Monday, December 23, 2019

পরিবার ও মা-বাবা নিয়ে তরুনদের ভাবনা

প্রথম আলো  একটি পত্রিকার চেয়ে ও বেশী। কেননা পত্রিকার দায়িত্বের বাইরে ও তারা অনেক সামাজিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন।সমাজ বিবর্তন এবং সামাজিক পরিবর্তনের লক্ষন ও ধরনগুলো বৈজ্ঞানিক জরীপের মাধ্যমে তুলে ধরা তেমন একটি মহৎ উদ্যোগ। ২০১৭ এর পর এবার ২০১৯ এ ও পরিবারও মা-বাবা নিয়ে তরুনদের  ভাবনা কি সে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে। জরীপেে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে যা সবার জন্য উদ্বেগেেের বিষয় এবং এর  যথাযথ মূল্যায়ন করে এসবের প্রতিকার বের করা জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। 
মোটাদাগে জরীপেে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে মা -বাবার সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে কিনা,পারিবারিক বন্ধন কমে গেছে কিনা,তরুণরা কাদের সঙ্গে নিজেদের সুখ-দুঃখ বা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে ইত্যাদি। একই সঙ্গে এসবের কারণ কি, এমনকি সমাধান কি তাও জরীপেে তুলে ধরা হয়েছে। 
পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে ঃঃ জরীপেে দেখা যায় মা-বাবার সঙ্গে তরুণদের দূরত্ব বাড়ছে, যার হার ৭৮.১%।পারিবারিক বন্ধন কমেছে ৭৮.২% বলে তরুণরা মনে করে।এই দূর্রত্ব বৃদ্ধি ও বন্ধন শিথিল হওয়ার কারনে তাদের মধ্যে হতাশা, মাদকাসক্তি,  অবসন্নতা, নৈতিক স্খলন  প্রভৃতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জরীপেে উল্লেখ করা হয় ।  এরকম ফলাফলকে যথার্থ   বলে মনে হয়। কেননা জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, বলিষ্ঠ আত্মপরিচিতি গঠন,  আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান গড়ে ওঠার মূল পাঠাতন হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন ও মা-বাবার সঠিক সন্তান লালনপালনের কল্যাণকর প্রভাব। মা-বাবার সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পেলে বা পারিবারিক বন্ধন দূর্বল হলে সন্তানদের এরকম বিচ্যুতি স্বাভাবিক। 
জরীপেে উল্লেখ করা হয়েছে দূরত্ব বৃদ্ধির কারণ মা-বাবার কর্মস্থলে ব্যস্ততা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়া। কর্মস্হলে থাকার কারনে যে সময় কম দেওয়া সেটির ঘাটতি  মা-বাবা পূরণ করতে পারে "গুণগতমানের "সময় দিয়ে।আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি থাকলে সন্তানরা এর অনুসরণ করবে এবং সন্তান যথাযথ মনোযোগ ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হবে। তাই তাদের এই নিজেদের আসক্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে এবং সম্তানদেরকে ও এসব বিষয়েে " আত্মনিয়ন্ত্রণ" করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। 
এই জরীপেে আরো দেখা যায় ৫৩% তরুন-তরুণী অবসর সময়ে সামাজিক যোগাযোগ  মাধ্যমে ও ইন্টারনেটেে সময় ব্যয় করে থাকে এবং শিক্ষিত তরুনদের মধ্যে এ হার অনেক বেশি-৭০%। আমাদের অভিজ্ঞতা এ হার আরো বেশি হতে পারে। তবে কত ঘন্টা সময় ব্যয় করে সে তথ্যটুকু আরো জরুরি ছিল। তরুণরা এ জন্য  খেলাধুলা ও শিক্ষাকার্যক্রমেে যুক্ত থাকার সুযোগের অভাবকে দায়ী করেন। তবে বন্ধু বান্ধবদের প্ররোচনা,সুস্থ বিনোদনের অভাব,মা-বা, শিক্ষকদের তদারকি ও নজরদারির অভাব সহ আরো অনেক উপাদান ও দায়ী। 
কিছু সংখ্যক তরুণ এর কিছু  সুফলের কথাও উল্লেখ করেন। তাদের মতে এসব সামাজিক মাধম লেখাপড়ার কাজে, উৎপাদন ও উপার্জনের কাজে, চাকরি-বাকরী, পরীক্ষার প্রস্তুতি, এসাইনমেন্ট তৈরি, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন সহ প্রভূত কাজে লাগে। এর সঙ্গে আমরাও একমত। আধুনিক প্রযুক্তির কিছু কুফল থাকলে ও এর উপকারিতা অসীম। শুধু প্রয়োজন ঐসব কুফল এড়িয়ে কিভাবে এর সঠিক ও গঠনমূলক ব্যবহার বাড়ানো যায় সেরকম প্রয়োগ কৌশল তাদের শিখিয়ে দেওয়া। 
মা -সর্বকালের ভরসা -কিন্তু বেচারা বাবা ঃঃ জরীপেে দেখাযায় ৫১.৪% তরুনের মূল ভরসা মা। গ্রামেে এ হার কিছুটা বেশি। অথচ বাবাদের প্রতি ভরসা মেয়েদের ১৮.৩%  ও ছেলেদের ৩২.৮%। জন্ম থেকেই মায়ের সঙ্গে সব সন্তানের একটি "আত্মিক বন্ধন " (এটাচমেন্ট) তৈরি হয়। শৈশবের পুরো সময় সকল প্রকার প্রয়োজন, চাহিদা, নিরাপত্যতা যত্নের  মূল দায়িত্ব পালন করে মা। এমনকি কৈশোর-তারুন্যে ও এই নির্ভরশীলতা অটুট থাকে। বাবারাা হয় খেলার সাথী। বাবারা নিজেরাও এমনকি বৃদ্ধবয়সে ও তাদের মায়েদের উপর ভরসা রাখে। প্রকৃতির এ এক অমোঘ নিয়ম।তবে লক্ষনীয়, মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বাবার কাছে বেশি ভরসা রাখে, যদি ও বন্ধুর তুলনায় খুবই  কম। এর কারন  লিঙ্গ, সমাজ, কর্মপরিধি ও বাস্তব প্রয়োজন। কিন্তু আশঙ্কার কথা ছেলেদের এই ভরসা যতদিন যায় তত কমতে থাকে। জরীপেে দেখা যায় বাবারপ্রতি এই ভরসা ১৫-১৯ বছরেে  যেখানে ৩৩.৪% সেটি ২৫-৩০ বছরেে দাড়ায় কমে ১৮. ৭%।হায় বেচারা বাবা। 
হতভাগ্য স্ত্রী -ভাগ্যবান বন্ধু ঃঃ জরীপেে দেখা যায় ছেলেরা সমস্যার কথা, সুখ-দুঃখের কথা বেশি শেয়ার করে বন্ধুদের সাথে -৫৮.১%,এর পর মা-৫২.১%  এরপর বাবা -৩২.১৩% এবং সর্বশেষেে হতভাগ্য স্ত্রী /সঙ্গিনী -মাত্র ৬.৯% । এমনকি ভাইবোনের চেয়ে ও কম আলোচনা করে সঙ্গিনীর সাথে  । 
পুরুষদের এই অতিরিক্ত বহিঃমুখিতা, সংসার বৈরাগী মনোভাব , পরিবার ও সমাজেে অনেক বিড়ম্বনা, কষ্ট, জটিলতার জন্য দায়ী।  দাম্পত্য জীবনেে বহুবিধ আবেগগত, মানসিক সমস্যা নিয়ে অনেক নারী আমাদের কাছে এসে থাকে। এর বেশিরভাগ কারণ স্বামীর কাছ থেকে অবজ্ঞা, অবহেলা, নির্যাতন। স্ত্রী /সঙ্গিনীর প্রতি অমনোযোগ, অনাগ্রহ, অযত্ন, যোগাযোগহীনতা দাম্পত্যকলহ ও অশান্তির অন্যতম কারণ। 
অথচ জরীপে দেখা যায় ৪৪.৫% নারী সঙ্গি /স্বামীর সঙ্গেই সুখ দুঃখের কথা বলে থাকে। মূলত মায়ের পর মেয়েরা সঙ্গীর সঙ্গে বেশি শেয়ার করে       ।           
এদিকটি তাই খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। পুরুষ স্বভাবের এই মন্দ দিকটি নিয়ে সকল পুরুষকে গভীরভাবে পুনবিবেচনা করে দেখতে হবে।    
এ প্রজন্মের বড় সমস্যা -মানিয়ে নিতে না পার ঃঃ
পরিবার, সমাজ, জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তরুনদের উদ্বেগ উল্লেখযোগ্য। এই মানিয়ে নিতে না পারার হার মেয়েদের মধ্যে বেশি-৭৫%। জরীপেে উল্লেখ করা হয় তাদের এই উদ্বেগ এতো বেশি যে তা জীবনের লক্ষ্য, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, চাকরি বাকরী বা পড়াশোনা কোনটাই নাকি এর মতন সমান উদ্বেগেেের বিষয় নয়। মূলত কৈশোর-তারুন্য সময়টি জীবনেেের একটি সন্ধিক্ষন। এসময়ে শারীরিক বৃদ্ধি দূরুত বৃদ্ধি পায়। কিন্তুএর সাথে তাল মিলিয়ে মানসিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক, নৈতিক বিকাশ তেমন এগুতে পারে না। একদিকে মনে হয় তারা বড় হয়ে গেছে, তারা নিজেরাও তেমনটা ভাবে। অথচ বাস্তবেে তাদের মনন সেরকম পরিপক্ব নয়। এজন্য তাদেরকে জীবন, সমাজ এমনকি নিজের সঙ্গে অনবরত যুদ্ধ করে যেতে হয়। সে যুদ্ধখুবই অসম। তাই তাদের মনে হয় আমি বে-মানান, আমি কিছুর সঙ্গেই মানিয়ে নিতে পারছি না। অভিভাবক, শিক্ষকগনের এ সময়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। তানাহলে তারা দিশেহারা, লক্ষ্যবিহীন হয়ে যেতে পারে। এসময় তাদের প্রয়োজন সহমর্মি, সহযোগিতা, সমর্থন ও ভালোবাসা-উপদেশ বা কঠোর শাসন নয়। 
সামাজিক বন্ধন ও শিথিল হচ্ছে ঃ  ৮৫% তরন বলছে তাদের সামাজিক বন্ধন ও কমে যাচ্ছে। এটামোটেই অপ্রত্যাশিতনয়,কেননা পারিবারিক বন্ধন কমে গেলে সামাজিক বন্ধন অটুট রাখবে কিভাবে? তরন প্রজন্মের বিপথে চলে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন শিথিল হওয়া। 
ভয়ঙ্কর সংবাদ- কারো প্রতি আস্হা নেই ঃঃ এতোক্ষণঅনেক নেতিবাচক তথ্যের উল্লেখ করলাম কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে ৬.৭% তরন কারো উপরই ভরসা করতে পারছে না।  এ হার শহরে আরো বেশি -৯%। যে মানুষ কারো উপর আ, ভরসা রাখতে পারে না, মা-বা, ভাই বোন,বন্ধু, সমাজ কারো উপর যারা ভরসা নেই তারা নিজেদের জন্য যেমন তেমনি সমাজের জন্য ও হতে উঠতে পারে  ভয়ংকর। পুরো আশাহীন, অসহায় মানুষ হয় নিজকে শেষ করে দিতে চাইবে, নতুবা চারপাশের সবকিছু চুরমার করে, লডভন্ভ করে , হতাশা, অসহায়ত্বের ভার লাঘব করতে  চাইবে।

 এখন সমাজ, রাস্ট্র কি এদের কোন ভরসা দিতে এগিয়ে আসবে? জরীপের এইরকম ফলাফলকে পাল্টে দিতে, অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হলে রাস্ট, সমাজ, পরিবার, তথ্যমাধ্যম, বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে ইতিবাচক, শুভ উদ্যোগ জরুরি ভিত্তিতে নিতে হবে। আমরা সবাই একটি মানবিক, মননশীল, সৃজনশীল, আশাবাদি, কর্মমুখী, জীবনমুখী ও প্রানোচ্ছল প্রজন্ম দেখতে চাই। 
প্রফেসর ডা.মো  .  তাজুল ইসলাম                            মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট     
ইমেইলঃঃ drtazul84@gmail                                                                                                                                                                                               
                                                                                  
                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                            

Thursday, October 3, 2019

আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

প্রতি বছর,১০ অক্টোবর  বিশ্বব্যাপী   "বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস " পালিত হয়।এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে "আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন "। মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা দুটোই জাতীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হলে আত্মহত্যা সহ অন্যান্য হত্যা, সহিংসতা, অপরাধ
বহুলাংশে কমে আসবে। আশার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শুধু দেশেই নয়,এবার জাতিসংঘে গিয়ে ও  মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণের জন্য, পৃথিবীর অন্যান্য রাস্ট্রকেও আহ্বান জানিয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ২০১৩ সনেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৪টি সদস্য রাস্ট্রের সম্মতিতে, একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন, যাতে বলা হয় সদস্য রাস্ট্র গুলো ২০২০ সনের মধ্যে, আত্মহত্যার হার ১০% কমিয়ে আনবেন ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ২০% বাড়াবেন(হু,সাক্সেনা, ২০১৩)।এসডিজি ২০৩০ এর লক্ষ্য মাত্রা ও একইরকমের।এখন দেখার বিষয় সে অনুযায়ী আমরা কতটুকু লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি।
সংখ্যা তথ্য ঃপ্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৮ লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন। ১৫-২৯ বছরের তরুণ তরুণীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারন আত্মহত্যা, ৭৯% আত্মহত্যা ঘটে আমাদের মতন  নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ গুলোতে।বিশ্ব জুড়ে সহিংসতার, পুরুষের ক্ষেত্রে  ৫০%  আত্মহত্যা জনিত ও নারীর ক্ষেত্রে ৭১% আত্মহত্যা জনিত (হু-২০১৪)।
অনেকে মনে করেন স্বার্থপর লোকেরা আত্মহত্যা করে, তাদের প্রতি সহানুভূতি জানানো ঠিক না।কিন্তু আসলেই কি আত্মহত্যা এতো সহজ ব্যাপার? মনোবিজ্ঞানী জয়েনার বলেন -"হত্যা করা কঠিন, বিশেষ করে নিজেকে হত্যা করা।কেননা শারীরবৃত্তীয় ভাবে আমরা "বেচে থাকার" জন্য তৈরি হয়েছি।"আমরা জীবনের সব সম্পদ ত্যাগ করে হলেও বেচে থাকতে চাই।
সেন্টার ফর সুইসাইড প্রিভেনশন এর লেখক রবার্ট ওলসন , আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেচে যাওয়া একজনের নোট তুলে ধরেন-"আমি শুনেছি লোকে বলে যারা আত্মহত্যা করে তারা স্বার্থপর। কিন্তু এটা সত্যি নয়।যে মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি সেই চরম, নিঃসীম অন্ধকারকে অনুভব না করবেন;আশাহীনতা, কষ্ট আপনাকে বলবে পৃথিবীতে তোমার কিছু করার নেই; সেই বিরামহীন বেদনা বন্ধের একমাত্র পথ হচ্ছে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে নিজেকে "সরিয়ে নেওয়া ",ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাদের মনের মর্ম যন্ত্রনা বুঝতে পারবেন না। "
এইরকম চরম মুহূর্তে তারা কিরকম ভাবে, এটি তার একটি ভূতাপেক্ষ আভাষ মাত্র। একই রকম চিত্র পাই নাতাশা ম্যুলারের পর্যবেক্ষণ থেকে। তিনি লিখেছেন -"আমার বাবা সহ আরো তিনজনের আত্মহত্যা আমাকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। বিষন্নতা ও উদ্বেগের "দানব" যখন কাউকে পেয়ে বসে,তাদের জীবনে তখন কোন  "ঐন্দ্রজালিক, মোহনীয়" মুহূর্ত থাকে না-যখন পরিস্থিতির "একটু খানি হলেও উন্নতি " হয়েছে বলে তারা মনে করতে পারে বা হঠাৎ কোন "শান্তি " তাদের উপর বর্ষিত হয় না। কিছু একটা স্হায়ী ভাবে বসে থাকে যার বন্ধন থেকে তারা মুক্ত হতে পারে না। "।
তিনি  আশার কথা ও লিখেন-" যে আমি আত্মহত্যার ভারবহ আঘাত বয়ে বেড়াচ্ছি, আমি তাদেরকে বলছি, যারা বিষন্নতার সহিত যুদ্ধ করছেন, তাদের বলছি, যাদের আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসছে -বিষন্নতার যে অদৃশ্য কালো হাত আপনার মাথা চেপে নুইয়ে রেখেছে, সে চাপ একসময় সরে যাবে। জেনে রাখুন এখনো আশা,প্রত্যাশা রয়েছে। আমি বেচে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এ যুদ্ধ অব্যাহত রাখার প্রতিজ্ঞা করেছি "।
মনে রাখতে হবে ৯০% আত্মহত্যাকারীদের কোন না কোন মানসিক অসুস্থতা থাকে।(হয়েটন,২০০১)। এর মধ্যে রয়েছে -ডিপ্রেশন, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ম্যুড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের ক্রুটি, উদ্বেগ জনিত রোগ ইত্যাদি। ৪০টির ও অধিক গবেষণায় দেখা গেছে ৭৫% আত্মহত্যাকারী বিগত ১ বছরের মধ্যে অন্তত একবার তাদের জেনারেল প্রাকটিশনার ডাক্তারের সঙ্গে মানসিক অস্হিরতা ও আবেগীয় সমস্যা নিয়ে দেখা করেন।কিন্তু প্রশিক্ষণের ঘাটতি, সময়ের অভাবে বা দৃষ্টিভঙ্গির কারনে মানসিক বা আবেগীয় সমস্যা চিন্হিত করা হয়নি।(ল্যুমা,২০০২)।এমনকি হাসপাতালে ভর্তির ৭ দিনের মধ্যে ও হাসপাতাল ত্যাগের তিন মাসের মধ্যে অনেক মানসিক রোগী আত্মহত্যা করে থাকে(মিহ্যান,২০০৬)।
শুধু তাই নয়,বন্ধু -বান্ধব, নিকটাত্মীয়, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ও তারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে নিজেদের অসহায়ত্ব, যন্ত্রণার কথা নানাভাবে প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু আমরা সেই নীরব আর্তনাদ শুনতে বা দেখতে পাই না বা সেটিকে তেমন গুরুত্ব দেইনা।তারা কয়েক দিন বা কয়েক ঘন্টা আগেও তাদের আকুতি, বেদনার কথা জানান দেওয়ার চেষ্টা করে। যেমন " আমি আর পারছি না ";কোন কিছুতেই আর কিছু হবে না ";" মরন কেন আসে না"-ইত্যাদি।
জয়েনার তার ইন্টার-পারসোনাল থিওরি অব সুইসাডিলিটি তত্ত্বে বলেন -"মানুষ তখনই আত্মহত্যার চেষ্টা করে যখন তারা "ধারনাগত দুঃসহ, দুর্বহ" কষ্টে ভুগে ;ভাবে তারা আর কারো জন্য প্রয়োজনীয় নয়;এবং অন্যদের সঙ্গে তাদের একাত্মতা বোধ কমে যায় "। তিনি আরো বলেন -"এর সঙ্গে নিজেকে আঘাত, আহত করার যে ভয় বা কষ্ট সেটিও তাদের কম থাকে "। এই কারণে কিছু সংখ্যক কিশোরী, নারীর বারবার নিজেকে আহত,আঘাত করার ইতিহাস থাকে। তারা আবেগীয় কোন সমস্যায় পড়লেই " ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে আহত/আঘাত "করে থাকে (ডেলিভারেট সেলফ্ হার্ম)। যেমন -ব্লেড দিয়ে হাত কাটা,ঘুমের ঔষধ খাওয়া ইত্যাদি। এদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি থাকে ;হতাশা সহ্য করার ক্ষমতা কম থাকে ;তাৎক্ষণিক ইচ্ছা, বাসনা চরিতার্থ করার তাগিদ বেশি থাকে ;আবেগতাড়িতভাবে, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে কাজ করার (ইম্পালসিভ) প্রবনতা থাকে। এদের মানসিক কাঠামো সবলও নমনীয় করার জন্য পূর্ব থেকেই মনোচিকিৎসা নিলে এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধে ৪টি গাইডলাইন দেন।সেগুলো হচ্ছে -১। আত্মহত্যার পদ্ধতি /মাধ্যমের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনা। যেমন আমাদের দেশে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা বেশি হয়ে থাকে। তাই কীটনাশক কেনা,বিক্রি মনিটরিং করা;কেনার পর কৃষক বিষের বোতল একটি নির্দিষ্ট কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখবে;বিষের প্রাননাশক তীব্রতা কমিয়ে আনা;ঘুমের ঔষধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনার উপর নজরদারি করা  -ইত্যাদি। ২। সংবাদ মাধ্যম  কর্মীদের  আত্মহত্যার সংবাদ প্রকাশে কিছু গাইড লাইন মেনে চলা ৩।তরুণ তরুণীদের " সমস্যা সমাধান "দক্ষতা, " খাপ-খাইয়ে নেওয়ার "দক্ষতা ও " জীবন "দক্ষতা বৃদ্ধি করা৪। আত্মহত্যার ঝুকিতে যারা তাদেরকে পূর্ব থেকেই চিন্হিত করা।
এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মহত্যা প্রতিরোধে একটি বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি প্রস্তাব করেন।এর নাম-বিআইসি(ব্রিফ ইন্টারভেনশ এন্ড কন্টাক্ট) । রিবলেট ৭২টি গবেষণা পর্যালোচনা করে বলেন এই চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর।
যত্নশীল সংলাপ /কথোপকথন ঃআত্মহত্যা প্রতিরোধে আমাদের মতন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, প্রতিষ্ঠান বা সরকার ছাড়া ও আপনি নিজে ও অনেক কিছু করতে পারেন। ঝুঁকি পূর্নদের বেচে থাকার যথেষ্ট যুক্তি, কারণ রয়েছে সেটি খুঁজে নিতে সাহায্য করতে পারেন ;তাদেরকে অবস্থার ভিন্ন ও ইতিবাচক প্রেক্ষিত দেখিয়ে নতুন অন্যদৃষ্টি তৈরি করতে পারেন; এবং তাদের কথা আগ্রহ সহকারে ও সক্রিয় মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সেইডন সানফ্রান্সিসকোর বিখ্যাত গোল্ডেন গেইট ব্রিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেচে যাওয়া লোকদের উপর করা জরীপে দেখেছেন, বেচে যাওয়াদের ৯০%  পথচারী, ব্রিজ পাহারাদার ও পুলিশ দ্বারা রক্ষা পেয়েছেন। দেখা গেছে এরপর পরবর্তীতে তারা আত্মহত্যার আর কোন চেষ্টা করেননি। তার মানে, কোন ভাবে তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারলে, তারা সারা জীবন ভালো থাকবেন।
তবে এও মনে রাখতে হবে কিছু সংখ্যক রোগী রয়েছে যারা বারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ও করবে। এরা খুবই ঝুঁকি পূর্ন এবং তাদেরকে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসার আওতায় রাখতে হবে।
ডিপ্রেশন সব কিছু ধুমড়ে,মুছড়ে, পিষে একাকার করে ফেলে। তাই সে সময় জীবন দৃষ্টি খুবই সীমিত ও একপেশে হয়ে থাকে এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও একাকী মনে করে। কিন্তু আমাদের "প্রসারিত ও বিস্তৃত " হতে হবে। অশান্তি, কষ্ট, হতাশা, ব্যর্থতা ঢেউয়ের মতন জীবনে আসবে আবার চলেও যাবে। যখন সে ঢেউ উত্তুঙ্গ হয়,আমাদেরকে সে চূড়ায় সওয়ার হয়ে ভেসে থাকার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। আমরা যখন নীচ থেকে নিজেকে চূড়ায় উঠিয়ে আনতে পারি, তার মানে আমরা অধিকতর শক্তিশালী এবং আমরা আরো বেশি শক্তিশালী হবো, যখন আমরা এই চড়াই -উতরাইয়ে একত্রে সংগ্রাম করবো, লড়বো।
অধ্যাপক ডা. মোঃ তাজুল ইসলাম
প্রফেসর অব সাইকিয়াট্রি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ও হাসপাতাল, ঢাকা
ইমেইল ঃdrtazul84@gmail.com
Phone -01715112900

Friday, June 28, 2019

#কোপানো #সংস্কৃতি- #দায় #কার

"আমার ছেলেকে কেন জানে মারলো।পঙ্গু করে দিলেও তো আমার বুক আগলে থাকতো " -রিফাতের মায়ের এই অসহায় আকুতি প্রমাণ করে,আমরা অপরাধীদের রুখে দাঁড়াব দূরের কথা, আমরা তাদের কাছে নতজানু হয়ে প্রান ভিক্ষা করা জাতিতে পরিণত হয়েছি যে তোমরা জানে মেরে ফেলো না,পঙ্গু করে হলেও কোনরকমে বাচিয়ে রেখো।
গুম হয়ে যাওয়া মা-বাবারাও আবেদন করে যাচ্ছে আমাদের সন্তানের লাশটুকু অন্তত ফেরত দাও।

হত্যা খুন আগেও হতো তবে তখন তা হতো গোপনে, নির্জনে বা ভাড়াটিয়া দিয়ে। অপরাধীরা প্রকাশ্য হতে ভয় পেতো- পুলিশে ধরবে, গণপিটুনি খাবে, চিন্হিত হলে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে বলে । কিন্তু এখন চিত্র পুরো উল্টো হয়ে গেল কেন? সাধারণ মানুষ কেন অপরাধ প্রতিরোধে এগিয়ে আছে না? মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত বলছে এটি সমাজের ব্যর্থতা। কেন সমাজ ব্যর্থ হচ্ছে?

এক কথায় এর উত্তর পাওয়া যাবে না।তবে গুরুত্বপূর্ণ কারনটি বোঝা যায় প্রথম আলোর হেড লাইন থেকে -"বহু অভিযোগ নিয়ে ও তারা দাপিয়ে বেড়াতো"।
মাদক বিক্রি,  সেবন সহ পূর্বেও কোপানোর ইতিহাস রয়েছে তাদের।  তারা বহু মামলার আসামি ছিল। এমনকি পুলিশ অফিসারের বাসায় তান্ডব চালানোর মতন বীরত্ব সূচক কৃতিত্ব ও তাদের রয়েছে। অপরাধের বহু রকম "বিজয় মুকুট " তারা ইতিমধ্যে  অর্জন করে ফেলেছে ।

ফলে প্রকাশ্যে কোপানো সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা চলছে। খাদিজাকে কুপিয়েছে,অভিজিৎ, হুমায়ুন আজাদসহ অনেক ব্লগারদের কুপিয়েছে।তাদের তো রয়েছে বর্ণাঢ্য গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

 চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপানোরএই বর্বতার উৎস কোথায়?

আমরা হয়তো কিছু তাত্বিক ব্যাখ্যা দাড় করাতে  পারবো,কিন্তু সমাধান যাদের হাতে তাদের সেটি করতে বাধ্য করবে কারা? বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে?
..........................................................
কারা এর জন্য দায়ী,গলদ কোথায়,প্রতিকার কি?

এ আমার এ তোমার পাপ।

কম বেশী আমরা সবাই দায়ী।কেউই এর দায় এড়াতে পারিনা।পরিবার,সমাজ,প্রতিবেশী,বন্ধুরা,পুলিশ,সুশীল সমাজ,বিচার বিভাগ সর্বোপরি রাজনীতি..  সবাইকে এর কোন না অংশের দায় নিতে হবে।

পরিবারের কথায় আসি:
...............

তোমারে বধিবে যে      গোকুলে বাড়িছে সে

আমার পরিবারে এমন পশু,দানব কি ভাবে সৃষ্টি হলো, যে প্রকাশ্যে মানুষকে কুপিয়ে মারতে চায়।এমনকি
৫ লাখ টাকার মোটর কিনে দেওয়ার পরও নতুন মডেলের আরেকটি মোটর সাইকেল কিনে না দেওয়াতে মা-বাবা  উভয়কে পুড়িয়ে মারে?

গোকুলে এমন পিষাচ কেমনে তৈরী হলো?

সন্তান কি একদিনে বখে যায়?
নাকি আমাদের সন্তান প্রতিপালন পদ্ধতিতে রয়েছে বড় গলদ?

২য়ত:বুঝলাম কোন ভাবে কোন সন্তান বখে গেছে,বিপথে  চলে গেছে।কিন্তু তার বখাটেপনা,অনৈতিক,অসামাজিক,এমনকি অপরাধ মূলক কাজ গুলোও কি আমাদের নজরে পড়বে না? এতই ব্যস্ততা না কি উদাসীনতা আমাদের?

যে ঘাতক আমাকেও বধিবে তার কি কোন পূর্বাভাসই কি আমরা দেখতে পাই না?

সুপারভিশন,মনিটরিং এ তাহলে কি বড় ঘাটতি রয়েছে?

মাদকাসক্ত ছেলে বা মেয়ে এক সময় নিজের মা বাবাকেই  খুন করে ফেলতে পারে, তার এত দিনের বেপরোয়া,সহিংস উন্মাদনা দেখেও কি আমরা অনুধাবন করতে শিখিনি?(ঐশীর কথা মনে পড়ে)।

সন্তান পড়া ফাকি দিয়ে মেয়েদের পিছনে যৌন হয়রানী করে বেড়ায়,মাদক নেয়,চাদাবাজী-মাস্তানী করে বেড়ায়, চুরি ডাকাতি,ছিনতাই এমনকি খুন-খারাবী করে বেড়াচ্ছে, অভিভাবক হিসেবে আমি কিছুই জানি না এমনটি হওয়া কি স্বাভাবিক?

নাকি টের পেয়েও সন্তানের " ক্ষমতা,দাপট" দেখে আরো গর্ব অনুভব করছি,প্রতিবেশীরা আরো সমীহ করে চলে যে ওমুকের বাপ "সম্মান দিয়ে চলো" দেখে বুকের ছাতি বড় হয়ে যাচ্ছ?
নাকি মূর্খ ছেলে কিছু না করেও কাড়ি কাড়ি টাকা "উপার্জন" করছে দেখে সন্তানের অভাবিত "উন্নতিতে" উৎসাহ বোধ করছি?
নাকি সন্তানকে বাগে আনতে পারছেন না?
মাদকাসক্তি ঃ বখে যাওয়া ছেলে গুলো যখন মাদক নেয় তখন তাদের বোধ বুদ্ধি বিবেচনা বোধ সব হারিয়ে ফেলে। তারা তুচ্ছ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে কান্ডজ্ঞানহীন হয়ে যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।

আসি সমাজের কথায়:
এই ছেলে মেয়ে গুলোতো এই এলাকারই সন্তান।যত কুকর্ম,অপকর্ম করে বেশীর ভাগ ত নিজ এলাকায়ই করে।মাদক কেনা-বেচা,ইভ টিজিং,প্রেমের প্রস্তাব,চাদাবাজী- মাস্তানী,খুন-খারাবি সবই তো কোন না কোন সমাজেই ঘটছে?

"সামাজিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিরোধের" কথা আমরা অহরহ বলছি।

সমাজ কি মরে গেছে নাকি পচে গেছে? সব কিছুই ভেঙ্গে পড় ছে কেন?
এ সব অপরাধ কি কালে ভদ্রে একটি দুটি ঘটে, না প্রায়ই ঘটে? এ সবই কি খুব গোপনে,লোক চক্ষুর আড়ালে ঘটে, না অনেক ঘটনা প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে?
তাহলে প্রতিরোধের উদাহরন কোথায়?

আগে এই সমাজে ছোট খাট অপরাধ,ঝগড়া-বিবাদ বা কোন অনাচার হলে স্হানীয় মুরুব্বীরা বিচার সভা বসাতেন।বিবেকবান মুরুব্বীরা  পারিবারিক সামাজিক সঙ্কট গুলোর শান্তিপূর্ন সমাধান করে দিতেন।

এখন তেমন "সামাজিক ন্যায় বিচার" তো নেই,বরং যা আছে সেখানে গোষ্ঠী,পরিবার,দল প্রীতির সভা হয়।ক্ষমতাবানরা পার পেয়ে যায়,বরং প্রশ্রয় পান,দুর্বলদের উপর শাস্তি বা বদনাম দেওয়া হয়(তোমার মেয়েকে সামলাও,তার চরিত্র ঠিক করো)। অথবা বিচারের নামে অবিচার করা হয়,শালিসের নামে  ফতোয়ার নামে  দুর্বলদের উপর অমানবিক শাস্তি প্রদান করা হয়।

সবই হয় "ক্ষমতার" ইকুয়েশন বিবেচনা করে।

২য়ত: চোখের সামনে অপরাধ ঘটলেও কেউ এগিয়ে আসেন না প্রতিরোধ করতে।

কেউ আসেন না ভয়ে নিজে আক্রান্ত হবেন বা পরে টার্গেট হবেন এই আশঙ্কায়।

কেউ ভয় পান পুলিশের ঝামেলার কথা মনে করে।

দূ একজন  সাহস করে এগিয়ে আসলেও তার খেশারত দিতে হয় বিভিন্ন ভাবে( বদরুল পূর্বেও একবার খাদিজাকে প্রকাশ্যে উক্তত্যকরনের সময় কিছু লোক তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে।পরে সে ঐ লোকদের বিরুদ্ধে মামলা করে, পুলিশ ঐ উদ্ধারকারীদের হয়রানী শুরু করে এমনকি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট ও দেয়--।)-

বুঝুন ঠেলা,যান সমাজ সেবা করতে,অপরাধ দমন করতে

মানবাধিকার সংস্হা,নারীবাদী সংগঠন গুলো তখন কি ভূমিকা নিয়েছিল? এ ভাবে কি ঐ অপরাধী আরো উৎসাহ পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেনি?

 ভালো মানুষ গুলোর অন্যায়ের বিপক্ষে দাড়ানোর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়নি?এরা কি পুনরায়   এ রকম অন্যায়ের প্রতিরোধে  এগিয়ে আসতে উৎসাহ বা সাহস পাবেন?

লক্ষ্য করলে দেখবেন পথে ঘাটে,হাটে বাজারে,যান বাহনে এ রকম অনেক অন্যায় কাজ হচ্ছে,আমরা বেশীর ভাগ ভদ্র(?)লোক এগুলো না দেখার ভান করি,গা বাচিয়ে পাশ কাটিয়ে যাই।
এরকম ছোটখাট অন্যায়,অপরাধ প্রতিরোধ অন্তত সমাজ,গনমানুষ যদি করতে সক্ষম হতো তাহলে ও অনেক অপরাধ কমে আসতো।
কিন্তু  প্রকাশ্য দা এর সামনে দাড়ানোর কথা যারা বলেন তারা নিজেরা ঐ অবস্থায় কি করতেন?

কেন সমাজ এমন হলো?

একটি জীবন্ত,প্রানবন্ত,মানবিক সমাজের তো এমন হওয়ার কথা নয়।
প্রশ্নের উত্তর যেমন জানতে হবে,একে বদলানোর উপায় বের করা আরো জরুরী।

পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্হা:

অপরাধের পিছনে আপনার আমার যত দায় থাকুক,অবশেষে অপরাধ দমন,গ্রে
প্তার,আইনের কাছে পৌছানোর সাংবিধানিক দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্হার।
সঠিক আসামীকে দুরুত ধরার,নিরপরাধীকে হয়রানী না করা,সৎ ভাবে দুরুত চার্জশিট দেওয়া
-- কোন দায়িত্বটি সঠিক ভাবে হচ্ছে?নুসরাতকে বরং উল্টো ওসি মোয়াজ্জেম কি হয়রানিটা করলো?

ঢালাও ভাবে সব পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ঠিক হবে না এটাঠিক, তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন নেই এমন লোক পাওয়া কঠিন।

কেন আইন প্রয়োগকারী সংস্হার লোক সঠিক দায়িত্ব পালন তো করছেন না বরং অপরাধীদের সহযোগীতা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ?
টাকা পয়সার লেনদেন,রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ,নৈতিক মানের অবনতি,কম বেতন,ট্রেনিং এর অভাব?

কারন অনেক হতে পারে,তবে সমাধান খুজতে হবে এখনি।

রাজনীতি:

এ বিষয়ে কথা বলা ঝুকির বিষয়।
তার মানে সকল ক্ষমতার উৎস রাজনীতি।
তাই সকল উৎসাহ,অনুপ্রেরনার উৎস রাজনীতি এবং সকল ভয়ের ও উৎস রাজনীতি।
এত ক্ষন যাদের বিভিন্ন ক্ষমতার অপব্যবহারের কথা বললাম তাদের ক্ষমতা নিমিষে হারিয়ে যাবে যদি রাজনীতি পরিশুদ্ধ হয়।

রাজনীতির বিশুদ্ধকরন করবো দূরে থাক প্রতিটি অপরাধকে "রাজনীতিকরনের" ফলে অপরাধ আর স্রেফ অপরাধ থাকছে না তা রাজনীতির খেলায় পরিনত হচ্ছে। তাই  পুলিশ ও বিচার বিভাগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচারের সুযোগ সীমিত হয়ে আছে।

সবশেষে রিফাতের স্ত্রী মুন্নীর সাহসিকতা ও স্বামীর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রশংসা না করলে আমরা নিজেরা অপরাধী হয়ে থাকবো।যারা মাদকাসক্ত ও বখে যাওয়া তারা জোরকরে মুন্নীদের মতন বহু সুন্দরী মেয়েদের বাধ্য করে তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে বা ঘুরে বেড়াতে। একসময় তাদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে  তারা ও তাদের অভিভাবক দুরুত অন্যত্র বিয়ে দিয়ে থাকেন।কিন্তু এদের কি শেষ পর্যন্ত সমাজ বা রাস্ট্র রক্ষা করতে পারছে?

Thursday, June 20, 2019

৭-৮ মাইল হেটে, পরেনদীপেরিয়ে ঐ মাঝওর৷ বাড়িতে রাত ২টায় সঙ্আগী ৩ জনসহ লুভর্তা ও ডাল দিয়ে ভাত  খেলো।ভাত কম ছি। মাওলানা বললেন " কম চিবিয়ে খাও,সাথে কয়েকগ্লাস পানি খাও।মনেহবে অনেক খেয়ো,পেটভর"। অথচ এই মাওলাইঅবস্হাপন্ন ভক্তের বাড়িতে ৪-৫ জনের খাবার একাই খেয়ে ফেলতো-সূত্রঃহক কথা   ২৬ মে,১৯৭২                     

Monday, June 10, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট৷ এর জার্নাল-৪৭ ঃশিল্পকলা নয় কলা বিজ্ঞান

ছলা কলা বা শিল্পকলা সমন্ধে জানি আসুন বিজ্ঞানকলা    নিয়ে কিছুজানিঃঃ
কলার গুনঃ
১ তাৎক্ষণি, স্থিতি,, প্রচুর শক্তি যোগান দেয়(যেহেতুসুকরোজ,ফ্রুকটোজ,গ্লুকোজ সবই  প্রচুরপরিমাণে রয়ে))
২ ২টি কলা খেলেই ৯০ মিনিট যথেষ্ট পরিশ্রের কাজ করতে পারবেন(তাই বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়দের১নং পছন্দ কলা)
৩ কলা বিষন্নতা/ডিপ্রেশন দূর করে(এতে ট্রিপ্টোফ্যান থাকে যা সেরোটোনিনে রূপান্তরিতহয়।সেরোটোনিনডিপ্রেশন কমা)
৪ রক্তশূন্যতা দূর করে(যেহেতু আয়রন আ)
৫ উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুকি কমায়(যেহেতুপ্রচুর পটাসিয়াম   থাকে ও লবন কম থা))
৬ ছাত্রছাত্রীদের ব্রেইন পাওয়ার বাড়ায়
৭ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর   করে(যেহেতু প্রচুর ফাইবারথা))
৮ বুক জ্বালা ও এসিডিটির উপশম করে
৯ মশার কামড়ে ক্রিমের চেয়ে ভালো  উপকার
পাবেন
১০ স্নায়ু শান্ত রাখে(যেহেতু প্রচুর বি ভিটামিনআ))
১১ ওজন কমায়  (কার্বোহাইড্রেট গ্রহনের তাগিদকমিয়েরাখে বলে)
১২ শারীরিক মানসিক উভয়বিধ তাপমাত্রা কমিয়ে শীতল রাখে
১৩ কলার ছোলা ঘসে শুকিয়ে নিন।জুতা চকচক করবে
এবং### একটি আপেলের চেয়ে কলায় ৪ গুন বেশি প্রোটিন থা,, দ্বিগুণ বেশি কার্বোহাইড্রেট থাকে,৩ গুণ বেশি ফসফরাস থা,, ৫ গুণ বেশি ভিটামিন-এ ও আয়রন থাকে এবং দ্বিগুণ বেশি অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল থাকে
## আর কিছু বলতে হ??                                     

                                                   

   

Monday, May 13, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল ৪৬ঃপরিবহন শ্রমিকদের দ্বারা কেন ধর্ষণ বেশী হয়

বাসের ড্রাইভার, হেলপারদের দ্বারা নারী ধর্ষণ ও পরে হত্যার ঘটনা প্রায়শই আমরা সংবাদ পত্রের মাধ্যমে জেনে আসছি। কেন পরিবহন শ্রমিকদের দ্বারাই এরকম ঘৃন্য, নৃশংস কাজ বেশি হয়ে থাকে, সে সবের মনো-সামাজিক  বিশ্লেষণ নিয়ে একটি লেখার ইচ্ছে রয়েছে।
তবে আজ  শুধু একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এ নিয়ে স্বল্প দুচারটি কথা বলবো।
ঢাকা থেকে সোনার গা যাচ্ছিলাম বাসে করে। পথিমধ্যে পিছনে শোরগোল শুনে দেখি এক বৃদ্ধ লোক অজ্ঞান হয়ে গেছে। সবাই ওনাকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি ও উঠে ওনাকে দেখে বোঝার চেষ্টা করলাম কি হতে পারে ও কি করা যায়।

পাশে তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করে জানলাম তিনি হাই প্রেসার ও ডায়েবেটিস এর রোগী। তবে ইনসুলিন নিচ্ছে না এবং আজ রোজা ও ছিলেন না এবং কিছু ক্ষন আগেই নাস্তা করেছেন। তাই সুগার বেশি কমে যাওয়ার ( হাইপোগ্লাসিমিয়া) সম্ভাবনা কিছুটা কম মনে হলো।যাহোক আমরা নিকটেই একটি ক্লিনিকে ওনাকে নামিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি যাতে প্রাথমিক ইমারজেন্সি চিকিৎসা পায় ও যেহেতু তাদের এম্বুলেন্স রয়েছে দুরুত ঢাকা মেডিকেলে নিতে পারে।

বৃদ্ধ ভদ্রলোক অনেকটা মোটা তাই তাকে তার ছেলে এই অবস্থায় একা নামাতে পারছে না। পিছন থেকে কয়েকজন হেল্পারকে ঢেকে বললো একটু সহযোগিতা করতে। সে সামনের গেইটে দাড়িয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলছে, কেন তার আত্মীয় নেই?  আর আপনারাই বা কি করছেন?  তবুও সে উঠে আসেনি।

কোনভাবে আমরা অনেকে মিলে লোকটিকে দরজার কাছে নিয়ে যাই।গেইট থেকে নামানোর সময় হেল্পার লোকটিকে ধরে এমনভাবে নামিয়ে দিলো যেন একটি আপদ বিদায় করত পেরেছে। কোনরকমে নামিয়ে দিয়েই ঝট করে গেইট বন্ধ করে ড্রাইভারকে ইশারা করে দুরুত বাস চালাতে।

আমরা আশংকা করছিলাম রোগী বোধ হয় ঠিক মতন নামতে পারেনি এবং যেভাবে বাস দুরত টান দিয়ে ছেড়ে দিলো না, জানি তারা আহত হলো কিনা।কিন্তু হেল্পার, ড্রাইভারের ভয়ে বা ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য হোক, কেউ কিছু বললো না।

আমি আমার স্বভাবগত প্রতিবাদ করার অভ্যাসের কারনে কিছু বলাতে হেল্পার, ড্রাইভার সহ এমনকি বাস যাত্রীদের কেউ কেউ এ নিয়ে কথা না বাড়াতে বলে। আমার অভিজ্ঞতা ও বলে কিছু বলে লাভ নেই।

অন্যায় হোক এমনকি খুন হোক, পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কিছু বললে উল্টো নাজেহাল হতে হবে।

দেশের মানুষ ক্রমশ অনুভুতিহীন হয়ে পড়েছে। চোখের সামনে অন্যায়, অবিচার হলেও প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কথা ভাবে না।কেউ চায় না ঝামেলায় জড়াতে। সবাই নিজের মানসম্মান বজায় রাখতে বেশি সচেষ্ট।

তবে তরুণ ছাত্ররা কখনো কখনো প্রতিবাদ করে। তবে তারা ও নিস্তার পায় না। সংঘবদ্ধ পরিবহন শ্রমিকরা তাদের ঘেরাও করে কোন এক নিরাপদ জায়গায় নিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে গুমও করে ফেলে।

কিছু দিন আগে এক তরুনকে বাসের আঘাতে আহত করে তাকে সে আহত অবস্থায়ই পাশের খালে ফেলে দিয়ে জীবন্ত মেরে ফেলার মতন নৃশংস ঘটনার কথা আমরা পত্রিকার মারফত জেনেছি।

এক্সিডেন্ট করে আহত করেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি, আপদ যাতে না থাকে তার জন্য এই নিষ্ঠুর নির্মম লোক গুলো সে মুমূর্ষু তরুনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো দূরে থাক, তাকে ওখানে এভাবে রেখে দিলেও হয়তো তরুনটি বেচে যেতো। পাষন্ডরা তাকে পানিতে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

এই অভিজ্ঞতা গুলো আমাদের কি বলে?  পরিবহন শ্রমিকদের অনেকেই (সবাইকে ঢালাও দোষারোপ করা অন্যায্য হবে) বিভিন্ন জোরজবরদস্তি, মারামারি, অন্যায় করতে করতে এমন নির্মম,নিষ্ঠুর হয়ে উঠে যে, তাদের ভিতর মানবিকতার কোমল মনটি পাথরের মতন শক্ত হয়ে যায়।

শুধু এরা কেন যেসব কিশোর তরুণ ছোটকাল থেকে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন  বিষয় নিয়ে শক্তি প্রদর্শন, মাস্তানী করে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাঁরা সবাই পরে একেকজন ক্রিমিনাল ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠে।

এছাড়া পরিবহন শ্রমিকরা মদ সহ বিভিন্ন মাদকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যা তাদেরকে অপরাধী ও নিষ্ঠুর কাজে প্রলুব্ধ করে, সাহসী করে তোলে।

সর্বোপরি এরা থাকে যৌন অতৃপ্ত। পারিবারিক বা বিবাহিত জীবন অনেকের জন্য নামকাওয়াস্তে থাকে। ফলে তারা ক্রমশ অসামাজিক, অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পরে( পতিতালয়ে যাওয়া) । মাদকের কুফল তো থাকেই।

তাহলে ব্যাপারটি দাড়াচ্ছে কিছু ক্ষুধার্ত ( যৌন অতৃপ্ত বা বিকৃত যৌন কামনায় উত্তেজিত)  শক্তিশালী ( পাওয়ারফুল-)  হায়েনার সামনে -  একটি  দুর্বল, নিরীহ শিকার ( নারী)  যখন একাকী, নির্জন এলাকায় পড়ে যায়, তখন এসব হায়েনা পাশবিক শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। খুবলে খুবলে মাংস টেনে হিছড়ে খেতে থাকে। শুধু তাই নয় এরপর এ আপদ রেখে বিপদে পড়বো কেন মনে করে, অবলীলায় ভিক্টিমকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে।

তারা ধর্ষিতা নারীকে ময়লা আবর্জনার মতন বাস ট্রাক থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয়।ভাবখানা এমন এটি নোংরা, অপবিত্র জিনিস যা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে একে দুরুত ফেলে দিয়ে বাসটিকে কল্ঙক ও কদর্য মুক্ত করলো। সর্বোপরি মনে করে কোন প্রমাণ রইলো না আমাদের আর ধরবে কে?
সমাধান নিয়ে সংক্ষেপে বলছি

১। পাওয়ারফুল  বা ক্ষমতাবান হওয়ার যে সিস্টেম পরিবহন খাতে চলে আসছে সেটার দিকে নজর দেওয়া। কোটি কোটি টাকার খেলা যেখানে সেখানে স্হানীয় রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, মাস্তান গ্রপ,পুলিশ বাহিনী সহ অনেক রথি মহারথীরা জড়িত হয়ে পরে। এরকম অপকর্মের সহযোগী হয়ে তারা ও ক্রমশ মাস্তান, সাহসী, নির্মম,নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে উঠে। কিন্তু এ সিন্ডিকেট ভাঙ্গবে কে?

দ্বিতীয়ত এরকম বিপদজনক পরিবেশ ও লোকদের কিভাবে এড়িয়ে চলতে হব কর্মজীবী নারী, ছাত্রী সহ অন্য নারীদের তা জানতে হবে। এ ব্যাপারে খুব সাবধান ও সচেতন হয়ে চলতে হবে। কেননা নিরাপত্তার ব্যাপারটি সর্বশেষে নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে।

৩য়ত দেশের সব নাগরিকের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। এমন সিস্টেম থাকতে হবে যাতে প্রতিটি পরিবহন কখন কি ঘটছে তা মনিটর করা যায় ও তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় (সিসি ক্যামেরা, অন্য কোন ভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা বা মালিক পক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের তত্বাবধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা -ইত্যাদি) ।

চতুর্থত পরিবহন শ্রমিকদের মাদক গ্রহণ বিষয়ে তল্লাশি, পরীক্ষা নিয়মিত করতে হবে।অন্য যেকোন সেক্টররে তুলনায় এখানে মদ সহ অন্যান্য মাদক গ্রহণের হার অধিক। সম্প্রতি জানা গেছে এদের ৫০% এর চোখের সমস্যা থাকে যা তারা ও জানে না চিকিৎসা তো নেয়ই না।চোখ পরীক্ষা সহ মাদক পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের পর পর করার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।

৫ মত  সামাজিক প্রতিরোধ থাকতে হবে। চোখের সামনে রাস্তা ঘাটে অহরহ অপরাধ ঘটছে আমরা "ভদ্রলোক " সাজতে, মানসম্মান রাখতে বা বিপদ এড়িয়ে চলতে গিয়ে এসবকে এড়িয়ে যাই।কোন সরকার বা আইন এসব পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না যদি না নাগরিকরা এ নিয়ে  সোচ্চার হয়,প্রতিবাদী হয় ও এরকম অন্যায়কে তাৎক্ষণিক রুখে না দাড়ায়।

Friday, May 10, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪৫ঃবিখ্যাতরা যখন অখ্যাতদের নকল করে

১। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার ঃরবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে শেক্সপিয়ার সহ অনেক বাঘা বাঘা লেখকই অন্যের লেখা নকল করেছেন। তবে অখ্যাত লেখকদের ও অনেকে নকল করেছেন।
শেক্সপিয়ার তার বিখ্যাত "ওথেলো " নাটকটি নকল করেছেন ইতালির অখ্যাত লেখক সিন্থিয়ার এক ছোট গল্প থেকে।

২। জর্জ অরওয়েল ঃ আ্যনিমেল ফার্ম বা নাইটিন এইটি ফোর এর লেখক জর্জ অরয়েল এর নাম সবাই জানেন। তার নাইটিন এইটি ফোর রুশ লেখক ইউজিন জামিয়াতিন এর "উই" উপন্যাসের নকল।
তাই আমরা চুনোপুঁটিরা কিছু নকল করলে এতো মাইন্ড খাইয়েন না

Tuesday, May 7, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪৬ঃআইনস্টাইন কিসের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন?

ভাববেন না তাঁর বিখ্যাত "আপেক্ষিক তত্ত্বের" জন্য নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি নোবেলজয়ী হন "ফটো-তড়িৎ ক্রিয়া" ব্যাখ্যা করার জন্য।
কি সে ফটো তড়িৎ ক্রিয়া?

আসুন একটু খানি বিজ্ঞান চর্চা করিঃ
বর্তমানে আমরা টেলিভিশনে যে ছবি দেখি তা আলো-তড়িৎ ক্রিয়ারই ফল;স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার সব কিছু এই আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার ফলাফল। সর্বোপরি আলোর কনা ও তরঙ্গ ধর্মের যে আন্তক্রিয়া পরবর্তীতে এটাই "কোয়ান্টাম মেকানিক্স " এর ভিত্তি গড়ে দেয়।

আলো কি কণা না তরঙ্গ? ।তবে কণা তত্ত্ব আগেই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আইনস্টাইন যুগান্তকারী প্রস্তাব করেন যে আলো যুগপৎ তরঙ্গ ও কণা।
কোয়ান্টাম তত্বের উদগাতা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক আলোর ক্ষুদ্র শক্তি গুচ্ছকে বলেছেন "কোয়ান্টা " বা প্যাকেট। সেখান থেকেই কোয়ান্টাম তত্ব নামটি এসেছে।

আইনস্টাইন আলোর সর্বনিম্ন সেই শক্তির প্যাকেট /কোয়ান্টাকে বললেন "আলোর কণা "। তিনি সেই কণার নাম দিলেন " ফোটন" কণা।
ফোটন ভরহীন কণা তবে গতিশীল ফোটনের ভরবেগ আছে।

ভরবেগ ও শক্তিসম্পন্ন কণাকে তিনি "কামানের গোলার" সাথে তুলনা করেন।তিনি বলেন আলোর কণা কামানের গোলার মতন প্রবল বেগে ধাতুর পরমাণুতে আঘাত হানে, তখন পরমাণুর ভিতর থেকে ইলেকট্রন ছিটকে বেড়িয়ে যায়।

যদি আলো তরঙ্গ  হতো তাহলে  ইলেকট্রন বের হতে প্রায় ৫০০ দিন সময় লাগতো। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে মুহূর্তেের মধ্যেই সোডিয়াম ধাতু ইলেকট্রন নির্গত করে ফেলে। সেটি এক ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে।

আলো কণা বলেই ফোটন কণা একটি ইলেকট্রনকে আঘাত করে  এবং ইলেকট্রন ঐ শক্তি গ্রহণ করে তীব্র বেগে বের হয়ে যায়।

যদি তরঙ্গ গুচ্ছ হতো তাহলে নির্দিষ্ট কোন আকার থাকতো না। তখন তরঙ্গের শক্তি ভাগ হয়ে যেতো পরমাণুর সব ইলেকট্রনে।

ফলে একক কোন ইলেকট্রন বের হয়ে আসার মতন পর্যাপ্ত শক্তি পেতো না। আরো অনেক তরঙ্গ ঝাক আসতে হতো কোন ইলেকট্রনকে বের করে দেওয়ার মতন শক্তি সন্চয় করতে। তারমানে অনেক সময় লেগে যেতো।

কিন্তু আলোর তড়িৎ ক্রিয়া কোন কালক্ষেপন করে না। তাই আলো যে এক্ষেত্রে "কণা " হিসেবে কাজ করে এটি ব্যাখ্যা করে আইনস্টাইন নোবেলজয়ী হন