প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন আমরা নারীকে -"রানী" বানিয়ে কত গুনগান,জয়গান করে থাকি।সারা বছর, সারা জীবন নারীকে (কন্যা, জায়া,জননী) আমরা কেমন রাখি?
যৌবনের রোমান্টিকতায় ছেলেরা মেয়েদের-ওগো জানু,ও প্রিয়া,সোনামনি,হ্রদয়ের রানী- কত আবেগমথিত সম্ভাষণ করে থাকে।
তাদের এই ভালোবাসার উষ্ণতায় নারীর কোমল মন গলে গলে পানি হয়ে যায়।আরও প্রেমঘন উষ্ণ আলিঙ্গনে সে জলীয় রিদয়,মন বাষ্পীভূত হয়ে পড়ে।
তবে কতদিন থাকে এই "রানী" মর্যাদা? অন্তত এইদিনে বছরে একদিন হলেও যদি পাওয়া যায় তেমন বন্দনা- মন্দ কি?
১। গাছের মগডাল থেকে মানুষ যখন নীচে নেমে গুহা বাসী হয়, তখন পুরুষরা বাইরে যেতো পশু শিকার করতে।
নারী ঘর(গুহা) ও পূর্বদিনের শিকার পাহারা দিতো।গুহার চারপাশে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন বীজ থেকে বিভিন্ন শস্য ও ফসল ফলার দৃশ্য নারী দেখতে পেতো।
কৌতূহল বশত নারী গম,ভুট্টা, ধান প্রভৃতির বীজ গুহার পাশে পুতে রেখে আশ্চর্য ফল পান।শুরু হয় মানবের "কৃষি জীবন "। এ থেকেই শুরু মানব সভ্যতা।
২। অন্য সব প্রানীর বাচ্চা, জন্ম গ্রহণের পরপরই দুরুত হাটতে, দৌড়াতে ও নিজের স্বাধীন জীবন যাপন করতে শিখে যায়। কিন্তু ব্যতিক্রম মানব শিশু।
মানব শিশুকে দীর্ঘদিন লালন পালন করতে হয়,নিরাপত্তা, খাদ্য, বাসস্থান সহ সকল প্রকার পরিচর্যা দিতে হয়,পূর্ণ স্বাধীন ভাবে নিজস্ব জীবন চালানোর আগ পর্যন্ত।
এই দীর্ঘ শৈশব, কৈশোর সময় কালের প্রতিপালনের, বেশির ভাগ দায়িত্ব বর্তায় মায়ের উপর ( নারী)।
এক কথায় মানব সভ্যতার শুরু করেছে নারী এবং মানব প্রজাতির বংশধারার পরিনত ও বিকশিত ধারা বজায় রাখার দায় ও নিয়েছে নারী।
৩।নারী সবজায়গায় পুরুষের সমান সম্মান, গুরুত্ব,পাচ্ছে না সেটি অনেকাংশে সঠিক।
তবে " মা" হিসেবে ( নারী) তারা সবসময়, সব জাতিতে পুরুষের ( বাবা) চেয়ে বেশি সম্মান, গুরুত্ব পাচ্ছে একথা অস্বীকার করা যাবে না
( আমার স্ত্রী নির্দ্বিধায় স্বীকার করে আমি আমার সন্তানদের জান দিয়ে ভালোবাসি। কিন্তু সন্তানদের মমতা,ভালোবাসা, পক্ষপাতিত্ব সবসময় মায়ের দিকে বেশি থাকে (এরকম তুলনা ঠিক নয়,তবু প্রাসঙ্গিক কারণে তুলনাটি এনেছি)।
তারমানে অন্তত জীবনের একটি পরিচয়ে নারী পুরুষের চেয়ে অগ্রগামী।
এটি হলো নুন্যতম হিসাব।
এছাড়া নজরুল বলেছেন
"জগতের যা কিছু সুন্দর কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"
সার্বিক বিচারে নারী আরো ঈর্ষনীয় অবস্থানে আছে।
যেমন কবি শরদিন্দু কর্মকার বলেন
"বাপের ঘরে লক্ষী আমি...
স্বামীর ঘরে অন্নপূর্ণা।
ছেলের ঘরে জননী আমি...
আমি ছাড়া সংসার অসম্পূর্ণা।"
No comments:
Post a Comment