Friday, July 14, 2017

রোগ কাহিনী-১৭: রোগী বলে স্যার দুইবার নিজকে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছিলাম যাতে ঘরের জিনিস বিক্রি করতে না পারি; স্ত্রী বলে এভাবে চললে স্যার ক'দিনের মধ্যে আমাদের রাস্তায় বসতে হবে

অতিরিক্ত কেনাকাটার নেশার কথা শুনেছেন,কিন্তু সব বিক্রি করে দেওয়ার নেশার কথা কি শুনেছেন?

কেনাকাটা সবাইকে করতে হয়
বিক্রি বাটাও আমাদের প্রয়োজনে করতে হয়।তবে কারো কারো অতিরিক্ত কেনাকাটার স্বভাব থাকে।কিছু মানসিক রোগ রয়েছে যেখানে রোগী দামী দামী জিনিস কেনে, অপ্রয়োজনেও জিনিস কিনে( বাইপোলার ম্যুড ডিসঅর্ডার - ম্যানিয়া) বা কেনাকাটা করার বাধ্যতামূলক তাড়না অনুভব করে( কম্পালসিভ বাইয়িং)।
কিন্তু  নিজের ও পরিবারের জিনিস পত্র ক্রমাগতভাবে বিক্রি করে যাচ্ছে কোন কারন ছাড়া ও এভাবে পরিবারটি নিঃস্ব হওয়ার পথে, এমন কাহিনী সাধারন মানুষ কেন কতজন সাইকিয়াট্রস্ট তা শুনেছে? আমিও জীবনে এ ই প্রথমবার এরকম রোগী পেলাম।
রোগ কাহিনী :
২৮ বছরের সুরুজ মিয়া ক্রোকারিজ এর ব্যবসা করতেন। ৩ বছর যাবৎ তার ঘরের জিনিস বিক্রি করার নেশায় পেয়েছে।মানুষ টাকার প্রয়োজন হলে উপার্জনের চেষ্টা করে,কেউবা হয়তো চুরি,প্রতারণা ওশুরু করে। নিতান্ত প্রয়োজনে ঘরের কিছু জিনিস ও বাধ্য হয়ে বিক্রি করে।কিন্তু অকারনে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরের জিনিস বিক্রির নেশাও কি কারো থাকতে পারে?

সে কারনে, অকারনে ঘরের জিনিস বাইরে বিক্রি করে দেয়।যা বিক্রি করে অর্ধেক দামও পায় না।বাইরের মানুষ এটি বুঝতে পেরে তাকে উসকে দেয় ওই কিছু বিক্রি করবি? লোক আছে কেনার।সে তাৎক্ষনিক ভাবে ঘর থেকে যা পায় তাই এনে বিক্রি করে দেয়।
বউয়ের ভাষ্য মতে এ পর্যন্ত সে ঘরের টিভি,ফ্রিজ,আলমারি,ড্রেসিং টেবিল,খাট,ওয়ার্ডড্রোব,সোফা,সহ ১৫-২০ টি
মোবাইল বিক্রি করেছে।এমনকি ঘরের হাড়ি পাতিল,শার্ট, প্যান্ট, জুতা,লুঙ্গি,শাড়ি সবই বিক্রি করেছে। তার বাবা মারা যাবার পর  সে মৃত
বাবার পাজামা পান্জাবীও বিক্রি করে দেয়।বউয়ের ত্রি পিস,শাড়ী বিক্রি করে দেয়।বউ জানায় স্যার  সে কোন রোজগার করে না,উল্টো সব বিক্রি করে দেয়, তবুও সংসার ছাড়িনি মেয়ের দিকে চেয়ে ও সমাজের দিকে চেয়ে।

তার বউ আরো বলে স্যার সে বিক্রি করে আর আমি বাপের বাড়ী থেকে বা আত্মীয়দের কাছ থেকে ঘরের জিনিস পত্র আনি।আনার পর পরই সে আবার তা বিক্রি করে দেয়।তাকে বিক্রি করতে না দিলে মারধর করে,জিনিসপত্র দা দিয়ে কোপায়,ভেঙ্গে ফেলে।সে বলে  বিক্রি করার তাড়না এলে নিজকে কন্ট্রোল করতে পারি না,যদিও বুঝি এরকম করা ঠিক না।বউ বলে সে  নিজেই শিকল নিয়ে এসে বলে আমাকে বেধে রাখো যাতে আমি কিছু বিক্রি করতে  না পারি।সে বলে এভাবে সব বিক্রি হয়ে গেলে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ কি হবে?
এভাবে  দুইবার তাকে বেধে রাখা হয়েছিল।
রোগীর বিষন্নতা আছে কিনা,নেশা করে কিনা,ওসিডি( সূচিবায়ু/ বাধ্যতামূলক আচরন) আছে কিনা বিস্তারিত হিস্ট্রি নিয়ে তা বুঝতে চাইলাম।কেননা  এ রোগ গুলো ও এরকম স্বভাবের পিছনের কারন হতে পারে।কিন্তু উপরোক্ত রোগ গুলো তার মধ্যে পাওয়া যায়নি।
রোগী বলে যখন বেচার নেশায় পায় কোনভাবে নিজকে আটকে রাখতে পারি না।যেভাবেই হোক বিক্রি করতেই হবে।বাধা দিলে মারতে ইচ্ছে করে।
তবে পরে এ জন্য আফসোস হয়।
বউ বলে স্যার এরকম চললে কিছুদিনের মধ্যে আমাদেরকে রাস্তায় ভিক্ষার পাত্র নিয়ে বসতে হবে।আত্মীয়রা আর সাহায্য করতে চায় না,কেননা তারা বলে সব বুঝে,পাগল না একে সাহায্য করবো কেন?
এ রোগের নাম " impulse control disorder "
এরকম আরো কিছু রোগ রয়েছে: জুয়া খেলা,শপিং করতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্বেও চুরি করে ফেলা( ক্লেপটোম্যানিয়া),বাধ্যতামূলকভাবে মাথার চুল তুলে ফেলা( ট্রাইক্লিটোম্যানিয়া) ইত্যাদি। ওসিডি( একই চিন্তা বার বার আসা ওএকই কাজ বার বার করা) এটিকেও এখন এই স্পেকট্রাম এ নিয়ে আসা হয়েছে

No comments:

Post a Comment