পর্ব-৩:মেডিটেশন এক ধরনের সাধনা/তপস্যা
আধ্যত্বিক সাধকরা নির্জনে স্রস্টার সাক্ষাত লাভের জন্য ও নিজের পূর্ন সত্বার বিকাশের জন্য,নিজ ও স্রস্টার সঙ্গে কানেক্টেড হওয়ার জন্য বছরের পর বছর ব্যাপী ধ্যান/ সাধনা করতেন( গৌতম বুদ্ধ,নিজামউদ্দীন আউলিয়া)। তবে আমরা সাধারন মানুষ খুব সীমিত লক্ষ্য নিয়ে,স্বল্প সময় নিয়ে মেডিটেশন চর্চা করি অশান্ত,অস্হির মনকে কিছুটা "শান্ত,সুস্হির" রাখতে।এ চর্চায় ফল পেতে হলে একে সাধনা/ তপস্যা হিসেবে নিতে হবে।কেননা প্রকৃত মেডিটেশন কোন সহজ সাধ্য কাজ নয়।
কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন মেডিটেশন কি ও এর উপকারিতা কি?
মন হচ্ছে অসীম শক্তির আধার।এ মন নেতিবাচকভাবে কাজ করে জীবন দূর্বিষহ করে তুলতে পারে, আবার হিটলার,ট্রাম্প, কিম এর মতন অসুস্হ মানসিকতার নেতা পৃথিবীতে মহা প্রলয় আনতে পারে।অন্য দিকে মনকে নিয়ন্ত্রনে রাখার কৌশল জানা থাকলে ইতিবাচক ও সৃজনশীল মনের অসীম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সুখী সফল যেমন করতে পারি, আব্রাহাম লিঙ্কন,মহাত্মা গান্ধির মতন নেতার মাধ্যমে পৃথিবীর চালচিত্র ও বদলে যেতে পারে।মনের ৩ স্তর: সচেতন মন,অবচেতন মন ও অচেতন মন।অবচেতন ও অচেতন মন আমাদের জানাশোনার বাইরে যেমন, তেমনি এগুলো আমাদের আপাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে।আমাদের চিন্তার প্রায় ৭০-৮৫% নেতিবাচক চিন্তা,দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পূর্ন থাকে। মেডিটেশন এর মাধ্যমে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ এনে আমরা অবচেতন,অচেতন মনের বিশাল শক্তিকে আমাদের কল্যানের কাজে,আমাদের সফলতার কাজে লাগাতে পারি।অবচেতন মন ভালো- মন্দ যাচাই করে না, হুকুমের দাস হিসেবে যে সাজেশন বা তথ্য দেওয়া হয় পরিনতি না ভেবে, অন্ধের মতন সে অনুযায়ী কাজ করে।তাই আপনি মেডিটেশন এর মাধ্যমে অবচেতন মনকে পরিচ্ছন্ন করতে পারেন,নেতিবাচক চিন্তা দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে ইতিবাচক চিন্তায় মনকে পুষ্ট রাখতে পারেন এবং ইতিবাচক সাজেশন দিয়ে অসাধ্য সাধন করতে পারেন।
এভাবে মনের অসীম শক্তিকে গঠনমূলক,সৃজনশীল ও কল্যানকর কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন ও পৃথিবীর চালচিত্র ইতিবাচক ভাবে বদলে দিতে পারবেন।আমরা যে আধ্মাতিক সাধনার উচ্চ মার্গ বলি সেটি মূলত অচেতন মনকে জানা ও এর সঙ্গে পূর্নভাবে কানেক্ট করতে পারাকে বুঝায়। নিজকে জানা(knowthyself) বলতে এটিকেই বোঝানো হয়।নিজের গভীরতম সত্বাকে জানা মানে অবচেতন ও অচেতন মনের রহস্য উদঘাটন করতে পারা।।মেডিটেশন এর গভীর স্তরে কোন কোন সাধক সে পর্যায়ে যেতে পারে।তবে আপনার আমার জন্য এতো উচ্চ লক্ষ্য নির্ধারন না করলেও চলবে।মনকে স্হির,প্রশান্ত করার অবস্হায় পৌছতে পারলে,অবচেতন মনকে ইতিবাচক " সাজেশন" দিয়ে, কাঙ্খিত " মেন্টাল ইমেজ"(visualization) তৈরী করতে পারলে মনে করবেন আপনি মেডিটেশন এ সফল।তখন যাদুর চাবি আপনার করায়ত্ব হবে ও যে কোন অবিশ্বাস্য সফলতা আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।
মেডিটেশন এর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম।
আজকে ২য় পদ্ধতি বা সচরাচর করা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা :
শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিয়ে মেডিটেশন:
নির্দিষ্ট পজিশন( আগে আলাপ করেছি- যেটি আপনার জন্য আরামদায়ক) নিন।হাল্কাভাবে চোখ বন্ধ করুন।নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন ও মুখ দিয়ে ছাড়ুন( বিস্তারিত ১ম পর্ব- দেখুন)।শ্বাস নেওয়ার সময় পেটের উপরিভাগ যেন ফুলে উঠে ও ছাড়ার সময় পেটের উপরিভাগ চুপসে যাবে।এবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত বা উল্টো মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে কিছুক্ষণের জন্য মনোযোগ দিন।যেমন যদি মাথার তালু থেকে শুরু করেন মনোযোগ সেখানে দিন।১০-১৫ সেকেন্ড মনোযোগ দিন।কেমন অনুভব করছেন তা টের পেতে চেষ্টা করুন(টান টান,গরম,জ্বালা,ঠান্ডা বা অন্য কোন অনুভূতি?)। তালুর পেশীগুলো হাল্কা করে "ছেড়ে দিন"(let go)। যেন মাংসপেশী ঝুলে পড়েছে,হাল্কা হয়,নরম হয়ে পরে রয়েছে।আপনি স্বস্তি অনুভব করবেন, টান টান থেকে মাংস পেশী শিথিল হবে।(PMR- progressive muscle relaxation পদ্ধতি হলে একবার মাংসপেশি শক্ত করবেন, যত জোরে সম্ভব শক্ত করতে হবে ও এতে মাংসপেশির উপর যে "চাপ"(tension) পরবে তা অনুভব করুন।পরক্ষনেই পুরো পেশী ছেড়ে দিন,শিথিল করুন।পূর্বেকার টেন্সড অবস্হার চেয়ে এখনকার শিথিল অবস্হার ফলে যে আরাম,স্বস্তি পাচ্ছেন তা ভালোভাবে অনুভব করুন।টেনশন থেকে মুক্তি মানে এরকম টানটান অবস্হা থেকে শিথিল( রিলাক্সড) অবস্হায় আসা)। তবে পিএমআর না,আমরা সাধারন পদ্ধতি ব্যবহার করবো।
এরপর কপাল,চোখ,চোখের পাতা,ঠোট,চোয়াল, থুটনি,গলা,ঘাড়,কাধ,ডানহাত,বামহাত,বুক,পিঠ,পেট,নিতম্ব,কোমর, উরু,হাটু,পা,গোড়ালী,পায়ের পাতা - প্রতিটি অঙ্গে এক এক করে মন ফোকাস করবেন ও উপরোক্ত নিয়মে তা শিথিল করবেন।শিথিল হলে যে আরাম,স্বস্তি তা মন- প্রান দিয়ে অনুভব করবেন। এ রকম কয়েক বার করুন।এরপর মাথা থেকে পা পর্যন্ত উপরে বর্নিত সবগুলো অঙ্গ দ্রত মনের চোখ বুলিয়ে যান।এবার মাংসপেশি শিথিল করবেন দ্রত।পরে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর একবারেই "শিথিল হও" বা " শান্তি,শান্তি"( আল্লাহ,আল্লাহ বা ভগবান,ভগবান) বলে মূহুর্তের মধ্যে শিথিল করার কমান্ড দেবেন,যাতে তাৎক্ষনিকভাবে রিলাক্সড হতে পারেন। ভালোভাবে প্রাকটিস হলে বৃদ্ধ আঙ্গুল ও তর্জনী একত্র করে শুধু " রিলাক্সড হও" কমান্ড দিলেই পুরো শরীর- মন মুহূর্তে রিলাক্সড হয়ে যাবে।তখন যখন-তখন,যেখানেসেখানে মুহূর্তের মধ্যে রিলাক্সজেশন ও মেডিটেশন করে ফেলা সম্ভব হবে।
রিলাক্সড হওয়ার পর( বা সরাসরি) মনোযোগ শ্বাস- প্রশ্বাসের দিকে নিবদ্ধ করুন।শত শত চিন্তার জট মনে বুদবুদের মতন আসবে যাবে।সেগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে যাবেন না।যদি জড়িয়ে যান হতাশ বা বিরক্ত হবেন না।কোনরকম যুদ্ধ করবেন না,স্রেফ হাল্কা করে মনোযোগ পুনরায় শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে নিন।এভাবে ১৫ মিনিট বা তার চেয়ে বেশীক্ষণ মেডিটেশন চালিয়ে যান।
এভাবে শরীর-মন পূর্ন রিলাক্সড করতে সক্ষম হলে মনে প্রশান্তি আসবে।তখন অবচেতন মনকে প্রয়োজনীয় "ইতিবাচক সাজেশন" দেওয়া ও যা এবং যেরকম হতে চান সেরূপ " মেন্টাল ইমেজ"(visualization) তৈরী করার প্রাকটিস করতে পারবেন( অন্য সময় সাজেশন ও মন ছবি তৈরী নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে রাখি)।
আমি স্হানাভাবে খুবই সংক্ষিপ্ত ভাবে পুরো প্রক্রিয়াটি কিভাবে করবেন তা বললাম।তবে আপনাকে এই প্রতিটি ধাপ ধৈর্য্য ধরে অনেকদিন করে যেতে হবে যাতে কৌশলটি আপনার পূর্ন আয়ত্বে আসে।একটি ধাপের উপর নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত প্রাকটিস চালিয়ে যেতে হবে এবং এর পরই পরবর্তী ধাপের চর্চা শুরু করবেন।
No comments:
Post a Comment