আবেগীয় বুদ্ধিমত্ত্বা(ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স)ঃসফলতার মূল চাবিকাঠি 
পর্ব-১ঃ
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।কিন্তু কেন সেরা?  প্রধানত একারনে যে সকল প্রানীর চেয়ে মানুষ বুদ্ধিতে সেরা। মানব সমাজে বুদ্ধিমানদের বেশ কদর রয়েছে। মা-বাবারা তাদের সন্তান যে খুব মেধাবী (বুদ্ধিমান)  সেরকম সার্টিফিকেট জোগাড় করার জন্য হেন " হীন পন্থা " নেই তা অবলম্বন করছে না।জিপিএ -৫ পাওয়ার জন্য নিজেরা কালো মার্কেট থেকে প্রশ্ন পত্র ফাস করে ঐ প্রশ্নের উত্তর জোগাড় করে " প্রিয় মেধাবী (?)" সন্তানদের হাতে পৌঁছে দেন।সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের ও মূল যুক্তি ছিল সব চাকরির মাপকাঠি হবে " মেধা"। 
কিন্তু আসলেই কি বুদ্ধিমত্বা সফল জীবনের চাবিকাঠি?
  মনোবিজ্ঞানীরা  বুদ্ধিমত্তা, সফলতা ও সুখী হওয়া নিয়ে প্রচুর গবেষণা করেছেন। বর্তমানে জানা গেছে শুধু মাত্র একাডেমিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সফল হবেনই এর নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।গবেষণায় প্রমানিত যে জীবনে সফলতার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে " আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা" বা ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স। 
প্রাক-ভাবনাঃ
কিছু ঘটনার উল্লেখ করছি -
(১)এক বালক পিস্তল নিয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পরে।পুলিশী জিজ্ঞাসায় সে জানায় স্কুলে তার সঙ্গী সাথীরা তাকে অবজ্ঞা, অবহেলা, অপমান করতো।সেও যে একজন "বীর" এটি প্রমাণ করতে সে এই দুঃসাহসিক কাজ বেছে নেয়।(২) আমেরিকায় ১২ বছরের নীচের শিশুদের গুলিতে যারা মারা যায় তাদের ৫৭% হচ্ছে ঐ শিশুদের আপন মা- বাবা।শিশুদের এরকম উন্মদ আচরণের কারন অতি ছোট খাট ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলো হচ্ছে সন্তানদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।যেমন - মাত্রাতিরিক্ত টিভি, মোবাইল দেখতে না দেওয়া।আমাদের দেশে ও কিছু আহ্লাদে সন্তান তাদের মা-বাবার কাছে নানা অন্যায় আবদার করে থাকে ( মোটরসাইকেল বা নতুন মডেলের গাড়ি কিনে দাও)। বারবার এমন আবদার মেটাতে না পারলে "সোনার ছেলেরা/মেয়েরা" ক্ষিপ্ত হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজ করে থাকে। 
(৩) ভার্সিটিতে এক নবাগত ছাত্র তার সিনিয়র "বড় ভাইকে" সালাম দেননি। সিনিয়র ভাই ক্ষুব্ধ হয়ে তার সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে  ঐ " বেয়াদব(?) " ছাত্রকে আদব- কায়দা শেখানোর জন্য  প্রহার করে তার হাত পা ভেঙে হল থেকে বের করে দেয়
উদাহরণের আর ফিরিস্তি বাড়াচ্ছি না। উপরোক্ত আগ্রাসী আচরণ গুলো কেন ঘটলো বা ঘটে? কেন মানুষের মধ্যে হঠাৎ তীব্র আক্রমনাত্বক আচরণ এরকম বেপরোয়া হয়ে উঠে? কেন বুদ্ধিমান মানুষ নিজের অর্বাচীন, অমানবিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না?
আমাদের পরিবার, সমাজে এ ধরনের নৃশংস, আক্রমনাত্বক আচরণ বর্তমানে অহরহ ঘটছে। সমাজে যেন আগ্রাসী আচরণের "সুনামি " চলছে। 
মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন ধরে মানুষ কেন মাঝে মাঝে এমন "সেন্সলেস আচরণ " করে  তার কারন খোজার চেষ্টা করছেন। 
ব্রেইন মেকানিজমঃ
এই যে ক্রোধের "অনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ " - এর উপর গবেষণা করতে গিয়ে স্নায়ু বিজ্ঞানীরা ব্রেইনের কিছু রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছেন। যখন আমরা চিন্তা করি, অনুভব করি, কল্পনা করি  বা স্বপ্ন দেখি তখন ব্রেইন কোষগুলো কিভাবে অপারেট করে সে বিষয়ে প্রচুর তথ্য জোগাড় হয়েছে। আরো জানা গেছে কিভাবে ব্রেইনের " আবেগীয় কেন্দ্র গুলো " ক্রোধ সৃষ্টি করে বা কান্না সৃষ্টি করে। 
আরো জানা সম্ভব হয়েছে ব্রেইনের আবেগের সেই প্রাচীন আবেগীয় কেন্দ্র গুলো কেন আমাদের যুদ্ধে লিপ্ত হতে প্ররোচিত করে  ভালোবাসার প্রনোদনা জোগায়। 
এসব জানার ফলে ব্যক্তিক বা সামস্টিক ভাবে আমাদের যে "ইমোশনাল ক্রাইসিস " সেগুলো কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে  সে পথ,পন্থার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞান এখন  মনস্বতাত্তিক এসব " জরুরি ও হতবুদ্ধিকর" প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছে। 
বিজ্ঞানের এই সর্বশেষ তথ্য গুলো বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমাদের " প্রাচীন সংকীর্ণ ধারনাকে" চ্যালেঞ্জ করছে। প্রাচীন ধারণা হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা বংশধারার ফল এবং সেজন্য জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে সেটি পরিবর্তন করা সম্ভব না।আরো মনে করা হতো যে এসব "অর্জিত ক্ষমতা বা প্রবনতা" (এপটিচিউড) দ্বারা আমাদের "ভাগ্য " অনেকাংশে পূর্ব নির্ধারিত। এসব কারনপ আমাদের সন্তানদের মধ্যে কিসব পরিবর্তন এনে তাদের জন্য আরো উন্নত জীবন এনে দেওয়া যায়, সেসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামানো হতো না।আমরা এ প্রশ্নের ও সঠিক উত্তর জানতাম না কেন একজন "অতি মেধাবী " জীবনে তেমন কিছু করতে পারে না অথচ মোটামুটি বুদ্ধিমত্তার একজন কপন আশ্চর্য্যজনক সফলতা পেয়ে যায়। 
বর্তমানে এসবের উত্তর জানা গেছে,  আর তা হচ্ছে -"আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা" বা ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তায় থাকে ঃ আত্ম -নিয়ন্ত্রণ (সেল্ফ কন্ট্রোল ; সতেজতা ও উদ্দীপনা ;কোন লক্ষ্য অর্জনে "লেগে থাকার" গুন বা অটল থাকার গুন; এবং নিজকে মটিভেট করার ক্ষমতা। 
আশার কথা এসব গুনাবলী বা দক্ষতা আমরা আমাদের সন্তানদের শেখাতে পারি (যেখানে বুদ্ধি হয়তো বাড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে) । এভাবে আমরা তাদের জীবনে সফল হওয়ার উন্নততর "সুযোগ " করে দিতে পারি ( তাদের বংশগত বুদ্ধিমত্তা যে পর্যায়েরই হোক না কেন)। 
( পর্ব -২ঃআগামীকাল(
Saturday, September 29, 2018
সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
 
No comments:
Post a Comment