Saturday, September 8, 2018

বিশ্ব আত্মহত্যা দিবস:বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ড একজন আত্মহত্যা করে

২০০৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশান ফর সুইসাইড প্রিভেনশন সংস্থাটি গঠন করা হয়(আই এ এস পি)। এ সংস্থার উদ্যোগে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায়  প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর " বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ " দিবস পালন করা হয়।এ বছর এর থিম হচ্ছে ঃ আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি, এক সাথে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধ এখনো বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীতে প্রতি বছর ৮ লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে।তার মানে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যা করে থাকে।  ২০২০ সালে এ সংখ্যা হবে ১৫ লক্ষ।

১৫-২৯ বছরের  মৃত্যুর  মধ্যে আত্মহত্যা জনিত মৃত্যু হচ্ছে ২য় সর্বোচ্চ কারণ।
পৃথিবীর সব মৃত্যুর ১.৪% হচ্ছে আত্মহত্যা জনিত।
এছাড়া যতজন আত্মহত্যা করে তার ২৫ গুন বেশি লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করে এবং তার চেয়ে ও অনেক বেশি লোক আত্মহত্যা করার চিন্তা করে।
খোঁজ নিলে আপনি আপনার আশেপাশে তেমন কাউকে পেয়ে যাবেন।
প্রতিটি আত্মহত্যার কারনে প্রায় ১৩৫ জন মানুষ তীব্র শোকে ভুগে বা অন্য সমস্যায় ভুগে। তার মানে বছরে ১০৮ মিলিয়ন ( ১০ কোটি ৮০ লক্ষ)  লোক আত্মহত্যা জনিত কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আত্মহত্যা হচ্ছে - বংশ ধারা,
মনস্তাত্ত্বিক,
সামাজিক, সাংস্কৃতিক
ও অন্যান্য ঝুঁকি পূর্ণ উপাদানের সম্মিলিত ফলাফল।
দারিদ্র্যতা,বেকারত্ব, প্রিয়জন হারানো, তর্ক বিবাদ,আইনগত বা কর্মক্ষেত্রের সমস্যা সহ নানাবিধ সামাজিক, ব্যক্তিগত কারন এর জন্য দায়ী ।

ডিপ্রেশন, মাদকাসক্তি সহ অন্যান্য মানসিক রোগ হচ্ছে এর অন্যতম কারন,যেগুলো চিকিৎসা যোগ্য।

এই দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে
১। আত্মহত্যা প্রতিরোধ যোগ্য এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি
২। আত্মহত্যা বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বাড়ানো
৩। আত্মহত্যা ও মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে প্রচলিত অজ্ঞতা,কুসংস্কার এবং লোক লজ্জা ( স্টিগমা) কমানোর চেষ্টা গ্রহণ ।

এটা কোন অপরাধ নয়,এর জন্য কারো শাস্তি দেওয়া যাবে না( যদিও আমাদের দেশ সহ অনেক দেশে আত্মহত্যা শাস্তি যোগ্য অপরাধ)।

এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ে সবার যৌথ প্রচেষ্টার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, কেননা আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রয়োজন বহুস্তর ভিত্তিক, বহুমুখী কৌশলের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা।মনে রাখবেন এ প্রতিরোধে আপনিও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আত্মহত্যার আচরণ প্রতিরোধে আপনি প্রতিদিনই অনেক কিছু করতে পারেন।

এ বিষয়ে নিজকে ও অন্যদেরকেঃ
আরো শিক্ষিত করে তুলতে পারেন ;
আত্মহত্যার কারণ ও এর পূর্ব-সতর্কতা বার্তা গুলো কি তা জানতে পারেন;
যারা মনো যাতনায় ভুগছেন তাদের প্রতি দয়া,মায়া, সমবেদনা জানাতে পারেন,
আত্মহত্যা ও মানসিক রোগ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার এবং লোক লজ্জা দূর করতে সহায়তা করতে পারেন;
ডিপ্রেশন, মাদকাসক্তিসহ অন্যান্য গুরতর মানসিক রোগীদের চিকিৎসা গ্রহনে ভূমিকা রাখতে পারেন।

আত্মহত্যার প্রতিরোধে যেগুলো কার্যকর বলে প্রমানিত সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে এবং পৃথিবীর যে  প্রান্তেই মানুষ জীবন সংগ্রামে লিপ্ত সেখানে তা পৌঁছে দিতে হবে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঃ

ইমার্জেন্সি সার্ভিস, পরিবার, কমিউনিটি, পুলিশ, এডুকেটর,মানসিক স্বাস্থ্য কর্মী, সামাজিক সার্ভিস সমূহ,ধর্মীয় নেতা,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গভর্নমেন্ট, মাদক চিকিৎসক  সহ সামাজিক, ব্যক্তিগত ও সিস্টেম গত কৌশলের একীভূত চেষ্টা।

সর্বোপরি যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে, কেননা যে জটিল মনোসামাজিক কারনে আত্মহত্যার মনোভাব জাগে তা বুঝতে তাদের মনোবিশ্লেষন প্রয়োজন।
তাদের চিন্তায় থাকে অভাবনীয় অন্তদৃষ্টি ও অনন্য ভাষ্য, (যদিও আমাদের ধারনা এর বিপরীত) । তাদের কগনেটিভ ফাংশনের কিছু অংশে ক্রটি দেখা যায় কিন্তু তাদের রয়েছে মনোজগতের গভীর অন্তঃদৃষ্টি।

আসুন এ দিবসে আমরা শপথ করি, আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করবো এক সাথে

প্রফেসর ডা. মো. তাজুল ইসলাম

প্রফেসর অব সাইকিয়াট্রি
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

ইমেইল ঃ drtazul84@gmail.com
Phone :01715112900

No comments:

Post a Comment