Saturday, September 8, 2018

রোগ কাহিনী -৩৩ঃস্যার আপনার এই হাসপাতাল পুরো আমাকে লিখে দিলেও মন ভালো হবে না

কাহিনী সংক্ষেপঃ
রোগীর বয়স ৫১। ২২ বছর বিবাহিত জীবনে কোন সন্তান হয়নি। তার ভাষ্য স্যার এর জন্য আমি দায়ী।
আমার শুক্রাণু মানসম্মত নয় তাই সন্তান হয়নি। তবুও আমার স্ত্রী সব কিছু মেনে নিয়ে সংসার করেছে। বাধ্য হয়ে ১৮ বছর আগে এক মেয়েকে পালক নেই।

৫ মাস আগে আমরা টেস্ট টিউব বেবী নেই। নিজের দোকান বিক্রি করে এ ব্যবস্থা করি।কিন্ত বাচ্চা পেটে আসার পর আল্ট্রা সনোগ্রাম করে ধরা পরে যে বউয়ের জড়ায়ুতে টিউমার।

ডাক্তার বলে জরুরি ভিত্তিতে টিউমার ফেলে দিতে হবে, বাচ্চা সহ না হলে বউয়ের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।বাকি সম্পত্তি বিক্রি করে ওপারেশন করাই

।এর কিছু দিন পর ডিস্ক প্রোলাপস এর কারনে বউয়ের দু পা অবশ হয়ে যায়।তিনি শয্যা শায়ী এবং পায়খানা প্রসাব সব বিছানায় করে।বউয়ের এসব কাজ আমাকেই করতে হয়।

এদিকে মেয়ে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পরে থাকে। কিছু বললেই উগ্র হয়ে যায়।

ডাক্তার বলছে বউয়ের আবার ওপারেশন করলে হয়তো প্যারালাইসিস ভালো হবে।কিন্তু আমার তো ইতিমধ্যে বাচ্চা ও গেলো সব টাকা ও গেলো

।এখন খাওয়া পড়ারই খরচ হয় না,অপারেশন কেমনে করবো।ব্যবসা বন্ধ, মেয়ের স্কুলের খরচ,বউয়ের পায়খানা প্রসাব সহ যাবতীয় কাজ নিজকে করতে হয়।এমন কপাল আমার কোন ভাই বোনও নেই। আমাকে সাহায্য করার কেউ নেই, কোন সম্পদ ও নেই।

তাই এখন চিন্তায় চিন্তায় ব্রেন কাজ করে না
সারারাত ঘুম হয় না,
সর্বক্ষন আজেবাজে চিন্তা আসে( বউ মরলে আমার কি হবে,আমি মরলে বউয়ের কি হবে),
ক্ষিধে নেই,
ওজন অর্থেক হয়ে গেছে,
মাথা ঘুরে,
মাথায় যেন জ্যাম লেগে গেছে,
মাথায় কোন কাজ করে না।
বউ সারাক্ষণ কাদে,তাকে ছাড়তে পারি না।
কোন ভালো চিন্তা মাথায় আসে না
,মনে হয় আত্মহত্যা করি-

কিন্তু আমি মারা গেলে বউয়ের কি হবে, মেয়ের কি হবে  ভেবে কিছু করতে সাহস হয় না।
সারাক্ষণ হাত কাপে,মনে কোন আনন্দ নেই

।স্যার আপনার এই হাসপাতাল আমাকে লিখে দিলেও মনে হয় মনে আনন্দ আসবে না। অথচ গত বছর ও বউকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়ে কত আনন্দ করে এলাম

আমি কি করবো স্যার?

এ কেইস হিস্ট্রি থেকে কি শিখবো?

১।  এক মেয়েকে পালক নিয়েও  ২২ বছর পর নিজ সন্তান নেওয়ার জন্য নিজেদের সহায় সম্বল সব শেষ করে টেস্ট টিউব সন্তান নেওয়া কি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত  ছিল?

২। টেস্ট টিউব সন্তান নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে জড়ায়ুর টিউমার ধরা পরে যা জরুরি ভিত্তিতে বাচ্চা সহ ফেলে দিতে হলো।অথচ যে ডাক্তার  টেস্ট টিউব বাচ্চা নেওয়ার কাজটি করলেন তিনি কি পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই এ কাজ করেছে যে ঐ টিউমার ধরা পরলো না? ঐ ডাক্তারের কি দায় নেই?

৩। বিপদ একা আছে না দল বেধে আছে।এখানে ও তাই দেখছি

৪। পরিস্থিতি যত ভয়াবহ হোক মনের জোর থাকলে,সেটি মোকাবেলা কঠিন নয়।কিন্তু মন ভেঙে গেলে, বিষন্নতা ( ডিপ্রেশন)  রোগ পেয়ে বসলে তখন সে পরিস্থিতি অসহ্য, অসহনীয় ও ভয়ংকর মনে হবে।
সুস্থ চিন্তা, আশাবাদী চিন্তা, গঠনমূলক চিন্তা তখন মাথায় আছে না।গভীর বিষন্ন অবস্থায় ভবিষ্যত কেবল অন্ধকার মনে হয়,বর্তমান অসহনীয় যন্ত্রনার মনে হয় তাই এক সময় মনে হয় এক মাত্র মৃত্যু পারে এ কষ্টের অবসান ঘটাতে।।

৫। পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা এমন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন,যা ওনার নেই।

৬। একবার মেজর ডিপ্রেশন হয়ে গেলে ঔষধ চিকিৎসা মাস্ট, সঙ্গে সাইকোথেরাপি।

No comments:

Post a Comment