পর্ব-২ঃ
(আসছে বই মেলায় আমার প্রকাশিতব্য বই "আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাঃসাফল্যের মূল চাবিকাঠি "-থেকে নির্বাচিত কিছু অংশ)
ইউনিভার্সিটি অব আলবামার মনোবিজ্ঞানী জিলম্যান বলেন " রাগের পিছনে সার্বজনীন যে উসকে দেওয়ার কারণ সেটি হচ্ছে নিজেকে বিপদগ্রস্ত (এন্ডেঞ্জার্ড) মনে করা। "
এই বিপদগ্রস্ততা বোধ শুধু শারীরিক নয় বরং বেশির ভাগই হয়ে থাকে
"আত্মসম্মান বোধ বা মর্যাদার উপর " হুমকি বা তেমনটি প্রতীয়মান হওয়া ;
অন্যায়ভাবে বা রূড়তার সহিত আচরণ করা হয়েছে মনে করা ;
অপমান, হেয় বা ছোট করা হয়েছে ভাবা;
কোন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবতবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়ে হতাশ অনুভব করা-ইত্যাদি।
এরকম ধারণাগুলো ব্রেইনের "লিম্বিক তন্ত্রের " যে আবেগীয় জলোচ্ছ্বাস সেটি উসকে দেওয়ার কারণ হিসেবে কাজ করে।
ফলে ব্রেইনে দু’ধরনের প্রভাব পড়ে।
১। সেই আবেগীয় জলোচ্ছ্বাস ব্রেইনের এক অংশে "ক্যাটেকোলামাইন" নিঃসরণ ঘটায় যা বিপদ মোকাবিলায় "হয় যুদ্ধ করো,না হয় পালিয়ে যাও" ((ফাইট অর ফ্লাইট) সাড়া প্রদান করে।
এটি একটি ত্বড়িত(দ্রুত) ক্রিয়া যা তৎক্ষনাৎ ঘটে এবং সারা শরীরে শক্তি মবিলাইজ করে,একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য।
শক্তির এই বন্য প্রবাহ কয়েক মিনিট স্হায়ী হয় মাত্র, যে সময়ে এটি শরীর মনকে একটি "ভালো যুদ্ধ বা দুরুত পালানোর " উপযুক্ত করে তোলে।
এরই মধ্যে "এমাগডেলা তাড়িত" আরেকটি মৃদু তরঙ্গ তৈরি হয়।
এটি তৈরি হয় "এড্রেনো-কর্টিক্যাল" স্নায়ু তন্ত্র দ্বারা।।এটি ক্যাটেকোলামাইনের চেয়ে দীর্ঘ স্হায়ী -কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে।
ফলে ব্রেইনের উত্তেজনা, সজাগতা দীর্ঘস্হায়ী হয় ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এর উপর সওয়ার হওয়ার সুযোগ ঘটে । তাই পরবর্তী রাগটি আরো দ্রত ঘটে ও আরো তীব্র হয়।
কেন একটি রাগের ঘটনার পরে অন্য একটি অতি সাধারণ রাগের ঘটনায় ও প্রচন্ড ক্রোধ প্রকাশ করি-এই ব্রেইন মেকানিজম সেটি ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করে।
সকল ধরনের মানসিক চাপ এভাবে এড্রিনোকর্টিক্যাল তন্ত্রকে উত্তেজিত বা সক্রিয় করে তুলে।
ফলে পরবর্তী কোন উক্তত্যকরন,বিরক্তি আমাদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোধের সঞ্চার করে।
পরিবারে,অফিসে বা কারো সামান্য ভুলের কারনে তখন আমরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠি,তোড়পার শুরু করি।
কর্মক্ষেত্রে বস দ্বারা লাঞ্চিত হলে বা সহকর্মী দ্বারা উক্তত্য হয়ে বাসায় ফিরে আমরা বউয়ের উপর, কাজের মেয়ের উপর বা সন্তানদের উপর সামান্য কারনে কেন রেগে উঠি,উষ্মা প্রকাশ করি তার ও কারণ এড্রিনোকর্টিক্যাল এরজন্য ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া আবেগীয় উত্তেজনা মিইয়ে যায়নি বলে।
তারমানে "রাগ তৈরি হয় রাগের উপর "।
জিলম্যান বলেন "রাগ ক্রমাগত বাড়তে থাকে যখন একের পর এক উক্তত্যকরন ঘটনা ঘটতে থাকে।
এরকম ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রতিটি উক্তত্যকরন চিন্তা এমাগডেলা তাড়িতক্যাটেকোলামাইনের রাগের জোয়ার তৈরিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রতিটি ঢেউ এর পূর্বেকার ঢেউয়ের "লেজের" উপর চড়াও হয়।
ফলে আবেগীয় ব্রেইনের উত্তেজনা, সজাগতা দুরুত ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে। প্রথম ঘটনায় যে প্রতিক্রিয়া পরবর্তী ঘটনায় প্রতিক্রিয়া হয় এরচেয়ে বহুগুণ।
এভাবে আবেগীয় ব্রেইন ক্রম উত্তপ্ত হতে থাকে বলে আমরা একসময় "আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের " মতন বিস্ফোরিত হই বা ক্রোধে ফেটে পড়ি।
এমনকি এ পর্যায়ে মানুষ "ক্ষমা "করতে ও ভুলে যায়,যেকোন যুক্তির উর্ধ্বে উঠে যায়।
তাদের চিন্তায় কেবল তখন প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা কাজ করে।
প্রতিশোধ নিলে এর পরিনাম কি হবে সে নিয়ে ও অচেতন থাকে।
জিলম্যান বলেন উত্তেজনার এই উচ্চ স্তরে তারা নিজের ক্ষমতা ও অনাক্রম্যতা নিয়ে এক মোহগ্রস্ত অবস্থায় থাকে,যা তাদেরকে ভয়ংকর সহিংস হতে অনুপ্রাণিত করে।
তখন সব বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আদিম প্রবনতা চেপে বসে।
তখন লিম্বিক তাড়না ক্রমবর্ধমান থাকে ও উর্ধ্বমুখী থাকে। তাই বর্বর আচরণ, নৃশংস আচরণ, নিষ্ঠুর হত্যা কান্ড সহজে ঘটে যায়
No comments:
Post a Comment