Friday, March 29, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪৩ঃএরাই বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশ

বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর আমাদের জাতিগত কিছু প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য যেমন দেখতে পেয়েছি,

তেমনি কিছু অতি সুশীল, অতি আতেলদের কিছু  উৎকট,উন্নাসিক বৈশিষ্ট্য ও প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

১। এদেশের কিছু সুশীলদের বেশ কিছু আপ্তবাক্য রয়েছে যেগুলো আবার বেশ জনপ্রিয় ও।

ক)পথচারীদের আইন না মানা দুর্ঘটনার অন্যতম কারন -মুর্খ বাঙ্গালী মরবে না কেন?

খ)ফুটওভার ব্রীজ দেওয়া আছে, অলস বাঙালী সেটি ব্যবহার করবে না, দৌড়ে রাস্তা পার হবে

-বাসের চাকার নীচে তোরা মারা পড়বি না তো, আমাদের মতন আইন মানা,সুনাগরিক মারা পড়বে?

কখনো দেখেছিস আমরা গাড়ির চাপায় পড়েছি?
যদি বলা হয় উন্নত দেশে রাস্তায় চলাচলে পথচারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়,
ফুটওভার ব্রিজ থাকে কদাচিত,
নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে একযোগে পথচারী স্বচ্ছন্দে রাস্তা পার হয়-
তখন তারা বলে এটি বাংলাদেশ, উন্নত দশ নয়

।বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসুস্থরা কেমনে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবে? 
আরে ভাই তারা গাড়ীতে করে যাবে, পথে হাটবে কেন?আর গাড়ি না থাকলে ঘরে বসে থাকবে বাইরে বের হওয়ার এতো শখ কেন?

গ)ছোটলোক হকারদের জন্য শান্তি মতন রাস্তা দিয়ে ও হাটতে পারি না।

আমরা সবদিক থেকে এতো নিশ্চিত সুখী নিরাপদ ও আরামে জীবন যাপন করছি, শুধু এই নচ্চারদের ফুটপাত দখলের কারনে জীবন তেনা তেনা হয়ে গেল।

নাগরিক জীবনে একমাত্র ও প্রধান সমস্যা হচ্ছে হেলেদুলে ফুটপাতে হাটতে না পারা।

হাটতে গেলেই ঐসব নোংরা, অপরিচ্ছন্ন গেয়ো লোকগুলোর সঙ্গে ধাক্কা লাগে। দুরুত বাসায় গিয়ে স্নান করে আবার পবিত্র হতে হয়।

পুলিশগুলো সব ঘুষখোর, একদিন পিটায় তো পরদিন খবর রাখে না।

হকারদের জন্য রাস্তায় দুর্ঘটনার হার জ্যামিতিক হারে বাড়ছে । ওখানে যে ফকির মিশকিনরা কেনাকাটা করে, এরা রাজধানীর আভিজাত্য নষ্ট করছে।

কমদামে জিনিস কিনবি তো গ্রামে যা। শহরে থাকবি ফুটানি দেখাতে, তাহলে বসুন্ধরা যা কেনাকাটা করতে

ঘ)আগুন লেগেছে, বিল্ডিং ধ্বসে পড়েছে , এখন এসব উদ্ধার করবে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।

এরা কি আগে দক্ষতার সহিত এগুলো করে দেখায়নি?

তোমরা আমজনতা বেয়াক্কেলের মতন হা করে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে কি কচুটা করেছো?

মাঝখানে তোমাদের জটলার কারনে আমাদের চৌকস বাহিনী গুলো এতো এতো আধুনিক সরঞ্জাম গুলো ব্যবহার করতে পারলো না।

পুলিশ গুলো তাদের পাছায় আগুন লাগিয়ে দিলো না কেন?

বেতমিজ পাবলিককে এভাবে রাস্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো উচিত ছিল।

ঙ)আমরা ও তোঐ জায়গার পাশ দিয়ে গেলাম। এক মুহূর্ত ও দাড়ায়নি,নিজের কাজে চলে গেছি।

তোমাদের মতন আমরা বেকার ও না,দায়িত্বহীনও না।
আমরা নিজ নিজ অফিসে গিয়ে গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ সমাজের কাজ করেছি,
সন্তানদের স্কুল থেকে আনতে গেছি,
বাজার করতে গেছি,
সেমিনারে এটেন্ড করেছি -
ইত্যাদি নিজ নিজ কাজ করেছি।

আর তোমরা হা-ভাতে লোকেরা কাজকাম নেই, ঘন্টার পর ঘন্টা ওখানে দাঁড়িয়ে হাসি তামাশা করলে।
এতো র্হদয় বিধারক ঘটনায় কোথায় শোকে,কান্নায় আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করবে, না,মনের সুখে ঘটনার ছবি উঠাও,সেলফি তোলো।

ছিঃতোমাদের ঘৃন্য মানসিকতার। এরকম সময়ে কেউ ছবি উঠাতে পারে?

তোমরা কি সাংবাদিক যে ঘটনার রেকর্ড রাখতে ছবি উঠাবে?

তোমাদের না আছে বিবেক,না আছে কাণ্ডজ্ঞান, না আছে সিভিক সেন্স।

দেখো না আমরা ঐখানে কি ঘটছে, মানুষ মরছে না পুড়ছে সেগুলো নিয়ে ভেবে নিজের কাজকর্ম বাদ দেইনি।

মরা,পোড়া দেখা বা সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য  নির্দিষ্ট সংস্থা আছে। এগুলো তাদের কাজ।

তোমরা বরং এদের কাজে বাধা দিয়ে গুরুতর অপরাধ করেছো।

কবে শিখবে সিভিক সেন্স, নিজ কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা অর্জন করবে ?
দরদ দেখিয়ে থেকে গেলে?তাহলে মজা করে ছবি উঠালে কেন? লজ্জা লাগলো না?

চ) লসএন্জেল এর মতন রূপসী ঢাকার সৌন্দর্য, আভিজাত্য ও গরিমা নষ্ট হচ্ছে কিছু গ্রাম থেকে উঠে আসা হতদরিদ্রের বস্তিগুলো।

বিদেশীদের কাছে এদের জন্য মুখ দেখাতে পারি না।
আর সকল অপরাধের আখড়া হচ্ছে এগুলো।

আমরা ঘুষ খেতে পারি,ব্যাংক, অফিস লুটপাট করতে পারি, জঙ্গি সন্ত্রাসী লালন করতে পারি। তবে সেগুলোর একটা ক্লাস আছে।

নোংরা বস্তির ছিটকে চোর ছ্যাচর লালন করি না। সরকারের উচিত বুলডোজার দিয়ে বস্তিগুলো গুড়িয়ে দেওয়া। অথচ সরকার আমাদের বড় বড় বিল্ডিং
ভাঙ্গছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করছে।

আমরা না থাকলে ঐ ছোটলোকদের নিয়ে রাস্ট্র চালাতে পারবে? দুদিনে গনেশ উল্টে ফেলবো না।

২।এর বিপরীত চিত্র ও দেখেছি। যা ছিল   আশার আলো।

দেশের সকল দুর্যোগে যেসব অকুতোভয়, আত্মত্যাগী মানুষেরা সবসময় এগিয়ে আসে,

নিজের, পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে জীবন বাজি রেখে উদ্ধার কাজে ঝাপিয়ে পড়ে,
তেমন হাজার হাজার লোক সেখানে ভীড় করেছিল।তারা তামাশা করতে সেখানে ভীড় করেনি।

সুযোগ থাকলে তারা রানাপ্লাজার মতনই দুঃসাহসিক কাজের উদাহরণ রাখতো।তারপর ও দুএকজন সেরকম দৃষ্টান্ত রেখেছে। সবাই ভদ্রলোকদের মতন যার যার পথ ধরলে নাইমের মতন শিশু আমরা পেতাম কি?

আমাদের গর্বের উৎস  ফায়ার সার্ভিস ওসিভিল ডিফেন্ডের যোদ্ধারা। যে দক্ষতা, নিষ্ঠা,দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের নজির রেখেছে জাতি চিরদিন সশ্রদ্ধ চিত্তে তা মনে রাখবে।
এরাই বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশ

Monday, March 25, 2019

সাইকোলজিক্যাল টিপস -৫৭ঃফাদে আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ কি রূপ নেয়, কেন এগুলো চেপে রাখি?

আবেগীয় মালপত্র নিছক স্মৃতি মাত্র নয়।এগুলো হচ্ছে নেতিবাচক শক্তি, যা আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশের অলিগলির গোপন ফাঁদে আটকে পড়েছে।

মনে রাখবেন বিশ্বের সবকিছুই শক্তি। বস্তু শক্তি, চিন্তা শক্তি, আবেগ শক্তি আর শরীর তো শক্তিই।আমাদের দেহ হচ্ছে এক সেট শক্তির জটিল সমাবেশ।

ঐ আটকে পড়া নেতিবাচক শক্তি আমাদের দেহের স্বাভাবিক শক্তি ও কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে ব্যথা উৎপন্ন হয়,দেহে নানা সমস্যা ও রোগের সৃষ্টি হয়।

আমরা অনেকেই জীবনের অপ্রিয়, কষ্টদায়ক, পীড়াদায়ক, বিব্রতকর, অপমানকর অভিজ্ঞতা চেপে রাখি।

এ-সব পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিশে থাকে রাগ,ক্রোধ, তিক্ততা, বিরক্তি, ক্ষুব্ধতা,হতাশা, ব্যর্থতা, ভয় ভীতি, দুঃখ কষ্ট, শোক, লজ্জা অপমান, অযোগ্যতা,দুর্বলতা প্রভৃতি অনুভূতি।

কেন তিক্ত অভিজ্ঞতা চেপে রাখি?

আমরা এসব চেপে যেতে চাই, কেননা আমরা ঐরকম তীব্র নেতিবাচক আবেগ অনুভূতি থেকে মুক্ত থাকতে চাই।

কিন্তু আমরা বুঝতে পারি না, ঐ পীড়াদায়ক আবেগ গভীর ভাবে অনুভব না করে, কোনভাবে মনের গহীনে ঠেলে ঠুলে দিয়ে, ফাঁদে আটকে রাখলে ও, ঐসবের হাত থেকে আমাদের মুক্তি নাই।

যে কষ্ট, যন্ত্রণা, অপমান, লান্চনা, হতাশার অনুভূতি আপনি গভীর ভাবে, তীব্র ভাবে অনুভব করেননি,সেগুলো থেকে নেতিবাচক শক্তি নিঃসরণ হয় না।

ফলে অনুভূতির  থলিতে যে "বিষ" জমা, তা বের হতে পারলো না।

যখনই আবেগ অনুভূতি তীব্রভাবে, গভীর ভাবে অনুভব করবেন, তার মানে সেসব থলিকে ভালো ভাবে চেপে, এর মধ্যেকার বিষ বা নেতিবাচক শক্তি নিঃসরণ করে ফেললেন।

এখন সেগুলো স্মৃতি হিসেবে থাকলেও আপনার কোন ক্ষতি নেই। আমাদের জীবনের সকল অভিজ্ঞতাই স্মৃতি হিসেবে থাকবে। স্মৃতি হচ্ছে ঐ ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ রেকর্ড মাত্র।

ঐ ঘটনার কিরকম ব্যাখ্যা আপনি করেন, তার উপর নির্ভর করে সেগুলো নেতিবাচক শক্তি বা চার্জ বহন করবে কিনা।

আবার অনেকে মনে করেন, নেতিবাচক আবেগ মন্দ জিনিস।
তাই তারা এগুলো চেপে যায়।

যেমন অনেকে মনে করেন রাগ প্রকাশ  মন্দ কাজ।তাই তারা রাগ চেপে রাখেন।

কিন্তু "বোতল বন্ধি" আবেগ, সময় মত তার আসল রূপে ফিরে আসে।

তাহলে কিভাবে আবেগকে "নির্বিষ" করবেন, ফাঁদে আটকে পড়া থেকে বাচাবেন?

(৩য়  ও শেষ পর্ব-আগামীকাল)

Saturday, March 23, 2019

সাইকোলজিক্যাল টিপস -৫৬ঃঅবচেতনের ফাঁদে আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ ও এসবের কুফল

(সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আমার মূল যে কাজ, সাইকোলজিক্যাল টিপস -বহুদিন হলো তা দিতে পারিনি। এ জন্য আন্তরিক ভাবে  দুঃখিত)

ফাঁদে আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগকে "আবেগের মালপত্র " ও বলা যায়।আমরা অনেকে মনে করি এসব আবেগীয় মালপত্র হচ্ছে,  জীবনে আবেগীয় ভাবে আঘাত গুলোর স্মৃতি মাত্র। কিন্তু এগুলো এরচেয়ে বেশি কিছু।

কেননা এগুলো খুব ধীরে ধীরে (স্লো পয়জনিং এর মতন), গোপনে, আমাদের অজান্তে আমাদের শরীর ও মনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে।
আমাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু বেদনাদায়ক ও পীড়াদায়ক জীবন অভিজ্ঞতার স্মৃতি রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ অবচেতন মনের ফাঁদে আটকে পড়ে।

আমরা তখন এগুলো নিয়ে সচেতন থাকি না।অথচ এগুলো আমাদের স্বাস্থ্য, সম্পর্ক,সুখ, সফলতা সহ বহু ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের প্রকৃত সফলতা, ইচ্ছা ও প্রাচুর্যকে নিজেরাই সাবোটাইজ করে রাখি।

তবে শুভ সংবাদ হচ্ছে এই আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ আমরা অবমুক্ত করতে পারি ও এভাবে এর ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারি।

কি রকম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে?

আমাদের দৈহিক প্রায় সকল সমস্যা ও রোগের পিছনে মূল কারণ বা সহযোগী কারণ হচ্ছে অবচেতনে আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ। ফলে শারীরিক সমস্যা, রোগ বা ব্যথা সবই হতে পারে।

এছাড়া সম্পর্কে জটিলতা, কর্মক্ষেত্রে অক্ষমতা ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে।আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ ও স্মৃতি একইরকম ঘটনাকে ঢেকে আনতে পারে।

এই আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ কিন্তু হারিয়ে যায় না। এগুলো অবচেতনে সক্রিয় থাকে, সুপ্ত শক্তি হিসেবে থাকে। এগুলো নীরবে আমাদের সফলতার পথ রুদ্ধ করে রাখে।

আরো মনে রাখতে হবে যদি এই আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ নিঃসরন করতে না পারি, জীবন জগতের উত্তরনের যে অগ্রযাত্রা, আমরা এই পথের শরিক হতে পারবো না।

পৃথিবীর শক্তির ফ্রিকোয়েন্সী বাড়ছে,  সঙ্গে বাড়ছে আমাদের দেহ ও সচেতনতার ফ্রিকোয়েন্সী ও।ক্রমশ আমরা আমাদের উচ্চতর সত্তাকে জাগ্রত করতে পারছি, মানুষের সচেতনতার স্তর উর্ধ থেকে উর্ধমুখী হচ্ছে।

কিন্তু এই উর্ধমুখী উত্তরন থেকে আমাদেরকে পিছনে টেনে রাখে এই আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ। যেহেতু সবকিছুর ফ্রিকোয়েন্সী বাড়ছে, তাই আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগের  শক্তি এবং ফ্রিকোয়েন্সী ও বাড়ছে। ফলে এদের ক্ষতিকর প্রভাব ও বাড়ছে।

তাই এসব ফাঁদে আটকে পড়া নেতিবাচক আবেগ নিঃসরন করা জরুরি । কিন্তু কিভাবে?

(পর্ব-২ঃ আগামীকাল)

Wednesday, March 20, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪২ঃজগতের সকল প্রাণী সুখী হোক/সুখী মানুষরা একত্রে থাকে

প্রতি বছর ২০ মার্চ "বিশ্ব সুখ দিবস " পালন করা হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে "সুখী মানুষরা একত্রে থাকে " (হ্যাপিয়ার-টুগেদার)। ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের মধ্যে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য ও উত্তারাধিকার রয়েছে। এই প্রতিপাদ্যের তাৎপর্য হচ্ছে, আপনি মানব জাতির যে বিভেদ, বিদ্বেষ সেটিকে উসকে না  দিয়ে, মানুষে মানুষে দূরত্ব সৃষ্টি না করে, আমরা যেন মানব জাতির কমন বৈশিষ্ট্য, প্রয়োজন ও প্রবনতার দিকে বেশি মনোযোগ দেই।

যে জাতিগত ও ধর্মীয় উগ্রবাদ আমাদের বিচ্ছিন্নতা, বিভক্তি বাড়াচ্ছে, তার বিপরীতে আমাদেরকে একত্রে থাকতে হবে, একসঙ্গে থাকতে হবে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চের বিয়োগান্তক ঘটনার পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও জনগণ যেভাবে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা,সংহতি প্রকাশের যে অনন্য নজির স্হাপন করেছেন, তা অন্যদের জন্য একটি বড় উদাহরণ হতে পারে।

আমরা বিভক্ত সমাজ চাই না, একত্রিত মানব জাতি চাই। আর একসঙ্গে থাকা মানুষরাই সুখী মানুষ। বিচ্ছিন্ন, অন্ধকারে ঘাপটিমেরে থাকা সন্ত্রাসীরা কখনো সুখী মানুষ হতে পারে না।

২০১২ সনে জাতিসংঘের স্পেশাল এডভাইজার জেয়মি ইলিয়েন(jayme Illien) বিশ্ব সুখ বৃদ্ধি, একত্র করা ও উন্নয়নের জন্য ২০ মার্চ বিশ্ব সুখ দিবস পালনের প্রস্তাব করেন।বিশ্বের ১৯৩টি দেশ ২০১২ সনের ২৪ জুলাই এই প্রস্তাব রেজুলেশন ৬৬/২৮১ নামে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে জাতি সঙ্গের তৎকালিন মহাসচিব বান-কি-মুন মন্তব্য করেন "টেকসই উন্নয়নের জন্য  উন্নয়নের যে তিনটি স্তম্ভ -সামাজিক, আর্থিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন -এসবের মধ্যে সমতা আনতে হলে, বলে অর্থনীতির একটি নতুন নমুনা /ধারা নির্মাণ এখন অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে"।
এই দিবসের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সম্প্রতি ১৫-১৭ মার্চ,২০১৯, আমেরিকার মিয়ামিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস সামিট।

লাইবোমিরস্কি ও তার সহযোগীদের গবেষণায় (২০০৫)প্রমানিত হয়েছে যে সুখী মানুষরা অন্যদের থেকে জীবনে অধিক সফল হন,দীর্ঘজীবি হন ও অধিক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন।কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কো-অপারেশন এন্ড কনফ্লিক্ট রিজুলেশন এর পরিচালক মি. পিটার কোলম্যান সুখের গুরুত্ব দিতে গিয়ে বলেন -" বিশ্ব সুখ সূচকের সঙ্গে বিশ্ব শান্তি সূচকের রয়েছে ঘনিষ্ট সম্পর্ক"।
মনে রাখতে হবে অসুখী মানুষ হতাশ,ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ ও বেপরোয়া মানুষ। তাদের দ্বারা আর যাই হোক শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না।

ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী ১৫৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫-তে।ভারত -১৩৩,পাকিস্তান -৭৫। সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় রয়েছে ঃফিনল্যান্ড,নরওয়ে,ডেনমার্ক, আইসলেন্ড, সুইজারল্যান্ড। ঘুরে ফিরে এরাই বারবার সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় থাকে। সবচেয়ে কম সুখী দেশের তালিকায় রয়েছে ঃব্রুন্ডি,সাউথ সুদান, তানজানিয়া, ইয়েমেন।

পশ্চাৎপট ঃ১৯৭২ সনে তৎকালীন বোম্বেতে ফিনানশিয়াল টাইমস এর এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ভুটানের প্রাক্তন রাজা সর্বপ্রথম  জিএন এইচ(গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস) টার্মটি ব্যবহার করেন।তিনি বলেন "জিএনপি (গ্রস ন্যাশনাল প্রোডাক্ট)  এর চেয়ে জিএনএইচ এর গুরুত্ব অনেক বেশি। "
এরপর ২০০৫ সনে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট দ্বিতীয় জিএনএইচ এর প্রবর্তন করেন। ২০০৬ সনে এই প্রতিষ্ঠান আমেরিকায় জিএনএইচ বাস্তবায়নের জন্য পলিসি হোয়াইট পেপার প্রকাশ করেন।২০০৭ সনে থাইল্যান্ড সরকার জিএইচআই( গ্রীন এন্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স)  প্রকাশ করেন। ২০০৯ সনে আমেরিকায় গ্যালপ ওয়েল বিং ইনডেক্স চালু করেন।২০১০ সনে সেন্টার ফর ভুটান স্টাডিজ তাদের পূর্বতন ৪ স্তম্ভের বদলে সুখের উপাদান হিসেবে ৮টি উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করেন।সেগুলো হলোঃ শারিরীক, মানসিক ও আধাত্মিক স্বাস্থ্য ;সময়ের ভারসাম্য ;সমাজ ও কমিউনিটির প্রাণশক্তি ;সাংস্কৃতিক প্রাণশক্তি ;শিক্ষা ;জীবন -মান;গুড গভর্নেন্স ;ও পরিবেশ প্রাণশক্তি। ২০১১ সনে কানাডা সি আই ডব্লিউ(কানাডিয়ান ইনডেক্স অব ওয়েল বিং)  প্রকাশ করেন।২০১২ সনে জাতিসংঘ ২০ মার্চকে বিশ্ব সুখ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

সুখ কি মাপা যায়?
এমন কোন বাটখারা কি রয়েছে যা দিয়ে সুখের পরিমাণ মাপতে পারি?  মনোবিদরা তেমন মাপন যন্ত্র আবিস্কার করেছেন। এই মাপন যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে ঃ১। পি এ এন এ এস( পজিটিভ এন্ড নেগেটিভ এফেক্ট সিডিয়ুল) ২। এস ডব্লিউ এল এস (স্যাটিশফেশন উইথ লাইফ স্কেল)  ৩। এস এইচ এস(সাবজেক্টিভ হ্যাপিনেস স্কেল)

সুখ কি? সুখের সংজ্ঞা কি,সুখ কোথায়, কোথায় এর ঠিকানা, সুখের কি কোন গোপন রেসিপি রয়েছে -নাকি সুখ কেবলই সোনার হরিন?  এসব প্রশ্ন আদিকাল থেকে মানব মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। সুখী থাকা মানে এই নয় আপনি কখনো অসুখী থাকেন না।সুখের প্রচুর সংজ্ঞা রয়েছে, তবে কোনটাই সর্বজন স্বীকৃত নয়।

রবার্ট হোলডেন সুখের একটি সংজ্ঞা এভাবে দেন" বাহ্যিক উপাদানের সঙ্গে সুখ শর্তযুক্ত  বা সুখ কিনতে পাওয়া যায় -এরকম বিশ্বাসকে মাইনাস করে, আপনার যে প্রকৃত অবস্থান -সুখ সেটিই।"কথায় আছে -টাকা সুখ কিনতে পারে না। তেমনি ক্ষমতা, সম্পদসহ বাহ্যিক কোন উপাদানের সঙ্গে সুখ শর্তযুক্ত নয়।

রবার্ট হোলডেন "ডেসটিনেশন এডিকশন" বলে একটি টার্ম ব্যবহার করেন।এরমানে সুখের পিছনে হন্যে হয়ে যারা সারাজীবন দৌড়ান,সেটি এক ধরনের নেশা। হেথা নয়,হোথা নয়-অন্য কোথা, অন্য  কোন খানে--এরকম মনে করে, আমরা অনেকেই সুখের সোনার হরিনের পিছনে ছুটে  সারাজীবন পার করে দেই।তবুও মনে হয় সুখের নাগাল তো পেলাম না।

তাহলে সুখ কোথায়?

মনোবিদরা বলেন সুখ কোন বিশেষ জায়গায় নয়,সুখ নির্ভর করে কিভাবে আপনি জীবন যাপন করেন তার উপর। আপনি কিসের উপর বেশি মূল দেন?অর্থ,সম্পদ,ক্ষমতা, সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা? এই মুহূর্তে কি আপনাকে সুখী করতে পারে? এসব বিষয়ে একেক জনের একেক মত থাকবে। তাছাড়া যা আপনাকে সুখী করবে তা অন্যকে নাও করতে পারে। তবে এতো কিছু সত্বেও পজিটিভ সাইকোলজি বলে, আমরা সুখ সৃষ্টি করতে পারি, সুখ বৃদ্ধি করতে পারি এবং নিশ্চিত ভাবে সুখী হতে পারি।

কিভাবে সুখী হবেনঃ

ডোপামিন নামক একটি নিউরোট্রান্সমিটারকে "ভালো লাগার হরমোন " বলা হয়। গভীর  ভালোবাসা বা মাদক যে তীব্র আনন্দ দেয়, তা এই ডোপামিনের জন্যই।নানা প্রক্রিয়ায় আমরা ব্রেইনের ডোপামিন লেবেল বাড়াতে পারি।
তবে
নিয়মিত ব্যায়াম করুন ;আশাবাদী জীবন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করুন ;জীবনে যা পেয়েছেন, হয়েছেন তার হিসেবে করুন, কি পাননি তা নয়;কোন বিষয়েই কারো সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন না- কেননা মূলত জীবনে তুলনা বলে কিছু নাই। আপনি এ পৃথিবীতে অনন্য ও অসাধারণ ;কৃতজ্ঞ থাকুন ও তা প্রকাশ করুন-স্রস্টা আপনাকে অজস্র নেয়ামত দান করেছেন, পরিবার, সমাজ,আত্মীয়, বন্ধুগন থেকে অনেক কিছু পেয়েছেন।-এসব ভুলে থাকা অকৃতজ্ঞতা।তাই প্রতিদিন স্রস্টার কাছে অন্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন ও এ জীবনে যা পেয়েছেন, হয়েছেন তার জন্য গর্ব ও তৃপ্তি অনুভব করুন;বর্তমানে বাচুন,বর্তমানে জীবন যাপন করুন,অতীত,ভবিষ্যত বা অন্য কিছু যেন মনোযোগকে বিঘ্নিত করতে না পারে -একে আমরা বলি মাইন্ডফুলনেস;যারা আনন্দ দেয়,সম্মান করে তাদের সঙ্গে থাকুন ;জীবনে ভালো মন্দ বিরক্তি -যা আসুক তা মেনে নিন;যা করছেন গভীর মনোনিবেশ দিয়ে করুন, এতে নিমগ্ন হয়ে যান,এর মধ্যে ডুবে থাকুন -একে বলে ফ্লো;আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে তেমন কিছু করুন;যা কিছু ভালো তা ধরে রাখুন,যা কিছু মন্দ সেসব "চলে যেতে " দিন ;জীবনের একটি বিশাল মানচিত্র ধারন করুন,যেরকম জীবন চান সেরকম জীবন গড়ে তুলুন(তবে এপিজি আবুল কালামের কথা মনে রাখবেন -স্বপ্ন সেটি নয় যা আমরা ঘুমে দেখি,স্বপ্ন হচ্ছে তা যা আমাদেরকে ঘুমাতে দেয় না);ভালোবাসুন- মানুষকে,প্রানীকে,প্রকৃতিকে;বেরিয়ে পড়ুন,ঘুরতে যান,প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন;কাছের মানুষদের "ধন্যবাদ " এর বার্তা পাঠান;ভালো আছি,সুখে আছি এটি হোক নিত্যদিনের জপ মন্ত্র ;শেয়ার করুন নিজের আনন্দ সুখকে;জীবনে অনেক ভাবে বাঁচা যায়,এক পথ বন্ধ হলে শত পথ খুলে যাবে।
বাঙ্গালী উৎসব প্রিয় জাতি। বিশ্ব সুখ দিবস জাতীয় ভাবে পালনের দাবি জানাচ্ছি। এদিন আমরা নেচে,গেয়ে আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাবো। সবাই একত্রে থাকবো,একসঙ্গে জীবন উপভোগ করবো। নিজের জন্য ও অন্যদের জন্য সুখ সৃষ্টি করবো।

Sunday, March 17, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪১ঃবঙ্গবন্ধুর "অসমাপ্ত আত্মজীবনী থেকে

জাতির জনকের আজ জন্ম দিন।তারঁ প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি যে মাঠ পর্যায়ে ও সাধারণ কর্মীদের মতন বিপদসংকুল রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতেন তার একটি উদাহরণ দিচ্ছি ঃ

তখন লিয়াকত আলীর জমানা।আরমানীটোলায় বিরাট সভায় মাওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও অন্যরা জ্বালাময়ী বক্তৃতা করলেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন শেষ বক্তা। ভাসানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে বললেন "শোভা যাত্রা করতে হবে সেই ভাবে বক্তৃতা করো"

(তার মানে জনগণের মাঝে আবেগ,উত্তেজনা জাগিয়ে তোলার যাদুকরী ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ছিল সেটি মাওলানা ভাসানী অনেক আগ থেকেই টের পেয়েছিলেন।)

শোভা যাত্রার এক পর্যায়ে পুলিশ রাস্তা আটক করে ফেলে ও লাঠি চার্জ,টিয়ারশেল ছুড়ে।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ভাষায় শুনুন

"আমার উপর ও অনেক আঘাত পড়ল।এক সময়ে প্রায় বেহুশ হয়ে একপাশের নর্দমায় পড়ে গেলাম। কয়েকজন আমাকে রিকশায় উঠিয়ে মোগলটুলি নিয়ে আসলো।"

....এক পর্যায়ে "পুলিশ অফিস ঘিরে ফেলল এবং দরজা খুলতে বলছিল।"...." তিন তলায় আমরা, পাশেই একটি দোতলা বাড়ি ছিল। তিন তলা থেকে দোতলায় লাফিয়ে পড়তে হবে।

দুই দালানের ভিতর ফারাকও আছে। নীচে পড়লে শেষ হয়ে যাবো।

তবু্ও লাফ দিয়ে পড়লাম। "

(আহত, অসুস্থ শরীর নিয়ে এরকম দুঃসাহসিক কাজের কথা থ্রিলার উপন্যাসে পড়েছি। কিন্তু এটি বঙ্গবন্ধুর বাস্তব জীবনের কাহিনি।

আমরা অনেকে মনে করি এমনিতেই তিনি এতো বড় নেতা হয়েছেন। এখনকার নেতারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে কর্মীদের নিজেদের "দাস" মনে করে ঐরকম মিছিলে পাঠায়।

ঐ অনুগত কর্মীরা এখনো পুলিশের মারধর খায়,জেলে যায়।
কিন্তু কোন নেতাকে কি শুনেছি তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে জীবন বাচিয়ে রাজনীতি করতে?
অথচ এই নেতারা ও স্বপ্ন দেখে ক্ষমতার ও উচু নেতৃত্বের)

Friday, March 8, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪০ঃনারী যেন একদিনের "রানী" হয়ে না থাকে

প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন আমরা নারীকে -"রানী" বানিয়ে কত গুনগান,জয়গান করে থাকি।সারা বছর, সারা জীবন নারীকে (কন্যা, জায়া,জননী) আমরা কেমন রাখি?

যৌবনের রোমান্টিকতায় ছেলেরা মেয়েদের-ওগো জানু,ও প্রিয়া,সোনামনি,হ্রদয়ের রানী- কত আবেগমথিত সম্ভাষণ করে থাকে।
তাদের এই ভালোবাসার উষ্ণতায় নারীর কোমল মন গলে গলে পানি হয়ে যায়।আরও প্রেমঘন উষ্ণ আলিঙ্গনে সে জলীয় রিদয়,মন বাষ্পীভূত হয়ে পড়ে।
তবে কতদিন থাকে এই "রানী" মর্যাদা? অন্তত এইদিনে বছরে একদিন হলেও যদি পাওয়া যায় তেমন বন্দনা- মন্দ কি?

১। গাছের মগডাল থেকে মানুষ যখন নীচে নেমে গুহা বাসী হয়, তখন পুরুষরা বাইরে যেতো পশু শিকার করতে।
নারী ঘর(গুহা) ও পূর্বদিনের শিকার পাহারা দিতো।গুহার চারপাশে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন বীজ থেকে বিভিন্ন শস্য ও ফসল ফলার দৃশ্য নারী দেখতে পেতো।

কৌতূহল বশত নারী গম,ভুট্টা, ধান প্রভৃতির বীজ গুহার পাশে পুতে রেখে আশ্চর্য ফল পান।শুরু হয় মানবের "কৃষি জীবন "। এ থেকেই শুরু মানব সভ্যতা।

২। অন্য সব প্রানীর বাচ্চা, জন্ম গ্রহণের পরপরই দুরুত হাটতে, দৌড়াতে ও নিজের স্বাধীন জীবন যাপন করতে শিখে যায়। কিন্তু ব্যতিক্রম মানব শিশু।

মানব শিশুকে দীর্ঘদিন লালন পালন করতে হয়,নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান সহ সকল প্রকার পরিচর্যা দিতে হয়,পূর্ণ স্বাধীন ভাবে নিজস্ব জীবন চালানোর আগ পর্যন্ত।

এই দীর্ঘ শৈশব, কৈশোর  সময় কালের প্রতিপালনের, বেশির ভাগ দায়িত্ব বর্তায় মায়ের উপর ( নারী)।

এক কথায় মানব সভ্যতার শুরু করেছে নারী এবং মানব প্রজাতির বংশধারার পরিনত ও বিকশিত ধারা বজায় রাখার দায় ও নিয়েছে নারী।

৩।নারী সবজায়গায় পুরুষের সমান সম্মান, গুরুত্ব,পাচ্ছে না সেটি অনেকাংশে সঠিক।

তবে " মা" হিসেবে ( নারী)  তারা সবসময়, সব জাতিতে পুরুষের ( বাবা) চেয়ে বেশি সম্মান, গুরুত্ব পাচ্ছে একথা অস্বীকার করা যাবে না

( আমার স্ত্রী নির্দ্বিধায় স্বীকার করে আমি আমার সন্তানদের জান দিয়ে ভালোবাসি। কিন্তু সন্তানদের মমতা,ভালোবাসা, পক্ষপাতিত্ব সবসময় মায়ের দিকে বেশি থাকে (এরকম তুলনা ঠিক নয়,তবু প্রাসঙ্গিক কারণে তুলনাটি এনেছি)।
তারমানে অন্তত জীবনের একটি পরিচয়ে নারী পুরুষের চেয়ে অগ্রগামী।
এটি হলো নুন্যতম হিসাব।

এছাড়া নজরুল বলেছেন

"জগতের যা কিছু সুন্দর কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"

সার্বিক বিচারে নারী আরো ঈর্ষনীয় অবস্থানে আছে।
যেমন কবি শরদিন্দু কর্মকার বলেন

"বাপের ঘরে লক্ষী আমি...
স্বামীর ঘরে অন্নপূর্ণা।
ছেলের ঘরে জননী আমি...
আমি ছাড়া সংসার অসম্পূর্ণা।"