Monday, March 4, 2019

রোগ কাহিনী -৫২ঃঅন্ধ দুচোখ থেকে হঠাৎ আলোর ঝিলিক বের হচ্ছে ও সব সময় সব জায়গায় তিনি গাছপালা, জীবজন্তু, রঙ দেখতে পাচ্ছেন

সংক্ষিপ্ত রোগ কাহিনী ঃ
মি. সাইফুল (ছদ্মনাম), বয়স ৫১। তিনি অনেক দিন যাবত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।

কিছু দিন আগে তিনি বাম চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন। তিনি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান

।ডাক্তার বলেন ব্রেইন স্ট্রোকের কারনে ওনার চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু দিন দিন ওনার দৃষ্টি শক্তি কমতে থাকে।

ক্রমশ তিনি দুচোখেই অস্পষ্ট দেখতে শুরু করেন।

ভালো চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতে যান।তারা বলে তার চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নাই।

তারা চোখ পরীক্ষা করে বলেন, যদি চোখ থেকে একটি আলো বের হতো তিনি দেখতে পেতেন। কিন্তু তেমন আলো দেখা যায়নি।

এরপর তারা দেশে ফিরে আসেন।বর্তমানে তিনি দুচোখেই দেখতে পারেন না

সকল ডাক্তারী চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়ে তারা -সেরাজিম নামে একটি কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানে যান,সারা দেশে যাদের অনেক শাখা রয়েছে।

সেখানে একটি ছোট মেশিনে ছোট ছোট গোল গোল পাথর রয়েছে। ওখান থেকে লাল,নীল, হলুদ ইত্যাদি কালার বের হয়।

মেশিনটি ওনার কপালে ও পিঠে ম্যাসেজ করা হতো এবং এতে তাপ লাগতো। এটি নাকি প্রতিদিন দিতে হয় যতদিন না ফল পাওয়া যায়।

ঐ মেশিন দিয়ে নাকি প্রায় সব রোগই ভালো হয়।

কিন্তু তিনি তেমন ফল পাননি।

ঐ কোম্পানির লাভ হচ্ছে একেকটি মেশিন তারা ১-২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।

কিন্তু হঠাৎ এক রাতে তিনি টের পান টিভিতে যেমন  জিরজির করে তেমন লাইট বের হতে দেখেন।পরে দেখেন দুই চোখ দিয়ে আলোর ঝিলিক বের হচ্ছে।

তিনি তখন মনে করলেন ভারতের ডাক্তাররা যে বলেছিলেন চোখ থেকে আলো বের হলে তিনি চোখে দেখতে পারবেন এটি বোধ হয় সে রকম কিছু।  তাই তিনি জোর দিলেন আরো বেশি করে ঐ মেশিনের চিকিৎসা নিতে। তার আশা তাহলে হয়তো তিনি আবার দেখতে পারবেন।

কিন্তু দিন দিন তার অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগলো।

তিনি সব সময়, এমনকি চোখ বন্ধ করলেও গাছপালা (ছোট ছোট গাছ,খেজুর গাছ,মরিচ গাছ ইত্যাদি) ;
জীবজন্তু (ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি) ;
ঘর-বাড়ি, হাঁড়িপাতিল, চাটাইয়ের বেড়া,ছোট ছোট বাচ্চা, আগুন-ইত্যাদি দেখতে থাকেন।

তার চোখে মনে হয় ওনার বাসার ডাইনিং হল ১বিঘা,২ বিঘা জায়গা জুড়ে বিরাট হল।দেওয়ালে তিনি ছোপ ছোপ রঙ দেখেন।

এগুলো দেখতে দেখতে তিনি ক্লান্ত ও হতাশ।

তিনি বলেন এগুলো দেখা বন্ধ না হলে আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে।
এরচেয়ে কিছু না দেখা ভালো ছিল।

বাংলাদেশের এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাকে আমার কাছে রেফার করেন এ সমস্যার চিকিৎসা করার জন্য।
এই কেইস হিস্ট্রি থেকে কি শিখলাম ঃ

১। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে হার্ট এটাক,ব্রেইন স্ট্রোক,কিডনি ফেইলিউর,অন্ধ হয়ে যাওয়ার মতন মারাত্মক পরিনতি হতে পারে।

২।যে চিকিৎসা সব রোগের উপশম করে মনে রাখবেন সে চিকিৎসা প্রকৃত কোন চিকিৎসাই নয়(যেমন সেরাজিম চিকিৎসা) ।

৩।মানুষ তীব্র হতাশায় ভুগলে অলৌকিক কিছুর প্রত্যাশা করে। হঠাৎ আলোর ঝিলিক কি ওনার প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তির ফলাফল?

৪। মূলত আমাদের কোন বিশেষ অঙ্গ বিনষ্ট হয়ে গেলে  ব্রেইন এর কার্যকারিতা অন্য ভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করে। তবে সে সুযোগ না থাকলে?

৫। সাইকোটিক জাতীয় মানসিক /ব্রেইনের রোগে মানুষ অস্বাভাবিক কিছু প্রত্যক্ষন করতে পারে।

হ্যালুশিনেসন তেমন কিছু। কমন হ্যালুশিনেসন হচ্ছে -অডিটরি বা শ্রবণেন্দ্রিয়। অর্থাৎ কানে গায়েবি কথা শোনা।
তবে কারো কারো দর্শনেন্দ্রিয় এর হ্যালুশিনেসন ও হতে পারে। যা অন্যরা দেখে না,তারা তেমন কিছু দেখে থাকেন

৬। এমনকি অন্ধ ব্যক্তির ও হ্যালুশিনেসন হতে পারে

No comments:

Post a Comment