Wednesday, January 30, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩৩ঃআশা- পার্থক্য তৈরি করে

পর্ব-৩ঃ
(পূর্বে আলোচিত রাগ রেখে অনুরাগে এলাম।আসন্ন বইমেলায় আমার প্রকাশিতব্য বই "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাঃসাফল্যের মূল চাবিকাঠি " -থেকে বাছাইকৃত কিছু অংশ)

আশা- পার্থক্য তৈরি করে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যানসাস এর মনোবিজ্ঞানী সি আর স্নাইডার গবেষণা করে দেখেছেন, একই মানের যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আশাবাদের পার্থক্য তাদের ফলাফলেও পার্থক্য তৈরি করে।

তার মতে যে শিক্ষার্থীদের উচ্চ আশাবাদ থাকে, তারা লক্ষ্যকেও উচ্চ অবস্থানে রাখে এবং তারা জানে কোন ধরনের কঠোর পরিশ্রম দ্বারা সে উচ্চতর লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

গ্রীক দেবী প্যান্ডোরাকে তার রূপে ঈর্ষাকাতর কিছু দেবতা তাকে একটি ম্যাজিক বক্স উপহার দেন।তবে তাকে বলা হয়েছিল যেন কখনো বাক্সের ঢাকনা না খুলেন।

কিন্তু একদিন কৌতুহল বসে ও তাড়না চেপে রাখতে না পেরে তিনি বাক্সের ঢাকনা খুলে ফেলেন।
এর ফাঁকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে -রোগব্যাধি, অসুস্থতা,অস্হিরতা, পাগলামি।

কিন্তু এক দয়াবতী দেবী দুরুত সে বাক্স বন্ধ করে দেন।ফলে একটি মূল্যবান "প্রতিষেধক " বাক্সে থেকে যায়।

সেটাই হচ্ছে -"আশা" -যা জীবনের সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনা, ব্যর্থতা, হতাশার পরেও মানব জীবনে টিকে থাকে, তাকে নতুন পথ,নতুন জীবনের আলো দেখায়।

আধুনিক গবেষকরা দেখেছেন উৎপীড়িত,পরাজিত মানুষকে প্রবোধ, সান্ত্বনা দেওয়ার চেয়ে তাদের মধ্যে "আশার " সন্চার করতে পারলে সেটি অধিক ভালো কাজ দেয়।

জীবনের প্রতিটি দুঃসহ, দুরুহ সময়ে এটা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে থাকে।

আশাবাদীদের বৈশিষ্ট্য ঃ তারা নিজেদেরকে প্রণোদনা দিতে, মটিভেট করতে পারেন;
লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে বলে মনে করেন ;
কঠিন, দুরুহ সময়ে ও তারা পুনঃ পুনঃ নিজেদের আশ্বস্ত করতে পারেন ;
লক্ষ্য অর্জনে প্রচলিত পন্থায় কাজ না হলে বিকল্প পথ বের করে নেন;
লক্ষ্য অর্জন কোনভাবেই সম্ভব মনে না হলে তারা লক্ষ্য বদল করেন;
এবং কঠিন কাজকে ছোট ছোট ও ম্যানেজ করা সম্ভব তেমন খন্ডাংশে ভাগ করে নেন।

এক কথায় আশাবাদ হচ্ছে -হতাশা, ব্যর্থতা, বিপর্যয় থাকা সত্বেও, সাধারনভাবে জীবনে এক সময়ে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে এই প্রত্যয়,এই বিশ্বাস।
পর্ব-৪ঃআগামীকাল)

Monday, January 28, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩২ঃরাগের এনাটমি ও এর প্রতিকার

পর্ব-২ঃ
(আসছে বই মেলায় আমার প্রকাশিতব্য বই "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাঃসাফল্যের মূল চাবিকাঠি "-থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ)

ইউনিভার্সিটি অব আলবামার মনোবিজ্ঞানী জিলম্যান বলেন " রাগের পিছনে সার্বজনীন যে উসকে দেওয়ার কারণ সেটি হচ্ছে নিজেকে বিপদগ্রস্ত (এন্ডেঞ্জার্ড) মনে করা। "

এই বিপদগ্রস্ততা বোধ শুধু শারীরিক নয় বরং বেশির ভাগই হয়ে থাকে

"আত্মসম্মান বোধ বা মর্যাদার উপর " হুমকি বা তেমনটি প্রতীয়মান হওয়া ;
অন্যায়ভাবে বা রূড়তার সহিত আচরণ করা হয়েছে মনে করা ;
অপমান, হেয় বা ছোট করা হয়েছে ভাবা;
কোন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবতবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়ে হতাশ অনুভব করা-ইত্যাদি।

এরকম ধারণাগুলো ব্রেইনের "লিম্বিক তন্ত্রের " যে আবেগীয় জলোচ্ছ্বাস সেটি উসকে দেওয়ার কারণ হিসেবে কাজ করে।

ফলে ব্রেইনে দু’ধরনের প্রভাব পড়ে।

১। সেই আবেগীয় জলোচ্ছ্বাস ব্রেইনের এক অংশে "ক্যাটেকোলামাইন" নিঃসরণ ঘটায় যা বিপদ মোকাবিলায় "হয় যুদ্ধ করো,না হয় পালিয়ে যাও" ((ফাইট অর ফ্লাইট)  সাড়া প্রদান করে।

এটি একটি ত্বড়িত(দ্রুত) ক্রিয়া যা তৎক্ষনাৎ ঘটে এবং সারা শরীরে শক্তি মবিলাইজ করে,একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য।

শক্তির এই বন্য প্রবাহ কয়েক মিনিট স্হায়ী হয় মাত্র, যে সময়ে এটি শরীর মনকে একটি "ভালো যুদ্ধ বা দুরুত পালানোর " উপযুক্ত করে তোলে।

এরই মধ্যে "এমাগডেলা তাড়িত" আরেকটি মৃদু তরঙ্গ তৈরি হয়।

এটি তৈরি হয় "এড্রেনো-কর্টিক্যাল" স্নায়ু তন্ত্র দ্বারা।।এটি ক্যাটেকোলামাইনের চেয়ে দীর্ঘ স্হায়ী -কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে।

ফলে ব্রেইনের উত্তেজনা, সজাগতা দীর্ঘস্হায়ী হয় ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এর উপর সওয়ার হওয়ার সুযোগ ঘটে । তাই পরবর্তী রাগটি  আরো দ্রত ঘটে ও আরো তীব্র হয়।

কেন একটি রাগের ঘটনার পরে অন্য একটি অতি সাধারণ রাগের ঘটনায় ও প্রচন্ড ক্রোধ প্রকাশ করি-এই ব্রেইন মেকানিজম সেটি ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করে।

সকল ধরনের মানসিক চাপ এভাবে এড্রিনোকর্টিক্যাল তন্ত্রকে উত্তেজিত বা সক্রিয় করে তুলে।
ফলে পরবর্তী কোন উক্তত্যকরন,বিরক্তি আমাদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোধের সঞ্চার করে।
পরিবারে,অফিসে বা কারো সামান্য ভুলের কারনে তখন আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি,তোড়পার শুরু করি।

কর্মক্ষেত্রে বস দ্বারা লাঞ্চিত হলে বা সহকর্মী দ্বারা উক্তত্য হয়ে বাসায় ফিরে  আমরা বউয়ের উপর, কাজের মেয়ের উপর বা সন্তানদের উপর সামান্য কারনে কেন রেগে উঠি,উষ্মা প্রকাশ করি তার ও কারণ এড্রিনোকর্টিক্যাল এরজন্য ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া আবেগীয় উত্তেজনা মিইয়ে যায়নি বলে।

তারমানে "রাগ তৈরি হয় রাগের উপর "।

জিলম্যান বলেন "রাগ ক্রমাগত বাড়তে থাকে যখন একের পর এক উক্তত্যকরন ঘটনা ঘটতে থাকে।

এরকম ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রতিটি উক্তত্যকরন চিন্তা এমাগডেলা তাড়িতক্যাটেকোলামাইনের রাগের জোয়ার তৈরিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

প্রতিটি ঢেউ এর পূর্বেকার ঢেউয়ের  "লেজের" উপর চড়াও হয়।

ফলে আবেগীয় ব্রেইনের উত্তেজনা, সজাগতা দুরুত ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। প্রথম ঘটনায় যে প্রতিক্রিয়া পরবর্তী ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হয় এরচেয়ে বহুগুণ।

এভাবে আবেগীয় ব্রেইন ক্রম উত্তপ্ত হতে থাকে বলে আমরা একসময় "আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের " মতন বিস্ফোরিত হই বা ক্রোধে ফেটে পড়ি।

এমনকি এ পর্যায়ে মানুষ "ক্ষমা "করতে ও ভুলে যায়,যেকোন যুক্তির উর্ধ্বে উঠে যায়।

তাদের চিন্তায় কেবল তখন প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা কাজ করে।

প্রতিশোধ নিলে এর পরিনাম কি হবে সে নিয়ে ও অচেতন থাকে।

জিলম্যান বলেন উত্তেজনার এই উচ্চ স্তরে তারা নিজের ক্ষমতা ও অনাক্রম্যতা  নিয়ে এক মোহগ্রস্ত অবস্থায় থাকে,যা তাদেরকে ভয়ংকর সহিংস হতে অনুপ্রাণিত করে।

তখন সব বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আদিম প্রবনতা চেপে বসে।

তখন লিম্বিক তাড়না ক্রমবর্ধমান থাকে ও উর্ধ্বমুখী থাকে। তাই বর্বর আচরণ, নৃশংস আচরণ, নিষ্ঠুর হত্যা কান্ড সহজে ঘটে যায়

Sunday, January 27, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩২ঃ রাগের এনাটমি ও প্রতিকার

(এই বই মেলায় আমার সম্ভাব্য প্রকাশিত   বই  "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাঃসাফল্যের মূল চাবিকাঠি " - থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ)

বেন্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন ঃসব সময়ই রাগের কোন না কোন যুক্তি থাকে,তবে কদাচিৎ সেটি ভালো যুক্তি "

অর্থাৎ রেগে গেলে আমরা সবাই এর জন্য কোন না কোন যুক্তি দিয়ে নিজেকে জাস্টিফাই করতে চাই, তবে কম ক্ষেত্রেই সেটি ভালো বা সঠিক যুক্তি।

আপনি যখন গাড়ি ড্রাইভ করছেন তখন যদি অন্য কোন গাড়ি এমন ভাবে আপনার গাড়ি ক্রস করে যে ভয়াবহ কিছু ঘটে যেতে পারতো তখন আপনি দুভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন-

১) তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে বলে উঠলেন "শুয়োরের বাচ্চা (সান অব বিচ)" এবং মনে উৎকন্ঠার চিন্তা স্রোত বইতে থাকে  "সে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল -এই বাস্টার্ডকে আমি এমনি ছেড়ে দিতে পারি না।" মনে হয় এখনি তার গলা টিপে ধরি।

তখন হয়তো পিছনের আরেক গাড়ির ড্রাইভার হর্ন বাজানো শুরু করছে আপনি তার পথ আটকে রেখেছেন বলে।হয়তো রাগের চোটে ঐ ড্রাইভারকে ও কড়া ভাষায় কিছু বলে ফেললেন।

২)আবার আপনি "যথাযথ " রাগও প্রকাশ করতে পারেন,যদি আপনার চিন্তা প্রনালীতে এরকম চিন্তা কাজ করে যে "হয়তো সে আমাকে
ঠিকমতন দেখতে পায়নি বা এরকম কেয়ারলেস গাড়ি চালানোর কোন যুক্তি সঙ্গত কারন আছে

।যেমন জরুরি কারণে হাসপাতালে যাওয়া -ইত্যাদি। এরকম সংবেদনশীল ও সমব্যথী (এমপ্যাথি) চিন্তা থাকলে  বা উন্মুক্ত মন নিয়ে ভাবলে ব্রেইনে ক্রোধ সঞ্চারের যে " শর্ট সার্কিট " সেটি বাইপাস করা যায়।

বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী মিসেস টাইসি বলেন "রাগ হচ্ছে তেমন আবেগ যেটি আমরা সবচেয়ে কম নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
তার মতে রাগ হচ্ছে নেতিবাচক আবেগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিডাকটিভ বা প্রলুব্ধকর,মনোলোভা।

এটি মনের ভিতর এমন অন্তর্গত সংলাপ তৈরি করে যে আমিই সঠিক, আমার উপর অন্যায় করা হয়েছে। এভাবে রেগে যাওয়ার স্বপক্ষে সবচেয়ে অনুকূল ও গ্রহণযোগ্য যুক্তি মনকে দিয়ে থাকে।

এছাড়া যেখানে অশান্তি অবসাদ আনে সেখানে রাগ হচ্ছে " বল-বৃদ্ধি জনক" -এনার্জাইজিং।

এসব কারনে মনে করা হয়  রাগ "নিয়ন্ত্রণ অযোগ্য " এবং রাগ প্রকাশ এক ধরনের "আবেগ মুক্তি "- তাই এটি মঙ্গলজনক।

কিন্তু আসলেই কি তাই?
( পর্ব-২ঃ আগামীকাল)

Thursday, January 17, 2019

প্রতীকদের আত্মহনন রোধ করবো কিভাবে?

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র প্রতীকের আত্মহত্যা আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা, এর মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিক্ষক নিয়োগ ও এরগুনগত মান এবং উচ্চ শিক্ষায় সামন্ততান্ত্রিক মাফিয়া গোষ্ঠীর দৃশ্য -অদৃশ্য বেড়াজাল নিয়ে নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। আমি গত ১৫ মে ২০১৭-দৈনিক প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয় কলামে -"পরীক্ষায় যারা ফেল করেছো বা করবে " শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফলাফল না পেয়ে যারা হতাশ ও ভগ্নমনোরথ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাদের জন্য। প্রতীকের এই হ্রদয়বিধারক আত্মহননের পর বিষয়টির আরো গভীরে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি।
শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান "র্্যাংকিং বা গ্রেড" পদ্ধতির এবং শুধু একাডেমিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কৃতিত্ব মাপার  প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে। অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ, চাকরিদাতা -সবার কাছে মেধা ও সফলতার একমাত্র মানদণ্ড হয়ে দাড়িয়েছে এই তথাকথিত আই.কিউ বা একাডেমিক বুদ্ধিমত্তা।
কিন্তু আসলেই কি আমাদের রয়েছে কেবল একটি একক ও অনন্য বুদ্ধিমত্তা,নাকি আমরা "বহুমুখী বুদ্ধিমত্তা" ও ধারার(স্পেক্ট্রাম) অধিকারী?
এ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ উচ্চ শিক্ষার বিদ্যায়তনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া, শিক্ষকদের গুনগত মান ও নৈতিক মান নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন। এর কারন এর সঙ্গে যেমন শিক্ষার গুনগত মান নির্ভর করে তেমনি প্রতীকদের মতন মেধাবী ছেলেমেয়েদের প্রকৃত মান যাছাই হচ্ছে কিনা তাও ও নির্ভর করে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ৯০এর দশকের পর থেকে সর্বত্র, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষায়লয়ে শিক্ষক নিয়োগ কি প্রক্রিয়ায় হয় তা এখন সবার কাছেই " ওপেন সিক্রেট "।ঐসব " বিশেষ বিবেচনা " ছাড়া ও মেধার যে স্কোর সে গুলো সুকৌশলে "পেয়ে দিতে " বা কারো কাছ থেকে "কেড়ে নিতে " ঐ সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী একাট্টা হয়ে কাজ করে বলে অভিযোগ করা হয়।প্রতীকের বেলায় ও তেমন আপত্তি উত্থাপন করছেন তাদের আত্মীয়রা।উচ্চ শিক্ষায় যেখানে সব বিষয়ে "প্রশ্ন " করার,বিতর্ক করার অবাধ অধিকার থাকার কথা,মেধা -মনন বিকাশে উন্মুক্ত চিন্তা ধারাকে স্বাগত জানানোর কথা, জ্ঞান- মেধাকে যেখানে "ক্ষমতাতিয়ত" করার কথা,সেখানে এখন চলছে অন্ধ আনুগত্য, দলীয় বাছাইকরন বা ছাটাইকরন,গোষ্ঠীগত এমনকি অন্চলভিত্তিক পছন্দকরনের হিড়িক। আমরা কি অন্তত শিক্ষা,চিকিৎসা, বিচারালয় গুলোকে এই "কন্টক,কালিমা" থেকে মুক্ত করতে পারি না?

এতো গেলো মেধা মূল্যায়নে অসঙ্গতি ও দুর্নীতির কথা। কিন্তু যদি সঠিক ভাবে ও প্রচলিত পন্থায় মেধা যাছাই করা হয় সেই "মাপ-পদ্ধতি" ও কতটুকু গ্রহনযোগ্য এবং কাল-উপযোগী?১ম বিশ্ব যুদ্ধের পর স্টানফোর্ড-বিনেটের আইকিউ টেস্ট আবিষ্কার এর পর আমরা আইকিউ দিয়ে মেধা মাপার যুগে প্রবেশ করি।তবে বর্তমানে জানা গেছে আই কিউ জীবন সফলতায় বড়জোর ২০% ভূমিকা রাখে। বাকিটা নির্ভর করে অন্যান্য উপাদান বিশেষ করে "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা ইমোশনাল ইনটেলিজেন্স" এর উপর। সংক্ষেপে যাকে "ই কিউ" বলা যায়।হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির কৃতি অধ্যাপক হাওয়ার্ড গার্ডনার সর্বপ্রথম এই প্রথাগত আই কিউ এর ধারনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন এটি বুদ্ধিমত্তা মাপার একটি সংকীর্ণ ধারণা। এটি ব্যক্তির দক্ষতা ও সক্ষমতার যে  বিশাল ব্যাপ্তি রয়েছে সেটিকে অস্বীকার করে। গার্ডনার বলেন আইকিউ ১৬০ যাদের তাদের অনেকেই আই কিউ ১০০ যাদের তাদের অধীনে কাজ করে। বিলগেটস নিজে বলেছেন তার চেয়ে ভাল রেজাল্ট করা অনেক বন্ধু তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।
হার্ভার্ড স্টুডেন্টদের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ আই কিউ যাদের, মধ্য বয়সে পৌঁছে তাদের বেতনের মান,উৎপাদনশীলতা ও কর্মস্থলে পজিশন যারা মার্ক কম পেয়েছে তাদের থেকে তেমন উচ্চে ছিল না। বস্তির ৪৫০ বালকের উপর অন্য এক গবেষণায় দেখা যায়, যাদের আই কিউ ৮০ এর কাছাকাছি পরবর্তীতে তাদের মধ্যে বেকার ছিল ৭%। অন্যদিকে যাদের আই কিউ ১০০ এর উপরে ছিল তাদের মধ্যে ও বেকার ছিল ৭%(কোন পার্থক্য নাই) ।

উচ্চতর আই কিউ বা একাডেমিক বুদ্ধিমত্তা অধিক উন্নতি,সম্মান বা সুখী হওয়ার গ্যারান্টি না দিলে ও আমরা অভিভাবকরা,পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,শিক্ষার্থীরা সবাই সেই সোনার হরিনের পিছনে ঃছুটছি -জিপিএ -৫ বা উন্নত গ্রেড এর পিছনে ।ভাল স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া না পাওয়া, সেখানে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া না পাওয়াকে এজন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এতো গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকে, কারো কারো  জন্য যা "বাচা-মরা" বা " মানসম্মানের/ইজ্জতের  " প্রশ্ন হয়ে দাড়ায়।তখন অনেকেই সেই স্বপ্ন ভঙ্গ, আশা ভঙ্গের মনোবেদনায় মুছড়ে পড়ে।কেউবা হতাশায়,আত্মগ্লানিতে বা অভিমানে আত্মহত্যার মতন চরম পথ বেছে নেন।

কিন্তু আমরা ভুলে যাই আইকিউ নয়,ই কিউ বা  "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা" জীবন সফলতার মূল চাবি কাঠি। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে মানুষের বিশেষ চরিত্র বা একসেট গুনের সমস্টি।বোস্টন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ক্যারেন আর্নল্ড বলেন "দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানে কিভাবে সিস্টেমের ভিতরে থেকেও
সফলতা অর্জন করা যায়"। একই রকম উক্তি করেন সেভয়েই -" তারা আরো জানে কোন প্রতিষ্ঠান /শিক্ষালয়ে "না- বলা" (আনস্পোকেন)  কিছু রীতি নিয়ম রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে তাদের খাপ-খাইয়ে চলতে হবে। এই না বলা রীতি নিয়ম গুলো হচ্ছে ঐ প্রতিষ্ঠানের "আভ্যন্তরীণ রাজনীতি "।
এই যে সিস্টেমের মধ্য থেকে ও সফল হওয়া বা প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীন রাজনীতি বোঝা -বর্তমান কুট কৌশলের যুগে এগুলো ও বুদ্ধিমত্তার অংশ।আমরা খুশী হতাম যদি সিস্টেমে গলদ না থাকতো, দুর্নীতি না থাকতো এবং কোন প্রতিষ্ঠানে বা শিক্ষালয়ে " গুপ্ত গোষ্ঠী গত আভ্যন্তরীন পলিটিক্স " না থাকতো। কিন্তু বিভাজিত এ সমাজ, কলূসিত এই সমাজ যতদিন বিশুদ্ধ না হচ্ছে, ততদিন আমাদের আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে এই বৈরী, অসম,নীতিহীন সিস্টেমের সঙ্গেই পান্জা লড়ে টিকে থাকতে হবে।

গার্ডনার তার প্রভাবশালী "ফ্রেইমস অব মাইন্ড " বইতে একক বুদ্ধিমত্তার পরিবর্তে ৭টি  ধারা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।পরে উনি ও অন্যান্যরা এটি ২০ ধরনের হতে পারে বলে দাবি করেন। গার্ডনার বলেন "বুদ্ধিমত্তা কোন ম্যাজিক্যাল সংখ্যায়(৭ সংখ্যা) আবদ্ধ থাকার বিষয় নয়।
এসব বহুমুখী বুদ্ধিমত্তার অন্যতম হচ্ছে ঃ১।
আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা
(ইন্টার পারসনাল ইনটেলিজেন্স)-এটি হচ্ছে অন্যকে বুঝতে পারার সক্ষমতা।অন্যদের ম্যুড,মেজাজ, মোটিভেশন বোঝা ও সে অনুযায়ী সাড়া দিতে পারা বা প্রয়োজনে তা " নাকোচ" করে দিতে পারা;গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও কমন সেন্স;নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা;সম্পর্ক লালনপালন করতে জানা ও বন্ধুত্ব ধরে রাখতে পারা;সম্পর্কজনিত দ্বন্দ্ব নিরসন করার সক্ষমতা;ইত্যাদি। ২। সামাজিক বুদ্ধিমত্তা(সোশাল ইনটেলিজেন্স)- জীবন সফলতার জন্য" নিখুঁত সামাজিক মানচিত্র " ধারণ ও অনুধাবন গুরুত্বপূর্ন। এগুলো সে দক্ষতা যা আপনাকে সমাজে "তারকা" বানিয়ে দেবে।এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক  প্রায়োগিক জন-দক্ষতা ( প্রাকটিক্যাল পাবলিক স্কিল)।মাশরাফি, মমতাজ,হিরো আলম তেমন কিছু সামাজিক "তারকা "। সামাজিক বুদ্ধিমত্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্যকে বোঝার ক্ষমতা এবং মানবীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিজ্ঞতার সহিত আচরণ করতে পারা।৩।ইন্ট্রা-পারসোনাল ইনটেলিজেন্স-এটি হচ্ছে " সম্বন্বয়ধর্মী দক্ষতা ",নিজের সম্বন্ধে সঠিক ধারণা রাখা। একে " আত্মজ্ঞানের " চাবিকাঠি ও বলা হয়।নিজের প্রকৃত আবেগ, আচরণের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সক্ষমতা।
রবার্ট স্টেনবার্গ এক গবেষণায় জনসাধারণের কাছে প্রশ্ন রাখেন তারা কাদেরকে "বুদ্ধিমান" মনে করেন। সে তালিকায় সবচেয়ে বেশী উল্লেখ ছিল -"যাদের বাস্তবভিত্তিক জন-দক্ষতা"রয়েছে। এই বাস্তবভিত্তিক জন দক্ষতা ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার বহু মুখী ধারার বিকাশ ঘটাতে আমেরিকা "প্রজেক্ট  স্পেক্ট্রাম " নামটা একটি কারিকুলাম তৈরি করা হয়েছে। এই প্রজেক্ট এর মূল বক্তব্য হচ্ছে আমাদের ট্যালেন্ট এর স্পেক্ট্রাম বাড়াতে হবে। আমরা এমন শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করেছি যেখানে কেউ খুব সফল হলে বড়জোর কলেজ /ভার্সিটির প্রফেসর হতে পারবে। আমাদের উচিত হবে বর্তমানের "র্্যাংকিং বা গ্রেড " সিস্টেমের বদল করে শিক্ষার্থীদের নিজেদের সক্ষমতা,গুনাবলীকে শনাক্ত সহায়তা করে ও সেগুলোর যত্ন নেয় তেমন পদ্ধতির প্রবর্তন করা।
সফলতার রয়েছে শত শত পথ ও পন্থা এবং আমাদের প্রত্যেকের রয়েছে অনন্য ও অসীম সম্ভাবনা। প্রত্যেকেই তার নিজের পথ, প্রতিভা ও অভিনব কৌশলে নিজকে উদ্ভাসিত করতে পারেন ও জীবনে সফল হতে পারেন। এর জন্য ভাল ফল করতেই হবে, বিশেষ পেশা বা চাকরি পেতেই হবে, নির্দিষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতেই হবে  এমন বাধ্যবাধকতা নেই। এই বহুমুখী বুদ্ধিমত্তার মূলে রয়েছে আমাদের মানসিক গঠন  বা নিউরাল স্ট্রাকচার।এই স্ট্রাকচার নমনীয়, এগুলো  স্বভাব ও সাড়া প্রদানের এক সেট অবস্থান। প্রতিটি পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এগুলো শেখানো যায়,এর পরিচর্যা নেওয়া যায়। আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার শত ফুল ফুটতে দিলে,জন দক্ষতা, সমাজ দক্ষতা, আবেগীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারলে শুধু মাত্র পরীক্ষায় ভাল ফল না করতে পারার হতাশা, গ্লানি, অভিমান শিক্ষার্থীদের অতলে নিমজ্জিত করে দিতে পারবে না।আমরা তেমন শিক্ষা পদ্ধতি, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও জীবন পদ্ধতির বাস্তবায়ন চাই।

Saturday, January 12, 2019

রোগ কাহিনী -৫১ঃ ৪বছর বয়সে সে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়

কাহিনী সংক্ষেপঃ
ইশরাত জাহান,বয়স বর্তমানে ১৫। তার মা-বাবা থেকে জানা গেল যখন তার বয়স মাত্র ৪ বছর তখনি তার মধ্যে রোগ দেখা দেয়।তার তখন সারা রাত ঘুম হতো না,এদিক সেদিক দৌড়ে চলে যেতো, চিৎকার করে কাদতো,মাটিতে গড়াগড়ি করতো, ভয় পেতো,বলতো ভাল লাগে না।
এরকম দেড়-দুই বছর চলে। সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে সুস্থ হয়ে উঠে। এরপর ৬-৭ বছরের সময় আবার রোগ দেখা দেয়।এবার ও দৌড়ায়,কিছু খায় না,কেবল কাদে,মাথায় পানি দিতে বলে,২৪ ঘন্টা ঘুমাতো না।এটিও এক-দেড় বছর চলে।এবারও সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে ভাল হয়।
এবার ৩য় বারের মতন সে আক্রান্ত হয়।তবে এবার যোগ হয় তার মনে হয় অন্য মানুষ তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে,তার সমালোচনা করে। সঙ্গে ডিপ্রেশন এর সব সিম্পটম। বলে দুনিয়ার কিছু ভাল লাগে না,মাকে বলে আমি কি করমু? বলে অশান্তি, কষ্ট লাগে, দুনিয়ায়তে কেবল কষ্ট আর কষ্ট, দৌড়াতে মন চায়,তবে ছোট কালের মতন দৌড়ায় না,ছটফট করে, ঘুম হয় না,মরতে চায়,বলে এতো কষ্ট মরলেই ভাল,,সারাদিন কাদে,চুল টানে, বুকটা অশান্তিতে ভরা,একদিন হুইলের গুড়া খেয়ে ফেলে। বর্তমানে অলস, নিজের যত্ন নেয় না,সারাদিন ঠোঁট কামড়ায়।
মা জানায় তার উচ্চ আকাঙ্খা, অনেক পড়তে চায়,ডাক্তার হতে চায়।কিন্তু পড়তে পারছে না বলে তার আফসোস।
পারিবারিক ইতিহাস ঃতার মা নিজেই ওসিডি রোগে ভুগছেন ;খালা ডিপ্রেশন এর রোগী ;দাদী  তাদের ভাষায় জ্বীনভুতে ভুগছিলেন।
এই কেইস থেকে যা শিখলাম ঃ
১।আমাদের ধারনা বিষন্নতা /ডিপ্রেশন শিশুদের মধ্যে হয় না।তবে শিশুদের মধ্যে ও ডিপ্রেশন হয়।কিন্তু এতো অল্প বয়সে (৪ বছর)  ডিপ্রেশনের রোগী আমি নিজে প্রথম দেখলাম।
২। ডিপ্রেশন সহ বড় ধরনের মানসিক রোগের অন্যতম কারন জেনেটিক (বংশের প্রভাব) । তার পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস প্রকট। এজন্যই এতো অল্প বয়সে তার ডিপ্রেশন হয়।
৩। কয়েক বার সে আক্রান্ত হয়, অতি অল্প বয়সে এরোগ হয়,তাই তার ভবিষ্যত পরিনতি তত উজ্জ্বল নয়।
৪। তবে আশার কথা তার মা বাবা প্রথম থেকেই তাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দিয়ে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন (জ্বীন ভুতের চিকিৎসা করাননি)। তাই আশা করা যায় ভবিষ্যতেও তারা ওর চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন।তেমন হলে ওর ভবিষ্যত অবশ্যই উজ্জ্বল

Monday, January 7, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৩১ঃগনেশ যদি উল্টে যেতো -প্রানেশের চেহারা কেমন হতো?


যদি  নির্বাচনে অন্য দল জিতে সরকার গঠন করতে পারতো, তাহলে কিছু মুখোশধারী  লোকের অবস্থান, আচরণ, কথা বার্তা কেমন হতো?

প্রিয় সাংবাদিক   পান্না ভাই নির্বাচনের পরপরই এরকম একটি স্টাটাস দিয়েছিলেন।তিনি তার স্বগোত্র কিছু সাংবাদিক ও টকশো জীবিদের কি করুন হাল হতে পারতো, তার একটি রেখাচিত্র অঙ্কনের চেষ্টা করেছিলেন। 

আমি আমার গোত্র কুলের কারো কারো কি ধরনের চেহারা হতো তা অনুমান করার চেষ্টা করছি।

তবে প্রথমেই বলে রাখি সব দলেই বেশির ভাগ কর্মী সমর্থকরা নিবেদিত ও নিষ্ঠাবান। অতি স্বল্প সংখ্যক থাকেন যারা দলের জার্সি পড়ে থাকেন,বিভিন্ন কমিটিতেও থাকেন এবং দল ক্ষমতায় থাকলে হালুয়া রুটির বেশির ভাগ ভক্ষণ করেন।কেননা অন্য নিষ্ঠাবান কর্মীদের চেয়ে এরা বেশি চতুর, নিজকে বেশী দৃশ্যমান রাখে। দল ক্ষমতায় না থাকলেও এরা দলের জার্সি গায়ে রাখে ঠিকই, কিন্তু আচরণ স্বভাবে রূপ পরিবর্তন করে, যাতে তখনও সরকারি আনুকূল্য, সুবিধা ষোল আনা পাওয়া যায়।
এরা দলের জার্সি বদল না করে ও যখন যে দল ক্ষমতায় বা ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকে তার তাবেদারিতে ওস্তাদ, যাতে সর্বাবস্হায় নিজের কায়েমি স্বার্থ উদ্ধার হয়।

শুধু এরকম গুটিকয়েক ধান্দাবাজের চেহারা কেমন হতো সেটি জানার কৌতুহল।

চাঁদের একটি অংশ মাত্র আমরা আজীবন দেখে আসছি।
কোনদিনই এর অপর অংশ পৃথিবী থেকে দেখা যাবে না।তাই সব অনুসন্ধানী মন পরম কৌতুহলভরে আশায় থাকে চাঁদের সে অদেখা, অজানা দিকটি জানা ও দেখার।

সুখবর হচ্ছে কিছু দিন আগে এই প্রথমবারের মতন চীনের একটি রোবট চাঁদের সেই কখনো না দেখা অংশে সফল ভাবে অবতরন করতে সক্ষম হয়েছে।
মানব জাতি প্রথমবারের মতন সেই "চির ঢেকে" রাখা মুখোশ খুলতে পেরেছে।

আমাদের চারপাশে এমন কিছু ধুরন্ধর, সুবিধাবাদী,সুযোগ সন্ধানী মুখোশ পরা লোক রয়েছে যে আমরা কখন মুখোশের আড়ালে তাদের যে আসল চেহারা তা দেখতে পাই না(চাঁদের অপর পিঠের মতন)।

ঐরকম মুখোশধারীদের প্রকৃত চেহারা তখন কেমন দেখাতো যদি অন্য কোন দল  সরকার গঠন করতে পারতো?

দুটি গ্রুপের দুই অবস্থা ঃ

১।নিজেদের আখের ঘোচাতে,সুবিধা নিতে যারা বর্তমান  সরকারের গুনকীর্তনে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে -এরকম "আলাল-দুলাল" জাতীয় মুখোশধারী কম ঈমানের লোকগুলোর অবস্থান, আচরণ যেমন হতো, তা রীতিমতো উপভোগ করার মতন হতো নিঃসন্দেহে
(ভাগ্যিস  আলাল-দুলালদের সেই বোল পাল্টানো ডিগবাজির চেহারা আমাদের দেখতে হলো না)

২।যারা তলে তলে ভিন্ন গ্রুপের কিন্তু সাহসের অভাবে বা সুবিধা নিতে এ সরকারের সঙ্গে তালমিলেয়ে চলছে -তাদের আসল চেহারা জাতিকে দেখতে না হওয়াতে আমরা বেচে গেছি।

এতোদিন যারা ঘাপটি মেরে বসেছিল,সুবোধ বালকের মতন হাওয়া বুঝে পাল তুলেছে, যতটুকু সুযোগ সুবিধা নিতে পারার নিয়েছে, ক্ষমতা বদল হলে সেই মুখোশধারীদের প্রকৃত চন্ডাল মূর্তি জাতি দেখতে পেতো।
এই পক্ষের ডাক্তার নেতা  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অঘোষিত ভাবে দখল করে নিতো,সব বদলি,প্রমোশনের জন্য চিরকুটে স্লিপ যেতো,আমাদের সাবজেকট থেকে দেশের দক্ষিণের প্রবীন(?)নেতা,তার পাশের জেলার   নব্য  উঠতি নেতা, দেশের কেন্দ্রের   এক বিপ্লবী পুরুষ ও একজন বিপ্লবী নারী (অতি আত্ম অহঙ্কারী)  সহ আরো ও কিছু সংখ্যক  তেমন লোকদের মসনদ দখলের ও সকল রাস্ট্রূীয় সুবিধা এককভাবে কুক্ষিগত করার যে মহোৎসব চলতো, ভাগ্যিস জাতিকে তাও দেখতে হয়নি ।

তাহলে কি চাঁদের এক পিঠ যেমন আমরা কোনদিন দেখবো না,এদের মুখোশের আড়ালে যে খবিশ মুখ তাও কি আমরা দেখতে পাবো না?

যদি আপনি নীতিবান হন,সাহসী হন,দল-কানা না হন তাহলে এসব আলাল-বেলালের সময়মত হেলে পড়া  চরিত্র  ধরতে না পারার কথা না।আমাদের চারপাশেই ঘাপটি মেরে বসে আছে এসব মুখোশধারী।এরা আমাদের খুবই চেনা মুখ, তবুও কতো অজানা।