কোনভাবেই এই বিষয়ে লিখতে চাচ্ছিলাম না।কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু বিষয়কে এড়িয়ে যাওয়া অন্যায় বলে মনে হয়।অপ্রিয় হবার ভয় আমার কখনো ছিল না।এমনকি রীতিমত ঝুকি নিতেও কার্পন্য করিনি।
ফেইসবুক ব্যবহারে ফেইসবুক এডিকশন,অসামাজিক-অনৈতিক কাজ ও অপরাধ সহ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাস্ট্রীয়,আন্ত- রাস্ট্রীয় সমস্যা বেড়েছে এটি অনস্বীকার্য। তথাপি গন- মানুষের মনন পঠনের জন্য এটি একটি উত্তম মাধ্যম।(অন্তত আমার জন্য ফেইসবুক আশীর্বাদ)।
ফেইসবুকে সাম্প্রতিক কালে বাঙ্গাল বনাম বাঙ্গালী,ভদ্রলোক বনাম ভদ্দর লোকের সাহিত্য নিয়ে বেশ পান্ডিত্যপূর্ন,ব্যঙ্গ- রসাত্মক আলোচনা দেখছি।আমি সব ধরনের পোস্টই পড়ি- আম- জনতা থেকে বিশিষ্ট পন্ডিতদের।নিজের " বি পজিটিভ বি হ্যাপী" এর লেখাই অনেক জমা,তাই ইচ্ছে থাকলেও অন্য সামাজিক ইস্যু গুলো নিয়ে পোস্ট দিতে পারি না( যদিও আমি সব বিষয়েই যথেষ্ট উৎসুক ও আগ্রহী মানুষ) ।
এতো বড় ভূমিকা দেওয়ার কারন চিন্তাশীলতা ও বিবেক বোধ মাঝে মধ্যে বাধ্য করে কিছু বিষয়ে কিছু না কিছু বলতে( যেমন যথেষ্ট ঝুকি সত্বেও তরুন ডাক্তারদের আন্দোলন - প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তি নিয়ে একটি বড় লেখাই লিখে ফেলেছিলাম।ভাগ্যিস তা বরং যথেষ্ট পাঠক- প্রিয়তা পেয়েছিল।)
আবুবাকর নামে বাংলাদেশে একজন অতি জনপ্রিয় লেখক রয়েছেন অনেকের মতন আমি ও তা জানতাম না।যেমন এক সময় গায়িকা মমতাজ বা হিরো আলম বলে হিরো আছে তা ও জানতাম না।মমতাজ কিন্তু অগোচর থেকে শুধু গোচরে আসেনি,নিজ প্রতিভা বলে একটি বড় ও সম্মানজনক আসন পেয়ে গেছেন( অনেকে প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন,তা ভিন্ন মত থাকবেই)। হিরো আলম উৎকট নারসিসিজম এর ক্যারিকেচার দেখিয়ে প্রচারে চলে আসলে ও খুব যে বড় অবস্হান দখল করে নিতে পেরেছেন বলা যাবে না( এখানে ও কেউ ভিন্ন মত দিতে পারেন যে না সে ভালো অবস্হানেই পৌছতে পেরেছেন)। কিন্তু সাম্প্রতিক আবুবকর নামক লেখক নিয়ে শেষ মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি।কিন্তু উনাকে নিয়ে কারো পক্ষপাতিত্ব আবার কারো চিত্ত- জ্বালা ও চিত্ত- বিনোদনের যে হিরিক পরেছে সেটি নিঃসন্দেহে চিত্তাকর্ষক বটে।
১। তিনি কোন মানের লেখক? তিনি কি রবীন্দ্রনাথ বা সেক্সিপয়র তুল্য? ১ম শ্রেনীর,২য় শ্রেনীর না.. ৩য়,৪র্থ শ্রেনীর? শ্রেনী মাপার মানদণ্ড কি?বলবেন আমরা শ্রেনী বিবেচনা করিনি,তাহলে কোন বিবেচনায় তিনি হাস্যকর লেখক মনে হলেো?
নিসঙ্কোচে তিনি রবীন্দ্রনাথ তুলনীয় নয়,এমনকি ১ম শ্রেনীর ও নয়( হলে এতো বছরে বিশ্ব নন্দিত না হোক,দেশ নন্দিত হতেন।কেননা তিনি অনেক পুরনো লেখক, উনার বই প্রকাশ্যে বহুল পঠিত ছিল কিন্তু সুধীজনের দৃষ্টি কাড়তে পারেননি।না পারার কারন তিনি স্বল্প শিক্ষিত বা মোল্লা টাইপের বা গ্রাম্য এরকম কোন শ্রেনী বিদ্বেষ নয়।মান সম্পন্ন লেখা বাজারে বের হলে এবং বহুল প্রচারিত হলে কয়েক মাস না হোক কয়েক বছরে তা কোন না কোন গুনী ব্যক্তির চোখে পরতো।আবার সম সাময়িক স্তরের চেয়ে অনেক উচ্চমাপের বলে বর্তমানে তিনি স্বীকৃতি পাচ্ছেন না( যেমনটি ঘটেছিল জীবনানন্দ এর বেলায়) ব্যাপারটি তেমন ভাবার ও কারন নেই( ছিদ্রান্বেষীরা এখানে ও প্যাচ দিতে পারেন)। যারা উনাকে নিয়ে তুচ্ছ - তাচ্ছিল্য ও হাসি- তামাসা করছেন তারা নিশ্চয় উনাকে রবীন্দ্র তুল্য বা ১ম শ্রেনীর সাহিত্যিক ভেবে তা করছেন না।তারা নিজেদের উচ্চ- মার্গের পাঠক না ভাবলে উনাকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করবেন কেন?।লক্ষ লক্ষ পাঠক- পাঠিকা যার( যেমনটি প্রচারিত হয়েছে) তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করা মানে , তার পাঠক পাঠিকার চেয়ে উনারা নিজকে উচ্চ মার্গের পাঠক পাঠিকা ভাবছেন।( উচু মান নিয়ে হাসি তামাশা হয় না নিন্ম মান নিয়ে? এটিও ব্যাখ্যার দরকার আছে?)
২। তথাকথিত উচ্চ মানের লেখক ও পাঠক বনাম নিম্ন মানের লেখক ও পাঠক থাকলে এদের মধ্যে শ্রেনীভেদ ও আছে।তখন উচ্চ ভাবা ব্যক্তিরা যদি নিম্ন মানের লেখক/ পাঠককে ব্যঙ্গ করে সেটিকে কি শ্রেনী- বিদ্বেষ বলা যাবে না?
৩। তারা আবার বলেন মান বা শ্রেনীর জন্য নয়,উনি ইসলাম ধর্মকে পুজি করে উপন্যাস লিখে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাই উনার জাত- গোষ্ঠী উদ্ধার করা নাজায়েজ না।হুমায়ুন আহমেদ ওমুক করে,শরৎচন্দ্র তেমন করে বা ঐ লোক যৌনতা সম্বল করে বা তসলিমা পুরুষ বিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন- তা আপনাদের গা জ্বলবে কেন? আপনারাও পারলে তেমন কিছু ব্যবহার করে জনপ্রিয় হয়ে যান,কেউ মানা করছে?
৪। সবচেয়ে বড় অভিযোগ উনি বোরখা পড়ে প্রেম করা সহ ধর্মীয় স্টাইলে প্রেম- যৌনতা করা যায় এই প্রলোভন দেখিয়ে মুসলিম তরুন তরুনীদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছেন যা পুরো ইসলাম পরিপন্হী ও ধর্ম অবমাননার সামিল।তারা বলেন শ্রে্নী বিদ্বেষ নয়,নিম্ন মান ও নয়, আমরা তার বিরুদ্ধে বলছি তিনি ইসলামী পন্হায় প্রেম যৌনতা করা যায় এমন না হক, ইসলাম বিরোধী কাজ করেছেন।নাউজুবিল্লা বিবাহ পূর্ব প্রেম যৌনতাকে উনি জায়েজ করার চেষ্টা করেছেন।কত বড় নাফরমানি কাজ?।সাবাস,হাত তালি দিতে হয় এ সব ইসলাম প্রিয় ধার্মিক মানুষদের।ইসলাম ধর্মের এতো বড় অবমাননা কেমনে তারা সইবে? তাই উনারা এই বক ধার্মিক আবুবাকর এর বিরুদ্ধে জিহাদের অংশ হিসেবে এরকম সমালোচনা, বিদ্রূপ করছেন।তবে আফসোস হেফাজত বা জামাত বা আই এস সহ কেউ এই ইসলাম ধর্ম বেচে ও ইসলাম ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে প্রেম যৌনতার মতন অতি গরহিত বিধর্মী কাজের বিরুদ্ধে ঐ লোকের ফাসি চাওয়া দূরে থাক, তার বিপক্ষে একটি বাক্য ও ব্যয় করছে না।তাই বাধ্য হয়ে এই সেকুলার, অসাস্প্রদায়িক গোষ্ঠীকেই ইসলাম ধর্মকে অপব্যবহার থেকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।মহান আল্লাহ উনাদের এই ইসলামী জিহাদকে কবুল করুন।সবাই বলুন - আমিন।
৫। উনাকে দেখে ও জেনে এটি বোঝা কঠিন নয় যে উনি সাধারন মানের একজন মুসলিম লেখক( কেননা উনি নাকি মুসলিম সংস্কৃতি ধারন করে উপন্যাস লিখেছেন)। ।দস্যু বনহুর এর লেখিকা বা আনোয়ারা উপন্যাস লেখক ও একটি শ্রেনীর ও একটি নির্দিষ্ট বয়সের পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন( ৭ম-৮ ম শ্রেনীতে থাকাকালিন আমি ও রাত জেগে এ সব বই পড়েছি-) । আবুবাকার সম্ভবত সে মানেরই একজন লেখক,তবে অনেক বেশী জনপ্রিয়। লক্ষনীয় উনি নিজে নিজের প্রচারে কখনো নেমেছে বলে শুনিনি( যা আমরা অনেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করি)। সাক্ষাতকারে ও আত্ম প্রচার বা আত্মরম্ভিতার কোন লক্ষণ ছিল না।সব ব্যাপারেই সাদা মাটা,সাধারন।ওনাকে কোন গোষ্ঠী বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচারে নিয়ে এসেছে কিনা সে নিয়ে আরেকটি গোষ্ঠী উৎকন্ঠিত।এটি ঠিক এই প্রচারে উনার নাম খ্যাতি বেড়েছে এমনকি আপাত অনেকের কাছে অনেক বড় লেখক ও মনে হতে পারে।কিন্তু এতে উনার কোন হাত নেই।উনি আমাদের অনেকের মতন এতো বড় সুযোগকে কাজে লাগানোর ও কোন চেষ্টা করছেন না।তবে কেন বিদ্বেষ? কেন হাসি তামাশা? ( তার লেখার মান বা বিষয় বস্তু নিয়ে সমালোচনা এক কথা,আর তাকে ক্লাউন বানিয়ে মশকারা করা ভিন্ন কথা।তাকেই ক্লাউন বানানো যায় যিনি কথায়,আচরনে এমন কিছু করেন যা বিরক্তিকর, আপত্তিকর ও অন্যের জন্য অপমানজনক। যেমন- ট্রাম্প,এরশাদ,হিরো আলম)।
যারা জ্বলে পুড়ে মরছেন এটি ভেবে এমন লেখক এতো বড় প্রচারনা কেন পাবে,কেন এতো বড় মাপের লেখক বলে দেশ বিদেশে প্রচার হবে,তাদের একটি ধ্যৈর্য্য ধরতে বলবো।সময়ের বিচারে কোনটি স্বর্ন আর কোনটি নিছক পাথর তা নির্নিত হয়ে যাবে।আবুবাকার আবুবাকারই থাকবেন। তাকে কেউ উচ্চে বা কেউ নিম্মে নিয়ে যেতে পারবেন না( তাহলে এরশাদ সাহেব নিজ প্রচারেই মহান কবি হিসেবে ইতিহাসে নাম লিখে যেতে পারতেন)।
৬। কেন জনপ্রিয়? আমার নিজের বিবেচনায়( অনেকে একমত নাও হতে পারেন) উনি জনগোষ্ঠীর একটি বৃহত অংশের ধর্মিয়- মনস্বতাত্বিক পাঠটি ভালো ভাবে করতে পেরেছেন অথবা নিজ ধর্মীয় - সাংস্কৃতিক চেতনার রং মিশিয়ে সাহিত্য লিখতে গিয়ে নিজের অজান্তেই সে জনগোষ্ঠীর নজরে পড়ে গেছেন।কৈশোর - তারুন্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালো লাগা,আকর্ষন বোধ করা,প্রেমে পড়া এবং সাবলাইম পদ্ধতিতে হলেও যৌন কামনা চরিতার্থ করা একটি " বায়োলজিক্যাল ডিমান্ড"। ধর্মীয়- সামাজিক - পারিবারিক বাধার কারনে অনেকেই আবেগের সে চাহিদাকে হয় এড়িয়ে যায়,অস্বীকার করে বা বিকৃত পথে চলে যায়।কিন্তু যদি এমন পন্হা কেউ খুজে দিতে পারে যাতে ঐ ধর্মপ্রান ছেলে- মেয়েগুলো ভাবতে পারে,বিশ্বাস করতে পারে যে সে/ তারা শরীর- মনের চাহিদা যে প্রেম তা করতে পারছে অথচ এতে তার " পাপ" হচ্ছে না।সে নৈতিকভাবে,ধর্মীয়ভাবে সঠিক থেকেও প্রেম- ভালোবাসা করতে পারছে- এর চেয়ে মহৎ মুক্তি তাদের জন্য আর কি হতে পারে।আমরা সবাই নিজের লোভ- লালসা- কামনা চরিতার্থ করতে চাই,বাধা কেবল ধর্মীয়,নৈতিক অনুশাসন।যে পদ্ধতিতে বিবেকের অনুশোচনা ছাড়াই প্রেম,যৌনতা করা যায় তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বিশেষ করে মুসলিম তরুন-তরুনীর জন্য বিরাট আশীর্বাদ তুল্য।আবুবাকার কি সেই গরিষ্ঠ মানুষদের তেমন মুক্তির আনন্দ দিতে পেরেছেন?তার জনপ্রিয়তার এটিই বড় কারন বলে আমার ব্যক্তিগত মতামত( তবে এটি কোনভাবেই প্রকৃত ইসলাম সমর্থন করে না।বিবাহ পূর্ব বা বিবাহ বহির্ভূত কোন প্রেম ভালোবাসা ইসলাম সম্মত নয়।সেদিক থেকে তাকে প্রচন্ড বিরোধীতা করা যায়।ডবে সেটি তো করবে মাওলানা- মৌলভীরা।যারা সারাক্ষণ ধর্মীয় গোড়ামীর বিরোধীতা করে আসছেন,নিজেদের আধুনিক,অসাম্প্রদায়িক বলে গলা ফাটিয়ে ফেলছেন তারা যদি আবুবাকার ইসলাম বিরোধী কাজ করছে বলে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রপ করতে থাকেন তখন প্রশ্ন জাগে- ঢাল মে কুস ক্যালা হ্যায়।)
মানব- মানবীর প্রেম নিয়েই জনপ্রিয় উপন্যাস হয়।সেটি ধর্মমনা মানুষের জন্য সহজ করার ( ইসলাম বিরোধী) সস্তা পথ ধরার জন্য আবুবাকারকে কাঠগোড়ায় কেউ দাড় করাতেই পারেন।কিন্তু তাকে তাচ্ছিল্য বা হেয় করে মজা নেওয়ার প্রবনতা বিকৃতির সামিল
No comments:
Post a Comment