Friday, March 29, 2019

সাইকিয়াট্রিস্ট এর জার্নাল -৪৩ঃএরাই বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশ

বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর আমাদের জাতিগত কিছু প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য যেমন দেখতে পেয়েছি,

তেমনি কিছু অতি সুশীল, অতি আতেলদের কিছু  উৎকট,উন্নাসিক বৈশিষ্ট্য ও প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

১। এদেশের কিছু সুশীলদের বেশ কিছু আপ্তবাক্য রয়েছে যেগুলো আবার বেশ জনপ্রিয় ও।

ক)পথচারীদের আইন না মানা দুর্ঘটনার অন্যতম কারন -মুর্খ বাঙ্গালী মরবে না কেন?

খ)ফুটওভার ব্রীজ দেওয়া আছে, অলস বাঙালী সেটি ব্যবহার করবে না, দৌড়ে রাস্তা পার হবে

-বাসের চাকার নীচে তোরা মারা পড়বি না তো, আমাদের মতন আইন মানা,সুনাগরিক মারা পড়বে?

কখনো দেখেছিস আমরা গাড়ির চাপায় পড়েছি?
যদি বলা হয় উন্নত দেশে রাস্তায় চলাচলে পথচারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়,
ফুটওভার ব্রিজ থাকে কদাচিত,
নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে একযোগে পথচারী স্বচ্ছন্দে রাস্তা পার হয়-
তখন তারা বলে এটি বাংলাদেশ, উন্নত দশ নয়

।বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসুস্থরা কেমনে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করবে? 
আরে ভাই তারা গাড়ীতে করে যাবে, পথে হাটবে কেন?আর গাড়ি না থাকলে ঘরে বসে থাকবে বাইরে বের হওয়ার এতো শখ কেন?

গ)ছোটলোক হকারদের জন্য শান্তি মতন রাস্তা দিয়ে ও হাটতে পারি না।

আমরা সবদিক থেকে এতো নিশ্চিত সুখী নিরাপদ ও আরামে জীবন যাপন করছি, শুধু এই নচ্চারদের ফুটপাত দখলের কারনে জীবন তেনা তেনা হয়ে গেল।

নাগরিক জীবনে একমাত্র ও প্রধান সমস্যা হচ্ছে হেলেদুলে ফুটপাতে হাটতে না পারা।

হাটতে গেলেই ঐসব নোংরা, অপরিচ্ছন্ন গেয়ো লোকগুলোর সঙ্গে ধাক্কা লাগে। দুরুত বাসায় গিয়ে স্নান করে আবার পবিত্র হতে হয়।

পুলিশগুলো সব ঘুষখোর, একদিন পিটায় তো পরদিন খবর রাখে না।

হকারদের জন্য রাস্তায় দুর্ঘটনার হার জ্যামিতিক হারে বাড়ছে । ওখানে যে ফকির মিশকিনরা কেনাকাটা করে, এরা রাজধানীর আভিজাত্য নষ্ট করছে।

কমদামে জিনিস কিনবি তো গ্রামে যা। শহরে থাকবি ফুটানি দেখাতে, তাহলে বসুন্ধরা যা কেনাকাটা করতে

ঘ)আগুন লেগেছে, বিল্ডিং ধ্বসে পড়েছে , এখন এসব উদ্ধার করবে সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।

এরা কি আগে দক্ষতার সহিত এগুলো করে দেখায়নি?

তোমরা আমজনতা বেয়াক্কেলের মতন হা করে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে কি কচুটা করেছো?

মাঝখানে তোমাদের জটলার কারনে আমাদের চৌকস বাহিনী গুলো এতো এতো আধুনিক সরঞ্জাম গুলো ব্যবহার করতে পারলো না।

পুলিশ গুলো তাদের পাছায় আগুন লাগিয়ে দিলো না কেন?

বেতমিজ পাবলিককে এভাবে রাস্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো উচিত ছিল।

ঙ)আমরা ও তোঐ জায়গার পাশ দিয়ে গেলাম। এক মুহূর্ত ও দাড়ায়নি,নিজের কাজে চলে গেছি।

তোমাদের মতন আমরা বেকার ও না,দায়িত্বহীনও না।
আমরা নিজ নিজ অফিসে গিয়ে গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ সমাজের কাজ করেছি,
সন্তানদের স্কুল থেকে আনতে গেছি,
বাজার করতে গেছি,
সেমিনারে এটেন্ড করেছি -
ইত্যাদি নিজ নিজ কাজ করেছি।

আর তোমরা হা-ভাতে লোকেরা কাজকাম নেই, ঘন্টার পর ঘন্টা ওখানে দাঁড়িয়ে হাসি তামাশা করলে।
এতো র্হদয় বিধারক ঘটনায় কোথায় শোকে,কান্নায় আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করবে, না,মনের সুখে ঘটনার ছবি উঠাও,সেলফি তোলো।

ছিঃতোমাদের ঘৃন্য মানসিকতার। এরকম সময়ে কেউ ছবি উঠাতে পারে?

তোমরা কি সাংবাদিক যে ঘটনার রেকর্ড রাখতে ছবি উঠাবে?

তোমাদের না আছে বিবেক,না আছে কাণ্ডজ্ঞান, না আছে সিভিক সেন্স।

দেখো না আমরা ঐখানে কি ঘটছে, মানুষ মরছে না পুড়ছে সেগুলো নিয়ে ভেবে নিজের কাজকর্ম বাদ দেইনি।

মরা,পোড়া দেখা বা সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য  নির্দিষ্ট সংস্থা আছে। এগুলো তাদের কাজ।

তোমরা বরং এদের কাজে বাধা দিয়ে গুরুতর অপরাধ করেছো।

কবে শিখবে সিভিক সেন্স, নিজ কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠা অর্জন করবে ?
দরদ দেখিয়ে থেকে গেলে?তাহলে মজা করে ছবি উঠালে কেন? লজ্জা লাগলো না?

চ) লসএন্জেল এর মতন রূপসী ঢাকার সৌন্দর্য, আভিজাত্য ও গরিমা নষ্ট হচ্ছে কিছু গ্রাম থেকে উঠে আসা হতদরিদ্রের বস্তিগুলো।

বিদেশীদের কাছে এদের জন্য মুখ দেখাতে পারি না।
আর সকল অপরাধের আখড়া হচ্ছে এগুলো।

আমরা ঘুষ খেতে পারি,ব্যাংক, অফিস লুটপাট করতে পারি, জঙ্গি সন্ত্রাসী লালন করতে পারি। তবে সেগুলোর একটা ক্লাস আছে।

নোংরা বস্তির ছিটকে চোর ছ্যাচর লালন করি না। সরকারের উচিত বুলডোজার দিয়ে বস্তিগুলো গুড়িয়ে দেওয়া। অথচ সরকার আমাদের বড় বড় বিল্ডিং
ভাঙ্গছে, দেশের সম্পদ নষ্ট করছে।

আমরা না থাকলে ঐ ছোটলোকদের নিয়ে রাস্ট্র চালাতে পারবে? দুদিনে গনেশ উল্টে ফেলবো না।

২।এর বিপরীত চিত্র ও দেখেছি। যা ছিল   আশার আলো।

দেশের সকল দুর্যোগে যেসব অকুতোভয়, আত্মত্যাগী মানুষেরা সবসময় এগিয়ে আসে,

নিজের, পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে জীবন বাজি রেখে উদ্ধার কাজে ঝাপিয়ে পড়ে,
তেমন হাজার হাজার লোক সেখানে ভীড় করেছিল।তারা তামাশা করতে সেখানে ভীড় করেনি।

সুযোগ থাকলে তারা রানাপ্লাজার মতনই দুঃসাহসিক কাজের উদাহরণ রাখতো।তারপর ও দুএকজন সেরকম দৃষ্টান্ত রেখেছে। সবাই ভদ্রলোকদের মতন যার যার পথ ধরলে নাইমের মতন শিশু আমরা পেতাম কি?

আমাদের গর্বের উৎস  ফায়ার সার্ভিস ওসিভিল ডিফেন্ডের যোদ্ধারা। যে দক্ষতা, নিষ্ঠা,দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের নজির রেখেছে জাতি চিরদিন সশ্রদ্ধ চিত্তে তা মনে রাখবে।
এরাই বাংলাদেশ, এটাই বাংলাদেশ

No comments:

Post a Comment