহাওয়া, চিন্তা যেখানে অবাধে ছুটতে পারে,বৃদ্ধি পেতে পারে।


যা গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন সে দিকে গভীর মনোনিবেশ করুন :

যে সংযোগ গুলো আপনি কম ব্যবহার করছেন, সে গুলো ব্রেইন  " রি- সাইক্লিং " এর জন্য মার্ক করে রাখে।

আর যে গুলো আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন সে গুলোতে পানি ঢালা হয়,অক্সিজেন দেওয়া হয়।তাই সেগুলো শক্তিশালী হয়।

যদি আপনি সারা ক্ষন ভিডিও গেম খেলেন,পড়া শোনা কম করে,ভেবে দেখুন আপনার ব্রেইন রি সাইক্লি এর জন্য কোন  স্নায়ু সংযোগকে মার্ক করবে?

যদি আপনি কর্ম স্হলে/সংসারে  অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা,কলহে লিপ্ত থাকেন, নিজের মূল কাজ বাদ রেখে বা প্রজেক্ট এ কম মনোযোগ দিয়ে; 

তাহলে আপনার ব্রেইন "  প্রতিশোধ" নেওয়ার স্নায়ু সংযোগকে বেশী শক্তিশালী করবে। 
প্রজেক্ট এ কম উদ্ভাবনী চিন্তা আসবে, সম্পর্ক উন্নয়নে কম সহযোগীতার  মনোভাব থাকবে।

যা গুরুত্ব পূর্ন, সেগুলোর দিকে বেশী মনোযোগ দিন।

আপনার মন বাগানের মালি অপ্রয়োজনীয়, গুরুত্বহীন সংযোগ  গুলো ছেটে বাদ দিয়ে, আপনার কাঙ্খিত স্বপ্নগুলোর বীজে জল দেবে,অক্সিজেন দেবে; দ্রত বেড়ে উঠতে,শক্তিশালী হয়ে বেড়ে উঠতে অনুুকুল আবহাওয়া দেবে।
     এ ভাবে

   মন বাগানকে মন মতন সাজান

Monday, December 5, 2016

#সাইকিয়াট্রিস্টএরজার্নাল-৭

উত্তম জীবন:১০টি গাইড লাইন
............................................

(আমার লেখা "উদ্বেগ-টেনশন: মনো- বৈজ্ঞানিক সমাধান" বই থেকে  নির্বাচিত কিছু অংশ তুলে ধরবো)

১। আশাবাদের চাষাবাদ(cultivate hope): আশাবাদী হওয়া:
আশার বাগান যেন ফুলে-ফলে ভরা থাকে
.............................
আশা বা ভরসা হচ্ছে কাঙ্খিত কোন কিছুর ব্যাপারে প্রত্যাশা করা।

আশাবাদী হলে ভবিষ্যতের আনন্দ- সুখের ব্যাপারে মনে পূর্ব অনুমান কাজ করে  ও সে বিষয়টি অর্জন করতে পারার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে বিশ্বাস জন্মে।

মনো বিজ্ঞানী এরিকসন তার " মানব জীবন বিকাশ" যে তত্ব দাড় করেছেন তার ভিত্তিমূল ছিল এই "আশা"।

শিশুর এই আশা প্রাপ্ত বয়সের " বিশ্বাসের" জন্ম ভূমি।

মানব জীবনে " আশা" ও " বিশ্বাস"  হচ্ছে নিয়ামক শক্তি

আশা মনের ক্ষত নিরাময়ে ভূমিকা রেখে থাকে; মনে শক্তি,সাহস জোগায়; সার্বিক ভালো লাগা বোধ সৃষ্টি করে,; যা শারিরীক- মানসিক উভয়বিদ অসুস্হতা থেকে আরোগ্য লাভে আমাদের সমর্থ করে তোলে।

যে ডাক্তারের উপর মানুষের আস্হা রয়েছে তিনি যে ঔষধই দেন না কেন, অনেকে তাতে সুফল পান।একে আমরা বলি placebo effect।

এর মূল কারন রোগীদের আশাবাদ  যে দক্ষ,অভিজ্ঞ ডাক্তার তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন তাই তিনি ভালো হয়ে যাবেন।

পীর,কবিরাজী,টোটকা ঔষধে ভালো হওয়ার কারনও এই বিশ্বাস বা আশাবাদ।

ধর্ম বিশ্বাস অকল্পনীয় ঘটনা ঘটাতে পারে

বিশ্বাসের শক্তি "অবিশ্বাস্য"

সঙ্কটের সময় আশাবাদ আমাদেরকে:

সমস্যার চতুর্দিক সঠিক ভাবে দেখতে সাহায্য করে এবং এ সব সঙ্কট,হতাশা,যন্ত্রনা সত্বেও যতটুকু সম্ভব পূর্ন ভাবে জীবন যাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে।

গবেষনায় দেখা গেছে, যারা আশাবাদী:

তারা অন্যদের তুলনায় কমই জীবনের চাপে-তাপে পুড়তে পুড়তে নিঃশেষ হয়ে যায়(burn-out);বন্দি জীবনকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে; গুরুতর ও মারাত্মক রোগ ব্যাধী মোকাবিলা করতে সহায়ক হয়; এমনকি জাহাজ ডুবি মানুষকেও উজ্জীবিত রাখে এই " আশাবাদ"।

এক কথায় জীবনের বড় বড় সঙ্কট,বাধা অতিক্রম করতে  আশাবাদ আমাদের সামর্থ্য জোগায়।

অনেকে ছোট বেলা থেকেই আশাবাদী, তারা জন্ম সৌভাগ্যবান।অনেকে জন্ম আশাবাদী নন।আবার কেউ কেউ জীবনে এমন ভয়ঙ্কর,নৈরাশ্যজনক অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন যে তাদের আশাবাদের ভিত্তিমূল গুড়িয়ে যায়,তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরেন।
তাই আমাদেরকে আশাবাদের " চাষাবাদ" করতে হবে
এবং

আশাবাদ অর্জন করা যায়।
কি ভাবে:

মানসিক চাপ- পীড়নের নেতিবাচক দিকগুলো যতটএকু সম্ভব কমিয়ে রেখে; বিষয় বস্ত্বটিকে অধিকতর ইতিবাচক আলোকে দেখে; এবং এ বিশ্বাস দৃড় ভাবে মনে রেখে যে

যে কোন ভাবেই হোক আমরা টিকে যাবো,জয়ী হবো।

তবে জীবনে কখনো কখনো অতীব নিষ্ঠুর,নির্মম ঘটনাও ঘটে, যখন হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
তখন আমাদের মনে হতে পারে যে স্রষ্টা এমন নিষ্ঠুর কেমনে হতে পারে।বিশ্বাসের সকল ভিত তখন ভেঙ্গে পরতে পারে।

রাব্বী হেরল্ড কুসনার তার "when bad things happen to good people" বইতে এ রকম কষ্ট যন্ত্রনার মধ্যেও বিশ্বাস বজায় রাখার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
কুসনার বাইবেল থেকে উদ্বৃতি দেন " আমার সাহায্য আছে মহা প্রভু থেকে,যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন। "
কুসনার বলেন এখানে বলা হয়নি " আমার দুংখ,কষ্ট মহা প্রভু থেকে এসেছে"। বরং বলা হয়েছে " আমার সাহায্য আছে প্রভু থেকে"।

তার মানে স্রষ্টা কখনো সৃষ্টির অকল্যান করেন না বরং কল্যান করে থাকেন।

তাই ধর্মীয় বিশ্বাস:
আমাদের মন- মননকে সবল, দৃড় রাখে;
এ সব ট্রাজেডি আমাদের জীবনকে যে ভাবে সঙ্কোচিত করেছে বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে সে গুলো মেনে নিতে সাহায্য করে;
তারপরও যে সব ভালো কিছু এখনো রয়েছে সেগুলোকে যথাযথ ও সঠিক ভাবে মূল্যায়নে সাহায্য করে।
# আশার বাগান যেন শুকিয়ে না যায়

গাইড-২:
নতুন অভিজ্ঞতা থেকে সুযোগ গ্রহন করা(take opportunities from new experiences):

আমাদের বিকাশ অব্যাহত থাকে নিত্য দিনের নতুন/অভিনব ধরনের অভিজ্ঞতা সমূহকে শক্ত করে আকড়ে ধরার উপর ভিত্তি করে।

প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় আমরা নতুন কিছু শিখি।
কৈশোরকাল হচ্ছে একটি সম্পূর্ন নতুন,আনকোরা জীবন।
অনেক কিছুই তখন তরতাজা চ্যালেন্জ।

যতবার আমরা একেকটি চ্যালেন্জ অতিক্রম করে ওস্তাদি দেখাতে পারি,ততবারই আমরা  জীবনের সামনে এগিয়ে যাই

আরো আনন্দ ও সৃজনশীলতার সঙ্গে

কেউ সহজাত ভাবে  অধিকতর ঝুকি নিতে তৈরী থাকে;
আবার অন্যরা হয়তো থাকে ভীত,শঙ্কিত( কোন মহিলা হয়তো ৫৫ বছর বয়সেও নতুন কোন নাচ শিখতে উল্লসিত আগ্রহ দেখায়)।

অনেকেই স্হবির,নিশ্চল, নিষ্ক্রিয়,নিরুদ্যম জীবনে আটকে থাকেন।

অথচ নতুনের প্রতি, অগ্রসরমানতার প্রতি, প্রগতি,আধুনিকতা ও বিজ্ঞান মনস্কতার প্রতি চিত্ত,মন উন্মুখ থাকলে:

জীবন আরো সমৃদ্ধ হতে পারে;
আরো বর্নিল,উজ্জ্বল,আনন্দময় হয়ে উঠতে পারে।
কারন :
এতে আমাদের অভিজ্ঞতার ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়,পূর্ন হয়;
আমরা আরো দক্ষ,পরিশীলিত,প্রাজ্ঞ হয়ে উঠি।

ফলে জীবনের  ঘাত- প্রতিঘাত, চাপ- পীড়নকে মোকাবেলা করা সহজ হয়।

যে সব ভিন্ন ধর্মী ও চ্যালেন্জিং সেগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনকে ভিন্ন ভাবে দেখার, বোঝার,জানার ও জয় করার পথ দেখায়।

জীবনে চ্যালেন্জ, বিপদ, বাধা,প্রতিরোধকে মোকাবিলার মাধ্যমে, আমরা অপ্রীতিকর পরিস্হিতির ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতির জন্ম হয় সেগুলেকে ভালো ভাবে ম্যানেজ করতে শিখি।
( আজ এতটুকুই)

Saturday, November 26, 2016

রোগ কাহিনী:৯

বাচতে হলে জানতে  হবে

১। জোর করে স্ত্রীর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্কও "ধর্ষন" এর সামিল

২। যৌন সমস্যার ৮০-৮৫% মানসিক সমস্যা( বাকীগুলো হরমোনজনিত বা ভাসকুলার)

৩। যৌন বিষয়ে খোলা মেলা আলোচনাকে নিরৎসাহিত করলে বিবাহিত জীবনে সঙ্কট দেখা দিতে পারে

৪। যৌন অনাগ্রহ ও একটি  মনো-যৌন সমস্যা যার যথাযথ মানসিক চিকিৎসা রয়েছে

( লেখাটি দীর্ঘ হলেও পুরোটি পড়ুন।দেখুন জানার ও শেখার কিছু আছে কিনা।অশ্লীল লেখা মনে করে মাঝ পথে পড়া থামিয়ে দেবেন না)
................................................
কাহিনী সংক্ষেপ:

লাবনী( ছদ্ম নাম), বয়স ২০ অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী।

১ মাস হলো বিয়ে হয়েছে
এরেন্জড বিয়ে।তার ভাষ্য মতে:

বিয়ের আগেই মা-বাবাকে বলেছি যত ক্ষন পর্যন্ত ওনার সঙ্গে সহজ হতে না পারবো তত দিন শারিরীক সম্পর্কে যাবো না।

বিয়ের আগেই উনার কিছু জিনিস আমার পছন্দ হয়নি।আমাকে দেখতে আসার দিন উনার সঙ্গে আমার রুমে কথা হচ্ছিল।এটি আমার বিছানা জানার পর উনি বলেন তুমি তো আজ সারা রাত আমার কথা চিন্তা করবা।এ ছাড়া উনি আমার সামনেই প্যান্টের জিপার আটকায়।এ গুলো আমার মধ্যে ঘৃনার সৃষ্টি করে।

স্বামী ডিভি লটারী পেয়ে আমেরিকা প্রবাসী।
মা-বাবা বলে মানুষকে একবার দেখে চেনা যায় না,পাত্র আমেরিকায় থাকে তোমাকেও নিয়ে যাবে,এমন পাত্র পাওয়া যাবে না।

ঠিক আছে রাজী হলাম কিন্তু ট্রাস্ট না আসা পর্যন্ত শারিরীক সম্পর্কে যাবো না।

বিয়ের ১ম রাত অসুস্হতার কথা বলে কাটিয়েছি।
২য় রাত উনি টাচ করতে চায় কিন্তু আমি বাধা দেই।

সে বলে এগুলো নরমাল,সবাই করে।আমি তবুও বাধা দেই।উনি বাথরুমে গিয়ে তার বোনের সঙ্গে কথা বলে এসে আমাকে বলে এখনি দরকার কোন কথা শুনবো না।

আমি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাই।সে বলে তোমার উপর জোর করবো,কেন রাজী হচ্ছো না,অন্য কোথাও কি রিলেশন আছে?

আমি এক পর্যায়ে অনেক ভয় পাই ওপাগলের মতন আচরন করতে থাকি।বাথরুমে ঢুকে দেয়ালে আকিঝুকি আকি আর বলতে থাকি কেউ বিশ্বাস করে না,কেবল মিথ্যে কথা বলে।

এর পর ঘরে সবাই ঢুকে।উনি বলেন আমার ফ্রেন্ডরা  না বলাতে আমি এ রকম করছি।এতে বাবা আমার ফোন নিয়ে নেয়।আমাকে পাশের রুমে নেওয়া হয়।
পর দিন সকাল বেলা উনি ঐ রুমে গিয়ে আমাকে ডাকে,আমি ভয় পেয়ে কোনায় চলে যাই।পরে দাদা  এসে ওনাকে নিয়ে যায়।

পরের রাত খাওয়া-দাওয়ার পর  উনি বলেন কিছু করবো না,চলো আমরা গল্প করি।তিনি বলেন তুমি তোমার মা বাবাকে কি বলেছিলে?। আমি বললাম ইজি না হওয়া পর্যন্ত এ সব হবে না বলেছি।

উনি বলেন আমাদের ব্যাপারটি সবার কাছে জানা জানি হয়ে গেছে,সবাই অন্য রকম ভাবছে ইত্যাদি।

এক পর্যায়ে আমি বলি আপনি আমাকে ছেড়ে দিন।এমন সময় ওনার বোন এসে বাহির থেকে দরজা আটকে দেয়।বলে এটি তো খুশীর জিনিস,আমাকে বুঝাতে চায়।বোন বলে দরজা খুলবো না,একটি মেয়েকে জোর করে বিছানায় নিতে পারবি না? তোর অধিকার জোর করে হলেও আদায় করে নিবি।

স্বামী বলে ৬ মাস পর হলেও করবা,এখন ৫ মিনিট সময় দিচ্ছি তুমি রেডি হও।
আমি আতঙ্কিত হয়ে এন্টি কাটার ও চাকু নিয়ে দাড়াই।
সে দরজা খোলে সবাইকে ঢেকে আনে।সবাই আমাকে ধরতে চায়।আমি বলি ধরবে না,ধরলে লাগাইয়ে দেবো।
মা আমাকে ধরে হাতে কামড় দেয় যাতে হাত থেকে চাকু পরে যায়।উনিও এগিয়ে ধরতে আছেন।আমি হাত ঘুরাতে ওনার হাতে লেগে হাত কেটে যায়।আমি জেঠাতো ভাইয়ের শার্ট ধরে কাদতে থাকি ও বলি ভাই আমি এ সব পারবো না,আমাকে সাহায্য করো।

উনাকে হাসপাতালে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে আনা হয়।তার বোন এসে কান্না কাটি ও জেদ করে।বাবা বলে আমি আর বাসায় যাবো না।এতে আমি ভয় পেয়ে যাই।
রাতে মা ও স্বামী একজন গাইনিকলজি
স্ট এর কাছে নিয়ে যান।
ওনাকে সব বলি।উনি মাকে বলেন মেয়েকে জোর করবেন না এতে ডিভোর্স পর্যন্ত চলে যেতে পারে।এও বলেন স্বামী যাতে নিজেদের বিষয় তার বোনকে কিছু না বলে।

রাতে বাসায় নালিশ বসে।

দাদা বকে,চাচা স্বামীকে বলে ওর দু'গালে দুটি চড় মেরে দিতে পারলে না? আব্বুও কয়েকবার মারতে আছে।
আমি বলতে চাইলাম আমার দ্বারা এ সব সম্ভব না। চাচা বলেন বিয়ে মানে এ সব হয়।
সবার কথা অনুযায়ী আমাকে উনার পা ধরে মাফ চাইতে হয়।

উনি বলেন আপনার আর পড়া লেখার দরকার নাই।এরপর আমাকে গৃহবন্ধি করে রাখে।কোথাও যেতে দেয় না।

উনাকে বলি আজকের রাত এভাবেই থাক।উনি বলেন ঠিক আছে ঘুমাও।উনার বোন দরজায় কান দিয়ে ছিলেন আমরা কিছু করছি কিনা।পরদিন ওনার বোন ওনাকে জিজ্ঞেস করে কয়বার করছোস,দুই বার না তিন বার(সবাই আশা করেছিলেন ঐ দিন আমরা কিছু করবো)।উনি সমস্যা নাই বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

একদিন পর আবারোও উনি পীড়াপীড়ি করাতে আমি রাজী হই।( আমি সারাক্ষন চোখ বুজে ছিলাম)।

বেশী চাপে থাকলে আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।একদিন রাতে না হওয়াতে ভোর বেলা আমার মাথা ধরে ঝাকি দিতে থাকে ও বলে এখনো তোমার শরীর ভালো হয়নি,আমার যদি নিড পূরন না হয় কেন এতো কিছু করবো,বাজার করবো না ইত্যাদি।উনি সব কথা রেকর্ড করে ওনার বোনকে শুনায়।

উনাকে টাচ করতে না দিলেই বলে তোমার অন্য কোথাও রিলেশন আছে।
ওনার বোন বলে আমার ভাই যদি এ ভাবে কন্ট্রোল করে ওর সেক্স নষ্ট হয়ে যাবে,তুমি আসলেই সংসার করবে কিনা,ওর সুখ না হলে,নিড পূরন না হলে বিয়ে করে কি লাভ?

ওনার বোন আমাকে গাইনীর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় ও তাড়াতাড়ি কনসিভ করার ঔষধ চায়।হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের কাছেও কনসিভ করার ঔষধ চায়।
স্বামী প্রায়ই খোটা দিয়ে বলে আমি চলে গেলে তুমি তো উড়াল দেবা।ওনার বোন বলে তোমার আব্বু আম্মুর লাভ ম্যারিজ হয়েছে এবং তারা বিয়ের আগেই শারিরীক সম্পর্ক করেছে।

আমি বলি আপনার প্রতি ফিলিং আসে না, আমি কি করবো। উনি রেগে গিয়ে বলেন বিয়ের  পূর্বে তোমার কোন ছেলের সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে তাই আমার প্রতি ফিলিং আসে না।বলেন তার সঙ্গে তোমাকে বিয়ে দিয়ে দেবো।

আমার এক বান্ধীর বাসায় বেড়াতে যাই।উনি বলেন দেখো তোমার ফ্রেন্ডরা কয় টাকার জিনিস পরে,আর আমি তোমাকে বিয়েতে ৪০ হাজার টাকার লেহেঙ্গা কিনে দিয়েছি,ওরা কি খায় আর আমাদের বিয়েতে কি খাবার দাবার ছিল।

রাতে ঘুমিয়ে যাই। সকালে উঠে দেখি ড্রয়ারে আমার গয়না,ওনার গয়না এমনকি ওনার কাগজ পত্র কিছু নাই।জিজ্ঞেস করি কি করেছেন, উনি বলেন আমি রেখেছি চিন্তা করো না।

আমার মা-বাবার সঙ্গে একদিন উনার কথা কাটাকাটি হয়।উনি বলেন আমি সেইফ ফিল করি না,আমি থাকবো না।পরদিন ওনার বোন আসে,উনি বলেন আমি সরি বলবো না।
সব কিছু দেখে আমি অসুস্হ হয়ে পড়ি।
বুকে প্রচন্ড ব্যাথা হয়।মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হই।

সেখানকার ডাক্তাররা সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাতে বলেন।

আমার এখন ওনাকে কোন ভাবেই সহ্য হচ্ছে না

আমার কিছু পর্যবেক্ষন ও মন্তব্য:

ক।আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে ৮০-৮৫% যৌন সমস্যা মূলত মানসিক সমস্যা।

অনেক ধরনের যৌন সমস্যা রয়েছে

তবে সব চেয়ে কমন সমস্যাটি হলো যৌনতায় কম সক্রিয়/ কম উদ্দীপ্ত হওয়া( hypoactive sexual disorder)।আরেকটি হচ্ছে যৌন অনীহা,ঘৃনা,অরুচি বা বিরক্তি(sexual aversion disorder)।

যৌন অরুচি বা ঘৃনা,বিরক্তি একটি গভীরতর বিরাগ।তারা শুধু যৌনতায় কম উদ্দীপ্ত হয় তা না,তারা সকল প্রকার যৌন স্পর্শকে পর্যন্ত এড়িয়ে চলে।যে কোন যৌন সংস্পর্শকে তারা ঘৃনার সঙ্গে প্রত্যাখান করে থাকে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা কোন এক সময় করা যাবে।এ ক্ষেত্রে এতটুকু বলে রাখি এ দুটি যৌন সমস্যাই মানসিক চিকিৎসায় সারানো যায়।চিকিৎসা নিলে লাবনীর ও তার স্বামীকে এমন করুন ও জটিল অবস্হায় পড়তে হতো না।

এই কেইসের পর্যবেক্ষন:
১। বিয়ের আগেই লাবনী বলেছে তার যৌন জড়তা বা অনাগ্রহ রয়েছে।তার মানে এটি প্রাথমিক স্তরের রোগ যার ভিত্তিমূল গভীরে, যা নিছক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠিক করার মতন নয়।

২। বিপরীত দিকে তার স্বামী প্রথম দিন থেকে তার প্রতি তীব্র যৌন আকর্ষন বোধ করতো এবং এটিকে সে ও তার বোন নিজেদের অধিকার বলে মনে করে।

৩। এমনকি বিবাহিত জীবনেও স্ত্রীর অমতে জোর করে শারিরীক সম্পর্ক করা যে বেআইনী এটি অনেকের মতন তাদের কারোই জানা নেই।

৪। বেআইনী হোক বা না হোক এটি যে একটি মানসিক রোগ এটি তাদের মতন আমাদের দেশে অনেকেই জানে না।

৫। জোর করলে যে পরিস্হিতি আরো জটিল ও খারাপ হবে এটি তাদের কারো ধারনায় ছিল বলে মনে হয় না।

৬। মনের বিরুদ্ধে জোর করাতে যৌন অনাগ্রহ,অরুচি এখন স্বামী ঘৃনায় রূপ লাভ করেছে।লাবনী এখন বলে আমি তাকে সহ্য করতে পারছি না

৭। অথচ সার্বিক বিবেচনা করলে লাবনী,তার স্বামী,স্বামীর বোন ও লাবনীর আত্মীয় কাউকে খারাপ বলা বা তাদের অবস্হান থেকে খুব একটি অন্যায় কেউ করেছে বলা যাবে না

৮। ভুল শুধু এক জায়গায়, কেউই ভাবতে পারেনি এটি একটি মনো-যৌন সমস্যা যা চিকিৎসায় ভালো করা যায়।
জোর করলে বরং পরিস্হিতি আরো জটিল হয়।

*** যৌনতা মানব জীবনে গুরুত্বপূর্ন বিষয়।তাই লজ্জা করে বা পাপ/ নোংরা জিনিস মনে করে এ বিষয়ে অজ্ঞ থাকলে জীবনে সঙ্কট দেখা দিতে পারে

Monday, November 21, 2016

যাহা বলিব সত্য বলিব:২

বিবেকের কাঠ গড়ায়

(এবিসি রেডিও এর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান (জেবিএসবি)-যাহা বলিব সত্য বলিব এর নিয়মিত পরামর্শদাতা হিসেবে অভিজ্ঞতার কিছু অংশ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে এই বিভাগ)

ঘটনা সংক্ষেপ:

আবেদ(ছদ্ম নাম) বয়স বর্তমানে ২৫।
মোটামোটি স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান।ইন্টারমিডিয়েট পাশ।
সে প্রায়ই ব্রীজের উপর ঘুরে বেড়াতো।
একদিন সেখানে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় যে ছিনতাই দলের সদস্য ছিল।
আলাপের পর আবেদ অনুপ্রানিত বোধ করেন।

সে ভাবতে থাকে এদের সঙ্গে থাকলে সবাই ভয় পাবে,সবাই তাকে খাতির ও সমাদর করবে।
সে নিজেকে এ ভাবে "হিরো" হিসেবে কল্পনা করতে লাগলো।
ঐ বড় ভাই তাকে টেলিফোনে  পাবনার সর্বহারা দলের এক বিগ বসের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
বস তাকে লোভ দেখায় তোমাকে দূরুত বড় লোক বানিয়ে দেবো,তোমার অনেক উন্নতি হবে।তবে আমাদের কথামত কাজ করতে হবে।

আবেদ বললো,বস যা বলবেন সব করবো।

এর মধ্যে আবেদের এক বন্ধু তাকে প্রস্তাব দেয় তার সঙ্গে ঢাকা যেতে,কেননা সে বিদেশ যাবে সে কারনে তাকে টাকা জমা দিতে ঢাকা যেতে হবে।

সে এ কথা তার ঐ সন্ত্রাসী বন্ধুকে বলে।
ঐ বন্ধু ও তাদের লিডার তাকে বলে সে যেন ঐ ছেলের সঙ্গে যায় এবং তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে লন্চ থেকে রাতের অন্ধকারে থাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেয়( চাদপুরের লন্চে ঢাকা আসার কথা)।

সে এ কথায় রাজী হয়।
লন্চে এসে আবেদ দেখে সন্ত্রাসী বন্ধু আরো একজনকে সঙ্গে নিয়ে লন্চে উঠেছে।
সে ঐ ছেলেকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলে ও তার টাকা হাতিয়ে নেয়।
আবেদ পরে ভাবে টাকা তো নিয়ে ফেলেছি তাই মারার কি দরকার।সে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ঐ সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়।তারা তাকে ১০ হাজার টাকা দেয়।

এতেই সে মহা খুশী।
জীবনে এক সঙ্গে এত টাকা সে কখনো কামাই করতে পারেনি।
পরে সে কিছুটা অনুতপ্ত হয়ে সেই বন্ধুকে বলে দেয় যে তারা তার টাকা নিয়েছে এবং এটি সে তাকে ফেরত দেবে।
আবেদনকারী তার মাকে বলে  কাজ পাওয়ার জন্য টাকা ধার নিয়েছিল,সে গুলো খোয়া গেছে।এখন মা যেন ধার করে হলেও সে টাকা তাকে দেয়।
মা সুদে টাকা ধার নিয়ে তাকে দেয়।

পরে ঐ বন্ধু তার মা ও অন্যান্যদের বলে দেয় যে সে তার টাকা ছিনতাই করে নিয়েছে।তাই সে বাধ্য হয়ে ঘর ছাড়ে।

সন্ত্রাসী বন্ধুরা তাকে আশ্রয় দেয় ও সাহস যোগায় যে এটি ছিল তার প্রথম কাজ তাই ঝামেলা হয়েছে।
পরবর্তীতে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওরা তাকে গ্রীনলাইফ বাসের কাউন্টারে চাকরী জোগাড়  করে দেয়।
তাদের পরামর্শে এক সময় সে সেখান থেকে ২ লাখ টাকা চুরি করে পালিয়ে আসে।
সে টাকাও সে ওদের হাতে তুলে দেয়।তাকে ২০-৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

এ ভাবে সে ৩-৪ টা সফল মিশন করে।

এর মধ্যে সে বিয়ে করে এবং এক সন্তান ও হয়।

ঐ চক্র এবার তাকে শ্বশুড় বাড়ীর লোকদের সরকারী চাকরী দেবার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বুদ্ধি দেয়।
সে তাই করে এবং ৮০ হাজারের মতন টাকা বাগিয়ে আনে।কথা ছিল ২-৩ মাসের মধ্যে চাকরী দেবে।

চাকরী দিতে না পারাতে সে চাপের মুখে পড়ে।

তখন সে তার সন্ত্রাসী বন্ধুদের বলে তোমরা আমাকে  বড় লোক  বানিয়ে দেবে বলেছিলে,অনেক উন্নতি হবে বলেছিলে, তোমরা কথা পূরন করো।
তখন তারা তাকে পাল্টা হুমকি দেয় যে তুমি অনেক অপরাধ করেছো,বেশী বাড়াবাড়ি করলে তোমাকে ফাসিয়ে দেবো।

তখন সে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে ও নিজের  মোবাইলের সীম বদলে ফেলে।

এর পর ও তার বড় সন্ত্রাসী হওয়া, ক্ষমতাবান হওয়ার বাসনা রয়ে যায়।

সে ইন্টারনেটে একটি গ্রপের সঙ্গে পরিচিত হয়।

তারা নিজেদেরকে জঙ্গি  আই এস  বলে দাবী করে।
সে ভাবে এবার সে আরো বড় ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে।কিন্তু ঐ চক্র তার কাছ থেকে হাদিয়া হিসেবে টাকা চায় এবং অন্যান্য কার্যকলাপে  তার কাছে মনে হলো যে এটি ভুয়া গ্রপ।

এর পর সে র্যাব এর কাছে যায় ও তার জীবনের সব কথা বলে দেয়ও সে ভালো হওয়ার সুযোগ চায়।।

র্যাব এর লোকেরা তার মোবাইল ঘাটাঘাটি করে বলে ঐ গ্রপ ভুয়া এবং তাকে ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলে ছেড়ে দেয়।

এখন সে সত্যি ভালো হতে চায়।সে তার বউ এর সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ করেছে।

আমরা আবেদের অপরাধ জগত থেকে স্বাভাবিক জগতে ফিরে আসাকে স্বাগত জানাচ্ছি  ও তার পরিবারের জন্য  দোয়া করছি

আমার কিছু পর্যবেক্ষন:

১।কৈশোর বয়সে এডভান্চিরিজম,হিরো ইজম একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।
কেউ হিরো হতে চায় বড় বিজ্ঞানী হয়ে,বিখ্যাত লেখক,গায়ক,নায়ক বা খেলোয়ার,রাজনীতিবিদ হয়ে।
আবার আবেদের মতন কিছু তরুন হিরো হতে চায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী হয়ে।

কেন  আবেদদের রোল মডেল এমন হয়?

আবেদ অনুপ্রানিত বোধ করলো ক্ষমতা পেয়ে অন্যকে ভয় দেখাতে পারবে বলে।

ভয় দেখিয়ে সমাদর,সম্মান, অন্যের সালাম পাওয়ার এই রোল মডেল তারা কি আমাদের সমাজ থেকেই পাচ্ছে না?

আমাদের সমাজে শিক্ষিত,মেধাবী,জ্ঞানী,সৎ, উচ্চ নৈতিকতার মানুষরা কি সবার কাছ থেকে,রাস্ট্র, সমাজ থেকে যথাযথ সম্মান,গুরুত্ব ও মর্যাদা পাচ্ছে?

পদ পদবী,ক্ষমতা,অর্থ,প্রতিপত্তি কি তাদের দখলে না, নাকি তা বিবেক বর্জিত,অসৎ,পা চাটা,চামচা জাতীয় মাস্তান গ্রপের হাতে জিম্মি?

বর্তমান প্রজন্ম নৈতিক উন্নতির চেয়ে বৈষয়িক উন্নতির কথা আগে ভাবে।

সমাজ,রাজনীতি,প্রশাসন,ব্যবসায় কারা উন্নতি করছে?
কারা সামনের কাতারে আছে?

রোল মডেল তারা হবে নাকি অসম্মানিত,উপেক্ষিত,পিছিয়ে থাকা নীতি বাগিশরা হবে?

২।পাবনার সর্বহারা দলের নেতা(?) চাদপুরের প্রতারক চক্রকে নিয়ন্ত্রন করে।
আদর্শবাদের চর্চা করতে গিয়ে, বিপ্লবী পথ ধরতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে প্রায় বেশীর ভাগ আদর্শবাদী দল বা তার অনুসারীরা কেন সন্ত্রাসী পথ বেছে নেয়?

এটি কি সমাজ আদর্শকে গ্রহন না করাতে হতাশা, ব্যর্থতার ফলশ্রতি?

এটি কি বিপ্লবী ক্রিয়া কান্ডের সঙ্গে অনুসঙ্গ হিসেবে প্রাথমিক ভাবে উগ্র পন্থাকে,কিছুটা সন্ত্রাসকে বেছে নেওয়ার পরবর্তী ফলাফল?

বিপ্লবীদের এ দিকটি ভেবে দেখতে হবে।

৩।প্রতারক চক্র যে কত সঙ্গবদ্ধ ও বিচিত্র পন্থায় প্রতারনা,জালিয়াতি করে থাকে এটি তার প্রমান।

বন্ধু থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া,পূর্ব পরিকল্পনা মত নামকরা বাসের কাউন্টারে চাকরীর নামে টাকা লুট,চাকরী দেবার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে সর্বসান্ত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া- কি না?

এই জালিয়াতি চক্র ঠান্ডা মাথায়, প্রচুর বুদ্ধি খাটিয়ে অভিনব পদ্ধতি আবিস্কার করে মানুষকে প্রতারনার ফাদে ফেলে।

সাধারন মানুষের পক্ষে এমন প্রতারনা ধরা কঠিন।

তাই রাস্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এবং সংবাদ মাধ্যমকে এ বিষয়ে অগ্রনী ভূমিকা নিতে হবে।

যাতে সাধারন মানুষ এ রকম প্রতারনা ফাদে না পরতে পারে।

৪। বিভৎস্য ব্যাপার হচ্ছে সামান্য কিছু টাকার জন্য এত দিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে লন্চ থেকে নদীতে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে ও তার বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ কাজ করেনি।

পত্র পত্রিকায়  প্রায়ই আমরা দেখি বন্ধুর মোবাইল ফোনটি নেওয়ার জন্য বা তেমন দামী কিছু(তাদের কাছে কয়েক হাজার টাকার জিনিসই মহা মূল্যবান) জিনিসের লোভে কিছু কিশোর একত্র হয়ে ঐ ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।

লোভ মানুষকে অমানুষ বানায়।

আমরা কি শিক্ষা নিচ্ছি,পাচ্ছি বা দিচ্ছি শিশুদেরকে?

নিজ পরিবারে,আপন সমাজে কিসের হাতছানী আমাদেরকে বেশী টানে?

কোথায় সে উদাহরন যে লোভ,লালসা,কামনা নয় সৎ,সুন্দর,নৈতিক জীবনই অধিক কাম্য?

৫। আবেদ প্রতিবারই নিজে টাকা চুরি করে বা প্রতারনা করে ঐ চক্রের হাতে দিয়ে দেয়।
সে তো ইচ্ছে করলে নিজের অসৎ উপার্জন নিজের কাছে রাখতে পারতো।

সে কেন তাদের ক্রীতদাস হতে গেলো?।

কারন এ রকম অসৎ,বে-আইনী পথে যারা হাটে তারা শক্তি,ভরসা পায় কোন গড ফাদার বা রাজনৈতিক শক্তি থেকে।

তারা নিজেরা হচ্ছে খুবই ভীতু ও দুর্বল।

পিছনের খুটির বলে তারা ক্ষমতার দম্ভ দেখায়।

ঐ মদদ দাতাদের বিরুদ্ধাচারন করে তারা শুধু টিকে থাকতে পারবে না তা নয়,তাদের অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যেতে পারে।

আবেদও তার প্রমান।

৬।আই এস সহ মুসলিম জঙ্গী গোষ্ঠীতে কেবল মাত্র আদর্শের কারনে,ধর্মীয়  কারনেই যে সব তরুন যায়,তা নয়।

আবেদের মতন কিছু তরুন ক্ষমতা পাওয়া ও বড় সন্ত্রসী হওয়ার জন্যও এতে যোগ দিতে পারে।

৬।ইন্টারনেটে  বিভিন্ন প্রতারক চক্র রয়েছে তা  আমরা জানি।

কিন্তু আই এস বা ইসলামী জঙ্গি নামে ভুয়া গ্রপও তৈরী হচ্ছে এটি নতুন জানা।
ভেজাল সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে

এটি ভয়াবহ সংবাদ