২৫ জুলাই দেশের প্রথম সারির এক দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় গোপাল গন্জ শহরের পাবলিক হল রোডের এক স্কুল ছাত্রীকে ঈভ টিজিং এর প্রতিবাদ করায় ছাত্রীর বাবা কাজী মাহবুবকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা করে একদল বখাটে।গোপাল গন্জ সরকারি বীনাপানি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ঐ ছাত্রীকে আকাশ নামে এক বখাটে ছেলে উত্ত্যক্ত করতো।মেয়েটির বাবা আকাশকে কয়েকবার নিষেধ করা সত্বেও তার দূর্বৃত্তপনা থেমে থাকেনি।তাই থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ আকাশকে আটকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়
১৫ জুলাই রাতে বাসার সামনে আকাশ ও তার কয়েক সঙ্গী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।
আকাশরা কেন অপরাধী, বর্বর হয়ে উঠে? পরিবার,সমাজ,রাস্ট্রের কি কিছুই করনীয় নাই? দিনের পর দিন আকাশ মেয়েটিকে প্রকাশ্য রাস্তায় হয়রানি,উক্তত্য করতো।তার সম বয়সী বন্ধুরা কি কোন ভূমিকা রাখতে পারতো না? আশেপাশে সমাজের অনেকেই তা প্রত্যক্ষ করতো তাদের কেউ কি কোন প্রতিবাদ করেছে? তার মানে সমাজ তার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।এক সময় আমাদের মুরুব্বীরা এলাকার যুবকদের উপর নজরদারী রাখতো,প্রয়োজনে শাসন করতো।এখন তারা ভয় পায়,মান সম্মান হারানোর ভয়।শুধু মান সম্মান কেন জীবনও হারতে হতে পারে।তার জলজ্যান্ত প্রমান তো এই যে মেয়েটির বাবা প্রতিবাদ করাতে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো।এরপর আর কেউ কি সাহস করে এগিয়ে আসবে?
যদি অপরাধীকে তাৎক্ষনিক গ্রেপ্তার করা না হয়,দ্রত বিচার করে প্রকাশ্যে শাস্তি না দেওয়া হয় সামাজিক প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস করবে না।অন্য দিকে আকাশের মা বাবা কি জানতো না তাদের সোনার(?) ছেলের এসব কীর্তিকলাপ? তারা কি কোন ব্যবস্থা নিয়েছিল? আমার মতে সন্তানদের এরকম অপকর্ম,অপরাধের দায়ভার তাদের পরিবারকে বহন করতে হবে।এলাকার মুরুব্বীরা তাদেরকে এই চাপ দিতে পারে অথবা পুলিশ প্রশাসন তাদের বাধ্য করতে পারে ছেলেকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
Wednesday, July 26, 2017
ঈভ টিজিং চলছেই- দায় কার
Tuesday, July 25, 2017
সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল-১০:আপনার দুর্বল দিক আপনাকে "ভিন্নতা " দেয়,এ নিয়ে লজ্জিত হওয়ার কিছু নাই
সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল-৯ এর ২য় পর্ব ( মানুষ কেন ও কিসে শ্রেষ্ঠ?) অন্য পোস্টের ডামাডোলে ঠিকভাবে পোস্ট করা হয়নি।আশা করি কোন এক ফাকে তা করবো।
এবার জার্নাল -১০
( আবারো আমার প্রকাশিতব্য বই " সুখী মানুষ" থেকে কিছু অংশ শেয়ার করছি)
এক
পূর্বে ব্যক্তিত্বকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হতো।ওমুকে তেমন টাইপের ব্যক্তিত্ব,সে ঐ টাইপের ব্যক্তিত্ব এভাবে বলা হতো।গবেষনা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন এ ভাবে কোন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট টাইপে ভাগ করা বিজ্ঞাত সম্মত নয়।মানুষ কোন একটি নির্দিষ্ট টাইপে আটকে থাকে না। ফ্যাক্টর এনালাইসিস করে বর্তমানে ৫ টি বিগ ফ্যাক্টর বের করা হয়েছে যাতে সব মানুষের ব্যক্তিত্বের ধরন জানা যায়।
এই ৫ ফ্যাক্টর এর কোনটি কার মধ্যে কি পরিমানে রয়েছে সেগুলো পরিমাপ করে ঐ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে বর্ননা করা হয়,নির্দিষ্ট টাইপে ফেলা হয় না।
সে ৫ টি ফ্যাক্টর হলো:
১। জীবন অভিজ্ঞতার প্রতি উন্মুক্ত মন।(openness to experience)
২। বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন, নীতি জ্ঞান সম্পন্ন( conscientiousness)
৩ বহি: মুখিতা( extraversion)
৪। অনুরূপ হতে/ একমত হতে সম্মত থাকা( agreeableness)
৫। নিউরোটিসিজম( neuroticism)
আপনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন আপনার বৈশিষ্ট্য কেমন এবং কোন দিকে আপনি সবল ও কোন দিকে দুর্বল
দুই
David Rendal- আমাদেরকে ৩ টি জীবন শিক্ষা নিতে বলেন:
১। আপনার মধ্যে খারাপ কিছু নেই:( there is nothing wrong with you):
কেননা আপনার যে সব দুর্বলতা সেগুলো আপনার সক্ষমতা খুজে নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূত্র( তাই দুর্বলতাকে ক্রটি হিসেবে গন্য করার কারন নেই)
২। আপনি তখনি সফল হবেন যখন আপনি আপনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে যাবেন:
আপনার ব্যক্তিত্বের যে অনন্য বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে খাপ খায় তেমন পরিবেশ / পরিস্হিতি বেছে নিতে হবে, যাতে আপনার ঐ বিশেষ বৈশিষ্ট্য গুলো পুরস্কৃত হয়,উৎসাহ ও সমর্থন পায়।
এমন পরিবেশ নিজকে তৈরি করে নিতে হবে,এমনিতে পাওয়া যাবে না।
যাদের বৈরী মনে হবে তাদের উপেক্ষা করুন
ও যাদের সমমনা মনে হবে তাদের সান্নিধ্যে থাকুন।
৩। আপনার দুর্বল দিক আপনাকে "ভিন্নতা " দেয়:
আপনার ব্যক্তিত্বের কিছু দিক অন্যদের কাছে অদ্ভুত,কিম্ভুতকিমাকার মনে হতে পারে।
এটি নিয়ে তারা উপহাস,হাসি তামাশা করতে পারে।
আপনি বরং এ " ভিন্নতাকে" গৌরবের মনে করবেন।আপনি দশের মধ্যে নিজকে একাদশে উন্নীত করুন।
অনেকেই উপরোক্ত ৩ টি বিষয়ে আপত্তি করতে পারেন এই বলে যে এগুলো অবাস্তব ও অসামাজিক । কিন্তু এ কথাগুলো এই অধমের না,এগুলো বিখ্যাত ব্যক্তি ডেভিড রেন্ডাল এর।আর আপনি এগুলোর সঙ্গে একমত না হলে কার কি ক্ষতি?
আপনি নিজের দুর্বলতা নিয়ে,বিরুপ পরিবেশ নিয়ে, ক্রটি বিচ্যুতি নিয়ে হাহাকার করুন,হীনমন্যতায় ডুবে থাকুন
আর না হয় ডেভিডের কথাকে গুরুত্ব দিন।
মনে রাখবেন নিজের সুখ ও উচ্চ আত্ম মর্যাদাকে গুরুত্ব দিবেন না, অন্যদের অভিমত,মন্তব্যকে গুরুত্ব দিবেন সেটি আপনার চয়েজ
মূল কথা হচ্ছে:
১। নিজকে জানুন( সবল ও দুর্বল দিকগুলো)- Know yourself
২। নিজে যা ও যে রকম তা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিন-Accept yourself
৩। নিজে যেমন তেমন থাকুন( অন্য কিছু রকমের হওয়ার ভান করবেন না) - Be yourself
# এর পর নিজকে আরো বিকশিত করতে,কার্যকর করতে চেষ্টা করুন
Friday, July 21, 2017
রোগ কাহিনী -১৯: অথঃ জ্বীন-ভূত সমাচার
চেম্বারে মাসে ৪-৫টি জ্বীন-ভূতে ধরা রোগী পাই।এমনকি সাইকোটিক রোগীদের ভিতরেও কেমনে জানি জ্বীন ঢুকে পড়ে( মানসিক রোগের উপর দেশ- কাল- সংস্কৃতি যে ভূমিকা রাখে এটি তার প্রমান)।
এতো কাহিনীর মধ্যে আজ একটি কাহিনী শেয়ার করবো,কেননা এই কেইসের রোগীনী একজন শিশু মেয়ে ও এই কেইসে ধারনা মিলবে কত সহজে বিশ্বাস দ্রত অন্যদের মন- ব্রেইনে সংক্রামিত হয়।
কাহিনী: সুশ্রী, মিস্টি চেহারার মেয়ে সামিয়াকে হুজুর বাবা ও মা চেম্বারে নিয়ে আসলো।প্রধান লক্ষন হলো রাত ১২ টায় ঘুম থেকে উঠে কান্না শুরু করে,হাত পা মোচরাতে থাকে,আবোল তাবোল কথা বলে,চিৎকার করে,পরে ঘুমিয়ে পড়ে।
ইতিহাস নিয়ে যা জানলাম:৬-৭ বছর পূর্বে সামিয়ার বয়স যখন ৫, তখন তারা নতুন বাসায় আসে।বাড়ীর মালিক নারায়নগন্জ থাকে,এটি মুন্সী গন্জে।৫-৬ বছর বাড়িটি আবদ্ধ ছিল।প্রথম দিন নাস্তা করার সময় তারা শুনতে পেলো কে যেন দরজায় নক করছে।তখন বাবা,মা,নানা,নানী ও সামিয়ারা দুই বোন সেখানে ছিল।বাবার দাবী শব্দটি সবাই শুনে।দরজা আটকানো ছিল এবং দরজার কয়েক গজ পর মেইন গেইটে তালা দেওয়া।তাই কারো পক্ষে আসা সম্ভব না। কিছুক্ষন অপেক্ষার পর আরো জোরে নক করতে লাগলো।আমি উঠে দরজা খুলে দেখে কেউ নেই।পরের দিন আবারো দরজায় নক হয়( শব্দ করে) কিন্তু আমরা কাউকে দেখি না।এরপর প্রতিদিনই তেমন হতে থাকে।
তিনি বলেন আমরা যে রুমে যাই সে রুমেই দড়াম দড়াম শব্দ শুনি।রান্না ঘরে ও শব্দ শুনি যেন কেউ পাতিল মেঝেতে ফেলছে।মনে হয় রাতে কেউ দরজায় লাথি মারছে।বাসায় যারা আসে সবাই এই শব্দ শুনে।এ সময় আমরা দোয়া দরুদ পড়তাম।এ কথা কাউকে বলিনি।
১ মাস পর পাশের বাসার মহিলা এসে বলে আপনাদের এই সাইডটা ভালো না।অথচ আমরা কিন্তু উনাকে বা বাইরের কাউকে এ ব্যাপারটি জানাইনি।
এ রকম শব্দ শুনে মনে ভয় আসতো যে এ ঘর দীর্ঘ ৬ বছর আবদ্ধ ছিল,বোধ হয় কিছু একটা এখানে রয়েছে।এ সময় আমরা কোরআন পড়তাম,আজান দিতাম।তিনি বলেন এটি পুরনো হিন্দু বাড়ী ছিল,কাছেই শশ্মান খোলা।
বাইরে কয়েকটি গাছ ছিল।কয়েকদিন নিজ বাড়ী থেকে ফিরে দেখি দুটি নারিকেল গাছ পুড়ে গেছে।কারা করেছে জানি না।এটি ওদের কাজ মনে হলো।আরো দেখি জানালার পাশের ওয়ালে ৫-৬ টি ছোট পায়ের ছাপ।মাটি মাখা পা দিয়ে হাটলে যে রকম ছাপ পড়ে সেরকম।শুধু আমরা নই আমাদের শ্বশুর শ্বাশুড়ী ঐ পায়ের ছাপ দেখে।
এভাবে শব্দ,টোকাটুকি চলছেই।
৩ বছর পর এই মেয়ে সামিয়ার সমস্যা শুরু হয়।হঠাৎ রাতে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসে,আব্বু আম্মু ডাকতো,জানালা,ওয়ালের দিকে ভীত নয়নে তাকাতো ও আঙ্গুল দিয়ে কিছু দেখাতো।আমাদেরকে জাপটে ধরতো ও চিৎকার করতো।ঐ সময় মেয়ের শরীর শক্ত থাকতো। আমরা দোয়া দরুদ পড়তাম।১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে আবার ঘুমিয়ে পড়তো।তখন শরীর নরম হয়ে যেতো।
সকাল বেলায় সামিয়া এর কিছু মনে করতে পারতো না।
১ বছর এভাবে চলে,শুধু দোয়া দরুদ পড়তাম।
বাড়ীর মালিককে জানাই তিনি বলেন অনেকদিন আবদ্ধ ছিল,দেখেন দোয়া দরুদ পড়ে কিছু হয় কিনা।এরপর ঐ মালিকের বাড়ীতেও কে যেন জানালার পাশে এসে দাড়িয়ে থাকে।তাদের বদ্ধ জানালা দিয়ে পর্দা বাইরে টেনে নিয়ে যেতো।
( পরে ওনারা কবিরাজ ঢেকে সেটি থেকে মুক্ত হয়)।
এসব শুনার পর দু'তলায় রান্না করতে যাই,তখন সামিয়া ড্রইং রুমে একটি চেয়ারে বসেছিল।সে দেখে কালো রূপে এক মানুষ দাড়িয়ে আছে,সে চিৎকার করে এসে আমাদের বলে, কিন্তু আমরা কিছু দেখি না।দোয়া দরূদ পড়ি।এর ২০ -২৫ দিন পর নীচ তলায় সে একা বসা।সে দেখে বদ্ধ জানালার দুই কপাটের মাঝখান দিয়ে কালো মানুষটি বাইরে চলে যায়।
এর মধ্যে রাতের ব্যাপারটি বেড়ে যায়।বেশীরভাগ সময় ঠিক রাত ১২ টায় ঘটনা ঘটতো।২-৩ ঘন্টা থাকতো।প্রথমে ঘুম থেকে উঠে কেদে উঠতো,এদিক ওদিক তাকাতো,কখনো মা বাবাকে ঢেকে উঠাতো।এই সময় আবোল তাবোল বকতো। মা তাকে নাম কি, কেন এসেছো জিজ্ঞেস করলে বলতো আসমা,জেসমিন ইত্যাদি।তারা নাকি ৭-৮ জন। বলতো আমাদের এখানে আটকে রাখা হয়েছে,চালান দিয়ে রেখেছে।
১ বছর পর ঐ জ্বীনদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কবিরাজের কাছে যাই।উনি বৈঠকে বসেন, তুলা রাশির লোক দিয়ে জ্বীন ঢেকে আনেন( ঐ ব্যক্তিরা সবাই হন ঐ কবিরাজেরই লোক)। জ্বীন বলে আমাদের এখানে আস্তানা। এই বাড়ীর উপর দিয়ে আমরা যাতায়াত করি।এখানে এসে জিরাই।কবিরাজ পানি পড়া,তেল পড়া ও তাবিজ দেন। তেমন ফল পাই না।
এভাবে ৭ জন কবিরাজের কাছে যাই।৫ম জন বলেন এই জ্বীন চালান করা( চালান মানে শত্রু পক্ষকে ডিস্টার্ব করার জন্য জ্বীন পাঠানো, যা কুফরি কালাম পড়ে করা হয়)। তাহলে কি বাড়ীর মালিক এসব করছে আমাদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য? মালিককে বলি,তখন তিনি বলেন আগে যে মহিলা এখানে ছিল তাকেও জ্বীনরা জ্বালিয়েছে।
কবিরাজরা এ পর্যন্ত বাড়ীতে ৯ টি তাবিজের সন্ধান পায়। তুলা রাশির লোক দিয়ে মাটি খুড়ে এগুলো পাওয়া যায়।দুজন কবিরাজ আমাদের বাড়ী বন্ধক করে দেয়। (ঘরের চারকোনায় চারজন দাড়ান।চারজন আজান দেন ও গর্ত করে চার কোনায় চারটি তাবিজ পুতে রাখেন) । সরিষা পড়ে ফু দিয়ে বাড়ীতে ছিটিয়ে দেয় যাতে মন্দ জ্বীন চলে যায়।
এ পর্যন্ত পৌনে দুই লাখ টাকা কবিরাজের পিছনে খরচ হয়ে যায়।
আরো কিছু অলৌকিক কান্ড ঘটে।এক কবিরাজ এখানে চিকিৎসা করতে আসার সময় এক্সিডেন্ট করে হাত ভেঙ্গে ফেলে; আরেকজন আসার সময় পড়ে গিয়ে কোমড় ভেঙ্গে ফেলে; তৃতীয় জন আসার সময় শুনে তার মা হঠাৎ করে খুব অসুস্হ হয়ে পড়েছেন।পরে তার মা সুস্থ হলে তিনি আবারো আসতে চান।তখন তার নামে কিছু লোক মিথ্যে মামলা দেয়।তখন সে বলে আমি এ কাজ আর করবো না,এরা খুব খারাপ জ্বীন।
এক পর্যায়ে স্কুলের এক মাস্টার বলেন অভিজ্ঞ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ এর কাছে যান।এটি বোধ হয় কোন রোগ।
এরপর স্যার আপনার সন্ধান পাই।বিশেষ করে আপনার কার্ডে লেখা জ্বীন- ভূতের চিকিৎসা করেন, তাই মনে হলো আপনি পারবেন।
চিকিৎসার পর সামিয়া ৪-৫ মাস ভালো ছিল।কিন্তু কয়েকদিন হলো আবারো সে রাতে উঠে কাদে,বলে আমার নাম আসমা,আমাকে এখানে আটকে রেখেছে।
নতুন করে চিকিৎসা শুরু করি
পর্যবেক্ষণ :
১। সামাজিক মিথ -আবদ্ধ ঘর,শশ্মান খোলা মানে ভুত প্রেতের আড্ডা খানা( বাবার অবচেতন মনে এ ভয় কাজ করছিল)
২। বিশ্বাস ভাইরাসের মতন ছড়ায়( মালিকের বাসায় ও জ্বীনের উৎপাত,আবার তাদের কালো মানুষ সামিয়া ও দেখা শুরু করে)
৩। পানি পড়া,তেল পড়া ও ঘর বদ্ধ করা কমন প্রাকটিস
৪। এই ভাইরাস শিশু মনেও প্রবেশ করে
৫। কোরআন এ জ্বীন এর কথা উল্লেখ আছে।তাই জ্বীন জাতি বলে একটি কিছু আছে।তবে মানসিক রোগ সৃষ্টির কারনএই জ্বীনের আছর নিয়ে সামাজিক বিশ্বাস, মিথ।জ্বীন ভুতের সঙ্গে সম্পর্কিত এ সব মিথ, বিশ্বাস না ভাঙ্গতে পারলে এরকম ব্যাধির অবসান হবে না
শিশু নির্যাতন ও বিপন্ন মানবতা
শিশু নির্যাতনের ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতা মনে হচ্ছে কমার পরিবর্তে দিন দিন বাড়ছে।
২১ জুলাই একটি প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকায় কথিত মোবাইল চুরির অভিযোগে এক শিশুকে
হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর সংবাদ প্রকাশিত হয়।
রিপোর্টে বলা হয় নির্যাতিত শুভ একজন এতিম,নানার কাছে থাকে।নানা তাকে কাজের জন্য বকাবকি করলে সে ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গায় আসে।টাকা পয়সা না থাকাতে কিছুই তার খাওয়া হয় না।পরে সে হাসপাতালে যায় ও এক রোগীনির মোবাইল চুরির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়।
তার হাত পা বেধে হাতড়ি দিয়ে পেটানো হয়।এরপর চিকিৎসা না দিয়ে বরং তাকে লাশ রাখার হিম ঘরে বন্ধি করে রাখা হয়।
দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হলে অর্থ মন্ত্রী বলেন এতো সামান্য টাকা।লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হলেও রাঘব বোয়ালদের টিকিটিও স্পর্শ করা হয় না।তবে কপর্দক হীন এক শিশু নিতান্ত বেচে থাকার জন্য খাবার কেনার টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হয়ে চুরি করলে ( যদি আদৌ করে থাকে) তাকে হাত পা বেধে হাতুড়ী দিয়ে পেটানোর মতন নিষ্ঠুর শাস্তি দিতে আমাদের বিবেকে বিন্দু মাত্র বাধে না।
দুচারটি থাপ্পড় দিয়ে যে কাজ সারা যায় আমরা সেখানে হাতুড়ি দিয়ে পিটাই,কাউকে পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে মেরে ফেলি বা নির্যাতন করে ডাস্টবিনে ফেলে রাখি।এমন নিষ্ঠুর, বিকৃত আচরন কেন? আমাদের মনোজগতে কি বর্বতার পুন: প্রবেশ ঘটছে? আমরা কি মানবিকতা বোধ হারিয়ে ফেলছি?
এসব প্রশ্নের উত্তর সমাজ বিজ্ঞানী,মনোবিজ্ঞানীদের বের করতে হবে।
যে সমাজ শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়,যে সমাজ দুর্বলকে রক্ষা করতে পারে না বুঝতে হবে সে সমাজ অধপাতে যাচ্ছে।
এ অধপতন ও মনো বিকৃতি রুখতে হলে সামাজিক সচেতনতার সহিত, পারিবারিক মূল্য বোধ,ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষা সবাইকে দিতে হবে।অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও নিশ্চিত করতে হবে।সুকান্তের ভাষায় - এ পৃথিবীকে করে যাবো শিশুর জন্য বাসযোগ্য
Friday, July 14, 2017
রোগ কাহিনী-১৭: রোগী বলে স্যার দুইবার নিজকে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছিলাম যাতে ঘরের জিনিস বিক্রি করতে না পারি; স্ত্রী বলে এভাবে চললে স্যার ক'দিনের মধ্যে আমাদের রাস্তায় বসতে হবে
অতিরিক্ত কেনাকাটার নেশার কথা শুনেছেন,কিন্তু সব বিক্রি করে দেওয়ার নেশার কথা কি শুনেছেন?
কেনাকাটা সবাইকে করতে হয়
বিক্রি বাটাও আমাদের প্রয়োজনে করতে হয়।তবে কারো কারো অতিরিক্ত কেনাকাটার স্বভাব থাকে।কিছু মানসিক রোগ রয়েছে যেখানে রোগী দামী দামী জিনিস কেনে, অপ্রয়োজনেও জিনিস কিনে( বাইপোলার ম্যুড ডিসঅর্ডার - ম্যানিয়া) বা কেনাকাটা করার বাধ্যতামূলক তাড়না অনুভব করে( কম্পালসিভ বাইয়িং)।
কিন্তু নিজের ও পরিবারের জিনিস পত্র ক্রমাগতভাবে বিক্রি করে যাচ্ছে কোন কারন ছাড়া ও এভাবে পরিবারটি নিঃস্ব হওয়ার পথে, এমন কাহিনী সাধারন মানুষ কেন কতজন সাইকিয়াট্রস্ট তা শুনেছে? আমিও জীবনে এ ই প্রথমবার এরকম রোগী পেলাম।
রোগ কাহিনী :
২৮ বছরের সুরুজ মিয়া ক্রোকারিজ এর ব্যবসা করতেন। ৩ বছর যাবৎ তার ঘরের জিনিস বিক্রি করার নেশায় পেয়েছে।মানুষ টাকার প্রয়োজন হলে উপার্জনের চেষ্টা করে,কেউবা হয়তো চুরি,প্রতারণা ওশুরু করে। নিতান্ত প্রয়োজনে ঘরের কিছু জিনিস ও বাধ্য হয়ে বিক্রি করে।কিন্তু অকারনে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরের জিনিস বিক্রির নেশাও কি কারো থাকতে পারে?
সে কারনে, অকারনে ঘরের জিনিস বাইরে বিক্রি করে দেয়।যা বিক্রি করে অর্ধেক দামও পায় না।বাইরের মানুষ এটি বুঝতে পেরে তাকে উসকে দেয় ওই কিছু বিক্রি করবি? লোক আছে কেনার।সে তাৎক্ষনিক ভাবে ঘর থেকে যা পায় তাই এনে বিক্রি করে দেয়।
বউয়ের ভাষ্য মতে এ পর্যন্ত সে ঘরের টিভি,ফ্রিজ,আলমারি,ড্রেসিং টেবিল,খাট,ওয়ার্ডড্রোব,সোফা,সহ ১৫-২০ টি
মোবাইল বিক্রি করেছে।এমনকি ঘরের হাড়ি পাতিল,শার্ট, প্যান্ট, জুতা,লুঙ্গি,শাড়ি সবই বিক্রি করেছে। তার বাবা মারা যাবার পর সে মৃত
বাবার পাজামা পান্জাবীও বিক্রি করে দেয়।বউয়ের ত্রি পিস,শাড়ী বিক্রি করে দেয়।বউ জানায় স্যার সে কোন রোজগার করে না,উল্টো সব বিক্রি করে দেয়, তবুও সংসার ছাড়িনি মেয়ের দিকে চেয়ে ও সমাজের দিকে চেয়ে।
তার বউ আরো বলে স্যার সে বিক্রি করে আর আমি বাপের বাড়ী থেকে বা আত্মীয়দের কাছ থেকে ঘরের জিনিস পত্র আনি।আনার পর পরই সে আবার তা বিক্রি করে দেয়।তাকে বিক্রি করতে না দিলে মারধর করে,জিনিসপত্র দা দিয়ে কোপায়,ভেঙ্গে ফেলে।সে বলে বিক্রি করার তাড়না এলে নিজকে কন্ট্রোল করতে পারি না,যদিও বুঝি এরকম করা ঠিক না।বউ বলে সে নিজেই শিকল নিয়ে এসে বলে আমাকে বেধে রাখো যাতে আমি কিছু বিক্রি করতে না পারি।সে বলে এভাবে সব বিক্রি হয়ে গেলে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে?
এভাবে দুইবার তাকে বেধে রাখা হয়েছিল।
রোগীর বিষন্নতা আছে কিনা,নেশা করে কিনা,ওসিডি( সূচিবায়ু/ বাধ্যতামূলক আচরন) আছে কিনা বিস্তারিত হিস্ট্রি নিয়ে তা বুঝতে চাইলাম।কেননা এ রোগ গুলো ও এরকম স্বভাবের পিছনের কারন হতে পারে।কিন্তু উপরোক্ত রোগ গুলো তার মধ্যে পাওয়া যায়নি।
রোগী বলে যখন বেচার নেশায় পায় কোনভাবে নিজকে আটকে রাখতে পারি না।যেভাবেই হোক বিক্রি করতেই হবে।বাধা দিলে মারতে ইচ্ছে করে।
তবে পরে এ জন্য আফসোস হয়।
বউ বলে স্যার এরকম চললে কিছুদিনের মধ্যে আমাদেরকে রাস্তায় ভিক্ষার পাত্র নিয়ে বসতে হবে।আত্মীয়রা আর সাহায্য করতে চায় না,কেননা তারা বলে সব বুঝে,পাগল না একে সাহায্য করবো কেন?
এ রোগের নাম " impulse control disorder "
এরকম আরো কিছু রোগ রয়েছে: জুয়া খেলা,শপিং করতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্বেও চুরি করে ফেলা( ক্লেপটোম্যানিয়া),বাধ্যতামূলকভাবে মাথার চুল তুলে ফেলা( ট্রাইক্লিটোম্যানিয়া) ইত্যাদি। ওসিডি( একই চিন্তা বার বার আসা ওএকই কাজ বার বার করা) এটিকেও এখন এই স্পেকট্রাম এ নিয়ে আসা হয়েছে
Saturday, July 8, 2017
সাইকিয়াট্রস্ট এর জার্নাল-৯: মানুষ কেন ও কিসে শ্রেষ্ঠ?
পর্ব-২:
গত পর্বটি লিখেছিলাম আমার প্রকাশিতব্য বই " সুখী মানুষ" থেকে।
এ পর্ব লিখবো আমার ইতিমধ্যে প্রকাশিত ও সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া আত্ম নির্মান বিষয়ক বই " মন ও মানুষ" থেকে।
এই বইয়ের শেষ অধ্যায় " মন- বস্তু -চেতনা- আত্মা:মহাবৈশ্বিক বিবর্তনের ইতিকথা " থেকে কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি ।( লেখা বড় মনে হলে ২,৩,ও৬ অংশ না পড়লেও চলবে-)
১। " the most human thing in human is it's brain"। অর্থাৎ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে " মানবীয়" ব্যাপারটি হচ্ছে তার ব্রেইন।"
প্রতীকি আবিষ্কার" ( symbolic invention) এর মতন উচ্চ মার্গের ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই রয়েছে। বিমূর্ত ভাবনা,চিন্তা ও কল্পনার জগতে প্রতীকি ধারনা সমূহকে নিয়ে গভীর গবেষনার ফলশ্রুতিতে মানুষ মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্য, মহাবিশ্বের নিয়ম- কানুনসহ নিজকে জানার কাজটিও অনেকটা সমাধা করতে পেরেছ। সেই সঙ্গে তৈরী করতে পেরেছে দর্শন,সাহিত্য, শিল্পকলা, চিত্রকলা,সঙ্গীত সহ একটি মহত্তম সংস্কৃতি।অন্য কোন প্রানী এমন নান্দনিক সুসভ্য সংস্কৃতি তৈরী করতে পারেনি।
তাই মানুষ শ্রেষ্ঠ, কেননা সে উন্নত সংস্কৃতি তৈরী করতে পারে,অন্য প্রানীরা তা পারে না।
২।( না পড়লও চলবে) কিভাবে আমরা মানুষ হয়ে উঠলাম তা জানতে হলে মহাবিশ্বের বিবর্তন আমাদের জানতে হবে।
প্রায় ১৫ শত কোটি বছরের সেই বিবর্তনের ইতিহাস অনেক লম্বা।
অতি সংক্ষেপে বললে:
সিনগুলারিটি বা বিন্দু বিশ্ব " বিগ ব্যাং" এর মাধ্যমে বিস্ফোরিত হয়
>মৌলিক বলগুলো মুক্ত হয়
> শক্তি থেকে বস্তুর সৃষ্টি হয়
> কোয়াক- বিপরীত কোয়াকের সৃষ্টি হয়
>প্রোটন ও নিউট্রন এর সৃষ্টি হয়
>বিপরীত প্রোটন ও বিপরীত নিউট্রন সৃষ্টি হয়
> প্রোটন- নিউট্রন মিলে ডুয়েটেরিয়াম এর সৃষ্টি
> হিলিয়াম
> হাইড্রোজেন
> এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম হচ্ছে সমগ্র মহাবিশ্বের মূল বস্তু কনা
> ১০০ কোটি বছর যাবৎ হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম মিলে তৈরী করে বিভিন্ন গ্যালাক্সি ( যার মধ্যে নক্ষত্র,গ্রহ, উপগ্রহ ও রয়েছে)>
৩। ( না পড়লেও চলবে)এই বস্তু বিবর্তন এর পর শুরু হয় ২য় ধাপের বিবর্তন - প্রানের বিবর্তন > ( এটি সাধারন বিবর্তন ছিল না,এটি ছিল বিবর্তনের গুনগত পরিবর্তন)
> কেননা নতুন বিল্ডিং ব্লক শুরু হলো- ডিএনএ- এমন বস্তু যে নিজে নিজের প্রতিরূপ তৈরী করতে পারে( শুরু হলো বিবর্তনের নতুন পালা)
> পৃথিবী সৃষ্টির ১৫০ কোটি বছর পরই ডিএনএ ও প্রোটিন এর সমাহারে তৈরী হয় এক আদি ভাইরাস
> ২০০ কোটি বছর পর পরিপূর্ণ এক কোষী জীব
> ১৬০ কোটি বছর পূর্বে বহুকোষী সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রানী>
এ পর্যায়ে বিবর্তন কিছুটা গতি পায় > যাকে বলা হয় ক্যাম্বিয়ান বিস্ফোরন
> আসে প্রথম মেরুদন্ডী প্রানী মাছ
> এরপর পতঙ্গ,উভচর প্রানী,বৃক্ষ, সরীসৃপ, ডাইনোসর, স্তন্যপায়ী এদের উদ্ভব
এরপর
> প্রাইমেট>
>এ্যানথ্রোপয়ডিয়া
>হোমিনয়ডিয়া
> হোমিনিড
> হোমোইরেকটাস
> নিয়ানডার্থাল
> ক্রোম্যানিয়ন
>সর্বশেষে প্রাজ্ঞ মানব হোমোসেপিয়েন্স এর আবির্ভাব।
অতি সংক্ষেপে এই হলো আমাদের বিবর্তনের চিত্রলেখ।
পর্ব-১ এ দেখিয়েছি এই মানুষ হতে গিয়ে মানব ব্রেইনের কি কি উন্নতি হয়েছে।কিন্তু শুধু ঐ মেধার কারনে মানুষ শ্রেষ্ঠ হয়নি,হয়েছে তাদের নান্দনিক সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য।
৪। এটি বিবর্তনের ৩য় ধাপ ও এটি গুনগত মানে ভিন্ন।
সম্ভবত এখানেও নতুন বিল্ডিং ব্লক তৈরী হয়েছে এবং সেটি মন- মননগত।
অন্য প্রানীদের খাদ্য সংগ্রহ,আত্ম রক্ষা ও বংশবিস্তার এই ৩ কাজে তাদের জীবন সীমিত।মানুষ ঐ ৩ কাজের বাইরেও কিছু করে থাকে। মানুষ তার নতুন বিবর্তনে বিল্ডিং ব্লক হিসেবে পেয়েছে " মন ও চৈতন্য " নামে অনবদ্য প্রক্রিয়াকে।
সে শ্রেষ্ঠ হয়ে উঠেছে উচ্চ নৈতিকতা,মানবিকতা,উচ্চ বৌদ্ধিক ও কল্পনা করার ক্ষমতা ও উন্নত সংস্কৃতি নির্মানের ক্ষমতার জন্য।
মানুষের ব্রেইনে মন- মনন- চেতনা নামক নতুন বিল্ডিং ব্লক মানুষকে শুধু বুদ্ধিমত্তা নয়,নৈতিক,সাংস্কৃতিক ও মানবিক দিকে এক অনন্য বিকাশের সুযোগ করে দেয়।
তবে নতুন মাত্রার এই বিবর্তন কি সবার মাঝে ছড়াতে পেরেছিল বা পেরেছে? আমরা কতজন সুসভ্য, সংস্কৃতিবান, মননশীল, উচ্চ মূল্যবোধ সহ মানবিক গুনাবলী অর্জন করেছি?
সমগ্র পৃথিবী কোন প্রকৃতির মানুষ শাসন করছে?
আমাদের রাস্ট্র,সমাজ,প্রশাসন সর্বত্র কাদের কর্তৃত্বে চলছে?
সৎ,মেধাবী,সৃজনশীল মানুষগুলো কতটুকু সম্মান,গুরুত্ব পাচ্ছে,
তারা সমাজ নির্মানে আদৌ কোন ভূমিকা কি রাখতে পারছে?
উত্তর আমাদের সবার জানা।
এই অধপতিত অবস্হা নিশ্চয় হতো না যদি নবতর সে বিবর্তন সব মানুষের মধ্যে সমভাবে হতে পারতো।
যেহেতু এবারের বিবর্তন কেবলমাত্র প্রাকৃতিক নয়,এটি বিশেষ মাত্রার অন্য রকম বৈশিষ্ট্য মন্ডিত বিবর্তন,তাই এর বিকাশ ত্বরান্বিত করতে হলে সমাজ,রাস্ট্রের সর্বত্র সেই বিকশিত মানুষ গুলোর প্রাধান্য থাকতে হবে।
৫। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন হয়েছে।মেধা ও মননে মানব জাতি আড়াই - তিন হাজার বছর পূর্বে যেখানে ছিল তা থেকে কতটুকু আমরা এগুতে পেরেছি?
কবি আল মাহমুদ এর সে বিখ্যাত উক্তি এখন ও প্রযোজ্য " কতটুকু এগুলো মানুষ? "
খ্রীষ্টপূর্ব ৭ম ও ৬ষ্ট শতাব্দীতেই পৃথিবীতে এক বিষ্ময়কর সভ্যতার উদ্ভব হয় যার নাম " আয়োনীয় সভ্যতা "।
যা ছিল কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রভাব মুক্ত।
৬। ( না পড়লেও চলবে)মাত্র একটি লাঠি ব্যবহার করে এবোটাস থেনেস সর্ব প্রথম পৃথিবীর পরিধি বের করেছিলেন;
থেলিস সূর্যগ্রহণ সম্বন্ধে জানতেন ও পিড়ামিডের ছায়ার দৈর্ঘ্য থেকে এর উচ্চতা মেপেছিলেন;
হিপ্পোক্রিটাস চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটান;
এম্পোডিকিলিস ডারউইনের অনেক আগেই বিবর্তনের ধারনা দেন;
ডেমোক্রিটাস " পরমানুর" ধারনা দেন ও নিউটনের অনেক আগেই " সীমা তত্ব" আবিষ্কার করেন এবং ডিফারেনশিয়াল ও ইন্ট্রিকাল ক্যালকুলাস আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিলেন:
এরিস্টারকাস কোপার্নিকাস এর অনেক আগেই বলেন পৃথিবী নয় সূর্য গ্রহ ব্যবস্হার কেন্দ্র - ইত্যাদি
অথচ প্লেটো,এরিস্টটল এসে এই মহান সভ্যতার বিপরীত ধারা শুরু করেন।
শুরু হলো হাজার বছরের " মধ্য যুগীয় অন্ধকার"।
যদি সভ্যতার ঐ ধারা অব্যাহত থাকতো তাহলে হয়তো ৫০০ বছর পূর্বেই আইনস্টাইন এর আপেক্ষিক তত্ব আবিষ্কৃত হতো,আমরা আন্তঃনাক্ষত্রিক অভিযান করতে পারতাম।
৭। মাঝখানের অন্ধকার মধ্য যুগের পর আবারো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ শুরু হয়েছে বটে,
তবে মনন ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে আমরা সেই ৫ হাজার বছরের আগেকার স্তর থেকে আদৌ কোন অগ্রগতি করতে পেরেছি কি?
এ না পারার কারন সম্পদ ও ক্ষমতা রয়ে গেছে মানবিকতা বর্জিত,স্বার্থপর, সৃজনশীলতা বন্চিত,কৌশলী, ধূর্ত কিছু চতুর মানুষের হাতে।
সৃজনশীল, জিনিয়াস,মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষগুলোকে এরা কোনঠাসা করে পিছিয়ে রেখেছে।
যেহেতু এটি পূর্বতন ভৌতিক বিবর্তন নয়,তাই স্বল্প সংখ্যক গুনী ব্যক্তি এই উচ্চতর মন- ব্রেইনের অধিকারী হয়।
এই দার্শনিক, বিজ্ঞানী, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি সহ যে সব মহতি মানুষগন এসেছেন, তাদের মেধা,মনন ও শ্রমের ফসল আজকের উন্নত বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির ধারা।
কিন্তু এদের ফসলকে ( সম্পদ,প্রযুক্তি)কুক্ষিগত করে ফেলে চতুর,ধূর্ত,কৌশলী,স্বার্থান্ধ কিছু মানুষ। সমাজ,রাস্ট্রের কর্তৃত্ব তারা কব্জা করে নেয়।যুগের পর যুগ এভাবেই চলছে।
শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার( যিনি ঢাকা কলেজে আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন) মানুষকে দুভাবে ভাগ করেন:
১। সাম্প্রতিক মানুষ: এরা সম- সাময়িক জীবনের জন্য বাচে।এই এক জীবনে যতটুকু ভোগ বিলাস,বৈষয়িক উন্নতি তার জন্য সকল মেধা বুদ্ধি কাজে লাগায় ( ঐ ক্ষমতা কুক্ষিগত করা লোকগুলো ও আমজমতা)- এরাই গরিষ্ঠ সংখ্যক
২। চিরায়ত মানুষ: এরা বৈশ্বিক সত্বার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে।নিছক বৈষয়িক অর্জনের পিছনে ছুটে না।মানব কল্যাণ ও সভ্যতা নির্মাণ যাদের ব্রত।এরা মাইনরিটি
পবিত্র গ্রন্থ বেদেও মানুষকে ৩ ভাগে ভাগ করেছে :
সাত্ত্বিক মানুষ - এরা হচ্ছে ঐ চিরায়ত মানুষ ;
রাজসিক মানুষ -ঐ ভোগবাদী,চতুর, সমসাময়িক মানুষ ;
ও তামসিক মানুষ - দারিদ্রতা,অশিক্ষায় নিমজ্জিত সাধারন মানুষ।
অল্প কিছু সংখ্যক রাজসিক মানুষের পিছনে থাকে তাবৎ তামসিক মানুষ ( আমজনতা)। বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র অংশটি হচ্ছে সেই স্বাত্বিক বা চিরায়ত মহান মানুষ গুলো।
মানবীয় বিবর্তন নির্ভর করে ঐ চিরায়ত,সাত্ত্বিক মানুষদের উপর।কিন্তু সমাজে এদের সংখ্যা কত? সমাজে এদের প্রভাব কতটুকু?
ঐ চতুর সাম্প্রতিক মানুষগুলোর তাঁবেদারি করছে বেশীরভাগ মানুষ।
সামান্য বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য,
কিছু সুযোগ সুবিধা বা আনুকুল্য পাওয়ার লোভে
বা হয়রানির ভয়ে
অনেক চাটুকার তাদের আনুগত্য করে থাকে।
ঐ চিরায়ত মানুষ গুলো উল্টো লান্চিত হচ্ছে,অপমানিত হচ্ছে ও মূলধারার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
তাই স্বাভাবিক ভাবেই মানবীয় নতুন বিবর্তন গতি পায়নি ও পাচ্ছে না।
এই গতি ত্বরান্বিত করতে চাইলে
ন্যায়ভিত্তিক,সাম্য ও মানবিক সমাজ ব্যবস্হা অপরিহার্য।
গুনী মানুষ, সৃজনশীল, মননশীল মানুষ, উচ্চ সংস্কৃতিবান, উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষকে যথাযথ সম্মান পূর্বক সমাজ, প্রশাসন,রাস্ট্রে ভূমিকা রাখতে না দিলে এই নতুন মাত্রার বিবর্তন গতি পাবে না
বরং উল্টোটিও ঘটতে পারে।
আমরা কি পারবো সভ্য, সংস্কৃতিবান,সৃজনশীল, মেধাবী মানুষকে লালন করতে,সমাজ রাস্ট্রীয় কাঠামোর শক্তিকেন্দ্রে তাদেরকে স্হান করে দিতে?