পর্ব-৩: কয়েকটি মাইন্ডফুলনেস প্রাকটিস
........................................
১। হাটার মেডিটেশন : সময়- ১০ মিনিট
ক) সচরাচর যে গতিতে হাটেন সে গতিতেই রাস্তায় হাটুন।সড়কের যে আলোগুলো,যে সব মানুষ রাস্তায় যাতায়ত করছে সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিন।তবে মেধাহীন ব্যক্তির ন্যায় অসচেতন ভাবে তাকাবেন না।পূর্ন আগ্রহ ও কৌতুল নিয়ে তাকান( আমি পুঃরনো ঢাকায় বিকেলে একা হাটতাম আর চারপাশের মানুষ জন,দোকান,বাসা সব কিছু অনেক আগ্রহ ও কৌতুল নিয় তাকাতাম।এমনকি রাস্তার পাশের বাসার দরজা- জানালা দিয়ে যতটুকু দেখা যায় উকি দিয়ে তা ও দেখতাম। এতে একবার এক সহযাত্রী সতর্ক করে দিলো এভাবে অন্যদের ঘরের ভিতর তাকালে মার খেতে হতে পারে।কেননা তারা ভাবতে পারে আপনি চোর বা তাদের ঘরের ভিতরের মেয়ে- মহিলাদেরকে দেখার চেষ্টা করছেন।তথাপি আমার সে অভ্যাস এখনো আছে।ইনশাল্লাহ বিপদ হয়নি। বরং এখনো দেশে বা বিদেশে ঘুরতে গেলে আমি ভ্রমন পথের( তা বাস,ট্রন যাই হোক) চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য ও চলমান জীবন্ত খন্ড নাটক দেখতে দেখতে যাই।মূল স্পটের চেয়ে যাত্রাপথের এই অভিজ্ঞতা অনেক তৃপ্তিদায়ক ও উপভোগ্য।
মূলত চারপাশে যে জীবন্ত নাটক- সিনেমার খন্ড দৃশ্য বয়ে যাচ্ছে আপনি অনুসন্ধিসন্যু হলে এগুলো বেশ উপভোগ করবেন।
খ) সোজা হয়ে হাটুন তবে বেশী চাপ দিবেন না।প্রতিবার মাটিতে পা রাখার সময় কেমন লাগছে তা অনুভব করুন।শরীরের ওজন যেন সবদিকে সমভাবে বিতরন হয়।
গ)বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বাকিয়ে হাতের তালুর দিকে নিন ও বাকী আঙ্গুলগুলো দিয়ে এটিকে আবৃত করে রাখুন।এবার এটি পেটের উপর স্হাপন করুন।এবার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনীর ভিতর ঢুকিয়ে দিন।
২। নিজের বর্তমান অবস্হানকে পূর্নভাবে অনুভব করুন ও অন্যদের দিকে মনোযোগী হোন,তাদের কথা শুনুন আগ্রহ ও কৌতুল নিয়ে।
৩। নীরবে লক্ষ্য করুন আপনার ভিতর কি ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে - চিন্তা সমূহ,অনুভূতিগুলো,বাছ- বিচার সমূহ( জাজমেন্টস),স্মৃতিগুলো।
পরে যার সঙ্গে কথা বলছেন তার দিকে পূর্ন মনোযোগ দিন।
২. শোনার ও দেখার মেডিটেশন :.......
৩। দয়ালু হওয়ার মেডিটেশন : অন্যের প্রতি দয়া দেখাতে হলে আগে নিজের প্রতি সদয় হতে হবে।নিজের যত্ন নেওয়া তত সহজ কাজ নয়।ভালোবাসা গ্রহন করা,প্রশংসা গ্রহন করা ও আমি সুখী হওয়ার অধিকার রাখি- এগুলো আমাদের গতানুগতিক চিন্তার মধ্যে থাকে না।ভেবে দেখুন- ভবিষ্যৎ এর আশঙ্কা, বিপদ নিয়ে চিন্তা করে, অতীতের কর্ম নিয়ে আফসোস করে,অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করে,নিজকে কঠিনভাবে সমালোচনা/ মূল্যায়ন করে,এরপর কি ঘটতে যাচ্ছে ইত্যাদি ভেবে আমরা নিজেদের কত বেশী শক্তি নিঃশেষ করছি।
এখন ভাবুন ঐ পুরো শক্তি একত্রিত হয়েছে ও আপনার কাছে ফিরে এসেছে। "ভালোবাসা/ দয়ার" মেডিটেশন করে আমরা নিজকে পুনরায় সঠিক অবস্হানে নিতে পারি।নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া হবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। এই ভিত্তি ভূমির উপর দাড়িয়ে আপনি অন্যদেরকে এই " দয়ার/ভালোবাসার" ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে পারবেন।
কিভাবে করবেন?
মনে মনে নিঃশব্দে নিজের ও অন্যের ভালো গুনাবলী গুলো নিজের সঙ্গে বার বার বলতে থাকুন
ক) নিজের ভালোত্ব নিয়ে ভেবে উৎফুল্ল হোন।যে সব কাজ সদয়ের সঙ্গে করেছেন সেগুলো স্মরন করুন এবং এই স্মৃতিচারনকে তৃপ্তির সঙ্গে উপভোগ করুন।
খ) নিজের জন্য চান এমন স্হায়ী ও গভীর ভালো কিছু গুনাবলী মনে মনে নিজকে শোনান।যেমন : আমি যেন নিরাপদে ও সুস্হ থাকি,আমি যেন সুখ ও আনন্দে জীবন- যাপন করি,আমার ভালো শারিরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য রয়েছে,আমি যেন সহজভাবে জীবন- যাপন করতে পারি- ইত্যাদি।
গ) এই কথাগুলো দ্রত নয়,ধীরে ধীরে বলুন যেন কিছু স্পেইস থাকে।ফলে একটি ছন্দ তৈরী হবে যা আপনার জন্য প্রীতিদায়ক।একেকবার একেক বানীর দিকে মনোযোগ দিন
ঘ) যতবার লক্ষ্য করবেন মনোযোগ সরে গেছে ততবার নিজের প্রতি সদয় হোন।কোনভাবে বিরক্ত না হয়ে মনোযোগ পুনরায় ফিরিয়ে আনুন।
ঙ) কিছু সময়ের পর মনোজগতে একটি দৃশ্য কল্পনা করুন( ভিজিউলাইজেশন)। দেখুন আপনার প্রতি সদয় ও আপনাকে অনুপ্ররনাকারী ব্যক্তিরা একটি বৃত্ত তৈরী করে দাড়িয়েছে এবং এই বৃত্তের কেন্দ্রে আপনি।হয়তো তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বা তাদের সমন্ধে কোথাও পড়েছেন; হয়তো তারা এখনো জীবিত বা ঐতিহাসিক ভাবে বেচে আছে বা এমনকি মিথ হিসেবে বেচে আছে।
বৃত্তের কেন্দ্রে নিজকে অবলোকন করুন ও দেখুন আপনি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও ঘনিষ্ঠ মনোযোগ পাচ্ছেন।শান্তভাবে নিজকে ভালোবাসার বানীগুলো রিপিট করতে থাকুন
।এরপর মনের দৃশ্যায়ন বন্ধ করে আরো কয়েক মিনিট ঐ ইতিবাচক সাজেশনগুলো রিপিট করুন।যতবার আপনি এমন করবেন ততবার আপনি নিজের সঙ্গে নিজের যে পুরনো,ক্ষতময় সম্পর্ক সেটিকে সুস্হ ও ভালোবাসার সম্পর্কে রূপান্তরিত করতে পারবেন
( শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না।তথাপি আগামী সংখ্যা য় যেভাবেই হোক মেডিটেশন পর্ব শেষ করে দেবো।শেষ পর্বে থাকবে যাদের সময় কম কিভাবে ১ মিনিটে মাইন্ডফুলনেস প্রাকটিস করতে পারবেন)
No comments:
Post a Comment