সন্তান বখে যাওয়া,উচ্ছৃঙ্খল,নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার:
পর্ব-১
মা-বাবা ও সমাজের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি ও হতাশাজনক অবস্হা হচ্ছে যখন শিশু-কিশোররা অস্বাভাবিক সমাজ-বিরোধী এবং আইন ও নৈতিকতা বিরোধী কার্য কলাপে জড়িয়ে পড়ে।
ঐশীর কথা মনে আছে?
মোটর সাইকেল কিনে না দেওয়াতে মা-বাবাকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ত সে দিনের।
এ রকম হাজার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।
কিন্তু কেন
 এর প্রতিকার কি? 
(আমার" শিশু বিকাশ-৩য় খন্ড: অটিজম- মৃগীরোগ,বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা-আচরন সমস্যা-"- বইতে আমি এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আগ্রহী পাঠক পড়ে দেখতে পারেন)
এখানে আমি সংক্ষপে ঐ বই থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ তুলে ধরবো:
বখে যাওয়া বা আচরন সমস্যা বলতে কি বোঝায়?
সরল ভাবে বললে:
শিশু ও কৈশোর কাল থেকেই ধারাবাহিক ভাবে,অটল ভাবে বার বার এমন কাজ ও আচরন করা যা
শিশু ও কৈশোর কাল থেকেই ধারাবাহিক ভাবে,অটল ভাবে বার বার এমন কাজ ও আচরন করা যা
১।অন্যদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে(basic rights of others) ও
২।সামাজিক আদর্শ,নীতি, রীতিকে ভঙ্গ করে(social norms and rules)।
মোটাদাগে এ ধরনের আচরনকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়:
১।আক্রমনাত্মক আচরন: যা অন্যকে ক্ষতি করে বা ক্ষতির জন্য হুমকিস্বরূপ(aggressive behavior)।
২।সম্পদের ক্ষতি সাধন
৩।প্রচ্ছন্ন আগ্রাসী আচরন(covert aggressive behavior): যেমন-- প্রতারনা,প্রবন্চনা করা,চুরি করা
ও
৪।নিয়ম-রীতি ভঙ্গ করা(rule violation)
৪।নিয়ম-রীতি ভঙ্গ করা(rule violation)
সারা বিশ্বেই শিশু কিশোরদের মানসিক সমস্যার মধ্যে এই আচরন সমস্যা সবচেয়ে কমন সমস্যা।
প্রশ্ন হচ্ছে আচরন সমস্যা কখন বলবো?
ন
বেশীর ভাগ শিশুই মাঝে মধ্যে আচরনগত সমস্যা করে থাকে।
মা-বাবারা প্রায়ই ২য় বছরের শিশুকে "ভয়াবহ,ভয়ঙ্কর" (terrible two) বলে থাকেন; তিন বছরের শিশুকে "বিভৎস্য,ভয়াল" ( horrible three) বলে থাকেন।
বেশীর ভাগ শিশুই মাঝে মধ্যে আচরনগত সমস্যা করে থাকে।
মা-বাবারা প্রায়ই ২য় বছরের শিশুকে "ভয়াবহ,ভয়ঙ্কর" (terrible two) বলে থাকেন; তিন বছরের শিশুকে "বিভৎস্য,ভয়াল" ( horrible three) বলে থাকেন।
তাই এটি সামগ্রিক বিকাশের প্রেক্ষাপট থেকে বলতে হবে এবং সেটি যখন লাগাতার হয় ও ধ্বংসাত্মক বা বিপদজনক হয় তখন সেটিকে আমরা আচরন সমস্যা বলতে পারি
কিছু তথ্য:
মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মধ্যে আচরন সমস্যা ৪ গুন বেশী দেখা যায়,তবে কৈশোরে কমে ২ গুন হয়।
গ্রামের চেয়ে শহরে বেশী হয়
সুবিধে বন্চিত,অধিক জুকিপূর্ন শহরের অভ্যন্তরে,নিম্ন আয়,নিম্ন আর্থ সামাজিক অবস্হানে বেশী দেখা যায়
(ইদানীং ধনী,শিক্ষিত পরিবারেও বেশী দেখা যাচ্ছে।তবে সেগুলো সংবাদ মাধ্যমে বেশী হাইলাইট  হচ্ছে বলে)
এটি কি সামাজিক সমস্যা না মানসিক রোগ?
উত্তর হচ্ছে এটি দু'টিই
এটি সামাজিক সমস্যা কেননা:
সামাজিক সক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকা সত্ত্বেও,মানসিক অবস্হা আপাত অক্ষুন্ন থাকা সত্ত্বেও, ব্যক্তি সামাজিক রীতি-নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হন।তাই এটি সামাজিক ভাবে নির্ধারিত।
এটি মানসিক রোগ ও কেননা:
আচরন সমস্যার পিছনে বংশ ধারা ও বায়োলজিক্যাল কারন গুরুত্বপূর্ন।তাছাড়া এটি ঔষধ ও মনস্বতাত্বিক চিকিৎসায় ভালো করা সম্ভব।
৩টি উপবিভাগ রয়েছে:
১।আচরন সমস্যা শুধু নিজ বাসা/বাড়ীতে দেখা যায়,বাইরে তারা ভদ্র( গত রোগ কাহিনীর দানব সন্তান এ ধরনের)
২।অসামাজিক আচরন সমস্যা(unsocialized conduct disorder) :এ ক্ষেত্রে তাদের কোন বন্ধু থাকে না
৩।সামাজিক আচরন সমস্যা( socialized):এ ক্ষেত্রে সঙ্গীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে।
লক্ষন সমূহ:
DSM- অনুসারে:
ক।মানুষ ও প্রানীর প্রতি আক্রমনাত্মক আচরন( aggression to peoples and animals) :
১।প্রায়ই সঙ্গী সাথীদের উক্তত্য করা;উপহাস করা;হুমকি দেওয়া;ভয় দেখিয়ে বশে আনার চেষ্টা করা।
২।প্রায়ই মারামারিতে লিপ্ত হওয়া
৩।তেমন অস্ত্র ব্যবহার করা যা অন্যের শরীরে গুরুতর ক্ষতি সাধন করতে পারে(ব্যাট,ইট,ভাঙ্গা বোতল,ছুরি,বন্দুক)
৪।মানুষের সহিত বা প্রানীর প্রতি শারিরীক ভাবে নিষ্ঠুর, নির্দয় আচরন করা
৫।চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি করা
৬।কাউকে যৌনতায় অংশ গ্রহনে জোর করে বাধ্য করা
খ।সম্পত্তির ধ্বংস সাধন করা:
১।ক্ষতি করার জন্য ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া
২।ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যান্য উপায়ে সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করা
গ।প্রতারনা,প্রবন্চনা,বা চুরি করা:
১।অন্যের বাসায় ঢুকে পড়া ও চুরি করা
২। কিছু পাওয়ার আশায় বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রায়ই মিথ্যে কথা বলা
৩।ভেঙ্গে ঢুকে না পরেও অন্য ভাবে চুরি করা
,জালিয়াতি করা,প্রতারনা করা
ঘ।রীতি-নিয়ম গুরুতর ভাবে লঙ্গন করা:
১।১৩ বছরের পূর্বে থেকেই মা- বাবার নিষেধ সত্বেও রাতে বাইরে থাকা
২।কম পক্ষে ২ বার বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া ও বাইরে রাত কাটানো
৩।১৩ বছরের পূর্ব থেকেই প্রায়ই স্কুল ফাকি দেওয়া বা স্কুল পালানো
ঙ।আচরন সমস্যা তার সামাজিক,একাডেমিক বা পেশাগত জীবনকে গুরুতর ভাবে ব্যাহত করে
চ।উপরোক্ত লক্ষনের মধ্যে ৩ বা ততোধিক লক্ষন থাকতে হবে
পরবর্তী পর্বে: শ্রেনীভেদ,কারন ও প্রতিকার
 
No comments:
Post a Comment