Tuesday, May 9, 2017

সাইকোলজিক্যাল টিপস-৩০: মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন

পর্ব-২:( দয়া করে পর্ব-১ আবার পড়ে নিন)
কিভাবে আমরা অধিকতর মাইন্ডফুল হতে পারি?
১। প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নিজকে মনে করে দেওয়া যে আমি আমার চিন্তা,আবেগ-অনুভূতি,মন-ছবি,শারিরিক সেনসেশন ও চারপাশের পৃথিবীকে   নিয়মিত নোটিশ করে যাবো
২। প্রতিদিন মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন- দৈনন্দিন জীবনকে, যে খাদ্য খাচ্ছেন, হাটার সময় বাতাস যেভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে বয়ে যাচ্ছে। মনে হতে  পারে এগুলো হাস্যকর ও ছোটখাট ব্যাপার কিন্তু আমাদের " অটো পাইলট" হিসেবে গতানুগতিক চলার ক্ষেত্রে এগুলো ভালো ব্রেক দিতে সক্ষম।আমাদের দরকার অটোপাইলট হিসেবে না চলে ক্ষনে ক্ষনে " বর্তমানে" মনোযোগ দেওয়া এবং সেটি সম্ভব শুধু এভাবে প্রতিদিন নিজের বর্তমানের অবস্হানকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করা ও তা উপভোগ করা
৩। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় এর জন্য ঠিক করে রাখুন- হয়তো অফিসে যাওয়ার যাত্রা পথে বা দুপুরে লান্চ করতে যাওয়ার সময়।এই সময়টিতে পৃথিবী যে সেনসেশন তৈরী করে চলছে সেদিকে নজর দিন
৪। নতুন কিছুর চেষ্টা করুন- মিটিং এ নতুন কোন সিটে গিয়ে বসুন বা নতুন জায়গায় গিয়ে লান্চ করুন( যাতে নতুনতর সেনসেশন,অনুভূতি অনুভব করতে পারেন)
৫। নিজের চিন্তার দিকে মনোযোগ দিন:

একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন।বর্তমান মুহূর্তটি যেরকম হুবহ সেরকমভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করুন।আপনার লক্ষ্য হবে বর্তমান মুহূর্তকে কোনরকম জাজমেন্ট না করে,ভালো মন্দ বিচার না করে শুধু এর প্রতি মনোযোগী হওয়া( মনকে চিন্তামুক্ত বা শান্ত করার চেষ্টা নয়)। তবে  এটি ঠিকভাবে  করতে পারলে মন ঠিকই শান্ত হয়ে আসবে,মনের ভিতর চিন্তার উত্তাল ঢেউ শান্ত হয়ে মন প্রশমিত হবে।
চোখ বন্ধ করে মনের দিকে নজর দিন। দেখবেন শত সহস্র চিন্তা- দুশ্চিন্তা মনের ভিতর বয়ে যাচ্ছে। মাইন্ডফুলনেস মানে এই নয় এ চিন্তাগুলো দূর করে দিতে হবে।আপনার লক্ষ্য হবে চিন্তার সঙ্গে জড়িয়ে না গিয়ে,চিন্তা থেকে নিজকে বিচ্ছিন্ন রেখে, দূর থেকে চিন্তা স্রোতকে অবলোকন করা।
বাস স্টান্ডে যেমন অনেক বাস আসে যায়, সেভাবে চিন্তাকে দেখুন।তবে কোন চিন্তা-বাসে আরোহন করবেন না।দেখবেন বুদবুদের মতন কিছু চিন্তা চুপ করে উঠে টুপ করে পরে যাচ্ছে। আবার অনেক চিন্তা দ্রত আসছে ও দ্রত চলে যাচ্ছে। মূলত কয়েকটি চিন্তাই হয়তো ঘুরে ফিরে আসছে( যেগুলো আপনার দুশ্চিন্তার উৎস)। চিন্তার স্রোত আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে,আপনি হাল্কা করে নিজকে তা থেকে মুক্ত করে আবার দূর থেকে পর্যবেক্ষকের মতন মনোরাজ্যে কি ঘটে চলছে সেদিকে মনোযোগ দিন।প্রথমদিকে এটি কঠিন মনে হবে,নিজকে চিন্তা বিযুক্ত রেখে চিন্তাকে অবলোকন করতে।তবে প্রাকটিস চালিয়ে গেলে এটি সহজ হয়ে আসবে।মন কেন বিক্ষিপ্ত থাকে,কেন চিন্তা ইচ্ছামত ঘুরাফিরা করে - নিয়ন্ত্রণ করতে কেন পারছি না,এরকমটি ভেবে মনকে আরো অস্হির করবেন না।
মনের কাজই ছুটে বেড়ানো।এটিকে সদয় দৃষ্টিতে দেখুন।যে চিন্তাই মনে আসে সেটি ভালো না মন্দ তা যাচাই করবেন না।চিন্তাকে নিছক " মানসিক ঘটনা" হিসেবে দেখুন।অন্য মেডিটেশনে যেমন শ্বাস - প্রশ্বাসের দিকে মনোনিবেশ করা হয় এখানে মনোযোগ মনোরাজ্যের দিকে- তার চিন্তা,অনুভূতি প্রভৃতির দিকে।মন ছুটে যাবে এদিক সেদিক আপনি এর জন্য ক্ষিপ্ত, বিরক্ত না হয়ে একে চমৎকার খেলা হিসেবে নিন।শিশু যেমন পরম কৌতুল নিয়ে কিভাবে ট্রেনগুলো প্লাটফর্ম থেকে এদিক সেদিক যাচ্ছে তা দেখে থাকে, আপনি ও চিন্তা- ট্রেনকে সেভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।

কয়েক মিনিট চিন্তা পর্যবেক্ষণ এর পর দেখুন মনের ভিতর কি কি দৃশ্য ভেসে উঠছে( এই মন ছবিগুলোও ঐ দুশ্চিন্তা সংশ্লিষ্ট - কে কি বলেছে,কি ঘটনা ঘটেছে যা আপনাকে পীড়া দিচ্ছে।) এগুলো থেকেও নিজকে বিচ্ছিন্ন রেখে নিছক সেগুলো দর্শকের মতন পর্যবেক্ষণ করুন

এর পর দেখুন মানসিক অবস্হা কেমন।

অর্থ্যাৎ কি ধরনের আবেগ-অনুভূতি মনে কাজ করছে।এটি কি টেনশন, নাকি অশান্তি নাকি রাগ- ক্রোধ,হতাশা,লজ্জ্বা,অপমানবোধ নাকি অন্য কোন অনুভূতি।কিছুক্ষণ সে অনুভূতিগুলো গভীরভাবে অনুভব করুন। কোন অনুভূতিকে এড়িয়ে যাবেন না,হাল্কা করে চলে যেতে দেবেন না- গভীর ভাবে তা অনুভব করুন।গভীরতার চাপে দেখবেন অনুভূতির নরম থলে গলে গেছে,সেগুলো মনে ছড়িয়ে পরে হাল্কা হয়ে মন থেকে ক্রমশ উবে যাচ্ছে।

এরপর মনোযোগ দিন শরীরের সেনশেসন এর দিকে।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে প্রতিটি অংশে মনোযোগ দিন ও প্রতি অঙ্গে কিরকম সেনসেশন টের পাচ্ছেন তা লক্ষ্য করুন( ঠান্ডা,গরম,ব্যথা,চাপ..)।

এভাবে ১০-১৫ মিনিট চিন্তা, অনুভূতি,মনছবি ও শারিরিক সেনসেশন নিরীক্ষণ করার পর চোখ খুলে উঠে বসনু।কাগজ- কলম নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চিন্তাগুলো  কি কি ছিল তা লিখে রাখুন।এই অটোমেটিক থটগুলো আপনার অবচেতন মনের অনেক রহস্য উন্মোচন করবে( আমরা মনোচিকিৎসকরা  সিবিটি - সাইকোথরাপির সময় এই চিন্তা বিশে্লষন করে রোগীর চিন্তা- বিভ্রাট, চিন্তায় গলদ কোথায় ও কিভাবে এ গলদের সৃষ্টি হয়েছে তা বের করে থাকি।রোগীর চিন্তা,বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরনের পরিবর্তন করেই আমরা মানসিক রোগ নিরাময় করে থাকি)।
এই মাইন্ডফুলনেস প্রাকটিস আপনার মনকে যেমন প্রশান্ত করবে,তেমনি চিন্তা বিশ্লেষণ করে চিন্তার ক্রটি সংশোধন  করে মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করবে।
( পরবর্তী পর্বে- সুনির্দিষ্ট কিছু মাইন্ডফুল প্রাকটিস নিয়ে আলোচনা)

No comments:

Post a Comment