Thursday, November 10, 2016

রোগ কাহিনী/রোগী কাহিনী:৮

কোন দানব প্রজন্ম তৈরী করছি আমরা?

মোটর সাইকেল না দিলে তোমাদের ঐ ছেলের মতন পুড়িয়ে মারবো:

আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে কিছু দিন আগে এক দানব সন্তান নতুন মডেলের মোটর সাইকেল কিনে না দেওয়াতে মা-বাবাকে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে?

আমাদের আজকের রোগ কাহিনীর এই "সু সন্তানের " কাহিনী তার চেয়ে জগন্য এবং তার দানবীয় নৃশংসতা শুরু এরও অনেক আগ থেকে

কাহিনী সংক্ষেপ:

কামরান(ছদ্ম নাম) বয়স ২৫
২০১০ এ এসএসসি পরীক্ষার  পূর্বে বাবার কাছে মোটর সাইকেল চায়(বুঝতেই পারছেন এ ঘটনা ঐ ছেলের ঘটনার অনেক আগের ঘটনা)।

তার মানে পুড়িয়ে মা-বাবা মারার বহু ছেলে আমাদের ঘরে ঘরে আছে, শুধু হেড লাইন হচ্ছে না সত্যি করে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা এখনো হয়নি বলে।
বাবা আশ্বস্ত করেন এ+ পেলে মোটর সাইকেল কিনে দিবেন।
যথারীতি পুত্রধন এ+ পেতে ব্যর্থ হন।তাই মোটর সাইকেল দেওয়া হয়নি।

রাজপুত্র এতে খুব ক্ষিপ্ত হন।তিনি ঘরে ভাংচুর করেন। তিনি নতুন আবদার তুলেন মোটর সাইকেল না দিলে তিনি আর পড়াশোনা করবেন না।
বাবা এবার খুব কঠোর হন,বলেন ভাংচুর যত করো মোটর সাইকেল পাবে না।

রাগ করে আমাদের সোনার ছেলে ১ বছর কোন লেখা পড়া করেনি।

কিন্তু তাকে বোঝানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।সবাই বলছে আব্বু পড়াশোনা শুরু করো এক সময় তুমি মোটর সাইকেল পাবে।

ঘুষ দেওয়ার প্রতিশ্রতিতে ওনার মন নরম হয়।তিনি পড়াশোনা শুরু করেন।

কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই তিনি বেকে বসেন।পড়াশোনায় উনার মন বসে না।
তিনি আবদার করেন তার কলেজ চেইন্জ করে দিতে হবে।
তথাস্ত, তাই হলো।সেখানেও এক ম্যাডামের সঙ্গে গন্ডগোল বেধে যায়।
তিনি এসএসসির টেস্ট এ এলাউ হননি।
অনুরোধ করাতে আরো দু'বার সুযোগ দেওয়া হয়।কিন্তু উনি কৃতকার্য হতে পারেননি।ফলে পরীক্ষা দেওয়া হয় না।এর পরের বছর ও তিনি পারলেন না।

এবার তিনি  তার বাবাকে বলে প্রিন্সিপ্যালকে মারতে হবে(বাবা যেহেতু  পুলিশ প্রশাসনের)। তার ভাষায় তোমার ক্ষমতা আছে তাদের শায়েস্তা করার তুমি করছো না কেন?
অসহায়,নিরীহ বাবা গালমন্দ খেতে থাকেন।
এর পর থেকে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
একমাত্র বোন তাকে গালিগালাজ, মারধর করে।
বাবাকে বাবা বলতে অস্বীকার করে।

এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়, কিন্তু মেয়ে রাজী না।
তার আবদার ঐ মেয়েকে এনে দাও না হয় গাড়ী দাও

চাচার সঙ্গে বাবার দ্বন্ধ,তাই বাবাকে বলে চাচাত ভাইকে জেলে দাও

বাবা এ সব না করলে তাকে গালি দেয়,লাথি মারে,ঘুষি মারে,গলা চেপে ধরে মেরে ফেলবে।

ইন্টারনেট ঘেটে গালি বের করে,যাতে সবাইকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে পারে।

এরই মাঝে মোটর সাইকেল না পেয়ে মা-বাবাকে পুড়িয়ে মারার ঐ ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে আসার পর সে বলে, তোমাদেরকেও এমন ভাবে মারা হবে।

সে আর্মির পোষাক পরে,বুলেটপ্রফ জ্যাকেট পরে,পিস্তলের খাপ, বুট জুতা পরে  এমন ভাবে  থাকে যেন সে যুদ্ধে যাচ্ছে

ইতিমধ্যে বাসার টিভি,ফ্রিজ,ট্যাব,মোবাইল সব ভেঙ্গে ফেলেছে।

তবে সে নেশা করে না
সব অত্যাচার তার ঘরে, বাইরে সে ভদ্র।

এখন তার দাবী
গাড়ী দাও,মোটর সাইকেল দাও,ঐ মেয়েকে এনে দাও,আমার হারানো ৬ বছর এনে দাও।

তা নাহলে এক দিনে মারবো না,কষ্ট দিয়ে দিয়ে তিলে তিলে মারবো
(কিন্তু তার বাবা ও বোনের আশঙ্কা যে কোন সময় সে তাদের খুন করে ফেলবে)।

কাহিনী আপাতত শেষ

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কি ভাবে নিজ ঘরে এমন দানব গড় উঠে?

কি ভাবে তোমার বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে?

( পরবর্তী লেখায় তা নিয়ে আলোচনার আশা রাখি)

2 comments:

  1. আমার এভাবে বলাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না, তারপরেও বলছি , যার বাবা পুলিশ, মাসের বেতনের থেকেও যার উপরি আয় অনেক বেশি কিছু অসহায়, বিপদ্গ্রস্থ মানুষের টাকায় আর সেই টাকায় যখন পরিবারের সদস্যদের চাহিদা, বিলাসিতা পূরণ করা হয় যা দেখতে দেখতে সন্তানেরা বড় হয় বেশির ভাগ সময় এইসব ক্ষেত্রে কিছু দানব সন্তান তৈরি হয়ে যায় । ঐশীর কথা আমরা সবাই জানি, এছাড়াও সন্তানকে যথেষ্ট সময় না দেওয়া, ধর্মীয় শিক্ষা সেই ভাবে না দেওয়া, চাওয়া মাত্রই সন্তানের আবদার পূরণ করা এই বিশয় গুলো আরও বেশি প্রভাব ফেলে।

    ReplyDelete
  2. we partially agree with you.raita jbs

    ReplyDelete