পর্ব-২:
( পর্ব-১ পুনরায় দেখে নিন)
৪।" টক্সিক" মানুষদের টিটকারি, অপমান,অবজ্ঞা, শ্লেষ মেনে নিয়ে জীবন যাপন করছেন? এই টক্সিক বা বিষাক্ত মানুষ গুলো থাকতে পারে আপনার কর্মস্হলে,সামাজিক জীবনে কিংবা পরিবারেও।এদেরকে সহ্য করে যাওয়া,এদেরকে " বাতিল" করে দিতে না পারা মানে আপনি ভীত, শঙ্কিত এই ভেবে যে এদের ঘাটলে,ক্ষেপালে আপনি একাকী হয়ে পড়বেন,আরো আক্রমন,প্রতিহিংসার সম্মুখীন হবেন।একটি স্বাধীন,মুক্ত,উন্নত মস্তক নিয়ে আত্ম মর্যাদাশীল, সম্মানিত জীবন বাদ দিয়ে ঐ দূর্বৃত্ত,বিষাক্ত কীটদের ছোবল খেয়েও তাদের সঙ্গে আপোষ করে,মাথা নত করে,হীন,মর্যাদাহীন জীবন যাপন বেছে নেওয়া মানে ন্যুনতম আত্ম মর্যাদা না থাকা।এখন সিদ্ধান্ত আপনার
৫। আপনি সব সময় প্রোডাক্টিভ কিছু করার তাড়নায় থাকেন? বিশ্রাম, বিনোদনে সময় ব্যয় করলে নিজকে অপরাধী মনে হয়, লজ্জা অনুভব করেন? নিজকে অকাজের মনে হয়? তার মানে বসকে তুষ্ট করতে,কলিগদের টেক্কা দিয়ে নিজে অনেক দায়িত্ববান, কাজের লোক প্রমান করার তাগিদ আপনার বেশী। অবশ্য নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন, কিন্তু প্রয়োজনীয় বিশ্ামর,বিনোদন বাদ রেখে নয়।( কোন প্রতিষ্ঠান ই আপনার একার উপর নির্ভরশীল নয়।নিজকে অপরিহার্য প্রমান করে সাময়িক সুবিধা পাবেন কিন্তু হারাবেন নিজের মতন,মুক্ত,আত্ম মর্যাদাশীল জীবন। এটি অন্তর্গত মানসিক দারিদ্রতা মাত্র। কেউ আছেন পরিবারে অশান্তি তাই অফিসেই সারাক্ষণ থাকি,কলিগরা দায়িত্বহীন, অকাজের,আমি ছাড়া প্রতিষ্ঠান অচল ইত্যাদি কারনে দিনরাত কাজ পাগল হয়ে থাকেন।মনে রাখবেন প্রোডাক্টিভ মানুষের চেয়ে সমাজে সৃজনশীল মানুষ বেশী দরকার।
৬। অতীতে যা ঘটে গেছে তা সহজে ভুলতে পারেন না? অতীত আপনাকে বিষন্ন,হতাশ,হেয়,ছোট করে রাখে? পীড়ন,যন্ত্রনা,অপমান,ব্যর্থতা কোন কিছুই ভুলতে পারছেন না? তার মানে অন্যদের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কে কি বলেছে,করেছে সে ক্ষেদ,ক্ষোভ মন থেকে মুছতে পারছেন না এই জন্য যে আপনি তাদেরকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছেন।আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ নিজের চেয়ে অন্যকে এতো প্রাধান্য দেয় না।তারা তাদেরকে এতো গুরুত্বপূর্ণ ভাবে না যে তাদের কথা,মন্তব্য, আচরন তাকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে যাবে
(৩য় পর্ব,- আগামীকাল)
Saturday, May 27, 2017
সাইকোলজিক্যাল টিপস-৩১: আপনি কতটুকু আত্ম মর্যাদাশীল
Friday, May 26, 2017
ডাক্তার- রোগী সম্পর্ক : ডাক্তারের কৈফিয়ত
হডাক্তার- জনগন সম্পর্ক সব দেশে সব সময় একটি অতি সংবেদনশীল ও নাজুক সম্পর্ক।ডাক্তারদের উপর জনগনের নির্ভরতা এতো বেশী যে অনেক সময় বলা হয় ডক্টর ইজ নেক্সট টু গড।কিন্তু নির্ভরতা যেখানে বেশী আস্হার সঙ্কট ও সেখানে মাঝেমধ্যে তীব্র হতে পারে।সম্প্রতি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাবির এক ছাত্রী রক্ত ক্যানসারে মারা গেলে আবারো ডাক্তারদের উপর হামলা,ক্লিনিক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।প্রায়ই চিকিৎসায় " গাফিলতি,অবহেলার" অভিযোগে এমনকি " ভুল চিকিৎসার" অভিযোগে ডাক্তারদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে।কেন এই ভুল বোঝা- বুঝি? এর নিরসন হবে কিভাবে? এসবই এখন জাতির সামনে প্রশ্ন।
আমি মোটা দাগে বিষয়টি আলোচনা করতে চাই। জামা ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন জার্নালে এক গবেষনায় দেখানো হয়েছে কি কি কারনে ডাক্তার- রোগীর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।গবেষনায় দেখা যায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টির কারন:১। অনুচিত,অসহায় অবস্হায় রোগী রেখে দেওয়া(৩২%) ২। রোগী ও তার স্বজনদের মতামতকে কম মুল্য দেওয়া(২৯%) ৩। তথ্য সরবরাহ ভালোভাবে না করা(২৬%) ও ৪। রোগী ও তার স্বজনদের মনোগত অবস্হান ও প্রেক্ষিত বুঝতে না পারা(১৩%)। এক কথায় জনগনের কিছু " ধারনাগত"( পারসিভড) বিশ্বাস এর কারনে এই অসন্তুষ্টি ও ক্ষোভের জন্ম হয়।আমি মনে করি একই কার্যকারন আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে অন্তত কিছু সংখ্যক ডাক্তারের আচরন,পেশাগত দক্ষতার ঘাটতি নিয়ে জনমনে যে প্রশ্ন তার প্রতিবিধানের দায়িত্ব বিএমডিসি সহ ডাক্তার সমাজের কর্নধারদেরকে নিতে হবে।কানাডিয়ান মেডিকেল প্রোটেকটিভ এসোসিয়েশন এক জরীপে দেখিয়েছেন রোগী ও স্বজনদের অন্তত ১৫% থাকেন " ডিফিকাল্ট " যাদের হ্যান্ডেল করা ডাক্তারদের জন্য সত্যি দুরুহ কাজ।তেমনি ১০-১৫% ডাক্তারদের কারনে পুরো ডাক্তার সমাজকে অপবাদ দেওয়া কতটুকু সুবিবেচনার কাজ তাও সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।অনেকে এ দাবী মানতে চাইবেন না,কেননা তারা স্বাস্হ্য ব্যবস্হাপনার সকল ক্রটি,গাফিলতি,দূর্নীতিকে ঢালাও ভাবে ডাক্তার সমাজের উপর চাপিয়ে দেন।আসুন দেখি ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ তার কতটুকু স্বাস্হ্য ব্যবস্হাপনার ক্রটি( যা মূলত স্বাস্হ্য প্রশাসনের অংশ) ও আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য আর কতটুকু সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের।
১। হাসপাতালে রোগীর জটের কারনে ও স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার থাকার কারনে দায়সারা গোছের রোগী দেখা,সব ঔষধ না পাওয়া,ঔষধ বাইরে চুরি হওয়া,বেড না পাওয়া,খাবারের মান ভালো না,বাথরুমসহ সব নোংরা,আয়া- সুইপার- দারোয়ান- ওয়ার্ড বয়দের দৌড়াত্ব,দূর্নীতি ও হয়রানি -ইত্যাদি। এসবের কোনটির দায়ভারই ডাক্তারদের নয়,এগুলো পুরোপুরি প্রশাসনের দায়িত্ব,যা বাইরে থেকে জনগন বুঝতে পারেন না।দেশের সকল সরকারী অফিসে ও এরকম হয়রানি,দূর্নীতি হয় তবে সেনসিটিভ বলে হাসপাতালের দিকে মানুষের কড়া নজর। আমরা ডাক্তাররাও চাই একটি জবাবদিহিমূলক,স্বচ্ছ ও রোগী - বান্ধব পরিবেশ।সংবাদ মাধ্যম এসবের জন্য ডাক্তারদের দায়ী না করে স্বাস্হ্য প্রশাসনকে চাপ দিলে অবস্হার উন্নতি ঘটতে পারে।
২। ল্যাবরেটরি পরীক্ষা নিরীক্ষায় চার্জ বেশী, ভুল রিপোর্ট হয়,একেক জায়গায় একেক রিপোর্ট - ইত্যাদি। অনেকেই জানেন না বেশীরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক এর মালিক ডাক্তার নন,ব্যবসায়ী।উপরোক্ত অভিযোগ গুলো আমাদের ডাক্তারদের ও।এসবের প্রতিকার না হলে ভালো চিকিৎসা দেওয়াও কঠিন।এসব তদারকীর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিশেষ সেল আছে।জনগন ও সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের অব্যবস্হাপনাকে ও ডাক্তারদের গাফিলতি,অবহেলা মনে করেন।
৩। ডাক্তাররা কমিশন খায়- অর্থলোভী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা ব্যবসা জমানোর জন্য এই কমিশন প্রথা চালু করেছে।কিছু সংখ্যক লোভী ডাক্তার এতে অংশ নেয়।বর্তমানে এটি একটি প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমে দাড়িয়ে গেছে।এখন যদি কোন ডাক্তার কমিশন নাও নেন, তাতে রোগীর কোন লাভ নেই,কেননা তারা রোগীর কাছ থেকে ঐ একই হারে চার্জ রাখে।ফাকতালে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এই টাকা হাতিয়ে নিয়ে আরো লাভবান হচ্ছেন।তাই দেশের অন্যান্য দূর্নূতির সিন্ডিকেট যেভাবে ভাঙ্গতে হবেএই সিন্ডিকেটকে ও সেভাবে মোকাবিলা করতে হবে।এর জন্য গরিষ্ঠ সংখ্যক ডাক্তারকে বদনাম দেওয়া অন্যায্য কাজ।
৪। ডাক্তারদের প্রতি আস্হাহীনতার কারনে রোগীরা দলে দলে ইন্ডিয়াসহ বিদেশগামী হচ্ছে: প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্হ্য ব্যবস্হার মান অনেক দিক দিয়ে ইন্ডিয়ার চেয়ে উন্নত।এটি ইন্ডিয়াসহ,বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা স্বীকার করে।সরকারও ঢাক- ঢোল পিটিয়ে এ শ্রেষ্ঠত্বের কথা প্রচার করে থাকে।যারা ইন্ডিয়াসহ বিদেশ যান তারা কি সেখানকার কোন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান? নাকি কর্পোরেট বানিজ্য করা দামী প্রাইভেট হাসপাতালে যান? কদর তাহলে হবে না কেন? বিদেশী রোগী হলে একটু বাড়তি মনোযোগ, বাড়তি সমাদর কে না করবে? তারপরও যতজন ভালো হয়ে আসেন তাদের কথা আমরা বেশী শুনছি।কতজন যে ব্যর্থ হয়ে,ধোকা খেয়ে আসছেন তাদের কাহিনী মিডিয়াতে প্রচারিত হয় না।এই সেদিন মুক্তিযোদ্ধা, আবৃতিকার আরিফ আমেরিকায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে অপারেশন টেবিল থেকেই জীবিত ফিরে আসতে পারেনি।হুমায়ুন আহমেদের কথাও আমরা জানি।যদি বাংলাদেশে এ ঘটনাগুলো ঘটতো তাহলে ডাক্তারদের চামড়া তুলে নেওয়া হতো।তদুপরি হেলথ ট্যুরিজম এর মাধ্যমে এ দেশের ডাক্তারদের ও চিকিৎসা ব্যবস্হা সমন্ধে নেতিবাচক প্রচারনা চালিয়ে রোগী বিদেশে ভাগিয়ে নেওয়ার একটি চক্রও গড়ে উঠেছে।দেশের স্বার্থে আমাদেরকে এদিকেও নজর দিতে হবে।
৫। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ " ভুল চিকিৎসায়" রোগীর মৃত্যু : চিকিৎসায় ভুল হয়েছে কিনা এটি একমাত্র আরো উচ্চতর,অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার ছাড়া অন্য কোন কারো পক্ষে বকা সম্ভব না।ডাক্তারি একটি জটিল বিজ্ঞান। তাই রোগীর স্বজনদের মনে হলো বা কোন সাংবাদিকের মনে হলো "ভুল চিকিৎসা " আর সেটি ফলাও করে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা মানে প্রমান ছাড়া ডাক্তারকে খুনী বলা। অন্য আর যে কোন অভিযোগ কমনসেন্স দিয়ে জরা গেলেও ভুল চিকিৎসা বলার যোগ্যতা কোন সাংবাদিক রাখে না।এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যম সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করবেন এটি বিবেকবান সবার প্রত্যাশা।তবে তেমন আশঙ্কা যদি সত্যি মনে জাগে সে ক্ষেত্রে বিএমডিসির কাছে অভিযোগ করতে হবে এবং বিএমডিসিকেও লোক দেখানো নয়,দ্রত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে আস্হায় নিতে হবে।
তাই সার্বিক বিবেচনায় আমাদের দেশের ডাক্তারদের নামে যেসব অভিযোগ, নালিশ করা হয় তার অন্তত ৮০-৮৫% এর দায়ভার তাদের উপর বর্তায় না।কিছু ডাক্তারের অভব্য আচরন,উন্নাসিকতা, দায়িত্বে অবহেলা শুধু সাধারন মানুষকে ক্ষুব্ধ করে না,অনেক ডাক্তার ও তাদের আত্মীয়দের জন্য ও সেগুলো অপমানজনক,কষ্টদায়ক।শুধু পাঠ্য পুস্তকে " বিহেভিয়ারাল সায়েন্স " বা " নৈতিক" শিক্ষা ঢুকিয়ে দিয়ে কাউকে সদাচারন শেখানো যায় বা নৈতিকতা শেখানে যায় বলে আমি বিশ্বাস করি না।মূল্যবোধ, সদাচারন এগুলো পরিবার, সমাজ থেকেই শিখে আসতে হবে।তবে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ও থাকতে হবে।প্রতিদান ওয়ার্ড রাউন্ডে,সাপ্তাহিক রোগী ব্যবস্হাপনা মিটিং এ সিনিয়র ডাক্তার/ প্রফেসররা এ সব ব্যাপারে তদারকি ও নজরদারি করতে পারেন,রোগী ও তাদের স্বজনদের কাউন্সিলিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। আমরা শুধু " রোগ" চিকিৎসা করিনা,পুরো মানুষটিকে ও তার প্রতিবেশকে বিবেচনায় নিতে হয়( এ সপ্তাহেই ওয়ার্ড রাউন্ডের সময় রোগীর স্ত্রী তার স্বামী তাকে যে নোংরা,কদর্য ভাবে সন্দেহ করে তার বর্ননা দিচ্ছিল। রোগীর চিকিৎসা দিয়ে আমি শিক্ষার্থীদের বললাম কিন্তু রোগীর স্ত্রীর ব্যাপারেও তোমাদের কিছু করনীয় আছে কিনা- যদিও সে তোমাদের রোগী নয়)।
সর্বোপরি রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ বিএমডিসি দ্রত নিরপেক্ষ তদন্ত করে,ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে তা সর্ব সাধারনকে জানিয়ে দিতে হবে। যদি জনগন দেখতে পায় প্রতিকার পাওয়ার সঠিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাহলে হয়তো আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবনতা কমে আসবে।আর ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করার জন্য ডাক্তারদের "দ্বন্দ্ব নিরসন"( কনফ্লিক্ট রিজুলেশন) এর মনো- সামাজিক কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
সর্বশেষে বলবো ডাক্তাররা দেবতাও না আবার দানব ও না।তারা আপনার আমার পরিবারেরই কেউ।সমাজের সব জায়গা কলুষিত থাকবে আর শুধু ডাক্তাররা ফেরেস্তা হয়ে থাকবেন এরকম প্রত্যাশা বাস্তব সম্মত নয়।তথাপি ডাক্তারদের প্রতি সাধারন মানুষের যে ভক্তি,সম্মান ( ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই মানুষগুলোর ভক্তি দেখে নিজেই লজ্জা পাই- টাকা নিয়েও এতো সম্মান পাওয়ার কি উপযুক্ত আমি?) সেটির প্রতিদান আমাদেরকে দিতে হবে।কোন অজুহাতেই যে মহান দায়িত্ব আমরা স্বেচ্ছায় কাধে তুলে নিয়েছি তার ব্যত্যয় ঘটতে দিতে পারি না।আমরা রোগী ও স্রষ্টার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল,ঢাকা
ইমেইল :drtazul84@gmail.com
phone :01715112900
Tuesday, May 23, 2017
সাইকোলজিক্যাল টিপস-৩১: আপনি কতটুকু আত্ম- মর্যাদাশীল
"অন্যদের সঙ্গে সহমত হয়ে চলার পুরস্কার হচ্ছে সবাই আপনাকে পছন্দ করবে কেবল আপনি ছাড়া"- বলেছেন রিতা ম্যাউ ব্রাউন
তার মানে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গা ভাসিয়ে দিলে আপনি হয়তো অন্যদের কাছে প্রিয়ভাজন হবেন,তাদের পছন্দ পাবেন, কিন্তু তা পাবেন নিজে নিজকে পছন্দ না করার বিনিময়ে।আপনি কি তেমনভাবে জীবন যাপন করেন যা আপনার নিজস্ব লক্ষ্য, আদর্শ, মুল্যবোধ ও প্যাশনকে সম্মান করে? নাকি অন্যদেরকে আপনার উপর দিয়ে দৌড়ে যেতে দেন।নিম্মোক্ত প্রশ্নগুলো নিজকে করুন ও যাচাই করুন কতটুকু আত্ম মর্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করছেন:
১। আপনি অন্যের স্টান্ডার্ড দিয়ে নিজকে পরিমাপ করেন? অন্যদের স্টান্ডার্ড অনুযায়ী চলতে না পারলে মানসিক পীড়নে ভুগেন? মনে রাখবেন নিম্ম আত্ম মর্যাদাবোধ যাদের তারা সব সময় চায় অন্যদের স্টান্ডার্ড এ নিজকে খাপ- খাইয়ে নিতে যাতে তাদের পছন্দ পান,কারো বিরাগভাজন না হোন।অন্যদের পছন্দ, অনুমোদন ( এপ্রোভাল) না পেলে তাদের মন হীনতায়,গ্লানিতে ভরে উঠে।কেননা তারা আশঙ্কা করে এতে অন্যরা ক্ষেপে যাবে,তাকে এড়িয়ে চলবে,তাকে সমালোচনা করবে- ইত্যাদি। এবার নিজকে যাচাই করুন ও প্রয়োজনে বদলে ফেলুন।
২। আপনি কি রসিকতা/ মশকরা করে নিজের প্রকৃত অনুভূতি ঢেকে রাখতে চান? এটিও অন্যের চোখে নিজকে সুখী,ভালে দেখানোর চেষ্টা।আমাকে সব সময় হাসি খুশী থাকতে হবে,মন খারাপ দেখলে তারা আমাকে নিয়ে মিটিমিটি হাসবে,ব্যঙ্গ করবে, তাই জোর করে হলেও আমি ভালো আছি,সুখে আছি তা দেখাতে হবে।তার মানে অন্যকে গুরুত্ব দিচ্ছেন,নিজেকে ঢেকে রেখে,চেপে রেখে। কোন মেকি উপায়েই আপনি সুখী হবেন না এবং অন্যদের চোখ ফাকি দিতে পারবেন না।এবার নিজকে যাচাই করুন ও আত্ম করুনা পরিহার করে,আত্ম মর্যাদা সম্পন্ন হোন।
৩। অন্যকে খুশী করতে চরম মিথ্যে বলতেও কার্পন্য করেন না? একজন মানুষ ও যদি সত্য ও ন্যায্য কথা বলে আর বাকী শত মানুষ গ্রুপিং করে তার বিরুদ্ধাচারন করে আপনি কি শত মানুষের বিপক্ষে দাড়িয়ে ঐ নিসঙ্গ সঠিক মানুষের পক্ষে দাড়ানোর সৎ সাহস ও নৈতিক মনোবল রাখেন?না মেজরটির কোপানলে পড়ার ভয়ে,শক্তিশালী গ্রুপ এর পক্ষে অবস্হান নেন? শক্তিশালী পক্ষে থাকার এই দাসানুদাস মানসিকতা তৈরী হয় নিজের বুনিয়াদী আত্ম সম্মান বোধ দূর্বল হলে,অন্যদের অনুমোদন, পছন্দ পাওয়ার দূর্নিবার চাহিদা থাকলে।সবার সামনে নিজের মাথা উচু করে গর্বিত ভঙ্গিতে দাড়াবার সাহস কেবল উচ্চ আত্ম মর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষেরই থাকে
২য় পর্ব- আগামীকাল
Friday, May 19, 2017
ধর্ষন এখন জাতীয় দূর্যোগ
বজ্রপাতে প্রচুর মানুষ মারা যায় বলে বাংলাদেশ সরকার বজ্রপাতকে জাতীয় দূর্যোগ হিসেবে ঘোষনা দিতে বাধ্য হয়েছে।বাংলাদেশে ধর্ষন ও ধর্ষনজনিত মৃত্যুর হার ও অনেক।এখন সময় এসেছে এটিকেও দূর্যোগ হিসেবে ঘোষনা করা।আমাদের অনেকে গর্ব করে বলেন অপরাধ, ধর্ষন ইউরোপ - আমেরিকায় বেশী হয়।কিন্তু তারা এটি বলেন না সেখানে ধর্ষনের হার ক্রমশ কমে আসছে।আমেরিকায় ৯০ দশকের পর থেকে ধর্ষন ৫০% পর্যন্ত কমেছে।তারা এটিও বলেন না ঐ সব দেশে প্রতিটি অপরাধ, ধষনের তদন্ত ও বিচার হয়।আর আমাদের দেশে শিশু কন্যার ধর্ষনের বিচার না পেয়ে অপমান- অভিমানে হজরত আলী তার মেয়ে সহ ট্রেনের নীচে আত্মাহুতি দেন।
বনানীর রেইন- ট্রি হোটেলে দুই তরুনী ধর্ষিতা হওয়ার পর পাপিষ্ঠদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতি জেগে উঠেছিল। কিন্তু এবারো আবার ও সেই বনানীতে ও একই কায়দা জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে এক অভিনেত্রীকে ধর্ষনের সংবাদ এসেছে।ধর্ষনের এ ধারা কি চলতেই থাকবে। রেইনট্রি এর সে খবর সংবাদ মাধ্যম,বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচন্ড প্রতিবাদের ঝড় উঠাতে প্রভাবশালী হলেও আসামীগন ধরা পড়ছে।কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার এক শ্রেনীর মানুষ নির্যাতীতা মেয়েদের পোষাক,অবাধ মেলা- মেশা সহ তাদের গার্জিয়ানদের নিয়ে অশ্লীল,কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে চলছেন।
কিন্তু মোটা দাগে কয়েকটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে: ১। ধর্ষন কোন যৌন বিষয়ক সমস্যা নয়,এটি একান্তই নারীর প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ বিষয়ক ঘটনা।২। ধর্ষন নির্যাতীতা নারীর জীবনে এক চরম বেদনাদায়ক এবং অপমান ও গ্লানির ঘটনা। এটি মানব- সৃস্ট দূর্যোগের অন্যতম একটি,যে স্মৃতির যন্ত্র্রনা তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।একজন নারীর বুনিয়াদী সত্মাকে এটি ভেঙ্গে চূড়ে দেয়।সমাজের কাছে সে ও তার পরিবার কি নিগ্রহের মধ্যে পড়ে তা একমাত্র ঐ নির্যাতীতা ও তার পরিবার জানে।কোথায় তাদের প্রতি সহমর্মি হয়ে তাদের দূর্ভোগ ও কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করবো,না উল্টো তাদের গভীর আবেগীয় ক্ষতে " অপবাদ,দুর্নামের লবন ছিটিয়ে" দিয়ে তাদের ক্ষত আরো গভীর করে তুলছি।অথচ ইসলাম ধর্মেও ধর্ষনের শাস্তি পাথর মেরে হত্যা করার কথা বলা আছে।
৩। কিছু পুরুষ ও ধর্ষিত হয় বটে তবে নারীরাই ধর্ষনের প্রধান শিকার।অথচ যৌন কামনা- বাসনা নারী- পুরুষ উভয়ের সমান।তাহলে নারী নিজকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ও পুরুষ কেন পারে না? এ না পারা কোন বায়োলজিক্যাল ব্যাপার নয়, এটি সমাজ- সংস্কৃতির কাঠামোর গভীরে প্রোথিত কিছু সংস্কার,মিথ ও বিশ্বাসের ফল।আমাদের কয়েক হাজার বছর লেগেছে " দাসত্ব প্রথা" উচ্ছেদ করতে,কয়েক হাজার বছর লেগেছে " বর্নবাদ" উৎখাত করতে( যদিও অনেক ফর্মে এদের কালো ছায়া এখনো বিদ্যমান)
।কিন্তু নর- নারীর সমতা বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি গত কয়েক শতকের মাত্র।এ অগ্রগতির কিছু দিক তাৎপর্য্যপূর্ন হলেও কিছু দিকের অগ্রগতি নিতান্তই হতাশাজনক।তার অন্যতম একটি হলো নারীর " মানুষ" হিসেবে পরিচিতির স্বীকৃতি।পুরুষের কাছে নারীর এখনো মূখ্য পরিচয় " বিনোেদন সঙ্গী , কাম সঙ্গী" হিসেবে।শিক্ষিত,সুশীল পুরুষরা বাহ্যিক ভাবে নারীর প্রতি তাদের কাম ভাবনাকে সফিস্টিফিকেসনের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করে, তবে দানব প্রকৃতির পুরুষ সরাসরি হামলে পড়ে- এ হচ্ছে পার্থক্য। নারীকে যৌনতার বাইরে রে খে পূর্ন মানুষ হিসেবে দেখার সাংস্কৃতিক চেতনার বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত কিছু পুরুষের কামনার দ্বারা নারীর ধর্ষিতা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
শ্রেনী বিভাগ:
১
পরিস্হিতি অনুযায়ী :অভিসার/ দাওয়াত ধর্ষন,(বনানীর ধর্ষন), শিশু ধর্ষন( ৫ মাসের মেয়েকে যোনী কেটে বড় করে ধর্ষনের খবর কিছুদিন আগের খবর মাত্র), জেলখানায় ধর্ষন,পরিচিতজন দ্বারা ধর্ষন( বেশীরভাগ ধর্ষন এ পর্যায়ের),সম্মতি দেওয়ার বয়স হয়নি তেমন বালিকা ধর্ষন, দলবদ্ধ ধর্ষন,দাম্পত্য ধর্ষন,নিকটাত্মীয় দ্বারা ধর্ষন( আপন পিতা নিজ কন্যাকে আটকে রেখে বহু বছর ধর্ষনের কথা পত্রিকায় এসেছে)- ইত্যাদি। ২।ধর্ষকের লক্ষ্য অনুযায়ী: ক) ক্রুদ্ধ ধর্ষক: এদের লক্ষ্য হচ্ছে নির্যাতীতাকে অপদস্ত,অপমান করা,তার চরিত্র নষ্ট করা।এরা ধর্ষিতাকে শারিরীকভাবে নির্যাতন করে থাকে।এরা তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়,মারধর করে,কাপড় চোপর ছিড়ে ফেলে।এরা নারীকে কাবু করতে যতটুকু শক্তি প্রয়োগ দরকার তারচেয়ে বেশী শক্তি খাটায়।খ) ক্ষমতা দেখানো ধর্ষক: এদের নিজের সামর্থ্য,সক্ষমতা সমন্ধে থাকে নেতিবাচক ধারনা।এই মানসিক ঘাটতি পূরন করতে তারা নিজেদের কর্তৃৃত্ব,,শক্তিমত্তা ও ক্ষমতা দেখাতে ধর্ষন করে থাকে।এরা মৌখিকভাবে হুমকি দিয়ে,অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে ধর্ষন করে থাকে।তবে এ শক্তি প্রযোগ হয় শিকারকে বাগে আনতে যতটুকু লাগে ততটুকু।তারা ধর্ষন নিয়ে ফ্যান্টাসিতে মত্ত থাকে ও নিজকে বিজয়ী হিসেবে দেখে।তারা বিশ্বাস করে প্রথম দিকে মেয়েরা বাধা দেবে,তবে একবার পরাস্ত করতে পারলে ওরা এটি উপভোগ করবে।এ বিশ্বাসের কারনে অপকর্ম করার পরও তারা ঐ মেয়েদের আবার ডাকলে আসার আহ্বান করে। কিন্তু তাদের অপর্যাপ্তবোধ এর অবসান হয় না।তাই তারা নিত্য নতুন শিকার খুজতে থাকে এবং এটি তাদের জন্য " বাধ্যতামূলক " হয়ে দাড়ায়( বেশীর ভাগ ধর্ষক এই ক্ষমতা দেখানো টাইপের)
গ) পীড়নকারী ধর্ষক: যৌন সঙ্গিনীকে নিপীড়ন করে,যন্ত্রনা দিয়ে এরা উত্তেজনা অনুভব করে।এরা তৃপ্তি পেতে ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘ ক্ষন আটকে রেখে টর্চার করে।বিশেষ করে যৌন অঙ্গ গুলোকে ক্ষতবিক্ষত করে বিকৃত আনন্দ লাভ করে।এরকম নির্যাতনে বেশীরভাগ ভিকটিম মারা যায়।
নারী ধর্ষন বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি ও মিথ যেভাবে ভাঙ্গতে হবে:১। অর্ধ নগ্ন শরীর,যৌবন ছিটকে বেড়িয়ে পড়ে তেমন টাইট পোষাক পুরুষকে ধর্ষনে উৎসাহিত করে: বেশীরভাগ অশ্লীল মন্তব্য করা হয় নারীর পোষাক ও উগ্র চালচলন নিয়ে।এ ধরনের পুরুষের বিশ্বাস এরকম পোষাক পড়ে রাস্তায় বেরুনো মানে আহ্বান করা যে আমাকে ধর্ষন করো।( মেয়েরা ধর্ষিতা হতে চায়)। নারীকে মানুষ হিসেবে না দেখে " ভোগ্য পন্য" হিসেবে দেখার যে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এটি হচ্ছে সে লুকিয়ে থাকা লোলুপদের লালসার বহি: প্রকাশ( সেই বিখ্যাত তেতুল তত্ব)। রাস্তায় বেরুনো নারীকে তারা " মানুষ " হিসেবে দেখে, না তারা কাম সঙ্গী বান্ধবীর স্হুুল মাংস পিন্ডকে লোভাতুর চোখে দেখে,চাটে? সমস্যা এদের বিকৃত লালসার মধ্যে, ঐ নারীর মধ্যে নয়।নারী ফুলের মতন সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে আপনি সে অপরূপ সৌন্দর্যের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ভাববেন আহ! জীবন - পৃথিবী নারী কত সুন্দর,নির্মল।তা না হয়ে কেন মনে উদয় হয় বিকৃত কামনা?
এক কথায়ধর্ষন কোন যৌন বিষয়ক ঘটনা নয় এটি এটি লালসা পীড়িত পুরুষের মনো বিকৃতি।
সিলেটের বালাগন্জে চার সন্তানের মাকে যে গন ধর্ষন করে মেরেই ফেললো; ৫ বছরের পূজাকে ব্লেড দিয়ে তার যোনীপথ বড় করে যে ধর্ষন; রাস্তার ভিখারী নারী যখন ধর্ষিত হয়েছিল- তাদের গায়ে কি উগ্র যৌন আবেদনময়ী পোষাক ছিল,তারা কি গ্লামারাস নারী ছিল? মনে রাখতে হবে ধর্ষিত হয় সকল বয়সের নারী,,সকল সংস্কৃতি,সমাজ,জাতি,ধর্মের মানুষ।ধর্ষকের কোন বাছ বিচার নেই।তাই
এটি নারীর প্রতি সহিংসতা,গুরুতর অপরাধ।আমরা ধর্ষনকে " সেক্সুয়ালাইজড" করি অথচ একে করা উচিৎ" ক্রিমিনালাইজড" করা।২।
যদি মেয়ে তোমার আহ্বানে " না" বলে তোমাকে অব্যাহতভাবে আহ্বান করে যেতে হবে, যে পর্যন্ত মেয়ে হ্যা বল( মেয়ে মনের গহীনে হ্যা পোষন করে রেখেছে): এরকম মিথ সমাজে যেমন বিদ্যমান তেমনি একে আরো পুষ্ট করে তোলে কিছু নাটক- নভেল।নায়িকা প্রথম "না" করে( তবে লাজুক মিস্টি হেসে)। নায়ক অনেক সাধাসাধির পর নায়িকার মন গলে।( ফেইসবুকে আমাদের " বি পজিটিভ বি হ্যাপী" তে রোগ - কাহিনী সিরিজে তেমন এক বাস্তব কাহিনী দিয়েছি যেখানে বিয়ের পর অল্প বয়সী কিশোরী বউ স্বামীর আহ্বানে সাড়া দেয় না বলে, স্বামীর বোন পাশের রুম থেকে সারা রাত ভাইকে বলতে থাকে- এটি তোর অধিকার তুই জোর করে তা আদায় করে নেয়
।যার ফল হয়েছিল ভয়াবহ)। এভাবে ছেলেরা শিখে নেয় মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না।তাই মেয়েদের " না" মানে না নয়।বেশীরভাগ ছেলে বন্ধুরা,প্রেমিকরা এই সূত্র ফলো করে এবং একসময় সফল হয়( ইমোশনাল ব্লাক মেইল) ।এ ধরনের ধর্ষন অহরহ হচ্ছে কিন্তু সবার অজানা থেকে যায়
৩) পুরুষরা অধিকতর যৌনকাতর,তারা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ, তাই কোন না কোনভাবে তাদের তাড়না মেটাতে হবে: এটিও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিজস্ব বানানো ধারনা।প্রকৃত পক্ষে নর নারী সমান যৌন চাহিদা সম্পন্ন।সমাজ নারীদের চাহিদাকে দমিয়ে রাখার শত বন্দোবস্ত করে রেখেছে।অন্যদিকে পুরুষের লালসা চরিতার্থ করার নানাবিধ কুপথ খুলে রেখেছে।বেশীরভাগ পুরুষরাও নারীর মতন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।কেবল গুটিকয়েক পুরুষ যারা "নারী দেহের" উপর তারা " অধিকার প্রাপ্ত" ( এনটাইটেলমেন্ট) বলে বিশ্বাস করে, তারাই নিজকে নিয়ন্ত্রণের কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না।ভূমি দস্যুরা যেমন আশপাশের সব জায়গাজমির উপর তার অধিকার রয়েছে মনে করে ছলে- বলে কৌশলে ঠিকই ঐ সব জায়গা দখল করে নেয়, এই যৌন দস্যুরাও অন্য নারীর দেহের উপর তার অধিকার রয়েছে মনে করে জোর করে হলেও তা করায়ত্ব করে নেয়। নারীর " সম্মতি" তাই তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক।
৪। যদি পূর্বে কোন নারীর সঙ্গে শারিরীক সম্পর্ক হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতেও সে অধিকার থাকবে: নারী একবার কাউকে সম্মতি দেওয়ার অর্থ এই নয় সকল সময়ের জন্য সেটি বহাল থাকবে।যে কোন মুহূর্তে নারী তার মত বদলাতে পারে এবং পুরুষকে সেখানেই থেমে যেতে হবে।তানাহলে সেটি ধর্ষন( এমনকি বিবাহিত জীবনেও এটি সত্য)।
৫। রাত- বিরাতে নারীর একা চলাফেরা ধর্ষনের একটি কারন; মাত্র ১০% ধর্ষন ঘটে বাইরের অপরিচিত লোকদের দ্বারা। তাছাড়া ধর্ষন হয় ঘরে,কর্মস্হলে,কলেজ ক্যাম্পাসে যেগুলোকে আমরা নিরাপদ ভাবি।তাই এই খোড়া অজুহাতে নারীকে ঘরবন্ধি করে রাখা,মুক্ত জীবন যাপন থেকে বন্চিত করা অন্যায্য কাজ।জঙ্গী ভয়ে সরকার যখন আমাদের পুরুষদেরকে ও সন্ধার পূর্বে সকল অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে ঘরে ফিরতে বাধ্য করে তখন কি আমরা বলি না, নাগরিকের নিরাপত্তা সরকার দেবে,কেন আমাদের স্বাধীন চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা দেবে? একই কথা নারীর বেলায় কেন খাটবে না?
৬। ধর্ষিতার শরীরে আঘাতের চিম্হ নেই,হাড় ভাঙ্গেনি,তাহলে তার নীরব সমর্থন ছিল: প্রথমত অকস্মাৎ আক্রমণ, হুমকির মুখে নারী ফ্রিজ হয়ে যেতে পারে।আকস্মিক বিপদে পড়লে আমাদের ব্রেইন ৩ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়: ৩ টি- এফ: ফ্লাইট( দৌড়ে পালানো); ফাইট( লড়াই করা) এবং ফ্রিজ( নিশ্চল হয়ে পড়া,মূর্তির মতন অচল হয়ে পড়া)। সঙ্গত কারনেই ধর্ষনজনিত পরিস্হিতিতে ব্রেইন ফ্রিজ হওয়াকে চয়েজ করবে।এই চয়েজ তাৎক্ষনিক ও অটোমেটিক।এতে ব্যক্তির নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন সুযোগ নেই।তাছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইবুনাল ফর রোয়ান্ডা- ১৯৯৮ সনে এক যুগান্তকারী রায়ে ধর্ষনে নারীর সম্মতির ব্যাপারটিই তুলে দিয়েছেন।রায়ে বলা হয়" ধর্ষন হচ্ছে তেমন শারিরীক আক্রমন যা যৌনতা সংশ্লিষ্ট এবং যা করা হয় জোরপূর্বক,দমনমূলক পদ্ধতিতে( করসিভ)। " এখানে ভিকটিমের সম্মতি ছিল কি ছিল না সেটি অবান্তর।
নির্যাতীতাদের চিকিৎসা : সবাই সব বিষয়ে বলছে কিন্তু কাউকে দেখছি না এদের আশু চিকিৎসা বিষয়ে কথা বলতে।এখানে বিস্তারিত লেখার সুযোগ নাই,কিন্তু তাদের শারিরীক ও মানসিক চিকিৎসা অতীব জরুরী।
সমাজ নারীকে " ডি- পারসোনালাইজ" করে অধিকতর " সেক্সুলাইজ" করার নানান পন্থা বের করে রেখেছে; নারীর যৌন স্খলন মানে সকল পবিত্রতা নষ্ট, অন্য সকল পুুরুষের জন্য সে শরীর ঘৃন্য এমন ধারনা সহ উপরে বর্নিত মিথগুলো না ভাঙ্গতে পারলে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা কমার সুযোগ কম।তবে এ সব দীর্ঘ মেয়াদী সামাজিক পরিবর্তনের আগে ধর্ষিতা নারীর আবেগগত ক্ষত নিরাময়ে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।কিথ নামে এক বিদেশী ধর্ষিতা নারী বলেন" আমার এ ক্ষত প্রকৃত পক্ষে নিরাময় হতে শুরু করে তখন, যখন আমি বিশ্বাস করতে শুরু করলাম যা ঘটেছে তার জন্য আমি দায়ী নই।" আসুন এই নির্যাতীতা,অপমানিত,বিপর্যস্ত নারীদের পাশে দাড়াতে না পারলেও তাদের আবেগীয় ক্ষতের উপর " বদনামের,অপবাদের" লবন ছিটিয়ে সে ঘা- কে আরো গভীর করে না তুলি।
প্রফেসর ডা. তাজুল ইসলাম
সোশাল সাইকিয়াট্রিস্ট
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি এন্ড সোশাল সাইকিয়াট্রি বিভাগ
জাতীয় মানসিক স্বাস্হ্য ইনস্টিটিউটও হাসপাতাল
ইমেইল:drtazul84@gmail.com
phone:01715112900